দেশটার নাম যদি হয় আমেরিকা, প্রদেশটা আলাস্কা কেন? কেনই বা উপত্যকার নাম সুসিৎনা আর হিমবাহের নাম মাতানুসকা। শহরতলির নাম কেন হয় তালকিতনা ? কথাগুলোর সাথে আমেরিকান ইংরাজির তুলনায় রাশিয়ান ভাষার মিল বেশী বলে মনে হয় না ? সন্দেহটা অমূলক নয়। আসলে আমেরিকার মূল ভূখণ্ড থেকে বিছিন্ন আলাস্কা আমেরিকার অংশ মাত্র ১৮৬৭ সাল থেকে। এর এক শতাব্দীরও বেশি আগে বহির্বিশ্ব, এমনকি আমেরিকার সঙ্গেও তার পরিচয়ের মূল হোতা যে, তার নাম রাশিয়া। আর এই পরিচয় যজ্ঞের প্রধান পুরহিতের নাম পিওতোর আলেক্সিভিচ রোমানভ – ইতিহাস যাকে বেশি চেনে ‘পিটার দ্য গ্রেট‘ নামে।
প্রদীপ জ্বালানোর আগে সলতে পাকানোর অনুসঙ্গে এঁর সম্পর্কে এটুকু জানা দরকার যে ৬ ফুট ৮ ইঞ্চি দীর্ঘ এই মানুষটির হাত ধরে মাত্র ২৫ বছরেই রাশিয়া তার মধ্যযুগীয় বর্বরতার দিনগুলো অতিক্রম করে সামিল হয়েছিলো ইউরোপীয় নবজাগরণের। শিশুকালে শিক্ষক ফ্রাঞ্জ টিমেরমান তাকে শিখিয়েছিলেন জ্যামিতি,জ্যোতির্বিদ্যা আর দুর্গ তৈরির কৌশল। আর চোখে পড়িয়ে দিয়েছিলেন জ্ঞানতৃষ্ণার মায়াঅঞ্জন। জানার আগ্রহ যৌবনেও তাঁকে নিয়ে গিয়েছে দেশে দেশে। ১৬৯৬-তে ‘জার’-পদে অভিষিক্ত হবার পরও ছদ্মনামে দেড় বছর নানাদেশে ঘুড়ে শিখেছেন বন্দুক ও কামান চালানোর কৌশল, মানবশরীরবিদ্যা, জাহাজ চালনোর পদ্ধতি বা কাঁচের গায়ে নকশা ফোটানোর মত আপাত বিরোধী বিদ্যা। শিক্ষা আনে চেতনা -এই আপ্তবাক্যে বিশ্বাসী পিটার ১৭০০ সাল থেকে রাশিয়া জুড়ে গড়ে তুলেছেন অসংখ্য কলেজ, স্কুল অফ ম্যাথেমাটিক্স, নাভাল একাডেমী, স্কুল অফ টেকনোলজি – আমন্ত্রন করে এনেছেন বিদেশী অধ্যাপক ও স্কলারদের। রাশিয়ার যুবকদের রাষ্ট্রের খরচে পাঠিয়েছেন বিদেশে বিশেষ বিদ্যা আয়ত্ত করতে। চালু করেছেন গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডর। বেড়িয়েছে প্রথম সংবাদপত্র ‘ভেদমস্তে’। গড়েছেন রাশিয়ার প্রথম সৈন্যবাহিনী ও নৌবাহিনী। শাসনকার্য চালাতে তৈরি হয়েছে সেনেট। এসবের যোগফলে রাশিয়া ২৫ বছরের মধ্যে হতে পেরেছে ইউরোপীয় রেনেসাঁর সুর্যসন্ধানী।
১৭২৪-এর শেষের এক শীতের সকালে পিটার চোখ রাখলেন জানলার বাইরে। মন বলল চোখ – তোর দৃষ্টিসীমার বাইরে রইল পড়ে যে অসীম পৃথিবী তার খোঁজ করবে কে ? সাইবেরিয়ার সাগরপারে শীতের প্রথম প্রভাতে যে পাখীটা উড়ে গেল গ্রীষ্মের ওমের খোঁজে – তার ক্লান্ত ডানা প্রথম বিশ্রাম খুঁজে পাবে যে জমিতে তা কোথায়? ২৯শে ডিসেম্বর ডাক পড়ল ২০ বছর নৌবাহিনীতে কর্মরত ডেনমার্ক-এর মানুষ ভিটাস জোনাসেন বেরিং-এর। তাঁকে নেতা নির্দিষ্ট কোরে এক সমুদ্র অভিযানের নির্দেশ দিলেন তিনি। এমন এক অভিযান যা খুঁজে দেখবে সাইবেরিয়ার পূর্বপারে এশিয়া আর আমেরিকার মধ্যে কোন স্থলভূমি আছে কিনা। কামচাটকা পেনিন্সুলা থেকে শুরু হওয়া এই অভিযানের জাহাজের নাম আরকাঞ্জেল গ্যাব্রিয়েল – তার নোঙর তোলার দিন ১৭২৮-এর ১৪ই জুলাই। ইতিহাস একে জানলো প্রথম কামচাটকা অভিযান নামে। পিটার দ্য গ্রেট ততদিনে পাড়ি দিয়েছেন অন্য জগতে – তাঁর মৃত্যুদিন ৮ই ফেব্রুয়ারি, ১৭২৫।
- * * * *
৫০দিন ব্যাপী প্রথম কামচাটকা অভিযান সাইবেরিয়ার পূর্বসমুদ্রপারে কিছু দ্বীপের সন্ধান দিল। পাওয়া গেল এশিয়ার সবচেয়ে পূর্বদিকের স্থলভূমির সন্ধান, বেরিং যার নাম দিলেন সেন্ট লরেন্স আইল্যান্ড। তাকে অতিক্রম করে ৪ দিন ক্রমাগত জাহাজ চালিয়ে যখন কোন ডাঙ্গাজমির সন্ধান মিলল না তখন বেরিং নিশ্চিত হলেন যে দুই মহাদেশের মধ্যে কোন সংযোগকারী স্থলভূমি নেই। এই জ্ঞান আর এই সমুদ্রের বিস্তৃত মানচিত্র নিয়ে নিরাপদে ফিরলেন কামচাটকায় ২রা সেপ্টেম্বর ১৭২৯।
কিন্তু অল্পে কি সন্তুষ্ট হয় বীরের হৃদয়? ১৭৩০এই বেরিং সেনেট-এর কাছে পেশ করলেন তাঁর দ্বিতীয় অভিযানের পরিকল্পনা। আগের অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে এই প্রস্তাব সহজেই মান্যতা পেল সেনেটে। সাম্রাজ্য বিস্তারের একটা সুপ্ত বাসনাও হ্যাঁ-বাচক উত্তর পেতে সাহায্য করেছিল বেরিং-কে। এবারের পরিকল্পনা, অনুসন্ধান চলবে আমেরিকার পশ্চিম উপকূল পর্যন্ত। মধ্যবর্তী সমুদ্রের দ্বীপপুঞ্জের আদিবাসি, পশুপাখি, জীবজন্তু ও গাছগাছালির ইতিহাস, ভূগোল আর নৃতত্ত্বের বিস্তারিত বিবরন সংগ্রহ করা হবে। চেষ্টা চলবে এখানকার আদিবাসি মানুষদের সাথে যোগাযোগ করার আর সম্ভব হলে আমেরিকার পশ্চিম উপকূলে নেমে সেখানেও মানচিত্রের কাজ করার। সেই সময়ের নিরিখে এত বড় অভিযান আর হয়নি। বরাদ্দ হয়েছিলো ৩০০০ মানুষ আর ১৫ লক্ষ রুবল যা সেই সময়ের রাশিয়ার ১বছরের রাজস্বের ১/৬ ভাগ।
১৭৩৩এ সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে যাত্রা শুরু করে ৬০০০ মাইলের দুর্গম পথ, তীব্র শীত, তুষারপাত আর অসুস্থতাকে অতিক্রম করে,বেশ কিছু মানুষকে হারিয়ে বেরিং যখন কামচাটকায় পৌঁছলেন তখন পেরিয়ে গেছে ৫টি বছর। আরও ৩বছর কাটল এই অভিযানের উপযোগী জাহাজ তৈরিতে। শেষে ৯০ফুট দীর্ঘ ২টি জাহাজ – ‘সেন্ট পল’ আর ‘সেন্ট পিটার’ -এ শুরু হল দ্বিতীয় কামচাটকা অভিযান – বৈচিত্র্য আর বিশালতার কারণে ভবিষ্যৎ পৃথিবী যাকে চিনবে ‘The Great Nordic Expedition‘ বলে।
৪ঠা জুন ১৭৪১-এ শুরু হওয়া এই অভিযান প্রথম বিপর্যয়ের স্বাদ পেল ২০শে জুন যখন ঘন কুয়াশা বিচ্ছিন্ন করল দুই জাহাজকে। বেরিং টানা ৬দিন খুঁজলেন চিরিকভ-এর নেতৃত্বে চালিত সেন্ট পল-কে। না পেয়ে একাই পা বাড়ালেন আগামীর পথে। একে একে পা রাখলেন কায়াক দ্বীপপুঞ্জ, সেমিডি দ্বীপপুঞ্জ, সেন্ট এলিস আইল্যান্ডে। কিন্তু দীর্ঘ সমুদ্রযাত্রা ক্লান্ত করেছে সবাইকে, আর কিছু মানুষকে আক্রান্ত করেছে স্কার্ভি নামের ভিটামিন সির অভাবজনিত অসুখে। অসুস্থদের মধ্যে আছেন বেরিং স্বয়ং।
৩১শে অগাস্ট স্কার্ভি আক্রান্ত নিকিতা সুমাগিন নামে এক নাবিক দেহ রাখলেন এক নাম না জানা দ্বীপে। অভিযানের প্রথম মৃত্যু। তাঁকে কবর দিয়ে এই দ্বীপের নাম রাখা হোল সুমাগিন আইল্যান্ড। ইনিই প্রথম ইউরোপীয় নাবিক যাঁকে কবর দেওয়া হল আমেরিকার পশ্চিম কোণে। এই দুসংবাদের পরেই প্রথম সুসংবাদ – ৫ই সেপ্টেম্বর দেখা হল দুজন আদিবাদির সঙ্গে। চামড়ার তৈরি নৌকো ‘বাইদারকা’ চেপে এসে এরা জাহাজের পাশ দিয়ে ঘুরে গেলেন। ভাষাসমস্যা তাদের সঙ্গে কোন প্রত্যক্ষ যোগাযোগ তৈরি হতে দিল না। তবে চীনা পুঁতি, লাল কাপড়, ছুঁচ, আয়না আর ছুরির উপঢৌকন এঁরা গ্রহণ করলেন।
এর পর নিরবিচ্ছিন্ন ভেসে চলা – সেপ্টেম্বর, অক্টোবর পেড়িয়ে নভেম্বর। আজ ৪ তারিখ; রাত্রির আকাশে পূর্ণ চাঁদের আলো। আর সেই চাঁদের টানে উত্তাল সাগরের ঢেউ আছড়ে পড়ল ‘সেন্ট পিটার’-এর ডেকে। ভাঙ্গা মাস্তুল, ছেঁড়া পাল নিয়ে টুকরো হোয়ে যাওয়া জাহাজ গিয়ে পড়ল পাশের দ্বীপের বালিয়াড়িতে। জাহাজডুবির এই বিপর্যয়ের পর অভিযান একরকম শেষ। শুরু হল অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। সকলে আশ্রয় নিলো এই দ্বীপে। ক্রমে সঞ্চিত খাবার শেষ হোল। ভরসা সিল মাছ আর ভোঁদড়ের মাংস। ক্লান্তি, পরিশ্রম আর অসুস্থতায় ৭৬ জন নাবিকএর এক একজন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে লাগলেন। অসুস্থ বেরিং অসহায় চোখে দেখতে লাগলেন এই মানুষগুলোর অসহায় আত্মসমর্পণ আর কামনা করতে লাগলেন নিজের মৃত্যু। ঈশ্বর শুনলেন তাঁর প্রার্থনা। ১৭৪১এর ৮ই ডিসেম্বর সমুদ্রের বালুকাবেলায় তাঁর জন্য নির্দিষ্ট ছোট্ট কুটিরের আশ্রয়ে জীবনদীপ নির্বাপিত হোল এই অসমসাহসী অভিযাত্রীর। পুবের আকাশে তখন ভোরের লালিমার আভাসটুকু দেখা গেছে মাত্র।
সেন্ট পিটারের ধ্বংসাবশেষ থেকে তৈরি একটা ছোট জাহাজে করে সহ-অধিনায়ক ওয়াক্সেল আর বেঁচে থাকা ৪৬জন নাবিক কামচাটকা ফিরলেন ১৬ই অগাস্ট, ১৭৪২। সঙ্গে ৯০০ ভোঁদড়ের ছাল আর নতুন দেশের মানচিত্র। অদ্ভুতভাবে রাশিয়ায় বাণিজ্য করতে আসা চীনা ব্যবসায়ীরা সেই চামড়া কিনে নিলো চড়া দামে। আর এখানেই পত্তন হোল এক নতুন সাম্রাজ্যবাদের। রাশিয়ার ব্যবসায়ীরা দলে দলে পাড়ি দিল আলাস্কার পথে। নির্বিচার হত্যা সংঘটিত হোল সিল, ভোঁদড় আর তিমি মাছের। বাদ গেলনা আলাস্কার মূল ভূখণ্ডও। সেখানে আদিবাসিদের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়ল রাশিয়া। প্রচুর আদিবাসি হত্যা হোল। শুরু হোল রাশিয়ার শাসন ও শোষণ। কোনরকম সরকারি নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই বিভিন্ন ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত উদ্যোগ থাবা বসালো আলাস্কার অতুল প্রাকৃতিক সম্পদে যা চলল পরের শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত।
তারপর ইতিহাসের নিয়মেই রাশিয়া হীনবল হতে শুরু করল। ১৯৫৩-৫৫র ক্রিমিয়ার যুদ্ধ তাদের সর্বস্বান্ত করে দিল। কোষাগারে কিছু প্রাপ্তির আশায় মাত্র ৭২লক্ষ ডলারে আমেরিকাকে আলাস্কা বিক্রি করে দিল রাশিয়া। দিনটা ১৮৬৭-র ১লা আগস্ট। ১৮ই অক্টোবর -এর শেষ বিকেলে মার্কিন পতাকার পাশে নিজেদের পতাকা অর্ধনমিত করে সজল চোখে ৭০০ রাশিয়ানের শেষ দলটি যখন ‘সিটকা’ ছেড়ে পাড়ি দিল মস্কোর পথে, সেদিন বেরিং-এর হাত ধরে শুরু হওয়া এক যাত্রা মহাকালের নিয়মে চক্রাকারে তার পরিক্রমা শেষ করলো রাশিয়ার বুকে।
এরপর আমেরিকাও ভুলে রইল তার নতুন পাওয়া খেলনাকে। খেলাচ্ছলেই তাকে কখনো বলল ‘ডিপার্টমেন্ট’, কখনো ‘টেরিটরি’, কখনো ‘ডিস্ট্রিক্ট’ । অবশেষে চতুর প্রেসিডেন্ট আইসেনহাওয়ার চিন্হিত করলো আলাস্কার অপার সম্পদ। অপর্যাপ্ত তেল, সোনা আর তামার ওপর একচ্ছত্র কর্তৃত্ব কায়েম করতে মাত্র সেদিন – মানে ১৯৫৯এর ৩রা জানুয়ারী আলাস্কাকে দিলো রাজ্যের মর্যাদা। আলাস্কা হোল আমেরিকার ৪৯তম রাজ্য।
- * * * *
এ হেন আলাস্কায় আমাদের পদার্পণ জুন মাসের শেষভাগে। জেট ব্লু এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ৪৬ যখন পোর্টল্যান্ড থেকে সওয়া ৩ ঘণ্টায় আমাদের এনে ফেলল আলাস্কার এ্যাঙ্করেজ বিমানবন্দরে তখন সময় রাত ১১টা এবং বাইরে গোধূলির কনে দেখা আলো। কারণ সূর্যাস্তের সময় রাত ১টা ২০ মিনিট। এই সময়ে এখানে দিন ১৯ ঘণ্টার বেশী, রাত্রি কমবেশি সাড়ে ৪ ঘণ্টার। সেই রাত্রিতেও অভাব আঁধারের – কেমন যেন আধো আলো আধো ছায়া মাখা। তাই এখানকার হোটেলের বিজ্ঞাপনে উৎকর্ষের একটা পরিমাপ কার জানলার ‘blinds’ কত ভালো যাতে একটি নিকষ কালো রাত উপহার দেওয়া যায় বিদেশী অতিথিদের। তাঁদের biological clock তো তাই দাবি করে।
হোটেলে ঢোকার ফাঁকে দেখা এ্যাঙ্করেজ শহর আর পাঁচটা পশ্চিমী শহরের মতই। সেই চওড়া রাস্তা, সুন্দর বাড়িঘর,সাজানো দোকান, চকচকে ফুটপাথ – তাতে খুঁতহীন আলোর সারি। শুধু মানুষ কম – বড়োই কম। আসলে ১৭ লক্ষ বর্গকিলোমিটারের আলাস্কায় মানুষ থাকে ৭ কোটির কিছু বেশী। জনঘনত্বের সমানুপাতে ম্যানহাটন শহরে বসবাস করবেন মাত্র ১৬জন মানুষ। অবশ্য অ-আদিবাসি মানুষদের প্রায় সকলের বাস ১০-১২টি প্রধান শহরে।
Discovery-র কল্যাণে আলাস্কা আর বরফ প্রায় সমার্থক হোয়ে গেছে। অর্থাৎ আলাস্কায় গেলেই গুপি-বাঘার মত আপনাকে হঠাৎ নামিয়ে দেওয়া হবে বরফের পিঠে। ধারণাটা বেঠিক। আলাস্কার কমবেশি ১ লক্ষ হিমবাহের কয়েকটি যেমন রাস্তার ধারে এসে দাঁড়াবে, তেমনি কয়েকটির মুখদর্শন করতে cruise-এ চেপে ঘণ্টা দু-এক যেতে হবে সমুদ্রপথে। যেমন Blackstone Glacier দর্শন করতে গেলাম Bering sea backwater-এর ওপর দিয়ে। সামনে গিয়ে দেখলাম জলের কিনার থেকে ওঠা বিশাল পাহাড়ের মাথায় বিশালতর বরফের টুপি। তা থেকে ঝর্না হোয়ে জল ঝরে পড়ছে নীচে সমুদ্রে। খুব কাছে দাঁড়ানো এক জাহাজকে দেখে অবধারিতভাবে মনে এল জালার গায়ে টিকটিকির অনুষঙ্গ। পাশে বরফের বিছানায় শুয়ে আছে সিলমাছের দল। মন বলল এর পিঠে চড়ে বসা যায় না? ভূগোল বলল না, তার জন্য তো রয়েছে মাতানুসকা।
এ্যাঙ্করেজ থেকে গ্লেন হাইওয়ে ধরে কমবেশি ৪০ মাইল গাড়ি চালালেই আপনি পৌঁছবেন মাতানুসকার পায়ের কাছে। মূল গ্লেসিয়ারের আগে খানিকটা সমতল বরফের বিস্তার। মাঝে মাঝে হাঁ করা ক্রেভাস ভয় দেখালেও সহজেই হেঁটে যেতে পারবেন তার শেষপ্রান্তে যেখান থেকে আকাশের দিকে উঠে গেছে বরফের দেয়াল। এই blue ice এবার মেলে দেবে তার নানান রূপ। আর তার থেকে বিচ্ছুরিত বর্ণচ্ছটা আপনাকে বাকরুদ্ধ করবে – করবেই। আর কে বলতে পারে – তখন হয়তো John Denver– এর মত আপনার গলা দিয়ে বেড়িয়ে আসবে গান –
When I was a child and I lived in the city
I dreamed of Alaska, so far away
And I dreamed I was flying over mountains and glaciers
Somehow I knew that I’d live there one day.