ডিসেম্বর মাসের এক বিকেল।। শীত টা যাবার আগে শেষ বারের মতো কামড় বসিয়ে যেতে চাইছে। অফিসের নিচে চা আর সিগেরেট হাতে তার এক কলীগের সাথে গল্প করছিল অমল। অমল মানে অমল কুমার বিশ্বাস। বছর ছাব্বিশের এক তরুণ। ঝকঝকে চেহারা, পরিষ্কার দাড়ি গোঁফ কামানো মুখ। পাঁচ ফুট সাত বা আট হাইট।। মাথার চুল গুলো একটু অবিন্যস্ত। চোখ দুটো একটু বোকাটা।। যেন সমাজ পরিবেশ বা আশেপাশের জটিলতা থেকে দূরে থাকা খুব ঠান্ডা ভাবলেশহীন অভিব্যক্তি ।। সত্যি অমল ছেলেটি ও ওরকম ই।। সেই কারণেই তার ই সমবয়সি বা তার থেকেও ছোট কোনো ছেলে অফিসে যে পরিমান উন্নতি র মুখ দেখেছে খুব ভালো background বা talent থাকা সত্ত্বেও সে একটু পিছিয়েই আছে।। তার ম্যানেজার অবিনাশ সোম ও মাঝে মাঝেই তাকে বলে অমল নিজেকে একটু groom করো তৈরি হও।। নিজের personality improve না করলে আগে যাবে কেমন করে।। অমল শোনে।। সে ভাবে চেষ্টা ও করে। পারে না। সে ছোট থেকেই খুব নরম স্বভাবের। 22 বছরের অভ্যাস হঠাৎ করে কি আর বদলানো যায়।।

যাই হোক এবার আসল গল্পে ফিরে আসা যাক।। কয়েকদিন আগে অফিসে একটা ব্যাপার হয়েছে।।এবং সেটাই আজকের গল্পের আলোচ্য বিষয়।।অমল এর প্রজেক্টে মাস তিনেক হলো বিকাশ বলে একটি ছেলে জয়েন করেছে।ছেলেটি একদম নতুন। এইটিই তার প্রথম প্রজেক্ট । ছেলেটি ভালো। smart মিশুকে আমুদে। একটাই সমস্যা তার। সে বড্ডো হুটহাট করে কাজ করে। তায় নতুন knowledge কম।।সুতরাং ছোট বড় ভুল করে বসে মাঝে মাঝেই। এরকমই দিন তিনেক আগে একটি বড় ভুল করে ফেলে সে। একটি complete wrong plan চলে যায় একদম end client এর কাছে। এবং ভুলটি ধরা পড়ে একদম শেষ মুহূর্তে। এরপর কর্পোরেট এ যা হয়।। escalation চলে যায় CTO লেভেল অব্দি।। জিনিস টা যদি implement হতো প্রচুর revenue loss হতো ক্লায়েন্ট এর।। তারা ছাড়বে কেন।। এবার ভুল যা যদিও বিকাশ এর ফেঁসে গেছে অমল।। কারণ সেই টিম লিড।। তাই end client এর কাছে যাবার আগে ফাইনাল চেক টা তার এ করার কথা।। অমল এর এই প্রজেক্টে experience অনেক বেশি।। বিকাশ সেই তুলনায় freshers।। সুতরাং সব দায় অমল এর।। প্রতিদিন মিটিং মেল কল।। জবাব দিহি করতে করতে তার প্রাণ ওষ্ঠাগত।। Project manager এর কড়া কথাও শুনতে হয়েছে তাকে।। এখন পরিস্থিতি এতটাই খারাপ অমল কে সম্ভবত project থেকে রিলিজ করা হবে।। শুধু তাই নয় কপালে জুটবে বাজে রিভিউ client এবং project manager এর।। এবং এটা অমল এর পক্ষে খুবই খারাপ।। বাজে review মানেই এই বছর কম increment , তার প্রমোশন টাও pipe line এ ছিল সেও গেল।।  অমল এতটাই সাদাসিধে সরল ও মুখচোরা সে সব দায় নিজের ওপর ই নিয়ে নিয়েছে। তাই এই release। অমল এই ব্যাপার টা নিয়ে অনেক ভেবেছে এবং মনকে এই বলে প্রবোধ ও দিয়েছে পরের project এ সে আর ভালো কাজ করবে এবং নিজেকে প্রমান করবে।
তিন দিন পরের কথা। আজ অমল এর এই প্রজেক্টে শেষ দিন। অফিসের গাড়িটা ড্রপ করে দিয়ে গেছে । রাতে খাওয়াদাওয়া করে ছাদের ঘরে একা সিগেরেট খেতে খেতে অমল এর নিজেকে খুব ছোট মনে হচ্ছে। সে কার কাছে হেরে গেল। বিকাশ এর কাছে, project manager এর কাছে,client এর কাছে। না অমল এদের কারোর কাছে হারেনি। সে হেরেছে নিজের কাছে। নিজের attitude personality আর ঠান্ডা স্বভাব এর কাছে হেরে গেছে সে। স্কুল কলেজে সে টপ হতে পারে কিন্তু কর্পোরেট লাইফে সে এখনো adjust করতে পারেনি।।
Print Friendly, PDF & Email
Previous articleকাঞ্চন সুন্দরী
Next articleকালি কলমের কাব্য
5 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments