পরিযায়ীর অর্থ কি জানতে চাইল ছাত্র,
গুরুমশাই ধরিয়ে দিলেন তাকে একটি সূত্র।
পরিযায়ী অর্থ হল যারা বহিরাগত,
শিক্ষকের কথা শুনে ছাত্র থতমত।
কিন্তু যে আসছে দিল্লী থেকে কিম্বা রাজস্থান,
একের পর এক চলতে থাকে ছাত্র প্রশ্নবাণ–
কেমন করে তাদের আমি বলবো পরিযায়ী !
তাদের এই করুণ স্থিতি–কে আজকে দায়ী !
যেন দেশের এই দশার জন্য শ্রমিকরাই দোষী,
তাই তারাই কেবল পরিযায়ী হলেও দেশবাসী।
কোন প্রবন্ধক, কি ডাক্তার কি প্রযুক্তিবিদ, বিজ্ঞানী,
অন্য রাজ্য থেকে এলেও সবাই পরম মানী।
অতএব এসব মানুষ নয়কো পরিযায়ী,
কেবল অসহায় শ্রমিকরাই নি:স্ব ধরাশায়ী।
আর সৈন্য যারা সীমান্তে আজ দেশকে করে রক্ষা,
তাদের মধ্যে বাঙালী যেমন তেমনি আছে গুর্খা।
আসাম,বিহার,কেরল,সিকিম কতই রাজ্যবাসী,
দেশের জন্যে প্রাণ বলিদান তবুও মুখে হাসি।
তারা যখন যুদ্ধ করে পতাকা কি সব ভিন্ন !
নাকি শহীদ হলে কফিন পরে পতাকার রঙ অন্য !
তিনরঙা সেই পতাকাই ত’ ভারতবাসীর গর্ব,
তবে কোন দোষে শ্রমিকদেরকে পরিযায়ী সব ধরবো !
শিষ্যের বাক্যবাণে গুরুমশাই রুষ্ট,
হেঁকে কহেন–বিপ্লব,তুমি বড়ই অশিষ্ট।
আগের দিন হলে আমি দিতেম অভিশাপ,
বকছ কি যা তা তুমি উন্মাদেরই প্রলাপ।
গণ্ডমুর্খ একখান তুমি যা বুঝেছ ভুল,
শ্রমিকরা সব পরিযায়ী কারণ ছিন্নমূল।
বারেবা–শিষ্য হাসে–বলেছেন বেশ জবর,
আপনারাই খোঁড়েন দেখি দেশমায়ের কবর।
আপনাদের ভাষণেই তো ভারত খণ্ড খণ্ড,
আমরা কিছু বলতে গেলেই কহেন অপোগণ্ড।
আপনাদের কাছে ওরা নয়কো ভারতীয়,
শহরের লোকের চোখে শ্রমিকরা সব হেয়।
কেউ উড়িয়া,কেউ বাঙালী,কেউ বা কাশ্মিরী,
কেউ মারাঠী , কেউ তামিল হয়তো বা বিহারী।
মানুষ সাথে মানুষের এই যে বিভেদ সৃষ্টি,
এ কেমনতরো শিক্ষা হায়, কেমনতরো কৃষ্টি !
গড় করি সেই শিক্ষিতে যারা লেখাপড়ায় খাসা,
যাদের কথাই বোনে মনে ঘুণপোকার বাসা।
একবারটি বলুন যত শ্রমিক রাশি রাশি,
কেউ নয়কো পরিযায়ী সবাই ভারতবাসী।
হতে পারে মুখ্যু তারা তবে বিশ্বাসী আর সৎ,
শিক্ষিত এই সমাজ দেখাক ওদের বাঁচার পথ।
ওরা সবাই আমাদেরই এই কথাটাই খাঁটি,
না বললে যাবে সরে সবার পায়ের মাটি।
যদি দর্পণে হায় ধরে চিড় তবে খণ্ড প্রতিবিম্ব,
শিষ্যের এই অমোঘ বাক্যে গুরুটি হতভম্ব।
অবশেষে বলেন তিনি–ভাষণ দিলি বটে,
এবার তোকে দেখতে চাই বিধানসভার ভোটে।
হাসে শিষ্য – গুরুমশাই ,বললে কথা স্পষ্ট,
বুঝতে পারি সব মানুষের হতেই পারে কষ্ট।
কিন্তু যা বললাম তার মধ্যে কোথায় মিথ্যাচার !
বুকের মাঝে হাত রেখে করুন অস্বীকার।
গুরু মশাই এবার চুপ–নত করেন মাথা,
বোকা হাঁদা বিপ্লবও শিখেই গেছে কথা।
কিন্তু মনে মনে স্বীকার করেন সবকথাই সত্য,
শিক্ষার এক অহংবোধে দেশবাসী আজ মত্ত।
হও আগুয়ান শিক্ষিত যত সভ্য ভারতবাসী,
আর কতদিন জাত্যাভিমানে রবে সবাই দোষী !
মূর্খ এমন মানুষ সনেই প্রয়োজন মহাশিক্ষা,
মনুষ্যত্ব মন্ত্রে আজি লহ সত্যের দীক্ষা।