ব্যস্ত শিয়ালদা স্টেশন, তাড়াহুড়ো করে, ৪ নম্বরে দাঁড়ানো আপ হাসনাবাদ লোকাল টা ধরলাম, বাড়ি ফিরব, রোগাশোগা চেহারার জন্যে একটু জায়গাও জুটে গেল, ট্রেন ছাড়ার ২-১ মিনিট আগে হটাত চোখ পড়ল, এক বিদেশিনী, ওই আমি চিনি গো চিনি তোমারে মোটেই নয়, কিছু বাচ্চা আর কিছু মহিলাদের সাথে বেশ মজা করছেন, কথা বলছেন, খেলা করছেন, কচুড়ি খাওয়াচ্ছেন, অগাধ বিশ্বাসে নিজের মোবাইল, ট্যাব, ব্যবহার করতে দিচ্ছেন, আবার তাদের নাম ধরেও ডাকছেন, সেই সব বাচ্চা ও মহিলা যারা হয়ত শুধু স্টেশনেই থাকে, নিজের ঘর বাড়ি নেই, দেশ তো পরের কথা, বাবা কে তাই জানা নেই, এসব দেখে আমি ও ট্রেন থেকে নেমে পড়লাম, ভদ্রমহিলার সাথে তো কথা বলতে হয়… বলার ইচ্ছে হল কারণ হাটাত স্বদেশপ্রেম জেগে উঠল, আমরা নিজেরা কেমন বেশ হাত গুটিয়ে দিব্যি আছি, আর ইনি, জানিনা কোন দেশ থেকে এসেছেন, কত আপন করে নিয়েছেন এদেশের জল, হাওয়া, আর ছেঁড়া কোঁড়া মন গুলকে!
ভদ্রমহিলার নাম লুকেই, ডেনমার্কে থাকেন, ছ’মাস অন্তর আসেন এখানে, যতদিন থাকেন রোজ বিকেলে এই শিয়ালদা স্টেশনে আসেন, তার এই সব বন্ধুদের সাথে সময় কাটান, আবার ফিরে যান, একবালপুরে, এখানে এসে ওখানেই থাকেন, খিদিরপুরে একটা স্কুলে বাচ্চাদের পড়ান, দেখলাম একটা তিন চার বছরের বাচ্চা তার মোবাইল টা নিয়ে কানে হেডফোন নিয়ে গান শুনছে, জিঞ্জেস করলাম কি গান শুনছে বললেন, একটা ড্যানিশ সং, সত্যি গানের কোনো দেশ হয়না, আশ্চর্য, যে উনি বাংলা বলতে পারেন না, ওদের সাথে ইংরাজিতেই কথা বলেন, ওরা বাংলাতে উত্তর দেয়, তাও দুপক্ষই সব বোঝে, বুঝলাম মানবিকতার ভাষা বুঝতে বোঝাতে স্বরবর্ণ, ব্যঞ্জনবর্ন পড়তে হয়না। এ বি সি ডি জানতে হয়না।
আমি গর্ব করি আমার কিছু বন্ধুও একদিন সব ভাল হবে এই আশাতে, এরকম মন নিয়ে কাজ করেন, হয়ত পৃথিবীটা এখনো এরকম মানুষদের জন্যই সুন্দর।আরও সুন্দর হবে… ট্রেনে উঠলাম, কানে হেডফোন, একটা গান বাজছে…
“তুমি দেখবে তুমি দেখবে/ ওই দুটি হাত বাড়ালে
কিছু হাত দুই হাত ধরবে/ তুমি তোমার মাটিতে দাঁড়ালে…”