এসেছিলাম কাজের খোঁজে সুদূর পানে,
আমার পোড়া কপালের কথা কজন জানে?
এক কর্তা দিলেন কাজের বরাত।
পাইছিলাম কিছু পয়সা, দু মুঠো ভাত;
মাসে মাসে পাঠাই টাকা, যাতে ওদের চড়ে হাঁড়ি!
ভেবেছিলাম কয় মাস কাজ করে, ফিরে যাবো বাড়ি।
নিজের ভিটে মাটি ছেড়ে, আছি অচেনা দেশে,
সবাই এখানে কেমন যেন অচেনা, বন্ধু বেশে!
কোনভাবে কাটাই দিন ছোটো চালির তলায়,
মনে পড়ে মা বউএর কথা কাজের অছিলায়।

হঠাৎ দেখি ঘোষণা এলো, হলো লকডাউন…
ব্যাস, অসময়ে চলে গেলো কাজ।
বিশাল সমস্যায় পড়লো কপালে ভাঁজ!
উতলা হই, কেমনে ফিরব বাড়ি,
রাস্তায় নেইকো একটিও গাড়ি।
একি কষ্ট মোর, ভেবেই যাই কতো ভোর…
শেষ হলো টাকা,মালিক বাড়ি ছাড়তে করছে জোর!
আমি অভাগা, রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে পাইনা পার,
অমনি সময়ে রাগী পুলিশ মারলো লাঠির মার!
“রাস্তায় করছিস কী? জানিসনা কতো বিপদ?”
আমি বললাম,” বাবু, আমি পরিযায়ী;
আমি কেমনে নিজের বাড়ি যাই?”
হতবাক পুলিশ তুলে দিল ত্রাণ শিবিরে,
দিল কতো চাল, ডাল, গম…
কিন্তু নিজের বাড়ির থেকে কিছু কী হয় মনোরম?
সবাই মিলে করিলাম স্থির,
আমরা হেঁটেই পার করবো এই তিমির।
কথা মত ধরলাম রেল লাইন,
সুদূর পথে চোখ রেখে চললাম এগিয়ে,
বাড়ি ফেরবার ভাবনায় মন কে জাগিয়ে।

কতো মাইল পথ পার হলাম তপ্ত রোদে,
ভয় হয়, যদি পুলিশ দেখে নেয় ক্রোধে…
যদি হয় হাজতবাস? জানিনা তবে,
সরকার মুখ ফিরে চাইবে কবে,
অপেক্ষা করেই ক্লান্ত হই এই ভাবনায়।
আমাদের কী হল, তা ভেবে কার কী আসে যায়?
আমরা পরিযায়ী, পোড়া কপাল, আমরা গৌন,
তাই আমাদের নিয়ে সরকার মৌন!

সেদিন রাতেই যখন করব বিশ্রাম,
অতর্কিতে গেলো ট্রেন চাপা দিয়ে!
আমি দেখি আমার ছিন্ন দেহ পড়ে
ওদের সাথে, বললাম “হে রাম!”
আমি কী এখন তবে? সরকার আমাদের দেখবে কবে?
দেখলাম সবাই জানালো শোক বার্তা,
কতো শোকার্ত ভাষণ, কতো অবুঝ শব্দ!
আমি ভাসছি চাওয়া পাওয়ার হিসেবে মেটাতে।
আমি দেখছি শুন্যতা, দিশাহারা নেতা।
আমি আছি সেই রক্তে মাখা রেল লাইনে,
আমি আছি খবরের কাগজের হেডলাইনে।
তবে আমি ফিরতে পারিনি নিজ বাড়িতে,
কারণ আমি হতভাগা পরিযায়ী!

Print Friendly, PDF & Email
Previous articleনবজাগরণ
Next articleহনুমানের বাড়ি
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments