তোরা আমাকে কী বেইজ্জত করলি বল তো!
কোনও দরকার ছিল, এমনটা করার? ওরে, বারবার করে বারণ করেছিলাম, এত ঢাক পেটাস না। তোরা শুনলি না।
ছমাস আগে থেকে হোর্ডিং টাঙিয়ে দিলি, ‘এত বড়! সত্যি?’ কীসের বিজ্ঞাপন, লোকে বুঝতেই পারল না।
শুধু কলকাতা হলেও না হয় বুঝতাম। ওই সিমেন্ট কোম্পানির পাল্লায় পড়ে দিল্লি, মুম্বই, চেন্নাই, ব্যাঙ্গালোর থেকে ছোটখাটো শহরেও হোর্ডিং খাঁচিয়ে দিলি!
তখন বুঝিসনি, কাদের গায়ে জ্বালা ধরতে পারে ? আশেপাশে কোন কোন রাঘববোয়ালদের পুজো আছে? সেই মন্ত্রীরা এত ঘটা করে পুজো করে আসছে, চাঁদা তুলে আসছে, আর তোরা ‘সবথেকে বড়’ বলে সবার চোখ টেনে নিবি! আর যদি বড় করে করবিই, মাথায় একটা ‘বড়’ কাউকে বসাতে পারলি না! এই বুদ্ধিগুলো তোদের কবে হবে ?
স্বর্গে আমাকে সবাই আওয়াজ দিচ্ছিল। ‘সবথেকে বড়’ নিয়ে এই কদিনে কম প্যাঁক খেয়েছি? এবার কোন মুখে ফিরে যাব ? তোদের শিববাবু এমনিতেই গাঁজা খেয়ে থাকে। মাথার ঠিক থাকে না।
লোকে বলত, শিবঠাকুরের আপন দেশে আইন কানুন সর্বনেশে। মানছি, তোদের রাজ্যেও এখন তাই হয়েছে। তোদের রাজ্য তো আমারও বাপের বাড়ি। তোদের শিববাবু এখন আমাকে নিয়ে রীতিমতো হাসাহাসি করে। বলে, আমার আইন কানুন সর্বনেশে? আর তোমার বাপের বাড়ির ! এখানে তোমার ভাই বোনেরা যা শুরু করেছে, আমি তো নেহাত শিশু। তাঁর কাছে দীক্ষা নেব।
এবার কোন মুখে ফিরে যাব বল তো ! বাপের বাড়িতে এলে চারদিন থেকে তারপর ফিরেছি। সবাই জিজ্ঞেস করত, কেমন কাটল ? কী রকম আপ্যায়ন হল? আমি কত গর্ব করে বলতাম বাপের বাড়ির কথা। এবার কী বলব ? ষষ্ঠীর দিনেই পুলিশ আমার মুখে বোরখা পরিয়ে দিল! ন্যানোর মতো আমাকেও রাজ্যছাড়া করে দিল!
তোদেরও বলিহারি। এই রাজ্যে বাস করছিস, নিয়মগুলো জানিস না ? শহরের ভুগোলটা বুঝিস না ? একটু দূরেই একডালিয়া, সেখানে এক মন্ত্রী আমাকে নিয়ে বহু বছর ধরে মাতামাতি করে। চেতলার দিকে গেলেই চেতলা অগ্রণী। সেখান তো কদিন আগে পেলে না ছেলে, কী একটা নাম, তাকেও পাকড়াও করে এনেছিল। নাকতলা বা নিউ আলিপুরও খুব দূরে নয়। ওরা এত এত স্পন্সর তুলত, লাখ লাখ লোক সেখানে ভিড় করত। এবার তোরা ভাবলি, সবাইকে তোদের দিকে টেনে আনবি ?
আমাকে নিয়ে এত টানাটানি কেন বাপু ? এমনিতেই সিন্ডিকেট নিয়ে, আরও হাজারটা বিষয় নিয়ে তোদের ঝামেলা। আমাকে কেন টানলি এর মধ্যে।
ওরে গাধা, এত বড় দুর্গাই যখন করলি। তখন আরও বড় কাউকে দিয়ে উদ্বোধন করাতে পারলি না ? পাড়ার নর্দমা থেকে উড়ালপুল, সব ফলকেই যার নাম থাকে, সবকিছু যে একাই উদ্বোধন করে, তাকেই ডাকলি না ?
এ রাজ্যে কোনওকিছুই তাঁর অনুপ্রেরণা ছাড়া হয় না। হোর্ডিংয়ে লিখতে পারলি না, — এর অনুপ্রেরণায় এই সবথেকে বড় দুর্গা হল ? প্রেস কনফারেন্স করে বলতে পারলি না, ৩৪ বছরে এত বড় দুর্গা হয়নি, এই প্রথম হল। একবারও বলতে পারলি না, রাজ্যে যে ‘উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ’ চলছে, তাতে সামিল হতেই এত বড় দুর্গা প্রতিমা।
বলতেই তো পারতিস, আপনি একটা ছবি এঁকে দিন, সেটা দিয়ে থিম হবে। একটা গান তো লেখাতে পারতিস। না হয় মা দুর্গার পায়ে হাওয়াই চটি পরাতিস। তাতেও একটা অভিনব ব্যাপার হত। মূর্তির মুখে না হয় তাঁর মুখে আদল আনতিস। সাদা মূর্তির সঙ্গে না হয় কোথাও একটা নীল রঙ দিতে পারতিস।
এসব করলে কোনও সমস্যাই হত না। এত বড় একটা দুর্গা, সেখানে কিনা হাজির ছিল মেয়র! তার জন্য দু একটা ঘুঘনির দোকান বা চাউমিনের দোকানের ফিতে কাটার প্রোগ্রাম রাখতে পারতিস। আর কাকে আনলি ? সৌরভ । ভাবলি, ‘মহারাজা’কে এনে বিরাট বীরত্ব দেখিয়ে ফেলেছিস। তাকে কদিন আগে নবান্নে ডেকে সিএবি সভাপতি কে করল, জানিস না ?
তোদের গ্যাস খেয়ে আমার কী অবস্থা! একটু খোঁজও নিলাম না। আমাকে তো কার্ড দিয়ে নেমন্তন্ন করিসনি। নইলে, কার্ড দেখে আগেই সাবধান করে দিতাম। তোদের থেকে মহিশাশূরের এই মহিশটার বুদ্ধিও বেশি। এই বুদ্ধি নিয়ে তোরা এসেছিলি দুর্গা পুজো করতে। ‘সবথেকে বড় দুর্গা’? খুব পুলক, তাই না ? এবার ঠ্যালা সামলাও।
জেনে রাখ, তোদের রাজ্যে একটাই মূর্তি। তার থেকে বড় মূর্তি আর কারও হবে না। আমারও না।

 

~ ‘সবথেকে বড় দুর্গা ‘? খুব পুলক, তাই না ? ~

 

[source: bengaltimes]
Print Friendly, PDF & Email
Previous articleLong Distance Love
Next articleপুজোয় ফেসবুক
Hatpakha Magazine
Hatpakha is an online Bengali English magazine where people from all across the world can participate and share their knowledge with the people world over.
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest

0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments