দিল্লি রোডের একপাশে থাকা রাজহাটকে আজ থেকে দশ বারো বছর আগেও লোকে গ্রাম বলতো , যদিও ইদানিং কাছাকাছি কয়েকটা ইঞ্জিনিয়ারিং বা পলিটেকনিক কলেজ খোলার পরে রাজহাটকে মফস্বল শহরই বলা চলে | প্রবীর কাছাকাছি একটা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ম্যাথস পড়ায় | আগে প্রবীর কল্যাণীর একটি প্রাইভেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়াতো | বর্ণালী এসএসসিতে এখানে একটা গার্লস স্কুলে চাকরি পাওয়াতে প্রবীর কল্যাণীর লেকচারারের পোস্ট ছেড়ে এখানে এসেছে | প্রবীরের আগের কলেজে একটা বেশ সুন্দর অ্যাডজাস্টমেন্ট হয়ে গেছিলো কিন্তু বর্ণালীর জন্য তাকে এখানে আসতে হলো |কেননা হাজার হোক বর্ণালীর সরকারি চাকরি | প্রথম প্রথম একটু আধটু অসুবিধা হলেও জায়গাটা দুজনের ভালোই লেগে গেছে | বাড়িওয়ালা বাসববাবুও যাকে বলে বেশ মাইডিয়ার মানুষ ,হেল্পফুল -প্রবীররা ওনারই একতলায় ভাড়া থাকে |প্রবীরদের পৈতৃক বাড়ি হালিশহরে | প্রবীরের মা মারা যাওয়ার পরে প্রবীর ওর বাবা মানে অবনীবাবুকে জোর করে ওদের কাছে নিয়ে আসে | অবনী হালিশহরে মিউনিসিপালিটিতে ট্যাক্স ডিপার্টমেন্টের বড়োবাবু হয়ে অবসর নেন | অবনীর সৎ, ঋজু স্বভাবের জন্য ওখানে তাঁকে অনেকেই শ্রদ্ধা করতো | এখনো কোনো কাজে গেলে চা না খাইয়ে পুরোনো সহকর্মীরা তাঁকে ছাড়েন না | তাঁর চাকরি ছাড়া শখ ছিল খেলাধুলাতে | এখনো টিভি চালিয়ে সময় পেলেই নানা খেলার প্রোগ্রাম দেখেন | এই বয়সের গড়পড়তা মানুষের মতো সন্ধ্যে হলেই টিভিতে মেগা সিরিয়াল খুলে টাইমপাস্ তাঁর ধাতে সয় না |
প্রবীর বা বর্ণালী নিজের কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকে আর উইকেন্ডে তাদের মারুতি অল্টো নিয়ে কখনো দিল্লি হাইওয়ে দিয়ে কিছুটা এদিক সেদিক লং ড্রাইভ করে আসে বা কখনো কলকাতা থেকে ঘুরে আসে | অবনী কিন্তু যেতে চান না,ওদের তিনি কিছুটা প্রাইভেট স্পেস দিতে চান | প্রবীর বিশেষ করে বর্ণালীও জোর না করলে তিনি হালিশহর ছেড়ে এখানে আসতেন না | উনি এখানেই হাঁটাহাঁটি করেন | জায়গাটা এখনো একটু ফাঁকা ফাঁকাই আছে – তাই হাঁটতে মন্দ লাগে না | কাছে একটা ছোট পার্ক আছে | সেখানে বিকেলে বসে আড্ডা দিতে দিতে দিল্লি রোড দিয়ে দ্রুতগতিতে গাড়ির চলে যাওয়া দেখতে তাঁর দিব্যি সময় কেটে যায় কোথাদিয়ে !
অবনীর কয়েকজন প্রৌঢ় মানুষের সঙ্গে প্রায় প্রতিদিনই পার্কে আড্ডা চলে | নানা বিষয়ে আড্ডা মারতে অবনীর ভালোই লাগে – সময়টাও মন্দ কাটে না | অবনী এবং তাঁর বন্ধুরা কেউই পুরোনো সময়ের কথা ভেবে হাহুতাশ করেন না বরং এখনো তাঁদের নানা বিষয়ে আগ্রহ আছে |কিন্তু আড্ডার তাল কাটে সেদিনগুলোতেই যেদিন তিনকড়িবাবু আসেন |পারতপক্ষে অবনীর একটু বিরক্তিই লাগে তিনকড়িকে-বড্ডো হামবড়াই ওনার | তিনকড়ির দিল্লি রোডের ওপর একটা পেট্রল পাম্প আছে | রাজহাট বড়ো হবার সাথে সাথে এখানে লোকবসতিও বাড়ছে , তাই থাকার চাহিদাও বাড়ছে | তিনকড়ির দুই ছেলে প্রোমোটারি করে | সোজাকথায় তিনকড়ি বেশ প্রভাবশালী | তিনকড়ি বাবুর কথাবার্তার একটাই এজেন্ডা -রাজনীতি | তিনকড়ি আগে লালপার্টিতে ছিলেন | তখন মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ,সাম্যবাদ ইত্যাদি নিয়ে তর্ক জুড়তেন যা অবনী তাঁর এখানকার দুএকজন বন্ধু যেমন বিপ্লববাবু , রাজীব এনাদের কাছ থেকে শুনেছেন | এখন ভোল বদলে আবার সবুজ পার্টির একনিষ্ঠ কর্মী – ধীরে ধীরে পার্টিতে প্রভাবশালী হয়ে উঠছেন | হয়তো পরের বার পঞ্চায়েত ভোটেও সবুজ পার্টির হয়ে দাঁড়াতে পারেন |এখন তিনকড়ি সময় পেলেই কেন্দ্রের শাসক দল, যাঁরা আবার কিছুটা হিন্দুঘেঁষা – তাদের তুমুল সমালোচনা করেন | তিনকড়ি প্রায় বক্তৃতা দেবার ঢঙে বলতে থাকেন এরা দেশটাকে পিছিয়ে দিচ্ছে,মধ্যযুগে নিয়ে যাচ্ছে | কিন্তু আমরা রবিঠাকুর, নজরুলের মাটির মানুষ – তাই ধর্মের নাম বিভেদ আমাদের মানে এই পশ্চিমবঙ্গের রক্তে নেই,আমরা একই বৃন্তে দুটি কুসুম ইত্যাদি ইত্যাদি ! অবনীর এসব ভালো লাগে না | তাই তিনকড়ি এলে তিনি আজকাল একটু সরে গিয়ে বাচ্চাদের খেলা দেখেন আর মাঝে মাঝে তালি দিয়ে তাদের উৎসাহ দেন |
আর ভালো লাগে না কাছাকাছি যদি বিশু বা তার দলবল আড্ডা দেয় | বিশু , ভালো নাম বিশ্বজিৎ | অবনী শুনছেন বিশুর বাবা নেই – ওর মা একটি প্রাইমারি স্কুলের টিচার ছিলেন,এখন রিটায়ার্ড | কিন্তু বিশু ধীরে ধীরে বিপথে চলে যায় | প্রথমে জোর জবরদস্তি চাঁদা দেয়া নিয়ে শুরু করে এখন প্রোমোটারদের কাছে তোলা আদায় থেকে সিন্ডিকেট – বিশু পাড়ার দাদা বিশেষ | তিনকড়ির ছেলেদের সাথে বিশুদের সম্পর্ক খারাপ | এরা একে অপরকে এড়িয়ে চলে | লোকমুখে শোনা বিশুর প্রোমোটারির তোলা আদায় থেকে রেহাই পাবার জন্যই নাকি তিনকড়ি সবুজ পার্টিতে ঢোকেন | বিশু তখন সবুজ পার্টির ছাতার তলায় ছিল | কিন্তু তিনকড়ি প্রভাব খাটিয়ে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ তুলে বিশুকে সবুজ পার্টিথেকে বের করেন | বিশুরা তখন কয়েকদিন কোনঠাসা ছিল | ধীরে ধীরে কেন্দ্রীয় শাসক দলের প্রভাব রাজহাটে বাড়তে থাকলে বিশু নতুন আশ্রয় খুঁজে পায় |একবার তোলা আদায়ের অভিযোগ পেয়ে পুলিশ তুলে নিয়ে যাওয়ার পরে বিরোধী দল থানা ঘেরাও করে ছাড়িয়ে আনে | কারণ বিগত লোকসভা নির্বাচনের পর কেন্দীয় শাসক দলের প্রভাব রাজহাটে যথেষ্ট বেড়েছে !সেই থেকে কেউ আর ওকে ঘাঁটায় না | বিশু না বললেও ওর দলের কিছু ছেলে মেয়েদের ওপর মাঝে মাঝে আদিরসাত্মক ইঙ্গিত দিলেও কেউ কিছু বলে না |কলেজের মেয়েরা বা বর্ণালীরা বিশুদের ঠেক এড়িয়ে চলে | অবশ্য বর্ণালী একদিন রাতে খাবার টেবিলে বলছিলো – সবাই সমান | তাঁদের স্কুলের গেটের সামনে সবুজ পার্টির কিছু বেকার যুবক বসে থাকে আর ছুটির সময় উঁচু ক্লাসের মেয়েগুলোর দিকে কুৎসিত অঙ্গভঙ্গি করে | এমনি বর্ণালীদের মতো টিচাররাও ওদের কমেন্টের হাত থেকে সবসময় রেহাই পায় না ! প্রবীর একটু নির্বিরোধী ছেলে – সে বলে ওরকম যে এখনই প্রথম ঘটছে তা কিন্তু নয় | এই বলে সে প্রসঙ্গত চাপা দেবার চেষ্টা করে | বর্ণালী বলে কিন্তু এখন বেড়ে যাচ্ছে | আর খালি কমবয়সী নয় – হেড দিদিমনি একটু পৃথুলা বলে ওনার শরীর নিয়েও এমন মন্তব্য ছেলেগুলো করে ! হেড দিদিমনি তো ওদের মায়ের বয়সী প্রায় |অবনী বলেন এটাই তো হবার | আমরা সবাই গা বাঁচিয়ে চলবো – আর সমাজবিরোধীরা দাপিয়ে বেড়াবে !
পার্কের পাশে ইসমাইলের ফাস্ট ফুডের দোকান | তার দোকান এমনিতে ভালোই চলে -বিকেলে রোল আর রাত্রে সে বিরিয়ানি আর চিকেন চাপ বিক্রি করে | মাঝে মাঝে বিশুরা ইসমাইলের দোকান থেকে খাবার নিয়ে পুরো পয়সা দেয় না – সেই নিয়ে কিছু বাকবিতন্ডা হয় | বিশু বলে বেশি বললে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেব – বলে হাহা করে হেসে ওঠে | বা কখনো সখনো বলে মুসলমানের বাচ্চা – বামুন কায়েতকে খাওয়াচ্ছিস ! কত সৌভাগ্য – কোথায় বিনেপয়সাতে খাওয়াবি !! একদিন ইসমাইল বলেই ফেলে – দেখো তোমাদের জাত যাচ্ছে কিনা ? বিশু বলে যেতে দে – তোর কিছু পুণ্যের জন্য আমার নাহয় কিছু পাপই হলো | তাইতো তোকে পয়সা দেই না – তোর বেহেস্তে যাবার ফিস !! কখনো ইসমাইল চুপচাপ শোনে, ওর মুখ থমথম করে রাগে নাকি লজ্জায় ? তা অবনী জানেন না -কিন্তু অবনীর খারাপ লাগে | তিনকড়ি বলেন এইসব দেখে আমার আজকাল নিজেকে বাঙালি বলে পরিচয় দিতে লজ্জা করছে ,আরো লজ্জা করে যে আজকাল বাঙালিরা এদেরকে সমর্থন করছে ! যদিও সবই তিনকড়ি বলেন বিশুর কান বাঁচিয়ে ! অবনীর তিনকড়িকে বলতে ইচ্ছা করে আপনার দলের কার্যকলাপও তো খুব একটা আলাদা দেখিনা | কিন্তু কিছু বলেন না – কিহবে অনর্থক ঝামেলা বাড়িয়ে |
ইসমাইল বিশুর দল এবং তিনকড়ির দল উভয়কেই নির্বিবাদে চাঁদা দিয়ে থাকে | অবনী ভাবেন এছাড়া আর উপায় কি ! পার্কের পাশে ইসমাইলের ফাস্টফুডের গুমটির নিশ্চয় সব প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নেই | একদিন পার্ক থেকে বেরোনোর সময় অবনী তিনকড়ির উঁচু গলার আওয়াজ পান | তিনি দেখেন যে তিনকড়ি ইসমাইলের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে খুব চিৎকার চেঁচামেচি করছেন | বিপ্লববাবু দঁড়িয়ে ছিলেন – অবনী জিজ্ঞেস করেন আজ আবার কি হলো ? বিপ্লববাবু বলেন -“সামান্য ব্যাপার – মনে হয় তিনকড়ি দুতিনটে একশো টাকার নোট ইসমাইলকে দিয়েছে যেগুলো প্রায় ছেঁড়া | ইসমাইল চেঞ্জ করে দিতে বলছে তাই নিয়ে ঝামেলা |”
আচমকা অবনী শুনতে পান ইসমাইলের গলা চড়ে | সে তিনকড়িকে বলতে থাকে আপনি আগেও কয়েকবার এরকম ছেঁড়া নোট দিয়েছেন আমাকে | আজকাল ব্যাংকেও এরকম ছেঁড়া নোট চেঞ্জ করা ঝামেলা | আপনি ঠিকঠাক নোট দিয়ে তবে খাবার নিয়ে যান | তিনকড়ি চেঁচিয়ে বলে ওঠে -“ঠিকঠাক নোট মানে – এগুলো কি জাল নাকি ? ওসব তোদের ব্যবসা হতে পারে |” ইসমাইল বলে -“অত কথা জানিনা | আপনি নোট চেঞ্জ করে দিন ব্যাস !”তিনকড়ি বলে -“দেবোনা – কি করবি ?” ইসমাইল বলে তালে খাবারও আমি দিতে পারবো না | এই বলে সে খাবারের প্যাকেট কেড়ে নেয় তিনকড়ির কাছ থেকে | টেনে নিতে গিয়ে তিনকড়িকে সে ধাক্কা দেয় | হয়তো উত্তেজনার বশে ধাক্কাটা একটু জোরেই হয়ে যায় | তিনকড়ি ছিটকে পড়েন মাটিতে | তিনকড়ি রাগে অগ্নিশর্মা চেঁচিয়ে ওঠেন -” হারামি মুসলিমদের বাচ্চা – তোর এতো সাহস ! তোকে দয়া করে এখানে থাকতে দিচ্ছি , ব্যবসা করে খেতে দিচ্ছি – আবার আমাকেই ধাক্কা দিচ্ছিস!”
কোথা থেকে কিছু লোক জুটে গেলো – যাঁরা ইসমাইলের দোকানের সসের বোতল , চাটু,টিসু পেপার ,কাগজের প্লেট সব তছনছ করে দিতে লাগলো | হটাৎ পিছন থেকে কে যেন গর্জন করে উঠলো -” থাম , থাম সব | আর একটা কিছু জিনিসে হাত দিলে হাত ভেঙে দেব ” | অবনী ঘাড় ঘুরিয়ে দেখেন – বিশু | তিনকড়ি বলে ওঠেন বিশু তোর সঙ্গে আমার কিছু হচ্ছে না | বিশু বলে আপনি কি করে ধরে নিলেন ইসমাইল আমাদের বন্ধু নয় ?তিনকড়ির লোকেরা বলে :”তুই নিজেকে সামলা,ভূতের মুখে রামনাম ! – ব্যাটা হনুমানের দল | যা ভাগ |” মুহূর্তের মধ্যে মারামারি শুরু হয় | তিনকড়ির একটা ছেলে একটা কোকের খালি বোতল বিশুর দিকে ছুঁড়ে মারে | বিশুর সাঙ্গপাঙ্গরা জুটিয়ে ফেলে চেন , হকি স্টিক | তিনকড়ির দল একটু বেকায়দায় পড়ে | কিন্তু তারা ইসমাইলের দোকান থেকে ছুরি, কাঁচের বোতল এলোপাথাড়ি চালাতে থাকে | জায়গাটা দ্রুত ফাঁকা হয়ে যায় | অবনী কৌতূহল মেটাতে পার্কের একটা বড়ো কৃষ্ণচূড়া গাছের পিছনে গিয়ে দাঁড়ান | হটাৎ দুবার তীব্র শব্দ হলো | অবনী বুঝলেন কেউ পেটো জাতীয় কিছু চার্জ করেছে | এ শব্দের অভিজ্ঞতা তাঁর আগেও একবার হয়েছে ! অবনী দেখলেন তিনকড়ির দল রণে ভঙ্গ দিয়ে পালাচ্ছে – তাঁর মানে বিশুরা কেউ বোমাবাজি করেছে | ইসমাইলের দোকানটা বেঁচে গেলো | অবনী দেখতে পান ইসমাইলের চোখ দিয়ে জল গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে |
অবনী বাড়ি ফিরে খাবার টেবিলে ছেলে আর বৌমাকে সব খুলে বলেন | প্রবীর বলে দেখো এখন আবার কদিন কি হবে | অবনী বলেন বিশুটা কিন্তু মানুষের মতো কাজ করেছে | ছোটবেলা থেকে হয়তো তেমন গাইডেন্স পায় নি – কিন্তু ভেকধারী তিনকড়ির তুলনাতে মনুষত্ব ,গুন্ডা হলেও বিশুরই বেশি | পরের দিন শনিবার | পার্কের বন্ধু বিপ্লব অবনীর বাড়ি এসেছেন |ওনার কাছ থেকেই অবনী জানতে পারেন যে পুলিশ এসে গুন্ডামি করার অপরাধে বিশুকে তুলে নিয়ে যায় | বিপ্লব অবনীকে বলেন: ” বিশুর গডফাদারও এবার বিশুর জন্য কিছু করবে না | ওদের দলের একটা নীতি আছে |” অবনী বলেন : “তিনকড়ি যদি একজন মুসলমান হতো আর ইসমাইলের বদলে একজন হিন্দু ছেলে যদি দোকানটার মালিক হতো তাহলে হয়তো বিশুর পার্টি বিশুকে আগের বারের মতো ছাড়িয়ে আনতো |” বিপ্লব বলেন :”তা আর বলতে ! কিন্তু এখন হয়তো ওকে বহিষ্কারও করতে পারে ! দেখুন কি হয় “? অবনী প্রবীরকে বলেন “এখানে থানাটা কোন দিকে “? প্রবীর বিস্মিত হয়ে বলে কেন ? অবনী বলেন “দেখি বিশুর জামিন করা যায় কিনা !” প্রবীর :” বাবা তুমি পাগল হয়েছো ? এসব ব্যাপারে কেউ জড়ায় ? বিশু এখন কারোরই কাছের লোক নয় | আর কারো না হোক বর্ণালীর অন্তত কথাটা একবার ভাবো !” অবনী আর কিছু বললেন না | প্রবীর দেখলো পরদিন মানে রবিবার বাবা সুটকেস গুছিয়ে বেরোচ্ছেন | জিজ্ঞেস করে “কোথায় যাচ্ছ ?” অবনী বলেন -“অনেকদিন হালিশহরের বাড়িটা তালাবন্ধ | তোর মায়ের স্মৃতিটাও ওখানে পড়ে আছে | আর তোর ভয় নেই -আমার যদি কিছু প্রয়োজন হয়, একতলাতে সুবীর আর ওর বৌ জবাতো আছেই | সত্যি বলতে এতদিন ভাড়া থাকতে থাকতে ওরা একরকম নিজের লোকই হয়ে গেছে | ” প্রবীর :”বাবা , তোমাকে কাল থানায় যেতে দেইনি বলে তুমি রাগ করে চলে যাচ্ছ ! ”
অবনী একটু থেমে বললেন :” না রে – হালিশহরে আমি প্রায় সত্তর বছর আছি | ওখানে আমাকে কারোর ভয়ে নিজের মনুষত্বের সঙ্গে হয়ত এতটা আপস করতে হবে না |আর যদি দেখি ওখানেও তাই করতে হচ্ছে – তবে তোর বাড়িটা তো রইলোই ! আবার না হয় ফিরে আসবো |”