সম্প্রতি টোকিওতে আরও একটা অলিম্পিক গেমসের সমাপ্তি হয়ে গেল। বলাবাহুল‍্য, সেই সঙ্গে নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে ভারতবর্ষের অধিকাংশ ক্রীড়াপ্রেমিক নাগরিকদের অলিম্পিক গেমস তালিকাভুক্ত খেলাগুলো নিয়ে যাবতীয় উত্তেজনা, হটাৎ করে জেগে ওঠা ভালোবাসা, প্রত‍্যাশার আবেগ আর সোশ্যাল মিডিয়াতে গুরগম্ভীর চর্চাও আপাতত আগামী চার বছরের জন‍্য ঠান্ডা ঘরে চলে গেল। কোভিডের অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এবারের টোকিও অলিম্পিকে একটা সোনা, দুটো রুপো আর চারটে ব্রোঞ্জ পদক পেয়ে পদক তালিকায় আটচল্লিশতম স্থান অধিকার করে ভারতবর্ষ তার অলিম্পিকের দৌড় শেষ করেছে। টোকিও অলিম্পিকে ভারতের খেলোয়াড়দের প্রদর্শন সত‍্যিই প্রশংসনীয়। আটচল্লিশতম স্থান প্রাপ্তি নিয়ে ভারতীয়দের হতাশার কোন জায়গাই নেই, কারন ভারতের পরিকাঠামোর প্রেক্ষিতে এবারে অলিম্পিকে ফলাফলটা মোটেও খারাপ কিংবা হতাশাজনক নয় ? ট্রাক এন্ড ফিল্ডে স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে প্রথমবারের জন‍্য অলিম্পিক স্বর্নপদক পাওয়া একটা নূতন যুগের সূচনা করলো। ভারতবর্ষকে অলিম্পিকের মঞ্চে সাধ‍্য মতোন উঁচুতে তুলে ধরার জন‍্য প্রতিটি পদকজয়ীকে অনেক অনেক অভিনন্দন।

উড়িষ্যা সরকারের দত্তক নেবার সুবাদে দীর্ঘ চল্লিশ বছর পর পদকের খরা কাটিয়ে ভারতীয় পুরুষদের হকি দল এবারের  টোকিও অলিম্পিকে ব্রোঞ্জ পদক জিতলো। পদক না পেলেও ভারতীয় মহিলা হকি দলের প্রদর্শনও মোটামুটি সন্তোষজনক বলা চলে। গলফেও খুব ভালো প্রদর্শন হয়েছে। ভারতীয় মহিলা হকি দল প্রথমবার অলিম্পিক সেমিফাইনাল অবধি পৌছেছে। দৃষ্টান্তমূলক ভাবে কোনো একটা রাজ‍্য সরকার ভারতীয়  হকি দলকে দত্তক নেবার জন‍্যই এই সাফল্য কিনা সেটা ভবিষ্যতই বলবে, তবে উড়িষ্যার সরকারের এই প্রয়াস সত্যিই প্রশংসনীয় ও দৃষ্টান্ত হয়ে রইল। দলগত খেলায় ভারতের ঝুলিতে শেষবারের মতোন অলিম্পিক গেমসে স্বর্ণপদক এসেছিল হকিতে, একচল্লিশ বছর আগে ১৯৮০ সালে মস্কো অলিম্পিকে। নিন্দুকেরা বলে থাকে, মস্কো অলিম্পিকে আমেরিকা সহ তাদের সহযোগী দেশগুলো অলিম্পিক বয়কট করার কারনেই নাকি সেবার ভারতের হকিতে সোনা জেতা সহজ হয়ে গিয়েছিল। টোকিও অলিম্পিক গেমসের ভারতীয়দের বেক্তিগত ইভেন্টে প্রাপ্ত পদকের সংখ্যা একটা সোনা, দুটো রুপো আর দুটো ব্রোঞ্জ মিলিয়ে সাতটা। স্বাধীনতা পাবার পরে ভারতবর্ষের অলিম্পিকে সাফল্যের ইতিহাস ঘেঁটে দেখলে আজ পযর্ন্ত সোনা, রূপো আর ব্রোঞ্জ পদক মিলিয়ে প্রাপ্ত পদকের সংখ্যা মেরে কেটে মাত্র পঁইত্রিশটা। এই পঁইত্রিশটা পদকের মধ্যে এবারের সোনার পদকটা নিয়ে মোট সোনার পদক মাত্র সাতটা। এরমধ্যে ভারতীয়দের বেক্তিগত ইভেন্টে স্বর্ণপদক প্রাপ্তি কেবলমাত্র দুটো, বাদবাকি পাঁচটা স্বর্ণপদক প্রাপ্তি হয়েছে দলগত হকি খেলার দৌলতে। একশো তিরিশ কোটি জনসংখ্যার দেশ আমাদের এই ভারতবর্ষ। বিশাল জনসংখ্যায় বলীয়ান হওয়া সত্বেও প্রতিটা অলিম্পিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া বেশিরভাগ ভারতীয় খেলোয়াড়দের নৈপুণ্য প্রদর্শন বছরের পর বছর সত‍্যি সত‍্যিই কি সমস্ত ভারতীয়দের ক্রমাগত হতাশ করে চলেছে ? একশো তিরিশ কোটি মানুষের দেশ আমাদের এই ভারতবর্ষের অলিম্পিক গেমসে বারবার কেন এমনটা হাল হয় সেটা নিয়েই আজকের এই প্রতিবেদন।

সত‍‍্যিই কি ভারতীয় খেলোয়াড়রা অলিম্পিকের মঞ্চে খারাপ প্রদর্শন করে একশো তিরিশ কোটি জনসংখ্যার দেশকে লজ্জিত করে? — ভারতের ক্রীড়া জগতের প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে নূন্যতম ধারণা থাকলে যে কোন নাগরিকই জোর গলায় বলতেন একেবারেই নয়। সত্যিই কি ভারতীয় খেলোয়াড়রা  অলিম্পিকে ভালো ফল করার যোগ‍্যতা রাখে না ? —  জোরের সাথে বলতে দ্বিধা নেই ভারতীয় খেলোয়াড়রা অবশ্যই  যোগ‍্যতা রাখে । দুই একজন কোটায় নির্বাচিত খেলোয়াড় ব‍্যাতিরেকে, প্রত‍্যেকটি দেশের প্রত‍্যেকটি খেলোয়াড়কে একটা নির্দিষ্ট যোগ্যতা মানের উৎকর্ষে উত্তীর্ণ হবার পরেই অলিম্পিক খেলায় অংশ নেবার ছাড়পত্র মেলে। এমনকি কোটায় সুযোগ নিয়ে অংশগ্রহণ করা খেলোয়াড়টিকেও বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় নৈপুণ্য দেখিয়েই কোটার সুযোগ প্রাপ্ত করতে হয়। কাজেই অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করা যে কোন ভারতীয় খেলোয়াড়দের যোগ‍্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা অর্বাচীনতা। আসলে অলিম্পিক গেমসে ভারতীয় খেলোয়াড়দের পদক অপ্রাপ্তির বীজগুলো লুকিয়ে আছে অন‍্য অনেকগুলো অন্ধকারময় জায়গায়। আমার এই ছোট্ট প্রতিবেদনে ভারতীয় ক্রীড়া জগতের সেই অন্ধকার জায়গাগুলোতেই আলোকপাত করতে চাই।

অলিম্পিক গেমসটা ভারতীয় ক্রীড়া প্রেমিক নাগরিকদের কাছে একটা ফ‍্যাশনের মতোন। যতদিন না এই ফ‍্যাশনটা প‍্যাশনে পরিবর্তিত হবে ততদিন এরচেয়ে বেশি কিছু ভালো ফল আশা না করাই ভালো। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা কখনওই খারাপ প্রদর্শনের কারন নয়, কারণ টোকিও অলিম্পিকের পদক তালিকায় তাকালেই বোঝা যায় অনেক গরীব ও ছোট দেশও পদক তালিকায় উপরের দিকে স্থান পেয়েছে। রাষ্ট্রের অর্থিক অবস্থা যাই হোকনা কেন আসলে রাষ্ট্রের চাই প‍্যাশন। হলফ করে বলতে পারি যে, বতর্মানের উত্তেজনা থিতিয়ে যাবার কিছুদিন বাদে একটু খোঁজ নিয়ে দেখলে দেখবেন, একশো তিরিশ কোটি ভারতীয়র মধ‍্যে মেরেকেটে দশ কিংবা বিশ লাখের বেশী নাগরিক, অলিম্পিক গেমসে দেশের হয়ে বেক্তিগত স্বর্ণপদক জয়ী মানুষগুলোর নাম বলতেই পারছে না। যে দেশের জনসাধারণের মধ্যে অলিম্পিক গেমস তালিকাভুক্ত খেলাগুলোর এইরকম জনপ্রিয়তা, সেই দেশের কাছে অলিম্পিক গেমস থেকে পদক আসবে কেন? দেশ স্বাধীন হবার এতগুলো বছর পার হয়ে গিয়েছে। এর মধ্যে অনেকগুলো একক দল দ্বারা পরিচালিত সরকার কিংবা জোট পরিচালিত সরকার এসেছে, আবার চলেও গেছে, কিন্তু কোনও সরকারই ভারতের জাতীয় ক্রীড়ানীতি তৈরী করতে পারেনি। রাষ্ট্রের কোন ক্রীড়ানীতি থাকবে না, অথচ রাষ্ট্র অলিম্পিকের মঞ্চে পদক প্রাপ্তির তালিকায় উপরের দিকে থাকবে এমন উচ্চাশা রাষ্ট্রের নাগরিকরা কিভাবে করতে পারে?

ভারত সরকারের ক্রীড়ামন্ত্রকের সঙ্গে অলিম্পিক তালিকাভুক্ত খেলাগুলির যোগসুত্র হোল ভারতীয় অলিম্পিক এ‍্যাসোসিয়েশন। এরাই ভারতের অলিম্পিক তালিকাভুক্ত খেলাগুলির নিয়ন্ত্রক। ভারতীয় অলিম্পিক এ‍্যাসোসিয়েশন কে প্রতিটা  রাজ্যের অলিম্পিক এ‍্যাসোসিয়েশন পরিপুষ্টি করে। অলিম্পিক তালিকাভুক্ত প্রতিটি আলাদা আলাদা খেলাগুলি, যেমন এ‍্যাথেলেটিক্স, জিমনাস্টিক, সাঁতার, হকি, ফুটবল, বক্সিং, কুস্তী, শ‍‍্যুটিং, ভলিবল, টিটি ও অনান্য খেলাগুলি নিজ নিজ ফেডারেশন কর্তৃক নিয়ন্ত্রীত হয়। প্রতিটি আলাদা আলাদা খেলাগুলির ফেডারেশনকে তাদের রাজ্য এ‍্যাসোসিয়েশনগুলি নিজ নিজ রাজ্যে থেকে পরিপুষ্ট করে। এই ফেডারেশন আর রাজ্য এ‍্যাসোসিয়েশন গুলির কর্মকর্তারা প্রত্যেকে কলহ প্রীয় আর সর্বদা অর্ত্নকলহে বহুবিভক্ত। অলিম্পিক গেমসের তালিকাভুক্ত বেশিরভাগ খেলার ফেডারেশন ও এ‍্যাসোসিয়েসনের মাথায় বসে আছেন রাজনৈতিক লোকজন, আমলা অথবা ব্যাবসায়ীরা। ফেডারেশনের মাথায় থাকা এইসব গুনীজনের অনেকেই হয়তো নিজেদের অল্প বয়সে ঠিক মতোন করে চু-কিতকিত খেলতেও সক্ষম ছিলেন না। স্বাভাবিক ভাবেই এইসব গুনীজন পরিচালিত ক্রীড়া ফেডারেশনগুলো আর রাজ‍্য এ‍্যাসোসিয়েশনগুলো রাজনীতি আর ক্ষমতা দেখানোর আখড়া। কিছু মানুষের মৌরশীপাট্টা চলে এগুলোতে।

অলিম্পিক তালিকাভুক্ত খেলাগুলির জন্য ভারতবর্ষে স্পনসর নেই, কারন ভারতীয় নাগরিকরা অলিম্পিক গেমসের তালিকাভুক্ত খেলাগুলো খুব অল্পই বোঝেন, আর সেই না বোঝার কারনেই এইসব খেলাগুলো থেকে কোনরকম বিনোদন কিংবা উত্তেজনা খুজে পাননা । যে খেলাগুলো ভারতের সাধারণ মানুষজন বোঝেই না কিংবা বিনোদন মনে করে ঘন্টার পর ঘন্টা টিভির সামনে বসে দেখেন না, সেই খেলাগুলোতে বিনিয়োগ করলে স্পনসরের ব‍্যাবসায়িক লাভ কোথায়? তাই কোনো স্পনসরও অলিম্পিক তালিকাভুক্ত  খেলার সাথে নেই। সরকারের ক্রীড়ামন্ত্রকের যৎসামান্য ভিক্ষা ও স্থানীয় সুত্রে সামান্য কটা টাকা সংগ্রহ করে বছরে কোনরকমে একটা রাজ্য মিট ও একটা ন্যাশনাল মিটের আয়োজন করতেই এ‍্যাসোসিয়েশন আর ফেডারেশনের দম শেষ। তার সাথে কর্তাদের নিজেদের মধ্যে “তুই চোর আর মুই চোরের” কলহ তো রোজ লেগেই আছে। কেন্দ্রীয় সরকার প্রতি দুবছর অন্তর অলিম্পিক গেমসের মডেলে একটা করে “ন্যাশানাল গেমস” আয়োজন করে থাকেন বটে, তবে সেটাও কোনবার হয় তো কোনবার হয়ইনা।

এমনিতেই ভারতের বেশীরভাগ শিশুই অপুষ্টীতে ভোগে। অপুষ্টী এ‍্যাথেলেটিজিমের প্রধান অন্তয়ায়। অলিম্পিক গেমসের তালিকাভুক্ত খেলাগুলিতে রাজ্য, জাতীয় বা আন্তর্জাতিক মানে পৌছতে চাইলে পাঁচ বা ছয় বছর বয়সটা হোল আদর্শ শুরুর সময়। যন্ত্র সঙ্গীতের ক্ষেত্রেও তাই। ঐ বয়সের বাচ্ছাদের যন্ত্রসঙ্গীত বোঝার মতো মনের গঠন থাকেনা। কিন্তু পনেরো ষোল বছর বয়সে যখন মনের দরজা খোলে এবং সঙ্গীত উপোভোগ করতে শেখে, তখন বুঝতে পারে, যে না বুঝেই তার এই দীর্ঘ অনুশীলন তাকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে ফেলেছে। পরে শুরু করলে এই লীডটা অধরা থেকে যেতে পারে জীবনভোর। অলিম্পিক তালিকাভুক্ত খেলার জগতে বাচ্ছাদের বোঝার জ্ঞান কিন্তু দশ এগারো বছরেই হয়ে যায় ও সে উপোভোগ করতে থাকে। অবুঝ ও নিঃস্পাপ অবস্থায় ক্লাব বা জেলা পর্যায়ের শিশু খেলোয়াড়টির প্রথম চার বা পাঁচ বছর পযর্ন্ত অমানুষিক কায়িক পরিশ্রমের অনুশীলন করার পরে যথপোযুক্ত পুষ্টীকর খাবার, বিশ্রাম ও মানসিক গঠন তৈরি করা অত্যন্ত দরকারি , অথচ সেটাই অলিম্পিক তালিকাভুক্ত খেলাগুলোতে আসা ভারতীয় বাচ্ছা খেলোয়াড়রা মোটেও পায়না। এইসব বাচ্চাদের শৈশবের অপুষ্টী ও হীনমন্যতা বোধ পরবর্তীকালে আন্তর্জাতিক মঞ্চে একটা বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায়। 

অলিম্পিক গেমস তালিকাভুক্ত খেলাগুলোর মধ্যে এ‍্যাথেলেটিক্স, জিমনাস্টিকস, সাঁতার, কুস্তি ও বক্সিং ইত্যাদি খেলাগুলোতে যেমন পদকের সংখ্যা বেশি তেমনই এই খেলাগুলো অত‍্যধিক আঘাত প্রবণ। আঘাতপ্রাপ্ত খেলোয়াড়কে সারাজীবন নানান শারীরিক ত্রুটি নিয়ে এমনকি কখনো কখনো পঙ্গুত্ব নিয়েও বাঁচতে হয়। শুধু তাইই নয়, ঠিক ভাবে অনুশীলন করে নিজেকে তৈরি করতে গেলে খেলোয়াড়কে অমানুষিক কায়িক পরিশ্রম করতে হয়। কায়িক পরিশ্রম বিমুখ ভারতীয় উচ্চবিত্ত সমাজের অভিভাবকেরা তাদের সন্তানদের হাতে প্লাস্টিকের ব‍্যাট বল দিয়েই খেলার লাটবাট চুকিয়ে দেন। শহুরে মধ‍্যবিত্ত অভিভাবকেরা তাদের আদরের সন্তানদের কায়িক পরিশ্রমে কষ্টের কথা ভেবে আর কায়িক পরিশ্রমের অনুশীলন করার পর ঘুমিয়ে পড়লে পড়াশোনার ক্ষতি হবে ভেবে এ‍্যাথেলেটিক্স, জিমনাস্টিক, কুস্তী কিংবা বক্সিং জাতীয় খেলাগুলোয় নিয়ে আসতে মোটেও উৎসাহি নন। তারা বড়জোর ক্রিকেট, দাবা আর খুব বেশি হলে টিটি খেলায় ভিড় জমান। রইল বাকি মফস্বলের নিম্নবিত্ত অভিভাবকরা আর প্রত‍্যন্ত গ্রামের দরিদ্র অভিভাবকদের সন্তানরা। তাদের কাছে খেলা নামক বিলাসিতা কিংবা বিনোদনের জন্য সময় কোথায়? এরই মধ্যে গরীবের দুএকটা ছেলে কিংবা মেয়ে একটু খাবার পাবে এই ভরষায় আর যদি খেলার দৌলতে কোনরকমে একটা চাকরি জোটে সেই আশায় ঠাঁই নেয় অলিম্পিক গেমসের আঘাত প্রবণ আর কায়িক পরিশ্রমের খেলাগুলোর ছাতার নীচে। ব‍্যাস এটুকুই ওদের মানসিক প্রস্তুতি আর স্বপ্ন দেখা। অতীতে এভাবেই গড়ে উঠে চাকরি পাওয়া কোচেরাও কোনও স্বপ্ন দেখেনা, কারন অনুশীলনে আঘাত পেলে বাচ্চাদের চিকিৎসা কিংবা পরবর্তী দায়িত্ব নেবার যে কেউ নেই সেটা তারা হাড়েহাড়ে জানেন। কে নিতে যাবে বাড়তি ঝুঁকি পদকের লোভে। এই কারনেই ভারতীয় কোচ ও খেলোয়াড় কেউই অল আউট যেতে পারেনা। 

প্রতিটি দেশেই বিশেষ বিশেষ কোন খেলার অধিক জনপ্রিয়তা থাকে। যেমন জাপানে সুমো কুস্তি, আমেরিকায় রাগবি আমাদের দেশে ক্রিকেট। কোন খেলার প্রতি বিশেষ অনুরাগ থাকা মোটেও খারাপ কিছু নয়, কিন্তু আমেরিকা বা জাপানের মতোন দেশের নেতৃবৃন্দ কখোনই সেই বিশেষ জনপ্রিয় খেলাকে মাথায় চড়িয়ে অলিম্পিক তালিকাভুক্ত খেলাগুলোর প্রতি অবহেলা দেখান না। একমাত্র দেশের সুষ্ঠ ক্রীড়ানীতিই পারে কোনও একটা খেলার জনপ্রিয়তার চাপে, অন্য খেলাগুলো যাতে হারিয়ে যেতে না পারে, সেইটার রক্ষাকবচ হতে। দেশের নেতৃবৃন্দর সদিচ্ছাই পারে জনপ্রিয় খেলা আর অলিম্পিক গেমস তালিকাভুক্ত খেলাগুলোর মধ‍্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে । জাপান, আমেরিকা, চীন ও রাশিয়ার মতোন দেশগুলির সরকার এদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখে, তাই তারা প্রতিবারই অলিম্পিকে সফল হয়। দুঃখজনক হলেও সত‍্যি যে এই জায়গাতে ভারত সরকারের কোনও নজর নেই। এমনকি যে ভারতবর্ষ কিছুকাল আগেও ধারাবাহিক ভাবে আন্তর্জাতিক স্তরে হকি খেলায় পৃথিবী শ্রেষ্ঠ ছিল, সেই ভারতবর্ষ আজ হকি খেলায় দুনিয়ার মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে, কিন্তু কোথাও কারও কোনোও আক্ষেপ নেই। বাংলাতে সৌরভের মতোন একজন ব‍্যাতিক্রমী প্রতিভাবান সাফল্য পেয়ে যাবার দৌলতে অজস্র ক্রিকেট এ্যাকাডেমি গজিয়ে উঠেছে আর তাতে অভিভাবকদের উৎসাহে কাচিকচাদের ভীড়, কিন্তু “ন‍্যাশানাল গেমসে” এই বাংলাকে সবচেয়ে বেশী পদক দেওয়া জিমনাস্টিক বা এথেলেটিক্সের জন্য ক্লাবগুলোতে অনুশীলন করার জন্য বাচ্ছা পাওয়া দুস্কর। 

ভারতের স্কুলগুলোতে বছরে একদিন স্পোর্টস ডে পালন করেই তাদের খেলা সংক্রান্ত সব দায়িত্ব শেষ। শিক্ষা জগত আর ক্রীড়া জগতের সম্বন্ধ সাপে নেউলের সম্পর্কের মতোন। এই দুই জগতের মানুষজন যে কোন মূল্যেই সহ অবস্থান করতে রাজি নয়।  আমার জানা, অতি অল্প সময়ের জন‍্য খেলার সার্কিটে থাকা একজন নিম্ন মধ‍্যবিত্ত ঘরের স্কুলছাত্রী জিমনাস্টকে অনুশীলন ও প্রস্তুতির জন‍্য তার স্কুলের সহৃদয় মহিলা প্রিন্সিপাল মহোদয়া প্রতিদিন স্কুলের প্রথম দুটি প্রিরিয়ডের পরে স্কুলে আসার অনুমতি দিয়েছিলেন, কারন স্কুলছাত্রীটি জাতীয় পর্য‍্যায়ে বয়সভিত্তিক সমস্ত প্রতিযোগিতায় নিরবিচ্ছন্ন ভাবে সোনা জিতে চলেছিল। সকাল ও বিকেল মিলিয়ে জিমনাস্ট ছাত্রীটি রোজ ছয় ঘন্টা অনুশীলন করতো। জিমনাস্টিকসে সাব জুনিয়র ও জুনিয়র বিভাগে “জাতীয় চ‍্যাম্পিয়ান” এবং মাত্র বারো বছর বয়সে বাংলার হয়ে “ন‍্যাশানাল গেমস” খেলে বাংলার হয়ে দলগত সোনা জয় করে আনা ছাত্রীটি রোজ ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে তিন থেকে চার ঘন্টা কঠোর কায়িক অনুশীলনের শেষে কোনরকম বিশ্রাম না নিয়ে, লেখাপড়া শেখার তাড়নায় স্কুলে গেলে স্কুলের বেশ কিছু টিচার তাকে দেরিতে স্কুলে আসার শাস্তি হিসেবে ক্লাসের বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখতেন। ক্লাসের সহপাঠীরা তাকে প্রতিনিয়ত বিদ্রূপ, উপহাস ও উপেক্ষা করতো। স্কুলের সমস্ত প্রতিকুলতা ও অসন্মান কাটিয়ে সেই স্কুলছাত্রীটি যখন, মাত্র পনেরো বছর বয়সে, ভারতীয় জিমনাস্টিক দলের প্রথম চয়েস হিসেবে “কমনওয়েলথ গেমস” খেলতে যায় তখন আবার ঐ টিচারদের অনেকই ছাত্রীটির প্রতি তাদের করা আচরনের জন‍্য দুঃখ প্রকাশ করেন। বৈপরীত্য এখানেই শেষ নয়, ভারতীয় সমাজ শিক্ষা ও খেলাধুলা দুটোকে কখনোই একসঙ্গে চালাতে দেবেনা বুঝতে পেরে অভিভাবকেরা যখন ভারতের সেই সময়কার সেরা জিমনাস্ট ঐ স্কুলছাত্রীটিকে খেলার জগত থেকে শিক্ষার জগতে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেন, তখন ক্রিড়া জগতের কর্তাব্যক্তিরা কেউ খোঁজ পযর্ন্ত নিতে আসেননি, যে কেন অভিভাবকেরা এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, বরংচ খেলোয়াড় কোটায় চাকরি পাবার একজন প্রবল দাবীদার স্বেচ্ছায় খেলা ছেড়ে চলে যাচ্ছে এই আনন্দে ছাত্রীটির সাথে তাদের সমস্ত সম্পর্ক অবলিলায় ছিন্ন করেন। উচ্চশিক্ষার সার্কিটে “ন‍্যাশানাল ফেলোশিপ” পেয়ে ঐ ছাত্রীটি “লিউকেমিয়া” নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারি গবেষণা সংস্থায় গবেষণার কাজ করছে, অথচ ভারতের জিমন‍্যাস্টিক সার্কিট অর্থাৎ ফেডারেশনের কর্তারা বা বাংলার এ‍্যাসোসিয়েশনের কর্তাব্যক্তিরা এই উচ্চ শিক্ষিত কৃতি ছাত্রীটির কোন খোঁজই রাখেননি, আর তাদের খেলার জগতে কখনোই কোনও ভাবে ব‍্যাবহার করার কথা ভাবেনই না। এটাই ভারতবর্ষের শিক্ষা ও ক্রীড়ার জগতের রেষারেষি, সরকারি ও সামাজিক বাস্তব চিত্রপট। 

পশ্চিমবঙ্গে এক একটা অঞ্চলে একটা ক্রিকেট কিংবা একটা ফুটবল এ্যাকাডেমিতে যত জন শিক্ষার্থী খেলোয়াড় দেখতে পাওয়া যায়, সেই তুলনায় সাঁতার, এ‍্যাথেলেটিক্স কিংবা জিমন‍্যাস্টিক ইত্যাদি খেলাগুলোর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যমিটে সব জেলা মিলিয়ে ততজন খেলোয়াড়ও অংশগ্রহণ করেনা। অন‍্যান‍্য রাজ‍্যগুলোতেও খেলোয়াড় সংখ্যার একই দশা। কাজেই একশো তিরিশ কোটি মানুষের দেশ ভারতবর্ষে অলিম্পিক গেমসের তালিকাভুক্ত খেলাগুলিতে খেলতে আসা বাচ্ছাদের সামগ্রিক সংখাটা দূরবীন দিয়ে দেখতে হয়। সব ধরনের অলিম্পিক গেমসের তালিকাভুক্ত খেলাগুলির খেলোয়াড় সংখ‍্যা হাতে গোনা যায়। টিটি ও অন্য দুএকটা খেলায় এতটা ভিখিরি দশা না থাকলেও দৈন্যদশা আছেই। একসময় “ন‍্যাশানাল গেমসে” পশ্চিমবঙ্গ জাতীয় পর্য্যায়ে পঞ্চম বা ষষ্ঠ স্থান পেত মূলত জিমনাস্টিক, টিটি , এথেলেটিক্স, সাঁতার ও ফুটবলের পদকের দৌলতে। বিশ্বের কমুনিস্ট শাষিত দেশগুলো সাধারণত অলিম্পিক গেমস তালিকাভুক্ত খেলাগুলোকে প্রাধান্য দেয়। যে কমুনিস্ট যুব নেতাটি একদা সরকারি ক্ষমতায় না থেকেও, ভারতের গরীব শিশুদের স্কুলে মিড ডে মিলের ব‍্যাবস্থা করার মতো শৃষ্টিশীল প্রস্তাবটা প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে দিয়েছিলেন,  সেই নেতাটিই পরবর্তীকালে দীর্ঘদিন রাজ‍্যের ক্রীড়ামন্ত্রী থাকাকালীন অলিম্পিক তালিকাভুক্ত খেলাগুলোর জন‍্য কোন শৃষ্টিশীল ভাবনা রূপান্তরিত করতে  পারেননি। তার ক্রীড়ামন্ত্রী থাকার শেষ সময় থেকে, বাংলার অলিম্পিক গেমস তালিকাভুক্ত খেলাগুলোর প্রতি শুরু হওয়া চুড়ান্ত অবহেলা ও পরবর্তীতে অকমুনিস্ট পরিচালিত সরকার সেই ধারাবাহিকতা রেখে চলায়, এই খেলাগুলো থেকে আজ আর “ন‍্যাশানাল গেমস” থেকে বাংলায় বিশেষ পদক আসেনা। শেষের দিকে “ন‍্যাশানাল গেমসে” পদকজয়ী বাংলার খেলোয়াড়দের পুরস্কার দিতে মন্ত্রী মহাশয় নিজে না এসে আমলাদের হাত দিয়ে পুরস্কার বিতরন করা শুরু করেন। কমরেড বুদ্ধবাবুর আমলের শুরুতে যে বাংলা “ন‍্যাশানাল গেমসে” ভারতের রাজ‍্যগুলির মধ্যে পদক তালিকায় পঞ্চম বা ষষ্ঠ স্থানে ছিল সেই বাংলা বুদ্ধবাবুর আমলের শেষ দিকে “ন‍্যাশানাল গেমসে” পদক তালিকায় চোদ্দ নম্বর স্থানে নেমে আসে। পরবর্তী দশ বছরে সেই অবস্থার এখোনো কোনও পরিবর্তন হয়নি। অলিম্পিক তালিকাভুক্ত খেলাগুলির সর্বভারতীয় অবস্থাও একই রকম। 

এছাড়া মেয়ে খেলোয়াড়দের ও তাদের পরিবারকে খেলার পোষাক, ছোট করে কাটা চুল, পুরুষালি আচরন ইত্যাদি নিয়ে ঘরে, পরিবারে ও বাইরে যে কথার চাপ ও হেনস্থা সইতে হয় তা বলে বোঝানো যাবেনা। টোকিও অলিম্পিক্সে জিমনাস্টিক ইভেন্ট গুলো সোনিতে লাইভ দেখছিলাম। আমেরিকা সহ বেশ কিছু দেশের কয়েকটি মহিলা প্রতিযোগীদের বাবারাই তাদের কোচ হয়ে এসেছেন। এই বিষয়ে ভারতের কোন এক আন্তর্জাতিক জিমনাস্টের শৈশবে অনুশীলনের সময় তার বাবার অভিজ্ঞতা শুনুন। বাংলার কোন এক জেলার উপশহরে থাকাকালীন, কোন কারনে কিছুদিন প্রাকটিস বন্ধ থাকার সময় কোচের নির্দেশ মতোন আট বছরের শিশু জিমনাস্টটিকে ফিট রাখার জন‍্য তার বাবা ফাঁকা রাস্তায় রোজ সকালবেলায় দৌড় করাতেন। একদিন হটাৎ করে বেশ কিছু লোক জিমনাস্ট শিশুটির বাবাকে ঘিরে ধরে এই মারে কি সেই মারে। তাদের দাবি এতটা দৌড় করিয়ে শিশুর উপর অত‍্যাচার করা চলবে না। শিশুটির বাবা যতই বলে, যে শিশুটি জেলার সেরা জিমনাস্ট আর কোচের নির্দেশ মতোন তিনি শিশুটিকে শুধুমাত্র দৌড় করাচ্ছেন এবং আসল অনুশীলনে কোচের কাছে শিশুটি এর চেয়ে অনেক বেশি পরিশ্রম করে, তো কে শোনে কার কথা। আবারও শিশুটিকে নিয়ে রাস্তায় দৌড় করাতে বেরোলে বাবাকে গনধোলাই দেবে বলে শাষিয়ে সেযাত্রা শিশুটির বাবাকে ওরা অব‍্যহতি দেয়। উড়িষ্যার বুধিয়ার কথা মনে পড়ে? মানবাধিকার সংগঠনের কর্তাব্যক্তিদের দাপটে ভারতবর্ষের সবচেয়ে সম্ভবমাময় ভাবি ম‍্যারাথোন দৌড়বিদের দৌড় শৈশবেই শেষ হয়ে গেছে। বুধিয়ার কোচকে তো জেল খাটতেও হয়েছে। অসাধারণ প্রতিভাবান দৌড়বিদ ছোট্ট বুধিয়া ভবিষ্যতে আর খেলোয়াড়ই হয়ে উঠতে পারেনি। এই রকম চিন্তা ভাবনায় সম্বৃদ্ধ ভারতীয় নাগরিক ও সমাজ যারা নিজেদের মতো করে সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করতে চান, দেশের জন‍্য খেলোয়াড়দের কাছ থেকে অলিম্পিক পদক চাওয়ার কোন নৈতিক অধিকার তাদের আছে কি?  

