মুখোশ
এক
সকালে ঘুম থেকে উঠতে ইচ্ছা করে না। ইশিতা চোখ বন্ধ করেই বালিশের নিচে রাখা এলার্ম বন্ধ করে আরো একটু বেশী আরাম করে বালিশে মাথা বোলায়। আহা ঘুমাতে কত আরাম! কিন্তু বাসায় থাকলেও মন মতো ঘুমানোর উপায় নেই। বাচ্চারা ঘুম থেকে উঠে গেলে আর ঘুমাতে দেয় না। ইশিতা আস্তে আস্তে ঘুম থেকে উঠে। সব থেকে ভালো জামাটা পরে ছিমছাম করে অফিসের জন্য তৈরী হয়ে নেয়। ইশিতা যখন বের হয়ে আসে বাচ্চারা তখনও ঘুমে। ওরা জেগে গেলেই ঝামেলা করবে।
নতুন অফিসে প্রথম দিন, ডেস্কটা একা একটা রুমে, দেখে ইশিতা মনে মনে একটু খুশি হয়। যাক নিজের মতো করে বসা যাবে। সে সরাসরি ডিরেক্টরের অধিনে কাজ করবে। সবাই এই অফিসে ডিরেক্টরকে বেশ ভয় করে বোঝা যাচ্ছে। এটাও তার জন্য ভালো লক্ষন। এখন কথা হলো ডিরেক্টর ভদ্রলোক মানুষটা ভালো তো? ভালোই হবার কথা, হাজার হোক বিদেশী কোম্পানি। এইচআর থেকে ইশিতাকে সবার ডেস্ক ঘুরে ঘুরে দেখানো হয় ও পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়।
ইশিতা ছোট একটি ওরিয়েনটেশন মিটিং শেষে রুমে এসে কাজ শুরু করে।
দুপুরে লান্স টাইমে নিচের ক্যানটিনে রিসেনশনিষ্ট মেয়েটির সাথে ইশিতার দেখা হয়। মেয়েটির নাম সুরাইয়া।
ইশিতা এক ফাকে জিজাসা করে আমাদের ডিরেক্টর স্যার খুব রাগী নাকি, সবাই দেখি উনাকে বেশ ভয় করে? সুরাইয়ার ঝামটা দিয়ে বলে, কিযে বলেন আপা, উনি এই অফিসের সবচেয়ে ভালো লোক।
দিনের প্রথম ভাগে ডিরেক্টর স্যার বাইরে মিটিংএ ছিলেন। বিকেলে অফিসে এসেই উনি তার সহকারী নতুন যোগদান করা ইশিতাকে ডেকে পাঠান।
ইশিতার ডিরেক্টর স্যারকে ভালই মনে হয়। ভদ্রলোক ছোটমোট, সুন্দর, ভদ্র। দু’একটা কথায় বোঝা যায় উনি বেশ ধার্মিক।
ডিরেক্টর স্যার: হ্যা, ইশিতা বসেন। নতুন অফিস কেমন লাগছে?
ইশিতা: বেশ ভালো।
ডিরেক্টর স্যার: আপনার ল্যাপটপ, মোবাইল এই সমস্ত জিনিস বুঝে পেয়েছেন তো?
ইশিতা: হ্যা।
ডিরেক্টর স্যার: কাল সকালে এসেই সবার আগে আমার সাথে দেখা করবেন। এখন থেকে সকালে সব কাজের ইন্সট্রাকশনগুলো আপনাকে আমার সাথে বসে, সকাল সকালেই জেনে নিতে হবে। সকালের ফার্ষ্ট আওয়ারের পর, বিভিন্ন মিটিংএ ব্যস্ত হয়ে পরি তাই, এর পর আমার পক্ষে আর সময় বার করা সম্ভব নয়। আপনি আমার সহকারী হিসেবে কাজ করবেন তো ঠিক ই পাশাপাশি প্রোগ্রামের বিভিন্ন বিষয়ে আপনার সহযোগিতা লাগবে। আপনার যা অভিজ্ঞগতা তাতে আশা করি সমস্যা হবে না।
ইশিতা: না স্যার, আপনি ভাববেন না, সম¯্যা নেই।
ডিরেক্টর স্যার: শুনুন, আমরা ইসলামের আদর্শে বিশ^াসী, আমাদের অফিসে সবার মধ্যে ভ্রাত্বৃতের সম্পর্ক। সুতরাং, আপনি আমাকে ভাই বললেই চলবে। আর কোনো বিষয়ে আমার সহযোগিতা দরকার হলে একেবারেই সংকোচ করবেন না । যা হোক, আছরের নামাজের সময় হয়ে গেছে। আমাদের অফিসে নামাজের রুমে অফিসের সবাই একসাথে জামাতে আমরা নামাজ পড়ি।
উনি আগেই অজু করে, মাথায় টুপি দিয়ে তৈরী ছিলেন। ডিরেক্টর স্যার দ্রুত পায়ে নামাজের জন্য এগুচ্ছিলেন।
ইশিতা: অফিসে মেয়েদের জন্যও নামাজের জায়গা আছে ?
ডিরেক্টর স্যার থমকে দাড়ান, বলেন, না এখনো পর্যন্ত ছিল না। আপনি এখন আছেন, আপনিই দ্বায়িত্ব নিয়ে মেয়েদের জন্য নামাজের জায়গা করুন দেখি। আপনাকে এক সপ্তাহ সময় দিলাম।
এই বলে স্যার বের হয়ে গেলেন।
ইশিতা ভাবে, মরার কি জন্য একথা বলতে গেলাম, কোনো বিষয়ে অফিস আদালতে পরামর্শ দিতে গেলে পরে, শেষে সবসময় নিজের ঘাড়েই কাজটি এসে পড়ে। যাক কি আর করা!
২
অফিসে দ্বিতীয় দিন – ডিরেক্টর স্যারের কথা মতো কাজগুছিয়ে নিতে সময় লাগে না ইশিতার। তার বেশ অনেক বছরের অভিগতা রয়েছে।
নিজ দ্বায়িত্বের পাশাপাশি অফিস এপার্টমেন্টের রান্নাঘরের পাশে ছোট একটা রুমকে সে মহিলাদের নামাজের জন্য ঠিকঠাক করে ফেলে।
এডমিড অফিসারকে বলতেই সে বলে, মহিলারা থাকব ঘরে, ঘরে বইস্যা ছেলেপুলে মানুষ করবো, তাদের অফিসে আদালতে কাজ করার দরকার কি।
ইশিতার কথাটা বড় খারাপ লাগে। সে বলে, আপনি কিভাবে বিবেচনা করবেন কার কাজ করবার দরকার আছে কি নেই। আমাদের দেশে জিনিস পত্রের যা দাম, একার পক্ষে কাজ করে পরিবার পরিজনকে ভালো একটি জীবন উপহার দেয়া কি সম্ভব! তা ছাড়া, পড়াশুনা করে মেয়েরা ঘরে বসে থাকবে?
এডমিড অফিসার: ঘরে না থাকলে ছেলে মেয়েদের দেখব কে? পোলাপান তো উচ্ছন্নে যাইব।
ইশিতা: দেখেন ভাই, আমিও তো চাকরি করে, আমার মা আমার বাচ্চাদের দেখেন। কই মনে হয় না তো তাতে করে তেমন কোনো সমস্যা হচ্ছে। সকালে বাচ্চারা যায় স্কুলে, দুপুরে স্কুল থেকে ফিরে গোসল করে, খাওয়াদাওয়া করে, হোমওয়ার্ক শেষ করে । বিকালে ঘুমায়। সারে পাচটা কি ছয়টা নাগাদ আমি বাসায় পৌছে যাই। দেখেন তো চিন্তা করে, তারা যদি যথা সময়ে খাবার টেবিলে খাবার পায় আর একজন মুরুব্বী উদের দেখাশোনা করে তাহলে কি সমস্যা আর হতে পারে? যাই হোক, ভাবী তো মনে হয় চাকরি বাকরি করেন না?
এডমিড অফিসার: মাথা খারাপ, আমাদের যা আছে তা দিয়েই চলে হের চাকরি করনের কোনো দরকার নাই।
ইশিতা বুঝতে পারে কথা বাড়ালে কথাই বাড়বে। উনার মানস জগতে পরিবর্তন আনা চাট্টিখানি কথা নয়।
৩.
ইশিতা আলতো করে দরজায় নক করে। ডিরেক্টর স্যার রুমে একাই ছিলেন। ইশিতা জানায় সে মহিলাদের নামাজের ঘর তৈরী করে ফেলেছে।
ডিরেক্টর স্যার দুম করে লাফ দিয়ে ওঠেন, খুশিতে উনি টগবগ করছেন। ইশিতা এর মধ্যে ডিরেক্টর স্যার কে প্রোগ্রামের বিভিন্ন কাজ দক্ষতার সাথে করে দেখিয়েছে। কিন্তু তাকে এবারের মতো এতো খুশি হতে দেখেনি।
ডিরেক্টর স্যার নিজে গিয়ে মেয়েদের নামাজের ঘরটি দেখলেন আরও কিছু লাগবে কিনা জানতে চাইলেন। বললেন, আর কিছু নয় একমাত্র নামাজই মৃত্যুর পর আমাদের সংগে যাবে ।
ইশিতা ডিরেক্টর স্যারের কথায় আবেগে আপ্লুত হয়, গর্ববোধ করে ভালো একটি কাজ সম্পন্ন করতে পেরে। তার মনে হয় আসলেও তো ঠিক একজন মানুষ যদি সৎ রুজিরোজগার করতে পারে, পাশাপাশি নামাজ কালাম পড়তে পারে তাহলে তো তার ইহকাল পরকাল উভয়ই ভালো কাটবে। ইশিতার ধর্মীয় আবেগ জেগে উঠে। সে সেবেলা তার অন্যান্য নারী সহকর্মীদের নিয়ে নামাজের ঘরে নামাজ পরে। ভাবে, সত্যিই তো কত না ভালো হয়, সময় মতো নামাজ পড়তে পারলে।
৪.
সংসারে ইশিতার দিনগুলো ভালোই কাটতে থাকে। তার ভালো একজন খালা আছে। সে বাসার সমস্ত কাজ করে। ভালো রান্না করে। সারাদিন অফিস শেষ করে বাসায় ফিরে বাচ্চাদের সাথে সন্ধ্যার নাস্তা করে। তারপর দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে পড়াতে বসে। পড়া শেষে সকলে মিলে কিছুক্ষণ চলে তুমুল আড্ডা আর হাসাহাসি। তারপর এশার নামাজ শেষে সবাই খাওয়াদাওয়া করে ঘুমুতে যায়।
তার সবথেকে বড় সমস্যা ঘুম। রাতে প্রায়শই ঘুমুতে যেতে দেরী হয়ে যায়। সকালে আর সহজে ঘুম ভাংগে না। মাঝেমাঝে তার ভীষণ আলসে লাগে, মনে হয় যদি কোনো কাজ না থাকতো তাহলে সময় কাটানো যেত আলসেমী করে কিছুবেলা।
সময় পেলে তার ভালো লাগে, ছেলেমেয়ে আর স্বামীকে নিয়ে বাইরে কোথাও ঘুরতে যেতে।
৫.
ভদ্রলোক একটু আজব বটে, তার বাচনভংগি, পোশাক আশাক, চাহনি দেখে মনে হয় তিনি মনে হয় খবরই পেয়ে গেছেন যে, তিনি বেহেস্তেই যাবেন। একদিন হঠাৎ সে বলে কিনা আপু কিছু মনে না করলে একটা কথা বলি, মেয়েদের মাথার চুল ছেলেরা দেখলে খুব গুনাহ! তার কন্ঠের ভংগি শুনে মনে হলো ইশিতার কারণে যেন তার জান্নাৎ বাসী হবার স্বপ্ন হয়ত অপূর্ণই থেকে যাবে। ইশিতার সাথে সাথে মনে পরে লোকটির যতবার তার সাথে দেখা হয়েছে, তিনি এমন করে তিন হাত জায়গা রেখে গা বাচিয়ে গিয়েছেন যেন ইশিতার কোনো একটা মারাত্মক রোগ আছে। গা বাচিয়ে চলা ঠিকই আছে কিন্তু লোকটার একটু বাড়াবাড়ি চোখে পরার মতো।
ইশিতা সামলে নেয়, বলে, আপনি তো মাথায় টুপিও দেন না, দাড়িও রাখেন না। তো সেজন্য আপনার গুনাহ হয় না।
লোকটি, আপা, আমি যা বললাম আপনার ভালোর জন্যই বললাম এখন বাকি আল্লাহ্র ইচ্ছা।
ইশিতার রাগ হয়, সে বলে, ইসলামে মেয়েদের পর্দার নির্দেশ যেমন আছে, ছেলেদের জন্যও নির্দেশ আছে যে, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে আবনত রাখে।
ইশিতা রাগি পায় কাজে এগোয়। কেন জানে না তার এক ধরনের বিরক্তি লাগে, রাগ লাগে। মনে হয়, লোকটার চাহনিতে একধরনের অদ্ভুত কৌতুক যেন ইশিতাকে সবখ নিতে পেরে খুব খুশি।
৬.
ডিরেক্টর স্যার ধার্মীক মানুষ। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পরেন। তার ওযু কখনো ভাংগে না। বিভিন্ন মিটিংএ তিনি এসমস্ত কথাগুলো উল্লেখ করেন। ইশিতা ভাবে আহা! আসলেই কতই না পরহেজগার ব্যাক্তি!
তিনি অত্যন্ত চালাকও বটে। দক্ষতার সাথে তিনি এত বড় একটা প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছেন।
একটা বিষয় শুধু ইশিতা বুঝে না, তার কাজে ডিরেক্টর স্যার খুশি নয় কিন্তু কেন। সে তো প্রতিটি এসাইনম্যান্ট সাফল্যের সাথে সময়মত শেষ করে। তাহলে কি এই জন্য যে সে পর্দা করে না?
৭.
খুব মজা হয়েছে, ইশিতার এক মামাতো বোন এসেছে বরিশাল থেকে। সে দু’দিন ইশিতার বাসায়ই থাকবে। ইশিতার সে ছোট বেলার ঘনিষ্ঠ বান্ধবি। ইশিতা নিজের হাতে ওর বোন আর বোন জামাইয়ের জন্য হরেকরকম পদ রান্না করে। একদিনের ছুটিও নেয়। দু’ররবোন গভীর রাত পর্যন্ত চুটিয়ে আড্ডা দেয়। তারপর খুব ভোরে তার বোন আর বোন জামাইকে গাড়ীতে তুলে সে সেদিন একটু ভোর বেলাতেই অফিসে পৌছে যায়।
তখনও ৮টা বাজেনি। ইশিতা অফিসে তার রুমে এসে ঢুকেছে। সে তার রুমে এসে লাইটও জ¦ালায় না। এই ভেবে যে, থাক কিছুক্ষণ শুধু একটু একা আনমনে বসে কাটাই। তখনও অফিস ফাকা। শুধু গার্ড আর ক্লিনার খালা আছে। গার্ড লোকটি এই অফিসেই থাকে। ক্যানটিনের পাশের একটি ছোট্ট ঘরে ঘুমায়। ইশিতার অফিস রুমের তিনদিকে দেয়াল একপাশে ঘোলাটে গ্লাস আর গ্লাসের দরজা। ইশিতা রুমের ভিতর থেকে দেখে খালা অফিস মব করছেন, ডিরেক্টর স্যার এই এপার্টমেন্টে ঢুকেই, খালাকে গাল ধরে হাস্যরস করে বললেন, হায় ! খালা কি খবর। খালা রেগে, অভিমান করে উত্তর দেয়, এইরম করবেন না ছে। আমার এই সব ভাল্লাগে না। ইশিতা তো অবাক। এমন একজন পরহেজগার মানুষটা হঠাৎ এমন করল কেন? হয়ত তার কোনো ভূল।
দুপুরে ক্যানটিনে খেতে সবাই একসাথে খাচ্ছে। এই অফিসে সব লেভেলের মানুষ একই টেবিলে বসে খায়। ইসলামী মূল্যবোধ রক্ষা করে। সবাই এখানে এক, কেউ ছোট কেউ বড় নয়। ডিরেক্টর স্যার এসেছেন খেতে, তাকে খেতে আসতে দেখে, রিসেপসনের সুরাইয়া তার নিজের বানানো একবাটি পায়েস নিয়ে এসে হাজির ডিরেক্টর স্যারের জন্য। ডিরেক্টর স্যার পায়েস মুখে দিয়ে আদুরে হেসে বললেন অপূর্ব হয়েছে, সুরাইয়া একটি লক্ষি মেয়ে। ইশিতা আপনি পায়েস রাধতে জানেন? ইশিতা বলে জি¦ স্যার এতগুলো বছর ধরে সংসার করি পায়েস রাধতে না জানলে চলবে। সুরাইয়া বলে আপু আপনিও একটু খেয়ে দেখেন। ইশিতা আগ্রহ ভরে পায়েস নেয়, মুখে দিতেই হোচট লাগে, ওমাগো এ পায়েস মনে হয় চিনি দিয়ে নয়, লবন দিয়ে বানানো। ইশিতা হেসে বলে, কি ব্যাপার সুরাইয়া তুমি মনে হচ্ছে, চিনির জায়গায় ভূলে পায়েসে লবন দিয়েছ। সুরাইয়া, না আপা স্যার তো এমন পায়েসই পছন্দ করেন তাই এমনি করে বানিয়েছি। উনি তো মিষ্টি কম খান। ডিরেক্টর স্যার, দেখলেন ইশিতা সুরাইয়া আমার কতো খেয়াল রাখে। এখন থেকে আপনিও এমনি করে আমার কথা ভাববেন, কি বলেন। ইশিতা: স্যার, আপনাকে খাওয়াবো বলে যদি এমন করে পায়েস রান্না করি তাহেল সেই পায়েস আমার বর আর আমার বাচ্চারা খাবে না। আমি শুধু আমার বর আর আমার বাচ্চাদের জন্য ভালো রান্না করি, অন্য কারো জন্য রান্না করলে আমার রান্নায় স্বাদই আসে না। ডিরেক্টর স্যার: দুর মেয়ে তোমাকে দিয়ে কিছুই হবে না।
৮.
কঠিন সময় যাচ্ছে। অফিসে সকলে অক্লান্ত পরিশ্রম করছে তবুও সেলস বাড়ছে না। এই নিয়ে দফায় দফায় মিটিং চলছে। শেষ বিকেলে মিটিং শেষে ডিরেক্টর স্যার বললেন, তাড়াতাড়ি গাড়ী বের করতে বলেন আমি এখনই বের হব, সন্ধ্যায় মিটিং আছে।
ইশিতা রুমে ঢুকেই পিএবিএক্র এ ড্রাইভার ভাইকে বলে তাড়াতাড়ি গাড়ী বার করেন স্যার ধানমন্ডিতে মিটিং এ যাবেন। এই বলে ইশিতা নামাজ পড়ে, সব গুছিয়ে নেয়, বাড়ী ফিরতে হবে, আজ অনেক দেরী হয়ে গেছে। ক্লান্ত পায়ে প্রধান ফটক পর্যন্ত যেয়ে, হঠাৎই মনে পরে, আরে ডিরেক্টর স্যারের রুমে না ওয়াল ম্যাট লাগাচ্ছিল, দেখি তো কেমন হলো, ভালো না লাগলে, কালকে হাজারো কথা শুনতে হবে। সে ডিরেক্টর স্যারের রুম এক ধাক্কায় খুলে, দেখে, ওমা, স্যার দরজার শব্দ পেয়ে এক ধাক্কায় সুরাইয়াকে তার বুক থেকে সরাচ্ছেন। ইশিতা তরিঘরি করে, বের হয়ে আসে, ওমা একি দেখল সে?
সুরাইয়া মেয়েটার যথেষ্ট সাহস, সে ইশিতাকে ফলো করে, বলে, আপা স্যারের সাথে কিছু কাজ ছিল? সে হয়ত বুঝার চেষ্টা করছে ইশিতা কি ভাবল? ইশিতাঃ আমি স্যারের ঘরের ওয়ালমেট কেমন হয়েছে তাই দেখতে গেছিলাম। তা তুমি ওখানে কি করছিলে? সুরাইয়া লজ্জিত হাসি হেসে বলে, স্যার ডাকল তাই।
আর কোনো কথা হয় না।
ইশিতা বুঝতে পারে ধর্মীয় পোশাকের আড়ালে মানুষে বিশ^াস পেয়ে, ভদ্রলোক যে আনন্দ উপভোগ করছেন তা হয়ত ও পোশাক না পড়লে সম্ভব ছিল না।