আসিছে সরবে বিদেশীর দল লুণ্ঠিতে সোমনাথ,

হও আগুয়ান হে নওজোয়ান কৃপাণে রাখিয়া হাত।

রাত্রি নিশীথযে যাহার গেহে রত বুঝি বিশ্রামে,

এমত সময় রাজার নাকাড়া বাজিল মধ্যযামে।

এক নিমেষেই রাজ্যবাসীর বিশ্রাম গেল টুটি,

রাজআহ্বানে যুবকের দল আসিল সকলে ছুটি।

সোলাঙ্কিরাজ ভীমসেন তিনি গুর্জর অধিপতি,

সৈন্যবাহিনী ছিল না বিশালনৃপ হীনবল অতি।

তাইতো তাঁহার আকুল আকুতি রাজ্যবাসীর সনে,

রক্ষা কর হে জ্যোর্তিলিঙ্গ বিধর্মী সাথে রণে।

নৃশংস এক আরবী শাসক মাহমুদ গজনী,

মোদের রাজ্য করিবে ধ্বংসসমীপে ভয়াল রজনী।

রাজসন্দেশে রাজ্যের যত সবল যুবার দল,

কৃপাণ হস্তে দেয় হুঙ্কারনহি মোরা হীনবল।

আসুক সদলে গজনীর নিষ্ঠুর অধিপতি,

বিনা সংগ্রামে দিব না মেদিনীরুধিব অগ্রগতি।

সবার কণ্ঠে একটিই ধ্বনিজয় শ্রী স্বয়ম্ভু,

তোমার দেউল রক্ষা করগো হে সোমনাথ শম্ভু।

ঝাঁপায়ে পড়িল গুর্জর পরে গজনীর সেনাদল,

অসীম শক্তি তথা ছিল জ্ঞাত যুদ্ধের কৌশল।নিষ্ঠুর অতি প্রাণেতে কাহারো ছিল নাকো দয়ামায়া,

করে লুন্ঠন সম্পদ যতঅস্তে দেউল দিয়া।

প্রতিরোধ হায় বুঝি বানভাসিশত সহস্র প্রাণ

ধুলায় লুটায়লুন্ঠিত হয় পুরনারী সম্মান।

দেউল হইতে সকল বিত্ত করিয়া হস্তগত,

তুর্কী শাসক গজনী মামুদ আরও বুঝি উদ্ধত।

জ্যোতির্লিঙ্গ দেবতা মুরতি ভাঙিয়া ছত্রখান,

বিধর্মী করে সোমনাথ প্রভু লভিলেন অবমান।

গুর্জরপতি রাজা ভীমসেন করিলেন পলায়ন,

কান্ঠাকোটের দুর্গমধ্যে তখন তাঁহার শরণ।

এমন ভাবেই বারে বারে সোমনাথ মন্দির,

বিদেশী হস্তে ধ্বস্ত তথাপি অবনতে নহে শির।

আজিও সরবে পতাকা সেথায় উড়িছে নিরন্তর,

শিবশম্ভুর অসীম কৃপায় দেউলে রবির কর।

প্রভুর দেউল রক্ষার হেতু যাহারা ত্যজিল প্রাণ,

ভুলিও না কভু তাহাদের সবে দিও সমুচিত মান।

এহেন কতই ঘটনা আজিকে নহে মোটে সংশ্রুত,

নবীন ভারত হায় বুঝি সেই ইতিহাস বিষ্মৃত।

নীরবে এমত কত চরিত্র ঝরায় অশ্রুধারা,

জাগরুক হও আজি তাহাদের আহ্বানে দাও সাড়া।

————————————————————-

       স্বপন চক্রবর্তী

Print Friendly, PDF & Email
Previous articleঝক্কি
Next articleমায়ের লাশ
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments