-ইস স্ট্যাচু!

-ব্যাস, দাঁড়িয়ে গেলাম।

আমার সঙ্গে আসা সবাই দিব্যি এক এক করে আমাকে পাশ কাটিয়ে চলে গেল।অথচ আমার হাতেই ডাবুটা, ভাঙা ভাঙি সব আমার হাতে।গ্রুপের ভিতর থেকে ভজা চিল্লিয়ে উঠল,

‘ কিরে ফটকা কি হল তুর ?’

-ফটকা আমার ডাক নাম।ভালো নাম ফটিকলাল,তবে লাল কবেই টেঁশে গিয়ে এখন ফটিক।থাক, ওটা আর বললাম না। বদলে বলে উঠলাম, ‘দাঁড়িয়ে গেছি।’

-তুই না তোর?

-শালা, আমি, একটু দাঁড়া।

-হবেনা, অনেকগুলো কাজ আছে।পা চালিয়ে চল।

বিড়ি ধরালাম।ধোঁয়া ছাড়ার পরেই দেখলাম একটা গাছের পাতা কেমন যেন শান্টিং হয়ে গেল।বুঝলাম বিড়ির গন্ধটা পছন্দ হচ্ছে না।এমনি জানলে একটা সিগারেটের প্যাকেটই আনা যেত।

-কই গেলিরে?

-এই যে এসে গেছি।

-কটা বাজে?

-ঘড়ি নেই।পরে আসিনি।

তবে বিছানায় মেনির একঘুম হয়ে গেছিল।এখন নাইটি পরে, শুধু নাইটি।একটা ঘুম হলেই নাইটি উত্তর দিকে চলতে আরম্ভ করে, আমি গন্ধ শুঁকি।আজও শুঁকে এসেছি।দারুণ বেশ ঝাঁঝালো, মাথাটা ফ্রেশ হয়ে যেতে ওকে ধরে আরো কিছুক্ষণ শুয়ে থাকতে ইচ্ছে করলেও উপায় নেই।বন্ধ জানলা ঠেলে হেবোদার গলা।,‘ফটকা…………….!’

-ব্যাস।দিনের অন্ধকারে বেরিয়ে গেলাম।পাখিদের ঘুম ভাঙার আগেই আমারা যে যার জায়গায় দাঁড়িয়ে।

-তোর মনে আছে ফটকা শহরের সেই নেতার ঘরের অন্নপ্রাশনের রান্নাটা ভগাদা কেমন আমাদের ঘর থেকে ছিনিয়ে নিয়েছিল।বলেছিল,‘আমরা নাকি তেল বেশি দি, ঝাল বেশি দি।’

-তেল, ঝাল!

আমাদের সঙ্গে আসা হেবোদা রেগে কিড়মিড় করতে লাগল।বুঝবে এবার সারাটা গায়ে পোড়া তেল, ঘি মাখিয়ে সুর্পনখ বানিয়ে দেব।

হেবোদা আমাদের মধ্যে একটু পড়াশুনা জানা লোক। যাত্রা দলে হারমোনিয়ামও বাজায়।কিন্তু বাকি সব।আমার কিছু প্রশ্ন করবার আগেই ভজা জিজ্ঞেস করে,‘সর্পনখ না কি যে বললে, উটো কি বটে?

-গাধা।সুর্পনখা জানিস? না তার পুংলিঙ্গ।

-নেনে তেল বের কর।লাগা গায়ে, তেল নুন লঙ্কা গুঁড়ো।এক্কেবারে মাখো মাখো করে।

আমার দায়িত্ব ছোট।ভগাদার মূর্তির নাকটা একটু ঠুকে দিতে হবে।নাক ভাঙা ভগাদা।যা জমবে না!কাল সকালে যারা দেখবে বুঝবে।ব্যাটা বড় স্বাদ, রাঁধুনীদের মহারাজ, রাঁধ এবার, নিজের নাক ভাজা খা, কানের কিমা বানা।যতসব পচা মশলার দল।

-কি বকছিস রে ফটকা?

হেবোদার কথাতেই আবার ফিরে এলাম।বললাম কিছু না।এমনি।

-বউ এর কথা ভাবছে উ।

পচার কথাতে মাথাটা টং করে উঠল।শালা আমার মেনি আছে, তাই ভাবছি, তুই এখনও বেঁধে বসে রইছিস।

-হ্যাঁরে ফটকা বেরুনোর সময় চারদিকে দেখিছিস?কেউ দেখছে নাই তো?

-না’গো, শুধু কুকুরগুলো ভুকছিল।

-বেশ, কাজ আরম্ভ কর তুই।

ডাবুটা তুললাম, কাঁধে চাপায়ে মাথায় যাব এমন সময় স্ট্যাচু!সেই নুনু বেলার খেলা।সঙ্গে কোথা থেকে কষা মাংসের গন্ধ নাকে এসে লাগল।উটা ভগাদার রান্না বটে।কতদিন ভগাদার হয়ে খুন্তি নেড়িছি, কেটিছি।

মাথাট ভোঁ ভোঁ করছে।পা’দুটো ঠেকছে নাই।পড়ি যাবি রে!এই ধর ধর ……….গেলম।

সকালে যখন চোখ খুললাম দেখি মাথার সামনে মেনি।আমার চোখ খোলা দেখে দাঁত বের কর বলে উঠল,‘আমি তো খুব ঘাবড়াই গেছলম।তুমি কি সব বকছিলে……………।’

চা খেয়ে মোড় মাথাতে গিয়ে শুনলাম কোন এক শহরে কোন এক মহাপুরুষের মূর্তি কারা যেন ভেঙে দিয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Previous articleএক অমাবস্যার রাতে
Next articleআমেরিকার শরৎ
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest

0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments