আশ্বিন মাস, পুজর ছুটির আর মাত্র কিছুদিন বাকি, তার পরেই দেখা মিলবে দেবী দুর্গার। বসেছিলাম শারদীয়া পূজাসংখাটা হাতে নিয়ে, কিন্তু আকাশের গভীর নীল রং ও কাশফুলের হাতছানি যেন স্থির থাকতে দিল না। তাই বেরিয়ে পরলাম দেবী মাকে আহ্বান জানাতে। এক রোদ্র ভরা ঝকঝকে দিনে হাতে ক্যমেরা ও মাথায় টুপি নিয়ে পৌঁছে গেলাম শোভাবাজার এলাকার হাটখোলায়, যাকে আমরা ‘কুমোরটুলি‘ নামে এক এক ডাকে চিনি।
যখন পৌঁছলাম তখন হাতঘড়ির সময় বলছে ১২.১৫ পি:এম। কুমোরটুলির ওই বিশাল এলাকা জুড়ে কোথাও গণেশ, কোথাও কার্ত্তিক, কোথাও মা সরস্বতী আবার কোথাও বা স্বয়ং মা দুর্গা সান-বাথ নিচ্ছেন…থুড়ি শুকচ্ছেন।
মৃত-শিল্পীরা তো বেজায় ব্যাস্ত, কথা বলার সময়ই নেই। কেউ তৈরি করেন সাবেকি ধাঁচের প্রতিমা, কেউ আবার থিমের ঠাকুর গড়তে পারদর্শী। ভাবলাম বেশি বিরক্ত না করে শুধু ছবি তুলি, কিন্তু তাতেও বাধা পেলাম। একজন মৃত-শিল্পীদের মালিক বলে উঠলেন “ছবি তুলছেন যে! পারমিশন টিকিট কোথায়?” আমি ভাবলাম ‘পারমিশন টিকিট’? সেটা আবার কি? কথা বলে জানলাম ছবি তুলতে হলে পারমিশন টিকিটের প্রয়োজন পরে। সেই মৃত-শিল্পীর কাছে সবটা জেনে নিয়ে সোজা চলে গেলাম টিকিট ঘরে ও দশটাকার বিনিময় পেয়ে গেলাম একটা হলুদ বরন কাগজ। ব্যাস আর কে আটকায়, তুলেফেল্লাম কিছু অমূল্য ছবি। সারি সারি মূর্তি, বিভিন্ন আকার-ভঙ্গিমায় মাটির প্রলেপ লাগিয়ে রাখা, কারুর আবার দেহে চুন ও প্রাথমিক রঙের প্রলেপ লেগেছে। এই সবের মধ্যে দিয়ে আমি হেঁটে যাওয়ার সময় নিজেকে মনে হচ্ছিল যেন ‘ দেবালয়ে জীবন্ত মানুষ ‘।
এই সব অনুভূতির মাঝেই কখন যে ঘড়িতে বেলা ১.০০ বাজলো বুঝতেই পারিনি। শুরু হল মধ্যাহ্ন ভোজের সময়। আর কে আটকায়… লেগে পরলাম নিজের প্রশ্নের ঝুড়ি নিয়ে শিল্পীদের কাছে। কিছু কিছু মানুষের কাছ থেকে প্রত্যাখ্যান পেলেও কয়েকজন শিল্পী নিজে থেকে এগিয়ে এলেন কথা বলতে। কথা বলে নানা তথ্য জানতে পারলাম। যেমন মৃত-শিল্পী বাব্লু পাল জানালেন “বৃষ্টির বাড়বাড়ন্ত নেই, তার জন্য এবারে আমরা ভাল ভাবে কাজ করতে পারছি, অন্য বারে বর্ষার কারণে কাজে দেরি হয়, শেষ দিন অবধি রঙের কাজ চলে ও রঙ শুখবার জন্য বিশেষ প্রযুক্তির সাহায্য লাগে যাতে আমাদের খরচ অনেকটাই বেরে যায়”। প্রকৃতিও হয়ত এবারে এই মৃত-শিল্পীদের সঙ্গ দিয়েছে তাই পুরো কুমোরটুলি এই রৌদ্র ঝলমলে আবহাওয়ায় আনন্দের দিন গুনছে।
বাঙালির ‘বারো মাসে তেরো পার্বণ‘ কথাটি যথাযথ হলেও এই মৃত-শিল্পীদের সারা বছরের রোজগারের অনেকটাই নির্ভর করে থাকে এই দুর্গা প্রতিমা তৈরি করার উপর। তাই তারা বেজায় খুশি। আশাকরি ভরা শরতের রৌদ্রজ্জ্বল আকাশের সঙ্গেই ঢাকে কাঠি পরবে শারদীয়া দুর্গোতসবের। আপামর বাঙালির রক্ষাকর্ত্রী দেবী দুর্গার আগমনের জন্য দিন গুনছে ছোট-বড় সকলে।