বিষণ্ণ হৃদয় হেরি সূর্য অস্তগামী,

সন্ধ্যার অন্ধকার আসিতেছে নামি,

কনে দেখা আলোকেতে আদিত্য আঁখি,

বুঝি কোন নীড়হারা অসহায় পাখি।

দিবা অবসান কালে দৃষ্টি অরুণিমা,

যেন সে বিষণ্ণ এক করুণ প্রতিমা,

কনক আলোক মাঝে সুবর্ণ ছায়া,

সৃষ্টি করে ধরণীতে অনাবিল মায়া।

ধীরে ধীরে প্রস্থানে অরুণসারথি,

সপ্তঅশ্ব দিব্যরথে ভানু দিনপতি,

পশ্চিম গগনে তার মহিমা মিলায়,

ডুবিল বসুন্ধরা ঘোর তমসায়।

তটিনীর জলরাশি নহে দৃশ্যমান,

দূরে ওই শুভ্রতট অস্পষ্ট ম্লান,

প্রদীপ্ত আলোকরাশি সন্ধ্যার ভালে,

গিয়াছে মিলায়ে হায় কোন অন্তরালে !

অতীতের কথা বুঝি মনে পড়ে যায়,

মহামারী ছায়া যবে পড়েনি ধরায়।

অগ্নিদীপ্ত সূর্যালোকে ধরণীর প্রাণ,

দৃপ্ত ছিল ব্যাপ্ত ছিল তার অভিযান।

কলকাকলীতে ভরা সুখময় স্মৃতি,

নি:শ্বাসের অণুতে ছিল বাতাসের প্রীতি।

অসীম ঐশ্বর্যে ভরা সুন্দর ভুবন,

নিখিল ব্রহ্মাণ্ড মাঝে রূপ অনুপম।

যাহা ছিল কাল তবে আজ তাহা কোথা !

মায়াময়ী ধরণীতে শুধু নীরবতা।

কিবা দিবা কিবা নিশি তমসায় ঘেরা,

জীবন আজিকে বুঝি নির্ভরহারা।

সূর্যালোক আছে বটে নাহি রবিকর,

মর্তুকাম হায় যেন বিশ্ব চরাচর।

যন্ত্রণা মর্মস্পর্শী বিদীর্ণ হিয়া,

নির্বাপিত হবে নাকি প্রাণোচ্ছল দীয়া !

ধুলায় লুটায়ে হায় মানুষের শব,

চৌদিকে মর্মভেদী তীব্র আর্তরব,

আছে সূর্য আছে চন্দ্র নাই চন্দ্রমুখ,

রয়েছে জীবন তবে হারায়েছে সুখ।

চারিপাশে পড়ে আছে কত শূন্য গেহ,

শুষ্ক মরুভূমি সম নাই সেথা কেহ,

কালও ছিল প্রাণ জুড়ে আজ নিষ্পন্দ,

কোন্ বজ্রপাতে ছিন্ন প্রাণছন্দ !

কিন্তু অটুট কি রবে আর্তরব প্রভু !

মুক্তি কি মিলিবে না মোর ধরণীর কভু !

ঘনঘোর তমসায় আজি মানবের প্রাণ,

সুতীব্র যাতনায় হেরি ক্লিষ্ট কম্পমান।

অধরেতে নাহি হাসি মিলায়েছে সুখ,

হারায়েছে বুঝি আজি আশ্বাসের মুখ,

চরাচর ব্যাপী হেরি ব্যাকুল আনন,

শুকায়ে গিয়াছে হায় কুসুম কানন।

জননী ধরণী তুমি মৌন কেন কহ,

কি হেতু তোমার আজি এহেন বিরহ !

নহ তুমি প্রাণহীনাতুমি প্রাণময়ী,

দুষ্টের দমন শেষে হও মাতা জয়ী।

আলোহীন দিবসে তুমি জ্বালাও আলোক,

আনন্দ উৎসবে যেন ভরে দ্যুলোক।

ধূলিম্লান পাপধারা ধৌত করি আজি,

প্রস্ফুটিত কর প্রাণে কুবলয় রাজি।

তোমার খবর কিআমি ভাল আছি,

দুটি কথা দূর থেকেনাই কাছাকাছি,

দু চারটি তুচ্ছ কথাজীবনের সম্বল,

মানে না কাহারো মনদু নয়নে জল।

অতীতের কথা ভাবি কাঁদিছে হৃদয়,

বিরহ বিষাদে বক্ষ সিক্ত আজি হায়,

গম্ভীর প্রকৃতি যেথা প্রশান্তি কোথা !

জীবন স্তব্ধ বুঝিনি:সীম ব্যাথা।

জানি না বাজিবে কবে মঙ্গলধ্বনি !

শুভ্রশান্ত বেশে কবে আসিবে জননী,

দাঁড়াইবে সম্মুখে ধরিআনন্দমুরতি,

লভিবে জীবন এক নবতম গতি !

হৃদয়ে লালন করি এইটুকু আশা,

হারায়ে না ফেলি যেন জীবনের দিশা,

মহামারী মুক্ত হোক বসুন্ধরা এবে,

প্রেমডোরে বাঁধি যেন ভালবেসে সবে।

প্রকৃতির শান্তিসুধা পুন করি পান,

জাগরুক হোক শেষে মানবের প্রাণ,

নিশীথের বক্ষ ভেদী জ্যোতি প্রতিভাষ,

নবীন সূর্যোদয়ে জীবনের রাস।

ধূলিস্নাত ক্লেশ তাপ মনোরম বেশে,

মনোহর মুরতি যেন লভে অবশেষে,

রক্ষা করো হে মহিম তব অনন্ত সৃষ্টি,

প্রোজ্জ্বল হউক কল্য ঊষশীর দৃষ্টি।

Print Friendly, PDF & Email
Previous articleএক মূহুর্তের শিখা
Next articleএক মূহুর্তের শিখা (অধ্যায়-২)
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments