দেশলাই কাঠি দিয়ে মোমবাতি টা জ্বালিয়ে দিলিপ তাস দেয়া শুরু করলো। পাশে একটা চেয়ার এ বসে প্রনব খবরের কাগজ টা উল্টেপাল্টে দেখছিল। হঠাৎ করে কাগজ টা টেবিলে ধিক্কার এর সঙ্গে ফেলে দিয়ে বললো, ধুর! পুলিশের দ্বারা কিছু হবেনা, অকম্যার ঢেঁকি সব।
অনিক হার্টস এর টেক্কা টা ফেলে বললো, কি হল আবার?
প্রনব- আর কি হবে? কাল আবার আরেকটা নিরুদেশ এর ঘটনা ঘটেছে শহরে।
রাজেশ আমাদের সাথেই বসে তাস খেলছিল। এসব শুনে বললো, কি হয়েছে একটু খোলসা করে বলবি?
প্রনব- আরে বাবা, বিগত একমাস ধরে শহরে যে নিরুদ্দেশ এর ঘটনা গুলো ঘটেছে, কালকের টা নিয়ে ৫ টা হল। এখনো পুলিশ কিছু করতে পারলো না।
আমি এতক্ষণ শুনছিলাম। এবার বললাম, আরে পুলিশের কাজ পুলিশ কে করতে দিলে ভালো হয় না?
প্রনব বললো, তুই চুপ কর। এত casual নিছিস তো, কে জানে এবার হয়তো আমাদের মধ্যে কারোর পালা?
দিলীপ কাত মেরে পড়েছিল। এবার উঠে বললো, আরে ওসব ভোজবাজি। দেখ সবকটা চিটিং বাজ ধীরে ধীরে শহর ছাড়ছে।
এটায় আমি সায় দিতে পারলাম না।বললাম, নানা এতটাও সোজা না।
দিলীপ- তাহলে কি অপহরণ?
আমি মাথা নাড়িয়ে বললাম, না না তাহলে তো কোনো দাবি থাকবে। আর কেউ যদি এদের মেরে ফেলে তাহলে তো কোনো না কোনো খবর পাওয়া যেত।
এবার প্রণব আমার কথায় সম্মতি দিয়ে বললো, হ্যাঁ ঠিক। আর যারা নিরুদ্দেশ তারা তো সবারই খুব একটা স্বছল অবস্থা না। অকারনে এত নিরুদ্দেশ!
এবার অনিক হঠাৎ করে বলে উঠলো, human trafficking এর গল্প নয় তো?
এরকমই একে অপরের সাথে মত বিনিময় চলছে হঠাৎ আমার ঘড়ির দিকে চোখ গেলো। ওহে অনিক 10টা বাজে তো চলো বেরোনো যাক। বাইরে এখনো বৃষ্টি চলছে, মনে হয়না আর কমবে। গুটি গুটি পায়ে এগোই চলো।
দিলীপ এর বাড়ী টা সমুদ্রের কাছেই। বাড়ি র গেট থেকে বেরিয়ে ৫মিনিট পর রাস্তা টা ভাগ হয়ে দুদিকে চলে গেছে । এখান থেকে অনিক আর প্রণব বাদিক এ চলে গেলো। আমি চললাম সোজা রাস্তা ধরে চ্যাটার্জি বাড়ির দিকে।
চ্যাটার্জি মশাই হলেন আমার মালিক, কোলকাতায় থাকেন। আসলে আমিও কোলকাতার লোক। চ্যাটার্জি মশাই আমার বাবা র বাল্য বন্ধু ছিলেন। বাবা যখন ক্যান্সার এ ভুগতে ভুগতে মারা যান তখন সবে আমি যাহোক করে বিএ পাস করেছি। মা তো ছোটো বেলায় ই চলে যান আর বাবা চলে যাবার পর একেবারে একা হয়ে যাই। কলেজে পড়ার সময় যেখানে কাজ করতাম সেই ফ্যাক্টরী ও বন্ধ হয়ে গেছে। তখন এই চ্যাটার্জি মশাই আমাকে তার পৈত্রিক বাড়ি আর কাজকর্ম সামলাতে এখানে পাঠান। বেতন ও ভালই ছিল। চ্যাটার্জি মশাই এর বাড়ী টাও বেশ সুন্দর এবং যথেষ্ট বড়ো।থাকার মধ্যে আমি আর এক চাকর। ওই রান্নাবান্নার জন্য চ্যাটার্জি মশাই এ দিয়েছেন। কাজকর্ম ও খুব হালকা। তাই দারুন সুখেই আছি সেটা বলাই বাহুল্য। সকালটা কাজ নিয়ে কেটে যায় আর সন্ধ্যে টা কাটে দিলীপ এর বাড়ী। দিলীপ এর বাবার গোটা উড়িষ্যায় বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি বড়ো বড়ো হোটেল ছিল। এখন দিলীপ সব কটা বেচে দিয়ে গোপালপুরের এই একটাই রেখে দিয়েছে।এই হোটেল এরই উপর তলায় ও থাকে। বিয়ে করেনি, তাই একাই থাকে। দিলীপ এর সাথে আলাপ হয় সমুদ্র সৈকতে সান্ধ্যভ্রমণ এ গিয়ে, দুজনেই নিয়মিত যাই। আড্ডার বাকিরা সবাই বাঙালি, কাজের সূত্রে এখানে রয়েছে দীর্ঘদিন। ওদের সাথে আলাপ আড্ডা তে গিয়েই। সবাই বেশ মিশুকে আর উপকারী ও বটে। কাজের সূত্রে একটা অচেনা জায়গায় এসে এত তাড়াতাড়ি এত সঙ্গী পাবো আশা করিনি।
রোজকার মতো আজও তাস আর গল্প চলেছিল। হঠাৎ এই নিরুদ্দেশ এর ঘটনা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়েই হয়ে গেল দেরি তারউপর দুদিন ধরে সাংঘাতিক ঝড় বৃষ্টি হচ্ছে। অবশ্য উপকূলবর্তী এলাকায় এরকম হয়েই থাকে।
এমনিতে গোপালপুর শান্ত এলাকা। কিন্তু বিগত এক দেড় মাস ধরে এই এক উপদ্রপ শুরু হয়েছে। জল জ্যন্ত মানুষ একের পর এক গায়েব হয়ে যাচ্ছে। যেন ম্যাজিক। ঠিক কোন না কোনো এক বর্ষার রাতে শহরে এর ভিন্ন ভিন্ন প্রান্ত থেকে এক জন করে গায়েব হয়ে যাচ্ছে। না কোনো কারণ আছে আর না আছে কোনো সূত্র। এলাকার মানুষ ভয়ে বাইরে বেরোতে পারছে না। তবে পুলিশ যথেষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। পাহারা বসানো, পেট্রোলিং, খচোর লাগানো সবই করেছে , কিছু তেই ফল পাইনি। আসলে মোটিভ টাই এখনো পরিষ্কার না। এই লাস্ট যে ঘটনাটা ঘটেছে সেটা জেলে পাড়ায়। রাতের খাবার শেষে একটা বিড়ি খেতে বাইরে বেরিয়ে আর ঘরে ফেরেনি পাশের পাড়ার এক মৎস বিক্রেতা। ভাবা যায়, মানুষ তো বাড়ি বাইরে পা রাখতে ভয় পাবে।
অপরাধী যেই হোক না কেন সে কিন্তু নারী পুরুষ এ ভেদাভেদ করে না। এই আগের সপ্তাহে sea beach এর ধারে এক চা ঘুমটির মালকিন, স্বামি মাতাল, শোনা যায় নাকি দেহ ব্যবসা ও করে, সেও হটাৎ করে গায়েব হয়ে যায়। সেদিন ও এরকম বৃষ্টি বাদল হচ্ছিল। অনেক খোঁজাখুঁজি করা হয়। কিন্তু অন্য সবার মতো এনকেও পাওয়া যায়নি। এরকম আরো তিন তিনটে ঘটনা রয়েছে। এক বাঙালি স্কুল মাস্টার, এক জন কলেজ পড়ুয়া, এক উড়িয়া ব্রাহ্মণ।
আড্ডা যতই বড়ো বড়ো জ্ঞ্যান দিই না কেন ভয় আমার ও রয়েছে। জানিনা এরপর কার পালা। এসবই ভাবতে ভাবতে পাড়ার গলি দিয়ে হাঁট ছিলাম, হটাৎ এক দমকা হাওয়ায় ছাতা টা গেল ভেঙে। সঙ্গে সঙ্গে কাক ভেজা ভিজে গেলাম। যা হোক করে পাশের দোকান টার চালায় গিয়ে মাথা টা বাঁচলাম। কিন্ত এভাবে তো চলবে না। বাড়ি ফিরতে হবে। কিন্তু এ বৃষ্টির তো কোনো বিরাম নেই।
“কতদূর যাবেন?” আমার পাশ থেকে একটা গম্ভির গলায় প্রশ্ন এলো। প্রথমটায় খেয়াল করিনি। দ্বিতীয় বার একই প্রশ্ন আসায় খেয়াল হল। আমার ই পাশে দাঁড়িয়ে সিগারেট এ টান দিচ্ছেন একজন লম্বা চওড়া ব্যক্তি। তবে অন্ধকারে মুখটা পরিষ্কার নয়।
ভদ্রতার খাতিরে উত্তর দিলাম, এই তো সামনেই, তাও মিনিটের পনেরো মতো।
সেই একই কণ্ঠস্বরে লোকটি বললো, পুরো তো ভিজে গেছেন আর এ বৃষ্টি তো কমার নয়। তাহলে বাড়ি যাবেন কি করে? আপনি চাইলে আমার বাড়ি থেকে একটা ছাতা নিয়ে আসতে পারেন, পরে ফিরত দিয়ে দেবেন। আমার বাড়ি এই দেখা যাচ্ছে। আপনাকে শুধু আমার ছাতা এ করে আমার বাড়ি পর্যন্ত যাবেন তারপর ছাতা নিয়ে চলে আসবেন।
আমি বললাম, না থাক আপনাকে ব্যস্ত হতে হবেনা, আমি ঠিক চলে যাবো।
লোকটি সিগারেট টা শেষ করে ছাতা টা খুলে বললো, তা আপনার ইচ্ছা। আমার বলার দরকার মনে হলো তাই বললাম।
কথা শেষ লোকটা চলে যাচ্ছে এমন সময় হঠাৎ আমার মনে হলো, গেলে ক্ষতি কিসের , একই তো কাক ভেজা , তার উপর থেকে থেকে কাঁপুনি দিচ্ছে। এরম ভাবে আর কিছুক্ষন থাকলে জ্বরে পড়তে বাধ্য।
লোকটিকে থামিয়ে বললাম , দাদা আমিও যাব।
লোকটি হাসিমুখে বললো , চলে আসুন।
রাস্তাটা টপকে ওপারের গলির প্রথম বাড়িটার সদর দরজার সামনে এসে লোকটি বললো, এই হলো আমার বাড়ি। আসুন একটু বসে যান।
আমি সামান্য হেসে বললাম, ধন্যবাদ। তবে আজ আর না অন্য দিন।
লোকটি বললেন, আরে আপনার বাড়ি তো কাছেই চলে যাবেন। কিন্তু আমি যে ব্রাহ্মণ, এরমভাবে বাড়ির দোর থেকে ফিরে গেলে যে অকল্যাণ হবে। অন্তত এক কাপ গরম দুধ খেয়ে যান বৃষ্টি তে ভিজেছেন, উপকার পাবেন।
কি আর করা এত জোর করার পর না শুনলে সেটা অভদ্রতা হবে। তাই লোকটির সাথে ভিতরে গেলাম। যদিও আমার মনের ইচ্ছা ছিলোনা। বাড়ি যাবার কথাটা বারবার তাড়া দিচ্ছে। তারউপর অচেনা লোক। তবুও ভদ্রতার খাতিরে ঢুকেই পড়লাম লোকটির বাড়িতে।
বসার ঘরটা বেশ পরিছন্ন, দামি দামি আসবাবপত্রে ঠাসা। ঘরটা বেশ বড়ো। ঘরের মাঝখানে একটা বড়ো কাঠের টেবিল। টেবিল এর ওপাশে দেয়াল আলমারি তে বই আর শোপিস এ ভর্তি। ঘরের মধ্যে একটা বড় দম দেওয়া ঘড়ি ও রয়েছে। এই বুঝি ঢং ঢং করে বেজে ওঠে।
লোকটি টেবিলের ওপাশে গিয়ে একটা গদি লাগানো কাঠের চেয়ার এ বসে আমার উদ্দেশ্যে বললো, লজ্জা পাবেন না বসুন, হরি চা নিয়ে আসছে।
আমি আমার সামনে রাখা চেয়ারটা টেনে বসে পড়লাম। লোকটি একটা কাচের গ্লাস এ wine ঢেলে বললেন, চলবে নাকি?
আমি মুচকি হেসে বললাম, না। আমার জন্য চা টাই যথেষ্ট।
লোকটি আর জোড় করলেন না। গ্লাস এ একটা চুমুক দিয়ে বললেন, তা এত রাতে কোথা থেকে ফেরা হচ্ছে?
আমি কিঞ্চিত ভদ্রতার সাথেই উত্তর দিলাম, এই তো সন্ধ্যায় একটু বন্ধুর বাড়ি আড্ডা বসে , আজ ও সেখান থেকেই ফিরছিলাম।কিন্তু একথা সেকথা বলতে বলতে দেরি হয়ে গেল।
লোকটা গম্ভীর গলায় বললেন, এত রাত করা টা বোকামি, তারউপর আবার এরম বৃষ্টি বাদল। শহরের হাল তো ঠিক না। সবই তো জানেন মনে হচ্ছে। তা ভয় করেনা ?
আমি মৃদু হেসে উত্তর দিলাম, ভয় করেনা বললে মিথ্যে বলা হবে। তবে ভয় ঘরে বসে থাকার কোনো মানে হয়না। যা হবে দেখা যাবে।
লোকটি গ্লাস এ আর একটা চুমুক দিয়ে বললো, আমার কিন্তু এসবে ভয় করেনা। একদমই করেনা। আমি আমার বাবার একমাত্র ছেলে। খুব কম বয়সে ইন্ডিয়ান আর্মি তে যোগদান করি। যখন কাশ্মীর এ পোস্টিং ছিলাম একবার কিছু পাকিস্তান ই অনুপ্রবেশকারী দের গুলি করে মেরে দিই। আর ওরা আমাকেই আর্মি থেকে বের করে দিলো ? বলে ওরা পাকিস্তানি অনুপ্রবেশকারী ছিলোনা, সাধারণ মানুষদের নাকি আমি নৃশংস ভাবে মেরেছি। শুয়ারের বাচ্চা। আর আমাদের যারা ওদের হাতে মরেছিলো তারা সাধারণ মানুষ না? ওদের কি দোষ ছিল? আমার মতো একজন সৎ , দায়িত্ববান অফিসার কে ওরা তারিয়ে দিলো! মন টা খুব খারাপ ছিল জানেন, রাগ ও ছিল খুব। বাড়ি ফিরে এলাম, সেখানে ও শান্তি নেই। বাবার lower portion টা পরে গিয়েছে, বিছানায় পরে আছেন সর্বক্ষণ। আর্মি camp এ ওরকম অপমান , তার উপর বাবার অসহায় অবস্থা আমাকে আরো পগল করে তুলেছিল, উন্মাদ হয়ে গিয়েছিলাম। এরকম একদিন রাতে বাবা আমার স্বপ্নে এলেম। উনি খুব কষ্ট পাচ্ছিলেন জানেন। ওনার করুন চোখ যেন মুক্তি চাইছে।
লোকটির গলা কান্নায় ভরে এলো। আহা সত্যি ওনাকে কত কি না সহ্য করতে হয়েছে।
লোকটি এবার টেবিলের এপ্রান্তে চলে এসেছেন। ঘরের ডানদিকের দেয়াল এ ঝোলানো একটা potrait এ চোখ রেখে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। সম্ভবত potrait টা ওনার বাবার।
potrait থেকে চোখ নামিয়ে লোকটি বললো, এরপর আমি ঠিক করলাম বাবাকে এই যন্ত্রনা থেকে মুক্ত করতে হবে। আমার যতই কষ্ট হোক। জানেন বাবার মুখে বালিশ টা দিয়ে যখন চেপে ধরে ছিলাম বাবা একটুও প্রতিরোধ করেননি , শুধু সবশেষে মুক্তির হাসি ছিল তার মুখে।
কথা শুনেই কেমন চমকে উঠলাম, লোকটা বলে কি? পাগল না রসিকতা করছে, না কি সত্যি ই!
আমি কম্পমান গলায় বললাম, আমার মনে হয় এবার যাওয়া উচিত।
লোকটি আমার কথায় কান না দিয়ে আবার তার প্রলাপ বকা শুরু করলেন, আমার বাবা চিরকাল একলা থাকার পক্ষপাতী ছিলেন না। তাইতো আমি চলে যাবার পর আত্মীয় পরিজন দের বাড়িতে এনে রাখতেন। কিন্তু এখন তার অবস্থা টা একবার ভেবে দেখুন সেখান এ তার সঙ্গে কেউ নেই… কেউ না… কথাটা শেষ করেই লোকটি কান্নায় ভেঙে পড়লেন।
আমার অবস্থা টা আরো শোচনীয়। বুঝতে পারছিনা আমি কি করবো। আমার কি পালানো উচিত নাকি ওনাকে শান্তনা। কিন্তু তিনি কি সত্যি ই নিজের বাবাকে খুন করছেন নাকি আমাকে বোকা বানাচ্ছেন ? আর যদিও করে থাকেন তাহলে আমাকে বলছেন কেন? অনেক জিজ্ঞাসা অনেক প্রশ্ন। তবে আমার সব প্রশ্নের জবাব উনিই দিয়ে দিলেন, আর তা শুনে আমার সারা দুনিয়া টা থমকে গেলো।
লোকটি আবার নিজের পুর্ব স্থানে ফিরেছেন। তাঁর বসার চেয়ার এর উপর ঝুকে আমার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললেন, বাবাকে আমি খুব ভালোবাসতাম জানেন, তাই বাবার একাকিত্ব দূর করে দিয়েছি। কাল রাতে স্বপ্নে এসেছিলেন, বললেন খুব সুখে আছেন। বাবার এখন পাঁচ পাঁচটা বন্ধু। অবশ্য আজকে একটু বাদেই সেটা ছয়টা হয়ে যাবে।
কথাটা শুনে বুকের ভিতরটা ছ্যাত করে উঠলো। সঙ্গে সঙ্গে আমার কাছে পুরো ব্যাপারটা জলের মতো পরিষ্কার হয়ে গেলো। এই সেই লোক যার কারনে একের পর এক শহরবাসী নিরুদ্দেশ হচ্ছে আর এখন আমার পালা। কিন্ত আমি এখন কি করবো,পালাবো তার পথ নেই, লড়াই? কিন্তু ex আর্মি man কতক্ষণ ই আর টিকতে পারবো?
এতক্ষনে চা টেবিলে দিয়ে গেছে চাকর। সম্পূর্ণ মৃত্যু ফাঁদে পা দিয়েছি সেটা ভেবে গা শিউরে উঠছে, শেষ পর্যন্ত এই ভাবে মৃত্যু লেখা ছিল আমার ?
এরমধ্যে কখন লোকটা আমার চেয়ার এর পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে তা খেয়াল করিনি। লোকটির মুখের ভাব এখন বদলে গেছে। যেন কোনো রক্ত পিপাসু শয়তান শিকার এর দিকে চেয়ে মুখ দিয়ে লাল নিঃসরণ করছে। হঠাৎ এক অট্টহাসি সারা বাড়িটা কেঁপে উঠলো। মানুষ কি ভয়ানক হতে পারে। বেশ খানিক্ষণ এ অট্টহাসির তান্ডব চললো। তারপর শান্ত হয়ে শিকার এর দিকে লালসমাখা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
কি চা টা খেয়ে নিন, ঠান্ডা হয়ে যাবে তো।।