এখন আমি আঠাশ। বিয়ের জন্য পারফেক্ট এর চাইতে বেশিই বয়স। আর কদিন পর তিরিশ হয়ে যাব। (চিন্তার বিষয) গত চার বছর ধরে আমার মা আমার পিছনে পড়ে আছেন যাতে আমি বিয়ে করে ফেলি। এক মা হলে তাও রক্ষে ছিল। সাথে আমার মাসীরা দোসর-আমার তিন মাসী। আমি মাকে কখনো বলিনি যে আমি বিয়ে করব না। শুধু বলি যে আমাকে আগে মনে হতে দাও বিয়েটা আমার করা উচিত। আসলে আমি নিজেকে কোনদিন ঝকমকে শাড়ি পরে,এক গা গয়না পরে বিয়ে করছি-এই দৃশ্যে কল্পনা করতে পারিনি। rather এখনো পারিনা। মাকে অনেকবার বোঝানোর চেষ্টা করেছি বটে কিন্তু… হতে পারে মায়ের জায়গায় মা ঠিক। মা হয়ত মেয়ের জন্য একজন companion চান যাতে তার মনে হয় এই এত্তবড় পৃথিবীতে তার মেয়ে একা নয়।কিন্তু আমি তো বিয়ে করার urge টাই ফীল করি না।
যাই হোক গত কয়েক বছরে মা এবং মাসীরা আমাকে বিয়ে করার উপযোগিতা নিয়ে যে সব উপদেশগুলি দিয়েছেন সেইগুলি নিম্নরূপ :
১. এই বয়সে (২৪-২৮) মেয়েদের সবথেকে বেশি সুন্দর লাগে। বয়স বাড়লে লাবণ্য কমে যেতে থাকে। তখন বিয়ে করতে কত সমস্যা হবে। আহারে বেচারী মা। আসলেই তো লাবণ্য কমে গেলে আর সেই মেয়েকে কে বিয়ে করে। ছেলে হলে তাও নয় ভালো চাকরি ভালো মাইনে টা ম্যাটার করে-কিন্তু মেয়েদের ত্বক,চুল,নাক,চোখ আর স্বাস্থ্য (পড়ুন ফিগার যেইটা আবার ৩৬-২৪-৩৬ হলেই সবচেয়ে ভালো) ছাড়া আর আছেটাই বা কি!
এই প্রসঙ্গে একটা গল্প মনে এলো। বছর দুই আগে আমার মা যখন আমার বিয়ে দেবেন বলে মনস্থির করেই ফেলেছেন তখন একসময় পাত্র খুঁজতে পেপার এ add দিলেন। অনেক লোকজন মাকে ফোনে করলেন। সম্ভাব্য জামাইদের প্রোফাইল দেখে আমার মা তো খুশিতে আত্মহারা। রোজই ফোনে মা নতুন নতুন ছেলেদের গল্প শোনাতেন। আমার মজাই লাগত। একদিন মা বললেন একজন পাত্রের বাবা কে তিনি আমার ফোনে নম্বর দিয়েছেন। তা একদিন অফিস থেকে ফেরার পর সেই ভদ্রলোকের ফোন পেলাম।
-হ্যালো মামনি,তোমার মা আমাকে তোমার নম্বর তা দিয়েছেন।
-হ্যা কাকু বলুন।
-আমার ছেলের কথা নিশ্চয়ই মায়ের কাছে শুনেছ। তোমার কথাও মা বলেছেন আমাকে। তাহলে তো একবার দেখা করতে হয়।
বিয়ে তো আমি করব না। মা add দিয়েছেন মোটামুটি নিজের ইচ্ছেতে। কিন্তু এতবড় একজনকে তো সেটা বলা খুব চাপ। যতই হোক ওনার তো কোনো দোষ নেই।
-না মানে কাকু আমি এখনি বিয়ে করব না। মাকে বলেছিলাম। কিন্তু মা শোনেননি।
-সেকি মামনি,এইটাই তো বিয়ে করার পারফেক্ট বয়স। এই বয়েসেই মেয়েদের রূপ লাবণ্য থাকে। এর পর তো আর দেখতেও ভালো লাগবে না। তখন আর পাত্র পাবে ভালো!
নাহ রাগ হচ্ছে। কিচ্ছু করার নেই।
-আচ্ছা কাকু,ধরুন আপনার ছেলের বিয়ে দিলেন একটি রূপ-লাবণ্যময়ী মেয়ের সাথে। কিন্তু আর পাঁচ বছর পর তো সেই রূপ লাবণ্য স্বাভাবিকভাবেই কমে যাবে। তখন কি হবে ?আপনার ছেলের কি আবার বিয়ে দেবেন ?
-না মানে আমি ওভাবে বলিনি। আচ্ছা মামনি আমি পরে ফোনে করব।
হয়ত তিনিও খারাপ মনে বলেননি কথাটা। একটা খুব সাধারণ কথা তিনি কিছু না ভেবেই বলেছেন। এমনটাই তো সবাই বলে থাকে। এইটাই তো norm.
সে যাক,মোদ্দা কথা -কুড়ির কোঠায় বয়স টা থাকতে থাকতে বিয়ে করার একটি প্রধান কারণ-রূপ-লাবণ্য। সেইটি ফসকে যাওয়ার আগেই একটি ছেলে ধর(মেয়েদের কথায় বলছি কেননা ছেলেদের বিষয়টা আমি ভালো জানিনা) এবং ঝুলে পড়। তারপর চুলোয় যাক companionship .
অ্যাডজাস্টমেন্ট । এই একটি শব্দ তো আছেই। তাই সত্যি যদি companionship চুলোয় যায় কুছ পরোয়া নহি। এই বিষয়টা কিছুতেই আমার মাথায় ঢোকে না। একজন মানুষ দিব্যি সুখে শান্তিতে থাকতে হঠাত অ্যাডজাস্টমেন্ট করার জন্য বিয়ে করতে চাইবে কেন ?এই প্রশ্ন করলে আমার যাবতীয় মাসীর দল ও চুপ করে যান। এবং শেষে বেদবাক্যের মত যেটি বলেন সেটি হলো -“আল্টিমেটলি তো অ্যাডজাস্ট করতে হবে। বিয়ে মানেই তাই। মেয়েদের অনেক ছাড়তে হয়। তবেই বিয়ে সুখের হয়। “কি মুশকিল -এ যেন বাঁশ তুমি কেন ঝাড়ে বলে নিজের ঘাড় পেতে দেওয়া।
২. “বাবা মায়ের কর্তব্য মেয়ের বিয়ে দেওয়া। আমাকে তুই এই কর্তব্য করতে দিবিনে? ” ছলছল চোখে এই বাক্যটি দিনে চার বার এবং পরিচিত যে কারো বিয়ের খবর পেলেই “তুই তো আমাদের ভালইবাসিস না। তোর থেকে ছোটরা সব বিয়ে করছে। আমার আর তোর্ বিয়ে দেওয়া হবে না। তোকে থিতু হতে দেখা হবে না।” বলে দীর্ঘশ্বাস ফেলা-এইটা মায়ের প্রিয় কাজগুলির মধ্যে একটি।
কি মুশকিল। মায়েরা বোঝেনা তারা কাঁদলে আমাদের মনে হয় সারা পৃথিবী চুলোয় যাক মা কান্না থামাক। বিয়ে করার সাথে আসলেই কি settle down করার সম্পর্ক আছে? আর বিয়ে করলেই কি থিতু হয়ে যাওয়া হলো?প্রত্যেকটা মানুষের তো আলাদা আলাদা রকম ইচ্ছে অনিচ্ছে থাকবে। একটা বয়সের পর সবাই তো আলাদা আলাদা মানুষ। তাদের চিন্তা,মনন,ইচ্ছে প্রত্যেকটা আলাদা। বাবা মা তো আমাদের বড় করে দিয়েছেন। যদিও বা তাঁদের কর্তব্য পালন করতে দেওয়ার জন্য বিয়েটাও করে ফেলি ,আমার বাকি জীবনটাও কি তাঁরা কাটিয়ে দেবেন আমার হয়ে ?
৩. তুই বিয়ে কর। যা চাইবি সব কিনে দেব (এইবারে ঘুষ)
কিছুক্ষণের জন্য চোখ বন্ধ করে ভাবতে মন্দ লাগে না…
-তাহলে ওয়ার্ল্ড টুর এ যাব।
-বিয়ে কর যেখানে যেতে চাইবি আমি টিকেট কেটে দেব।
নাহ এ ভবী ভুলবার নয়!
৪. এরপর দৃশ্যে মাসিদের অবতারণা-
-বিয়ে কর। একটা ছানাপোনা হোক। আমরা মানুষ করে দেব। ঠাকুমা দিদিমা লাগে না বল ছেলেপুলে মানুষ করতে?
এক রামে হয় না লক্ষণ দোসর। বিয়ে করার কথাটাই বেশ গুরুপাচ্য।আবার ছানাপোনা !
৫. “আমাকে সবাই জিজ্ঞেস করে মেয়ের বিয়ে দিচ্ছেন না কেন। আমার মেয়ে আমার কোনো কথা শোনে?” আবার ফোঁস !:(
-মা,তুমি থামবে?আচ্ছা এই যে আমি তো ভালো আছি ,আনন্দে আছি। তোমার আনন্দ হয় না ?
-সে তো জানি। আনন্দ হবে না কেন ?কিন্তু একটা বিয়ে কর। দেখবি সাথে কেউ থাকলে আরো ভালো লাগবে।
৬. “বাবু,বয়স হলে কাউকে লাগে তো বল। আমরা না থাকলে এতবড় পৃথিবীতে একা হয়ে জাবি ?”
“তাহলে পরে বিয়ে করব। যখন একা লাগবে খুব। ”
“তোমায় আর বিয়ে করতে হবে না। ৪০ বছর বয়সে বিয়ে করবি?তখন বিয়ে করে কি লাভ?”
আসল কথাটা সঙ্গী নয়,আসল কথা বিয়ে,বিয়ের পরে ইয়ে,একটা বাচ্চা ,একটা রমরমা সংসার।
আর পতির পুণ্যে সতীর পুণ্য লাভ।
এমনও নয় যে আমি ভেবে নিয়েছি বিয়ে করবই না। সবসময় ভেবেছি আচ্ছা করব কিন্তু কখনো মনে হয়নি বিষয়টার জন্য আমি prepared .হয়ত কোনো মানুষই বিয়ে করার জন্য কখনই prepared হয় না। তবু এএকজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ একা থাকতে চায় না অন্য কারো সাথে থাকতে চায় এইটুকু decide করার অধিকার তো তারই থাকার কথা। suggestions তো সবাই দিতেই পারেন। কিন্তু জোর কি করতে পারেন ! তাঁরাই বলেন যে বিয়ে সারা জীবনের ব্যাপার, অনেক দায়িত্ব আবার তারাই সেই কাজটি করার জন্য ফতোয়া জারি করেন।
মায়ের সাথে প্রায়ই ঝগড়া করি,ফোনে কেটে দি,এই একই কথা বললে কথা বন্ধ করে দেওয়ার ধমকি দি। কিন্তু দিনের শেষে ভারী খারাপ লাগে। আহারে মায়েরা আমাদের এতটাই ভালবাসেন যে তাঁরা চান পৃথিবীতে সবসময় আমাদের জন্য ভালবাসা থাকুক,একজন কারো ভালবাসা মায়ের মত করেই আমাদের ঘিরে থাক। কিন্তু আসলেই কি সেটা সম্ভব !
বোকা মা গুলো ভাবেন বিয়ে করলেই সুখের ঝরনাধারা বৃষ্টি হয়ে মাথায় ঝড়ে পড়বে।
Marriage is a great institution, but I’m not ready for an institution.
– Mae West