যে কোন খেলায় প্রস্ততি আর প্লেয়ার সাপ্লাই লাইনটা ঠিক রাখাটা অত্যন্ত জরুরি। ভারতের অলিম্পিক তালিকাভুক্ত খেলাগুলির বেশীরভাগেরই কোনও এ্যাকাডেমি ভারতে প্রায় কোথাও নেই বললেই চলে। সাপ্লাই লাইনটা ঠিক থাকবে কি করে? অধিকাংশ খেলোয়াড়কে  মাঠে, পুকুরে, কাদায় পারফরমেন্স দেখিয়ে ক্লাব স্থর থেকে জেলা স্থরে আসতে হয়। সেখানে কিছু ভালো করলে রাজ্য মিটে আসতে পারে। রাজ্য স্থরে ভালো করলে ন্যাশনালের ভাগ্য ছেড়ে। ন্যাশনাল লেভেলে এসে ভালো ফল করলে তবেই সাই (স্পোর্টস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া) এর দরজা খোলে। সাইতে আসতে পারলে খাওয়া দাওয়া ও কিছুটা উন্নতমানের ক্রীড়া সরঞ্জাম পাওয়া যায়। কিন্তু মুষ্টিমেয় কয়েকজনই এখানে জায়গা পায়। আর যারা শেষ অবধি সাইতে সুযোগ পায় তাদের শৈশবের অপুষ্টী তখন, যা থাবা বসানোর, বসিয়ে দিয়েছে। অলিম্পিক তালিকাভুক্ত খেলাগুলির খেলোয়াড়দের রোজগার বলতে জাতীয় চ‍্যাম্পিয়ান হলে বা আন্তর্জাতিক স্থরে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করলে রেলে কিংবা সেনাবাহিনীর চাকুরী অথবা রাজ্য সরকারে পুলিশ ইত্যাদি চাকুরী। এদের বেশিরভাগটাই গ্রুপ-ডি চাকুরী। রাজ‍্যস্থরের সাফল্য নিয়ে বেশিরভাগ খেলার ক্ষেত্রেই চাকুরী পাবার সম্ভবনা খুবই কম। এই সামান্য চাকুরীটুকু পাওয়ার আগে চোট বা আঘাত প্রাপ্ত হলে চিকিৎসার খরচে পরিবারটাকে দেউলিয়া হতে হয়। চোট বা আঘাত থেকে সেরে ওঠার পর খেলোয়াড় আগের ফর্ম ফিরে না পেলে চাকরি পাবার সম্ভবনা নেই বললেই চলে। আন্তর্জাতিক সাফল্য পাবার আগে পি.টি.উষা বা সুশীল কুমারের কাছে রেলের চাকরীটাই একমাত্র সম্বল ছিল। সেই রেলের হালতও এখোন খাস্তা। যে বিএনআর ক্লাবকে অবলম্বন করে এশিয়ান গেমসে ফুটবলে সোনা জয়ী খেলোয়ার বলরাম, অরুন ঘোষ বা এন্টনিরা সারা জীবন কাটালেন , আজ সেই বিএনআর প্রতিভাবান বাঙালি ফুটবলারদের চাকরি দেবার বদলে খেপ খেলা বিদেশী নিয়ে কোলকাতা ফুটবল লিগ খেলে। সাফল‍্য পাবার আগে দীপা কর্মকারেরও ত্রিপুরা সরকারের দেওয়া চাকরিটুকুই সম্বল ছিল। অলিম্পিকে কোনো খেলোয়ার  পদক জিতে গেলে কিছুটা সরকারি পুরস্কার মূল‍্য আর কদাচিৎ সিঁকে ছিড়লে একটা আধটা বিজ্ঞাপনে কাজ করার সুযোগ – ব‍্যাস তারপর চলে যাও বিশ্মরণের চোরাবালিতে। বস্তুুত অলিম্পিক তালিকাভুক্ত খেলাগুলির খেলোয়াড়দের জীবন ও জীবিকা ঘোরতর অনিশ্চিত, তাই এদের সাপ্লাই লাইন বলে কিছু নেই । 

প্রতিটি বিভাগের পার্ফমারের চাই পর্যাপ্ত সুযোগ ও প্রতিযোগিতার আসর। একজন অসাধারন প্রতিভাবান ক্রমাগত সুযোগ না পেয়ে ফর্ম হারাতে পারে, আবার একজন মধ্যমানের পার্ফমার বার বার সুযোগ পেয়ে ক্ষুরধার হয়ে উঠতে পারে। খেলা ও সঙ্গীতের জগতে এটা বারবার ঘটে। এ ব্যাপারে অলিম্পিক গেমসের তালিকাভুক্ত খেলাগুলোর জগতে গুরু দ্রোনাচার্য্যদের সংখ্যারও অভাব নেই। মহাভারতে অর্জুনের উথ্যানের জন্য গুরু দ্রোনাচার্য যেমন র্নিলজ্জ ভাবে অসাধারন প্রতিভাবান তীরন্দাজ একলব্যর আঙুল কাটেন, ঠিক তেমনই একটু বেশি বয়সে অনুশীলন শুরু করতে চাওয়া প্রতিভাবান তীরন্দাজ কর্ণকে শিক্ষাদান করতে  প্রত‍্যাখান করে কর্ণর শিক্ষা প্রাপ্তি আরও দেরি করিয়ে দেন। ভারতের অলিম্পিক তালিকাভুক্ত খেলাগুলোর স্বঘোষিত ছোট, মেজো কিংবা বড়ো দ্রোনাচার্য‍্যদের কোপে পড়ে কত খেলোয়াড়কে যে নিজেকে নীরবে সরিয়ে নিয়ে যেতে হয়, তাদের সেই ইতিহাস ও দীর্ঘশ্বাস  চাপা পড়েই থাকে। শ্রী মতি নন্দীর “কোনি” উপন‍্যাসটা মনে পড়ে? “কোনি” যাতে জলে না নামতে পারে, সেইজন‍্য কতটা নোংরামি একটি ক্লাব ও কোচ  করেছিলেন। সত‍্যি কথা বলতে গেলে ক্রীড়া জগতে “ক্ষিদ্দারা” চিরকালই সংখ্যায় অতি নগন‍্য ছিল আর আজ তো খেলার জগতে কোন “ক্ষিদ্দারাই” নেই। যথার্থ ক্রীড়া সাংবাদিক শ্রদ্ধেয় শ্রী মতি নন্দী তার “কোনি” উপন‍্যাসে অলিম্পিক তালিকাভুক্ত খেলার জগতের দূর্গন্ধময় বাস্তবটাই বর্নণা করেছেন। ক্রিকেট খেলায় ভারত আজকে উন্নত কারন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড সারা বছর অজস্র প্রতিযোগিতা আয়োজন করে । সিনিয়ার , এ টিম, বি টিম ও বয়স ভিত্তিক প্রতিযোগিতা সারা বছর ধরে চলে। অলিম্পিক তালিকাভুক্ত খেলাগুলির জন্য বছরে মূলত দুটো টুর্নামেন্ট বরাদ্দ। একটা রাজ‍্য প্রতিযোগিতা অন্যটা জাতীয় প্রতিযোগিতা। এই দুটো টুর্নামেন্টে প্রতিটা ইভেন্টে মাত্র দেড় থেকে দু মিনিটের ক্রীড়া নৈপুণ্য প্রদর্শন করার সুযোগ পাবার জন্য সারা বছর ঘন্টার পর ঘন্টা লোকচক্ষুর আড়ালে অলিম্পিক গেমস ভুক্ত খেলার খেলোয়াড়কে নীরবে অনুশীলন করে যেতে হয়। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি জিমনাস্টিকে নিজেকে আন্তর্জাতিক মানে নিতে গেলে বছরভর, রোজ পাঁচ থেকে ছয় ঘন্টা অনুশীলন করতে হয় আর আমাদের দেশে বছরে মাত্র দুটো তিনটে টুর্নামেন্ট খেলা হয় । সারা বছরে দেশে মাত্র দুটি টুর্নামেন্ট খেলে আন্তর্জাতিক পর্য্যায়ে সাফল্য আসে না, আসতে পারেনা। ক্রমাগত আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট না খেললে কোথায় দাঁড়িয়ে আছি সেটা বোঝার উপায়ই থাকে না। 

ভারতের প্রচারমাধ্যম আর ভারতীয় দর্শকদের মানসিকতাও অলিম্পিক গেমসের প্রসারের অন্তরায়। এক্ষেত্রে ভারতের প্রচারমাধ‍্যমগুলোর ভুমিকা সবচেয়ে নক্কারজনক। একটা আধটা সিনেমা করে সাধারণ মানের অভিনেতা অভিনেত্রীরা কিংবা একটা আধটা শতরান করে সাধারণ মানের ক্রিকেটারা যে প্রচার পায় তার কনাটুকুও অলিম্পিক গেমসের তালিকাভুক্ত খেলার জগতের “জাতীয় চ‍্যাম্পিয়ান” খেলোয়াড়রা পায়না। অলিম্পিক গেমসের তালিকাভুক্ত খেলাগুলির কতজন “জাতীয় চ‍্যাম্পিয়ান” খেলোয়াড়দের নাম আমরা জানি? দয়া করে ভুল বুঝবেন না কারণ কাউকেই আঘাত করতে চাইনা, কিন্তু বলতে বাধ্য হচ্ছি বাংলার একটি বিশেষ দৈনিকে ক্রিকেট ও ফুটবল ছাড়া অন‍্য কোন খেলার রাজ‍্য ও জাতীয় পর্য‍্যায়ের কোন প্রকার সংবাদ প্রায় পরিবেশন করেই না। বাংলার একজন অত্যন্ত নামকরা ক্রীড়া সাংবাদিক, ২০০০ সালের সিডনি অলিম্পিক গেমসে ভারতের কেবলমাত্র একটা ব্রোঞ্জ পদক প্রাপ্তি ছাড়া সামগ্রিক ব‍্যার্থতা নিয়ে একটি দৈনিকে তার প্রতিবেদনে সরকারের দিকে আঙুল তুলছিলেন। আমার ক্রীড়া প্রেমিক শালাবাবু, সেই নামকরা সাংবাদিককে, ব‍্যেক্তিগত ভাবে ভারতে ও বাংলাতে অলিম্পিক গেমসের তালিকাভুক্ত প্রতিটা খেলার উদীয়মান ও জাতীয় পর্য‍্যায়ে সফল বাঙালি খেলোয়াড়দের প্রতি বাংলার সাংবাদিকদের উপেক্ষার কথা জানিয়ে চিঠি দিলে তিনি প্রাপ্তি স্বীকার করার সাধারণ ভদ্রতাটুকুও দেখাননি। মনে হয় আবেগের বশে অলিম্পিক নিয়ে লিখতে গিয়েছিলেন, কারন পরে ঐ নামি ক্রীড়া সাংবাদিককে ক্রিকেট নিয়ে অসাধারণ সব লেখা লিখতে দেখেছি। বাংলার “জাতীয় চ‍্যাম্পিয়ানরা” যখন ভীনরাজ‍্য থেকে ট্রেনে স্লিপার ক্লাসে চেপে নিঃশব্দে পদক জিতে রাজ‍্যে ফিরে আসে, শ্রদ্ধেয় সাংবাদিককুল তখন ক্রিকেট খবর করা নিয়ে ব‍্যাস্ত। এমনকি বাংলার সংবাদমাধ্যমগুলো “ন‍্যাশানাল গেমসের” খবরটুকুও ঠিক মতোন করে না। কোন একটি বিশেষ বাংলা দৈনিক তো আবার বাংলার সাফল‍্যর চেয়ে বাঙালির সাফল্য প্রচারে বেশি গদগদ ভাব দেখায়। “ডিডি স্পোর্টসে” কিছু অলিম্পিক গেমস তালিকাভুক্ত খেলা প্রচার করে থাকে , কিন্তু কতজন ভারতীয় ডিডি স্পোর্টস দেখে? গোপাল বসু, সম্বরন ব‍্যানার্জি কিংবা রনদেব বসুরা ভারতীয় দলে অতিরিক্ত হিসেবে থাকলেও যাদের গায়ে ভারতীয় দলের প্রথম একাদশের জার্সি কখনও ওঠেনি, তা সত্বেও সংবাদমাধ্যমের কৃপায় আমরা সবাই তাদের চিনি, কিন্ত ভারতের জার্সি গায়ে খেলা কতজন বাঙালী খেলোয়াড়দের আমরা জানি যারা বাংলার “জাতীয় চ‍্যাম্পিয়ান” কিংবা অলিম্পিক বা এশিয়ান গেমস বা কমোনওয়েলথ গেমসে ভারতের হয়ে খেলছে? বিএনআরে চাকুরীরত , ভারতের হয়ে অলিম্পিকে সোনা জেতা ভারতীয় হকি দলের এক খেলোয়াড় চাকরি জীবনের শেষ দিনগুলোতে কম্পিউটার মাথায় ঢুকছেনা বলে অফিসারের ভয়ে কি উৎকন্ঠাতে কাটিয়েছেন তা আমি দেখেছি। 

খেলার উৎকর্ষতায় ও খেলাতে দেশের প্রতি কর্তব্য কিংবা অবদানে অভিনব বিন্দ্রা কিংবা ডিঙ্গো সিংহদের সাথে সচিন তেন্ডুলকারের কোনও তফাত নেই, কিন্তু কেবলমাত্র ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের নক্কারজনক ভুমিকায় এদের মধ্যে আর্থিক ও সামাজিক প্রতিপত্তির আকাশ পাতাল তফাৎ গড়ে তুলেছে । তাই ডিঙ্গো সিংহ মারা গেলে মাত্র চার লাইনের খবর হয়, অথচ অবসরের পরেও সচিনের পিছনে ভারতীয় সাংবাদিকরা পাপারাতজির মতোন ঘোরে। ভারতীয় সাংবাদিকদের সৌজন্যে শচীন,  সৌরভদের সন্তানরাও কিছু না করেই আজ সমাজের সেলিব্রিটি। এই বিচিত্র সামাজিক চিত্রপটে সমস্ত ভারতীয় শিশু, কিশোর ও কিশোরীরা তো সচিন, সৌরভ হতে চাইবেই। কোথাকার কোন হতভাগা অভিনব বিন্দ্রা বা ডিঙ্গো সিংহ হতে চাইবে কোন দুঃখে? টোকিও অলিম্পিকে পদক প্রাপ্তির তালিকার প্রথম তিনটি দেশের দিকে তাকিয়ে দেখুন, এরা কেউ মূল খেলাগুলোর থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রেখে ক্রিকেট খেলেনা। আবার ব্রিটেন আর অষ্ট্রেলিয়া যেমন দক্ষতার সঙ্গে ক্রিকেট খেলে তেমনই দক্ষতার সাথে অলিম্পিকের আসরেও নিজেদের মেলে ধরে। ক্রিকেট আর অন‍্যান‍্য খেলাগুলোর মধ্যে কি সুন্দর ভারসাম্য রেখে চলছে ব্রীটেন আর অষ্ট্রেলিয়ার সরকার, নাগরিক ও সংবাদমাধ্যম। শচীনরা ক্রিকেট খেলায় জিতলে ভারতের নাগরিকরা পটাকা ফাটায়। অথচ ডিঙ্গো সিংঘরা এশিয়াডে সোনা জিতলে নিঃসঙ্গ ঘরে ফেরে। কোন মুখে ভারতীয় নাগরিকরা অলিম্পিকে অংশ নেওয়া ভারতীয় খেলোয়াড়দের কাছে পদক চায়? 

এর সাথে আছে ক্রীড়া জগতের অসম্ভব রকমের ধূর্ততা। আমাদের ভারতীয় ফুটবল দল ষাটের দশকে এশিয়ান গেমসে চ‍্যাম্পিয়ন হয়েছিল। ভারতের ফুটবল দল সে সময় অলিম্পিকেও ভাগ নিয়েছে। বাংলা তথা কলকাতা ছিল ভারতীয় ফুটবলের মক্কা। শোনা যায় “ক্ষুদিরাম হতে চাইনা” জাতীয় ডায়লগ দিয়ে বিরাশির এশিয়ান গেমসের ভারতীয় দলের ফুটবল ক‍্যাম্প থেকে ক্লাবের হয়ে খেলব বলে পালিয়ে আসে একদল ফুটবলার। এদের বিরুদ্ধে সরকার ও প্রশাসন নীরব থেকেছে। আবার সেই ফুটবলাররাই কোন রাজনৈতিক নেতার গ্রেফতার হবার পর কলকাতা ময়দানে মঞ্চ বেঁধে ধর্নায় বসে টেলিভিশন ফুটেজ পেয়েছে। বাংলার সংবাদমাধ্যম সেদিনও শোনা কথা “ক্ষুদিরামের হতে চাইনা” জাতীয় কথা বলা ফূটবলারদের হিরো বানিয়ে রেখেছিল আর আজও প্রাক্তন হয়ে যাবার পরেও তাদেরকেই হিরো বানিয়ে রেখেছে। “সব খেলার সেরা বাঙালির তুমি ফুটবল” সেখান থেকেই তার শেষের যাত্রা শুরু করে আজ তলিয়ে গেছে। ভারতীয় ফুটবলে আজ নর্থ ইষ্টের বাচ্চাদের দাপট। কলকাতা আজ আর ভারতীয় ফুটবলের মক্কা নয়। মাঝখান দিয়ে বিরাশীর এশিয়ান গেমসে যারা দেশের হয়ে ফুটবল খেলে সত্যিকারের ক্ষুদিরাম হতে চেয়েছিল, আর শেষবারের মতোন ফুটবলে ভারতকে “এশিয়ান গেমস” থেকে ব্রোঞ্জ পদক এনে দিয়েছিল, তাদেরকে দেশবাসী ও সংবাদমাধ্যম ব্রাত‍্য করেই রেখেছে। ষাটের দশক ও সত্তরের দশকের প্রথমদিকে, এই কলকাতার মাঠে, ইস্টবেঙ্গল মোহনবাগানের হয়ে কত বাঙালি ও অবাঙালি অলিম্পিকে সোনা জয়ী দলের হকি খেলোয়ার ঘাসের মাঠে কলকাতা হকি লিগ ও বেটন কাপ খেলে গেছেন, আজ কলকাতা থেকে হকি খেলা অবলুপ্ত হয়ে গেছে । যতদুর শুনেছিলাম যে অলিম্পিকে সোনা জয়ী  অলিম্পিয়ান গুরুবক্স সিং কলকাতার রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়ামে এ‍্যাস্ট্রোটার্ফ বসিয়ে স্টেডিয়ামটাকে খালি হকি খেলার জন‍্য মনোনয়নের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, কিন্তু কোন কতৃপক্ষই তার কথা শোনেনি। আজকের দিনে বাংলা হকি খেলা শুন‍্য হয়ে গেছে। 

দুটো অলিম্পিকের মাঝের চার বছরে ভারতে অলিম্পিক গেমস তালিকাভুক্ত খেলাগুলোর কমসে কম চারটে ন‍্যাশানাল ইভেন্ট আয়োজন করা হয়ে থাকে। এগুলো দেখতে গেলে কোন টিকিট লাগেনা, কিন্তু কজন ভারতীয় নাগরিক বলতে পারে যে তারা একটাও ন‍্যাশানাল দেখতে গিয়েছিল। বরংচ গাঁটের খরচা করে, কাজকর্ম শিকেয় তুলে, হাজার টাকার টিকিট কেটে কে কটা আইপিএল ম‍্যাচ দেখেছি এই নিয়ে বছরভর আত্মীয় ও বন্ধুদের মধ্যে চালিয়াতি মারার প্রতিযোগিতা লেগে থাকে। মজার ব‍্যাপার, এই মানুষগুলোই কিন্তু প্রতিবার অলিম্পিক গেমসের প্রাক্কালে সংবাদমাধ্যমের অনুপ্রেরণায় হটাৎ করে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে ওঠে, আর জেগে জেগে স্বপ্ন দেখে যে ভারতীয় খেলোয়াড়রা অলিম্পিকের সব খেলায় ঝুড়ি ঝুড়ি পদক গলায় ঝুলিয়ে দেশে ফিরবে। কঠিন বাস্তবে এটাই যে নাগরিকদের অলিম্পিক নিয়ে যাবতীয় উত্তেজনা অল্প কয়েকদিনের মধ‍্যেই নিশ্চিতরূপে প্রশমিত হয়ে যাবে আর আগামী চার বছর চার-ছয়ের নেশার উত্তেজনায় টগবগ করতে থাকবে আসমুদ্র হিমাচল ভারতীয় নাগরিকরা। সবশেষে একটা কথা না বললে এই প্রতিবেদন অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। চল্লিশ বছর পরে ভারতীয় পুরুষদের  হকিতে পদক পাবার কৃতিত্ব অবশ্যই নবীন পট্টনায়ক পরিচালিত উড়িষ্যা সরকারের। ভারতীয় মহিলা হকি দলের লড়াকু প্রদর্শনও প্রশংসনীয়। বিগত দুতিন বছর ধরে ভারতীয় হকি দলকে উড়িষ্যা সরকার দত্তক নিয়ে লালন পালন করেছে। প্রতিটা রাজ‍্য যদি একটা করে খেলা দত্তক নিয়ে নেয় তবে ভবিষ্যতে আরও ভালো ফলাফল পাওয়া অসম্ভব নয়। কবির ভাবনা “ভারতে আবার জগতসভায় শ্রেষ্ঠ আসন লবে” কথাটা  সত‍্যি করতে গেলে সরকার, নাগরিক ও সংবাদমাধ্যমকে নিজেদের মানসিকতাকে আমুল পাল্টে ফেলতে হবে, যা কখনোই হয়তো সম্ভব হবে না।

 

——- তবুও এত প্রতিকুলতার মধ্যেই কেউ কেউ হটাৎ হটাৎ করে ঠিকরে বেরিয়ে আসে — ভবিষ্যতেও কেউ কেউ আসবে — এখন যেমন দু চারটে করে পদক চলে আসে — ভবিষ্যতেও আসতে থাকবে ভারতের ঝুলিতে — তারপর অচিরেই পদক সহ খেলোয়াড়টি হারিয়ে যাবে নাগরিকের মন থেকে — তাই এই আটচল্লিশতম ফলাফল যথেষ্ট নয় কি ?

Print Friendly, PDF & Email
Previous articleঅনাহুত
Next articleকথামালা
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments