দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা শুধিতে হইবে ঋণ!
হাতুড়ি শাবল গাঁইতি চালায়ে ভাঙিল যারা পাহাড়,
পাহাড়-কাটা সে পথের দু’পাশে পড়িয়া যাদের হাড়,
তোমারে সেবিতে হইল যাহারা মজুর, মুটে ও কুলি,
তোমারে বহিতে যারা পবিত্র অঙ্গে লাগাল ধূলি;
তারাই মানুষ, তারাই দেবতা, গাহি তাহাদেরি গান,
তাদেরি ব্যথিত বক্ষে পা ফেলে আসে নব উত্থান!

আপনাকে বাবু বা মালিক বলে ডাকা ওই মানুষ গুলো শ্রমিক। ওদের সংখ্যাটা লাখে, আর তাই আমাদের মত হাজারের শপিং মলের আতিশয্য জোটে।

আপনি আমি বাড়িতে বসে ২ বেলা পেট পুরে খেয়ে ফেসবুকের অন্তহীন পাতায় ২ কলম লিখেই খালাস। কিন্তু ওরা তারা যারা আমাদের ওই ২ বেলার খাবারটা যোগায়, ওরা তারা যারা আমাদের এই সুন্দর ঘর, বাড়ি, অফিস, আদালত, শপিং মল, মুভি থিয়েটের গুলো তৈরি করেছে, ওরা তারা যারা আমাদের এই কলম টি বা লেখার জন্যে কাগজটি তৈরি করেছে।

সমস্যাটা কোথায় বলুনতো? এখনি কিছু এরে বাছুর এসে প্রশ্ন ছুড়ে মারবে যে ফসেবুকে লিখতে কলম আর কাগজ কোথায় লাগে। মানছি লাগে না, কিন্তু ফোনে চার্জ দিতে ইলেকট্রিক লাগে, সেখানেও ওদের অবাধ বিচরণ। ওরা না থাকলে কিছুই থাকতো না আমাদের কাছে, কারন ঐ ভারী বিদ্যুতের পোল বা মোবাইলের টওয়ার গুলোও ওদের হতেই তৈরি।

ভাবুন স্যার, পেটের খিদে ভয় পায়না। পেটের খিদে দুর্ভিক্ষ মহামারী বোঝে না। পেটের খিদে লকডাউনের তাৎপর্য বোঝে না।

হয়ত বুদ্ধির জোরে ওদের দাবিয়ে রাখা হয়েছে সর্বকালে, কোনোদিন ওরা করেনি কোনো আবদার, দৈনিক পারিশ্রমিক টুকু ছাড়া কোনো অধিকার ওরা কনদিন দিন দাবী করেনি। একই সমাজের অঙ্গ হলেও পরে থেকেছে সমাজের কোনায় আগাছার মতন। ওরা ক্ষেপে গেলে কিন্তু ভারী পড়বে গোটা সভ্য সমাজের ওপর।

কি চায় ওরা? কি করবে গ্রামে ফিরে? হাজার চেষ্টা সত্ত্বেও দুমুঠো খেতে ওর পারছে না। তাই ফিরে যেতে চাইছে নিজের জন্মভূমিতে। কি লাগবে ওদের জন্য? কয়েক টা বাস, কোটা ট্রেন, সাবধানে ওদের গ্রামে পৌঁছে দিয়ে, খাবার এবং সুরক্ষার ব্যাবস্থা করা। রাখুন না ওদের আইসোলেশন এ।কিন্তু করে দিন দুবেলা পেট পুরে একটু খাবার ব্যাবস্থা, দেখবেন হয়ত বায়নাটাই থাকবে না আর। করুন না মহামারীর কবল থেকে বাঁচিয়ে ওদের নিজের পরিবার পরিজনের কাছে ফিরে জয়োয়ার ব্যাবস্থা।

ওই মানুষগুলো বাঁচতেই চায়, আপনার আমার মত। যারা আমাদের সুখের জন্য এত বছর ধরে লেগে আছে তারা করবে না আমাদের ক্ষতি। ওরা নাহয় বোঝে না। আমরা তো সচেতন। ওদের সাবধানে, সুরক্ষিত রেখে বাড়ি পৌঁছানোর ব্যাবস্থা করা কি তবে আমাদের কর্তব্য নয়।

মহানগরীর বুকে অদ্ভুত এক মিছিল। সভ্য সমাজ সব দেখেও শুধু মাত্র নিন্দুকের ভূমিকায়। কিসের এত গর্ব তবে, মহানগরী নিয়ে, বিশ্বের পঞ্চম সর্ববৃহৎ অর্থনীতি নিয়ে, শিক্ষা, সমাজ নিয়ে, যেখানে এক শ্রেণীর মানুষ দলে দলে বেরিয়ে আসে রাস্তায় পরে থাকা ময়লা আবর্জনার মতো? ভাবুন স্যার ভাবুন। ওদের জন্যে আমাদেরও হয়ত কিছু করার এখনো বাকি আছে।

নিখিল মানব-জাতির লজ্জা-সকলের অপমান!
মহা-মানবের মহা-বেদনার আজি মহা-উত্থান,
উর্ধ্বে হাসিছে ভগবান, নীচে কাঁপিতেছে শয়তান
কাজী নজরুল ইসলাম

Picture courtesy: India Today

Print Friendly, PDF & Email
Previous articleএক টুকরো আশা
Next articleলড়াই
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments