আসিছে সদলে বিদেশী দস্যুহুঁশিয়ার রহ দেশ,

বিধর্মী সবে দুরন্ত হুণদয়ামায়া নাহি লেশ।

যেথা হুন রাখে চরণ চিহ্ণসেথাই ছিন্নভিন্ন,

নিষ্ঠুর তথা বর্বর জাতিনরকের কীট ঘৃণ্য।

আছ কে যুবান নির্ভীক প্রাণহও এবে আগুয়ান,

যে কোনো মূল্যে রুধিতে হইবে বিদেশীর অভিযান।

দিগ্বিজয়ী মগধাধিপতি শ্রীমৎ স্কন্দগুপ্ত,

অসমসাহসী অক্ষৌহিণীনৃপতি স্বয়ং দীপ্ত।

তথাপি তাঁহার চিত্তে শঙ্কাললাট ভ্রুকুন্চিত,

হিংস্র হুণে বুঝি বা কেমনে করিবেন পরাজিত !

ছিল সমগ্র আর্যাবর্ত স্কন্দের অধীনস্থ,

রাজলক্ষ্মী চন্চলা অতিনৃপতি চিন্তাগ্রস্ত।

বিরাটাকার ভূখণ্ডটিরে রাখিতে সুশৃংখল,

রাজকর্মে লিপ্ত রাজনছল বল কৌশল।

প্রজাবৎসল ন্যায়পরায়ণ সুশাসক নরপতি,

প্রতাপাণ্বিত তথাচ তাঁহার ভাগ্য মন্দ অতি।

অটুট রাখিতে আর্যাবর্তে আপন শাসনবিধি,

রাত্রেও বুঝি রাজের নয়ন জাগরুক নিরবধি।

বিদ্রোহ আর বহি:শত্রুবিষময় চক্রান্ত,

বীরকেশরী স্কন্দগুপ্তহায় তিনি রণশ্রান্ত।

এমত ক্ষণেই উন্মদ এক ঝন্ঝাবর্ত ন্যায়,

আঘাত হানিতে উদ্যত হুণ মগধের সীমানায়।

রাজন তখন দাক্ষিণাত্যে বিদ্রোহীবশে ব্যাস্ত,

ঘোরতর এই দু:সংবাদে বিষম চিন্তাগ্রস্ত।

অরিবিনাশের গুরুভার সঁপি প্রিয় সেনানীর করে,

প্রত্যাগমনে সত্বর নৃপ পাটলীপুত্র নগরে।

শ্রেষ্ঠ নগর পাটলীপুত্রমগধের রাজধানী,

ইতিহাস কহেঅতি কদাচিৎ থাকিতেন সেথা তিনি।

অধিক সময় স্কন্দের ব্যয়লক্ষ্য যুদ্ধক্ষেত্র,

রাজকার্যের তত্বাবধানে মাধ্যম ছিল পত্র।

পাটলীপুত্রে প্রধানামাত্য অপর মন্ত্রীগণে,

রাজ্যশাসনে নিরত সতত রাজার অভিজ্ঞানে।

বিশাল গুপ্ত সাম্রাজ্যটির শত্রু অগণন,

সবার উপরে শ্বেত হুণ জাতিনিষ্ঠুরতায় ভীষণ।

তাইতো নৃপের আহ্বান এবে আপামর জনগণে,

অস্ত্রধারণ করিতে হইবে দেশরক্ষার পণে।

যুগেক পূর্বে মগধ রাজ্যে হুণের আগ্রাসন,

রণপণ্ডিত স্কন্দ করেন অনায়াসে নিবারণ।

কিন্তু আজিকে মগধাধিপতি স্বয়ং সন্দিহান,

কিরূপে হুণকে পুনরায় তিনি করিবেন হতমান।

আরো বলীয়ান,ভয়ানক তথা হিংস্র হুণবাহিনী,

শিহরিত নৃপ শুনি তাহাদের বর্বরতার কাহিনী।

আর্যাবর্তে সাহসী বীর সংখ্যায় অগণিত,

তথাপি কেবল বাহুবলে অরি হইবে না বিতাড়িত।

চাহি কৌশল, মগজ অস্ত্র,ক্ষুরধার হাতিয়ার,

নতুবা এক্ষণে বর্বর হুণে করিবে মগধ প্রহার।

মগধ প্রান্তে ক্ষুদ্র গ্রামটিস্থান নাহি মানচিত্রে,

দুইটি নবীন কর্মে মত্তঘনিষ্ঠ ভ্রাতৃত্বে।

মেধায় প্রবীণসুঠাম সবলঅসি নির্মাণ পেশা,

আগ্ণেয়াস্ত্র আবিষ্করণঅভিনব বটে নেশা।

হরিহর দুই আত্মার নাম রঘুরাম লক্ষণ,

রাজআবাহন তাহারাও শুনে-‘কর এবে দেশরক্ষণ

নিত্য নূতন উদ্ভাবনের স্বপ্নলব্ধ সুখ,

ভল্লের ন্যায় ক্ষুদ্র কামান,অগ্নিগর্ভ কন্দুক।

দুইটি মারণ অস্ত্র দিবেই হুণকে চরম দণ্ড,

রক্ষা পাইবে আর্যাবর্তহইবে না দেশ খণ্ড।

যেমত চিন্তা সেমত কর্মআসিল পাটলীপুত্রে,

অগ্রজ আর অনুজ দুজনা রাজদর্শন সূত্রে।

প্রাসাদে পৌঁছিপ্রার্থন করে রাজসাক্ষাৎ তরে,

ক্ষুদ্র অতীব আগ্ণেয়াস্ত্র বহন দোঁহার করে।

রাজদরবারে আনিত তাহারানৃপতি জিজ্ঞাসু,

কি বা পরিচয়,কি অভিপ্রায়মোর সনে কহ আশু।

তোমাদের করে হেরিতেছি এবে অভিনব কোনো শস্ত্র,

রাজঅন্তরে উদ্বেগছায়া,সভাসদজনে ত্রস্ত।

কোথা প্রতিহারআহ্বান করনিনাদ করিল ডংকা,

দুই সহোদর কহিল-“রাজন, অমূলক তব শংকা।

মোরা দুই ভ্রাতাস্বদেশপ্রেমিক লক্ষণ রঘুরাম,

আসিয়াছি হেথা দেশরক্ষায়ঠিকানা মনেরগ্রাম।

আবিস্করণ করিয়াছি দেব অভিনব এক অস্ত্র,

যাহার প্রয়োগে লিখিত হইবে নব্য যুদ্ধশাস্ত্র।

আঘাত করিলে শত্রুসৈন্য নিমেষে ছত্রভঙ্গ,

বর্বর হুণনিশ্চিতসবে লভিবে শমনসংগ।

কৃষিকাজ করি আপন ক্ষেত্রেঅসি নির্মাণ পেশা,

শয়নেস্বপনে অনিবার মনে উদ্ভাবনের নেশা।

ক্ষুদ্র কামান দূরের লক্ষ্য অনায়াসে করে ভেদ,

অগ্নিগর্ভ কন্দুক সাথীশত্রু নিধন মেধ।

মোদের মিনতি মহারাজ সনেনাহি কোনো উপহাস,

পরখ করুন অস্ত্রশক্তিহইবে তুরুপতাস।

পর প্রত্যুষে নব্য অস্ত্র হইল পরীক্ষিত,

কার্যকারিতা হেরিয়া স্কন্দ পুলকিত,বিষ্মিত।

অমাত্যগণ,সেনাপতি তথা রাজসভাসদগণে,

প্রশংসাবাণী দুইবিশারদেমুখরিত জনেজনে।

অভিনব বটে আগ্ণেয়াস্ত্রনাহি তায় কোনো সন্দ,

বর্বর হুণহও সাবধাননতুবা ভাগ্য মন্দ।

রাজ কোষাগার হইল উদার সেইক্ষণে রাজাদেশে,

কামান এবং কন্দুক বহু তৈয়ার অক্লেশে।

রাজার রক্ষীবিশিষ্ট পদদুই ভ্রাতা অভিষিক্ত।

রাজঅন্তর হুণ শঙ্কায় নাহি আর শংকিত।

পরের ঘটনা অতি অনায়াসে করা চলে অনুমান,

আর্যাবর্ত উল্লাসে গাহে স্কন্দের জয়গান।

হুণ সেনানীস্কন্দ বাহিনীসমুখ সমরে রত,

পন্চনদের রাজ্য প্রান্তে বিধর্মী সবে হত।

অগ্ণিগোলক আঘাতে তাহারা নিমেষে ছত্রভঙ্গ,

হুণ বাহিনীর মগধ বিজয়আশা চিরতরে সাংগ।

রাজাধিরাজ স্কন্দ হস্তে বিদেশীর পরাজয়,

ইতিহাস কভু এই কাহিনীর স্বীকার করে না দায়।

হয়ত সকলই কবি কল্পনা তথাপি একথা সত্য,

বিদেশী হানায় বারেবারে ক্ষত মোদের আর্যাবর্ত।

মাতৃভূমির রক্ষার তরে দেশপ্রেমিক স্কন্দ,

নৃপের ভূমিকা ঊজ্জ্বল অতিনাহি সেথা কভু দ্বন্দ্ব।

কোনো একদিন শুনি যে কাহিনী পিতা পিতামহ সনে,

ছায়াটি আজিও রয় অম্লান মোর হৃদয়ের কোণে।

স্মৃতিরূপ সেই পুঁথিগুলি তুলিগাঁথিলাম এই গাথা,

মিলিবে না কভু সন্ধান যদি কর ইতিহাস পাতা।

Print Friendly, PDF & Email
Previous articleজমা জল
Next articleএক অনন্য ভালোবাসা
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments