‘আবীর’ – অনেক রঙের মেলা। বসন্তের লাল, হলুদ, সবুজ, নীল নানান রঙের আবীর আমাদের শরীর ও মনকে রাঙিয়ে দেয়।

আমার জীবনেও অনেক রঙের বাহার নিয়ে আবীরের আগমন শীতের সন্ধ্যার এক ঝলমলে বিয়েবাড়িতে। প্রথম দেখাতে চোখ আটকেছিলো ওর কপালে আঁকা দক্ষিণী তিলকে; যদিও সেদিন আলাপ ও হয়নি কথাও হয়নি। সে ছিল ব্যস্ত নিজের কাজে আর আমি ছিলাম আমার মতো। তবুও বিয়েবাড়ির অতো লোকের ভিড়ে সেও বুঝি দেখেছিল আমাকে এক নজর তার অনেক ব্যস্ততার মাঝে।

আবীর একজন দক্ষ ফোটোগ্রাফার, ছবি তোলা আর সুন্দর মূহুর্তদের ফ্রেমবন্দী করা ওর শুধু পেশা নয়, ওর সাধনাও। অনেক মানুষের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মূহুর্ত গুলোকে সযত্নে ক্যামেরাবন্দী করা এবং সুন্দর অ্যালবামে সাজিয়ে দেওয়া ওর কাজ হলেও সেই ছবিগুলো যখন ওই মানুষগুলোর ঠোঁটে হাসি আর মনে ভালোবাসা বাড়িয়ে দেয় তখন আবীরের পরিশ্রম সত্যিকারের সার্থকতা পায়।

প্রথম দেখার কিছুদিন পরেই ছিল আমার এক ছোট্টবেলার বান্ধবীর বিয়ে, কয়েকজন বান্ধবী মিলে মজা করতে করতে গেলাম সেই বিয়েবাড়িতে। শীতের সন্ধ্যার গরম কফিতে চুমুক দিচ্ছি ঠিক তখনি চোখে পড়ল ক্যামেরা হাতে আবীর ঢুকছে, সেদিন ও মনে জাগেনি কিছু, শুধু মুখে বলেছিলাম, “এতো সেই ফোটোগ্রাফার”। সেইদিন অবধি ও ওর নাম, ধাম, ওর কোনো বৃত্তান্ত  আমার জানা ছিল না আর সেদিন ও দুজনে দুজনকে জানার বা চেনার বিন্দুমাত্র চেষ্টা ও করিনি। কিন্তু সেদিন রাতে বাড়ি ফিরে বান্ধবীর বিয়ের ফটোগুলো ফেসবুকে আপলোড করতে গিয়ে হঠাৎ চোখ পড়ল ‘আবীর’স ফটো’ নামের একটা পেজে যেখানে আমার এই সদ্যবিবাহিতা বান্ধবীর ই প্রিওয়েডিং ফটোশুটের কিছু ছবি সদ্য আপলোড করা ছিল। ছবি গুলো দেখে খুব ভালো লাগলো, বাকী আরো ছবি দেখলাম এবং অবশেষে ছবিগুলোর শ্রষ্টার পরিচয় ও উদ্ধার করলাম। জানিনা কি মনে হল, সেই রাতেই আবীরে ফেসবুকে ফ্রেন্ড্ররিকয়েস্ট পাঠালাম; কিছুক্ষণ পর দেখলাম তিনি আমার ফেসবুক বন্ধু হয়ে গেলেন।

দুদিন পর এই শীতের ই এক সন্ধ্যায় দেখলাম ফেসবুকে আবীরের প্রথম মেসেজ। আমিও বেশ অবাক হয়েই উত্তর দিলাম। কথার পিঠে কথা হতে হতে বেশ অনেক দূর ই এগোলো; আস্তে আস্তে পরিচয় শুরু হল। নিয়মিত না হলেও তারপর প্রায়ই কথা হত; কখন বন্ধুত্ব ও হয়ে গেল বুঝতে পারলাম না দুজনেই। একদিন ঠিক হল ‘দেখা করতে হবে’। আমি গড়রাজি ছিলাম কিন্তু ওর জোরাজুরিতে রাজি না হয়েও পারলাম না।

শেষমেশ ২৫শে ডিসেন্বর আমাদের ‘প্রথম সামনাসামনি দেখা’ হল। গত কয়েকদিনের কথায় দুজনে দুজনকে অনেকটাই জেনেছিলাম, চিনেওছিলাম; কিন্তু সেই দিন আবীরের সম্বন্ধে এমন কিছু জেনেছিলাম যেগুলো জানার পর আমাদের বন্ধুত্বটা আরও বেশী গভীর হয়েছিল। সেদিন ওর হাত ধরে ওকে প্রমিস করেছিলাম “যাই হোক না কেন, কোনো পরিস্থিতিতেই আমি তোমার হাত ছাড়বো না।“ আর আবীর ও সেদিন কথা দিয়েছিল আমাকে, “আমিও তোমাকে ছেড়ে কখনো কোথাও যাব না।“ সেদিন থেকে আমরা দুজনে দুজনের সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু হলাম।

আজ ও আমরা ‘প্রিয় বন্ধু’। অনেক ঝগড়া, অভিমান, খুনসুটি হয় আমাদের মধ্যে; অনেক দুঃখ, কষ্ট, রাগ আর অশান্তি ও চলে তবুও ওর সাথেই হাসা আর ওর সাথেই কাঁদা। একসাথে হেসে-খেলে বাকি জীবন টা কাটিয়ে দেওয়ার স্বপ্ন নিয়েই এগিয়ে চলছি আমরা।

Print Friendly, PDF & Email
Previous articleLove Vs Water
Next articleফেরারি মন
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest

0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments