ত্রিকূটেশ্বর এর মন্দিরে ওঠার সময় সিঁড়ির দু ধারে ঢালু যায়গা তে কত রকম এর বড় বড় গাছ। আর চারিদিকে ছড়িয়ে আছে সব বড় বড় শিলাখণ্ড, দেখে মনে হয় এই বুঝি গড়িয়ে আসবে, কিন্তু কোনও মন্ত্রবলে প্রত্যেক শিলাখণ্ড স্থির হয়ে আছে।
ত্রিকূটেশ্বর এর মন্দির দেখে নেমে এসে এবার ডানদিকে গিয়ে কিছুটা সিঁড়ি দিয়ে উঠে রোপওয়ের টিকিট কাউনটার এর সামনে পৌছালাম। এখান থেকে রোপওয়ে করে পাহাড়ে ওঠা। হেঁটে ওঠা যায়, তবে সেটা সময় ও পরিশ্রম সাপেক্ষ।কিন্তু হেঁটে উঠলেই আসল আমেজ টা উপভোগ্য হয়। কিন্তু সঙ্গে মা বাবা দিদি থাকাতে সেটা সম্ভব হল না। তবুও রোপওয়ে টাও কম রোমাঞ্চকর নয়। এখানে ওঠার সময় নিজের উপর ভরসা না রেখে পুরোপুরি যন্ত্র ও নিজের ভাগ্যের উপর ভরসা রাখতে হয়।
রোপওয়ে যথারীতি দুলতে দুলতে উঠতে লাগল। আর যত উঠতে লাগল চারিদিকের দৃশ্য খুলে যেতে লাগল। নিচে ঘন জঙ্গল। চারিদিকে ত্রিকূট পাহাড়ের বিভিন্ন শৃঙ্গ দাড়িয়ে, তাদের ঘিরে ঘন বন। দুটি শৃঙ্গের মাঝে একটি গাছ পালা তে ঘেরা জলাশয়। তাতে গোল হয়ে জল পান করছে। পাহাড়ের চারিদিকে উঁচু-নিচু বিস্তৃত জমি। তার মাঝে মাঝে কত নাম না জানা গ্রাম। গাইড আগের ট্রিপ এ রোপওয়ে করে পাহাড়ের উপর পৌঁছে গেছিলেন। আমরা গিয়ে তার সাথে দেখা করলাম।
পাহাড়ের উপর অনেক টা ছড়ানো। উঁচুনিচু জমি। চারিদিকে পাথর খণ্ড ছড়িয়ে আছে। আছে বিভিন্ন বড় গাছ। বাঁশঝাড় ও চোখে পড়ল। আর পায়ে চলা পথ চলে গেছে একদিক এ। এই পথ দিয়ে ঘুরে ঘুরে পাহাড়ের চারিদিকে গভীর জঙ্গল উপভোগ করা যায়। গম্ভীর পরিবেশ। পাহাড়ের উপর থেকে তাকালে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঘরবাড়ি, মানুষজন চোখে পড়ে। পাহাড়ের উপরেই চা এর দোকান। সেখানে চা খেয়ে গলা ভিজিয়ে নিলাম। পাহাড়ের উপর চা খাওয়ার অভিজ্ঞতাই আলাদা।
সেই স্থানীয় চা বিক্রেতাও গরগর করে বাংলা বলছে দেখে অবাক হলাম। তার ভাল বাংলা বলার কারন জিজ্ঞাসা করাতে তিনি বললেন যে তিনি বহুদিন হাওড়া তে ছিলেন। এছাড়া জল, ঠাণ্ডা পানীয়ের দোকানও আছে। পাহাড়ে ঘুরতে ঘুরতে অনেক যায়গায় দেখলাম যে পাহাড়ি গাছ গাছড়ার বিভিন্ন দ্রব্য বিক্রি হচ্ছে। আমাদের গাইড বাবু হাতে ক্যামেরা নিয়ে হাঁটছিলেন, ছবি তুলে দেবেন বললেই। ছবির প্রিন্ট কি করে হবে জিজ্ঞাসা করাতে তিনি বললেন যে পাহাড়ের উপরই প্রিন্টার এর ব্যবস্থা আছে। গাইড বাবু আমাদের একটি ছবিও তুলে দিলেন মাত্র ২০ টাকার বিনিময়ে। ছবিটা তিনি বেশ সুন্দর তুলেছিলেন।