শত বৎসর পূর্বে বিশ্ব পরিসংখ্যানে, প্রতি সহস্র জন্মকাহিনীতে বিশ জোড়া যমজ শিশু জন্মাত। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সাথে সাথে সারা পৃথিবীতে যমজ শিশু জন্মের হার বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে , হাজার প্রতি তেত্রিশ জোড়ায় । সে তুলনায়, এশিয়াতে যমজ শিশু জন্মের হার যথেষ্ট অল্প , হাজার প্রতি নয় থেকে দশ জোড়া ।
যুক্তরাষ্ট্রে গত শতকের হিসাবে যমজ সন্তান জন্মের হার ছিল হাজার প্রতি আঠারো জোড়া । এখন বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে হাজার প্রতি তেত্রিশে । সর্বাধিক যমজ সন্তান জন্মের হার আফ্রিকায় । Nigeria- হাজার প্রতি বর্তমানে চল্লিশ থেকে ষাট জোড়া যমজ শিশু জন্ম নিচ্ছে ।
সম্প্রতি এক চমকপ্রদ সংবাদে প্রকাশ, কেরালার কোধিন্হি গ্রামে দুহাজার পরিবারে আড়াইশো জোড়া যমজ সন্তান । ২০০৮ সালে এই গ্রামে তিনশোটি পরিবারে পনেরো জোড়া , ২০১৫ তে হাজার প্রতি ষাট জোড়া যমজ সন্তান জন্মেছে । এই গ্রামে কেন এই যমজ সন্তানের আধিক্য, চিকিৎসকদের কাছে এক বিশাল বিষ্ময় ।
যমজ সন্তানের জন্ম সূত্র এযাবৎ দুটি ভিন্ন আঙ্গিকে স্বীকৃত ছিল । প্রথমতঃ fraternal বা সমগোত্রীয়, যেখানে দুটি ডিম্বাণু ও দুটি শুক্রাণুর মিলনে ভিন্ন ভিন্ন দুটি ভ্রূণকোষ তৈরী হয় । ফলতঃ যমজ পুত্র বা যমজ কন্যা বা একটি পুত্র ও একটি কন্যার জন্ম, কিন্তু একে অপরের অবিকল প্রতিরূপ নয় । তবে , কোনো কোনো ক্ষেত্রে , সমগোত্রীয় যমজ সন্তান যদি সমলিঙ্গ অর্থাৎ দুটি পুত্র অথবা দুটি কন্যা হয় , তবে তারা একে অপরের অবিকল প্রতিরূপ হতে পারে l
দ্বিতীয়তঃ identical বা অবিকল প্রতিরূপ, যেখানে একটি ভ্রূণকোষ দ্বিধা বিভক্ত হয়ে দুটি সদৃশ আকৃতির সন্তানের জন্ম দেয় ।
সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞানীগণ তৃতীয় এক সম্ভাবনা নিশ্চিত করেছেন । সেটি হলো , মাতা দিচ্ছেন একটি ডিম্বাণুর X ও X দুটি সম ক্রোমোসোম এবং পিতা দিচ্ছেন একটি শুক্রাণুর X ও Y দুটি অসম ক্রোমোসোম । ফলতঃ, দুটি ভ্রূণকোষ XX ও XY তৈরী হচ্ছে । অর্থাৎ একটি কন্যা ভ্রূণ ও অপরটি পুত্র ভ্রূণ । এই যমজ সন্তানকে বলা হচ্ছে semi – identical বা প্রায় -সদৃশ । গর্ভাবস্থার শুরুতে, আল্ট্রাসোনো পরীক্ষায় দেখা গেছে, দুটি ভ্রূণ কোষ একই Placenta বা অমরা ব্যবহার করছে । এখানে পিতা সন্তানকে দিচ্ছেন ভিন্ন ভিন্ন ডিএনএ, কিন্তু মাতা দিচ্ছেন একই DNA । যমজ সন্তানের জন্ম লগ্নে এ এক নুতন উদ্ভাবন ।
পিতৃত্ব প্রমাণে ডিএনএ এক অব্যর্থ পরীক্ষা , এমন ভাবা হতো l
রিও-ডি-জেনেরিও -র এক চমকপ্রদ সংবাদে সন্দেহের অবকাশ দেখা দিয়েছে l এক জননী তার শিশুপুত্রের পিতৃত্ব পরীক্ষার দাবীতে আদালতে মামলা রুজু করে l অভিযুক্ত যুবক পিতৃত্বর দায় অস্বীকার করে বলে, তার যমজ ভাই আসল পিতা l যমজ ভাই -ও পিতৃত্ব অস্বীকার করে l তখন বিচারক উভয়ের ডিএনএ পরীক্ষার আদেশ দেন l শিশুপুত্র -র ডিএনএ উভয়ের ডিএনএ-র সঙ্গেই মিলে যায় l শিশুর মাতা উভয়কে একত্রে দেখেও কে যে আসল পিতা, সনাক্ত করতে পারেন নি l তখন বিচারক শিশুর যাবতীয় ব্যয় ভারের দায়ীত্ব দুই ভাইক সমান ভাগে ভাগ করে দেন l