পাগল
জানি,তোমরা আমায় পাগল বলো, এমন কি আমার প্রতিবিম্ব ও আমায় পাগল বলে। এতে তোমাদের বা প্রতিবিম্বের কোনো ভুল নেই কারণ আমি মানি যে আমি পাগল। পাগলামির কারণ বোধহয় এগুলোই, না?-
আমি অন্ধকারে এক কোণে বসে থাকি আলোর ভয় এ
আমি কারোর সাথে কথা বলি না শব্দের ভয়ে।
আমি না ঘুমিয়ে সারারাত চেঁচায় স্বপ্ন দেখার ভয়ে।
আমি কাউকে শরীর ছুঁতে দি না স্পর্শের ভয়ে।
আমি চুল দাড়ি কাটি না আমার অমিটাকে চেনার ভয়ে।
আমি তোমাদের সাথে খেলি না আনন্দের ভয়ে।
আমি লাল রং দেখে থেমে যাই অতীত মনে পড়ার ভয়ে।
আমি গুছিয়ে কথা বলি না গল্প তৈরি হবার ভয়ে।
আমি সবসময়ই হাসি নোনা জল ঠোঁটে লাগার ভয়ে।
আমি ভগবান মানি না প্রার্থনার ভয়ে।
আমি অসামাজিক ভাবে কাটাই সমাজের ভয়ে।
তাই তো তোমরা, সামাজিক জীবেরা আমায় পাগল বলো। তোমরা শুধু বলতেই পারো। একবার পেরিয়ে আসো আমার গন্ডিতে, দেখতে পাবে কত শান্তি আমার পৃথিবীতে। কিন্তু তোমরা তো সভ্য এর পোশাক পড়ে সামাজিক সম্মান পেতে চাও পাছে তোমাদের কেউ পাগল বলে …
তাকে আমি খুব ভালোবাসতাম। এমনকি নিজের থেকেও বেশি। ও যখন উড়না উড়িয়ে সূর্য ঢেকে নাচত দুহাত ছড়িয়ে, আমার মনে যেন রামধনু উঠতো। ও যখন আমায় খাইয়ে দিত নরম হাত এ, আমি যেন অমৃতের তৃপ্ততা পেতাম। ও যখন আমার উপর ঠোট ফুলিয়ে রাগ করে থাকতো, মনে হতো সব রাগ লাল রং হয়ে ওর ঠোঁটের কাছে জমেছে। যখন হওয়ার ব্যস্ততায় চুল সারাতো ঠোট থেকে তখন ইচ্ছা হতো বারবার যেন হাওয়া হাতে করে চুলের দল আবার পৌঁছে দিক ওর ঠোঁটে।
ও পাশে না থাকলেও ওর স্পর্শ দুলিয়ে দিত। ও ছিল আমার আনন্দর ঝরনা। ওর জন্য প্রার্থনা করতাম প্রতিদিন। ও বলত-‘তুই না একটা পাগল, আমার পাগল।কে পায় এমন পাগল প্রেমিক! আমি তো সৌভাগ্যবতী যে এমন পাগল ছেলেটাকে বিয়ে করবো। কোনোদিন সবার মতো মানুষ হোস না। এই পাগলামি গুলোকে আঁকড়ে ই তো বাঁচবো আমি’।
কে বা জানতো এমন দিন আসবে যে ওর পাগলটা সবার পাগল হয়ে উঠবে।
সেদিন ও একটা লাল চুড়িদার পরে এসেছিল আমার সাথে দেখা করতে।আমি বলেছিলাম-‘তোকে আজ রাতপরি লাগছে’। আমায় বাঁ হাতের ছোট আঙ্গুলটা বাড়িয়ে বললো-‘তাহলে কামড়ে দে না’। আমি কবিতা লেখা ডায়েরির ছেড়া পাতাটা বুক পকেট থেকে বের করে দিলাম ওর হাতে। কতবার যে পড়লো জানিনা। আমার দিকে তাকিয়ে গাইল-‘ তুমি রবে নীরবে হৃদয়ে মম…’। আমার চোখ শুধু ওর মুখের দিকে। আর ও গান থামিয়ে অনবরত বকবক বকবক… আমি ওকে না থামিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম, কিছুই শুনতে বা বুঝতে পারলাম না।
আকাশের বুক চিরে বৃষ্টি নামলো। ও রেস্টুরেন্ট থেকে সবার দৃষ্টি ভ্রূক্ষেপ করে আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে এলো রাস্তায়। আমি ভিজবো না র ও ছাড়বে না। আমি একটু ধমক দিয়ে বললাম-‘তুই যাবি না হলে আমি চললাম।’ রাস্তা পেরিয়ে রেস্টুরেন্টের দিকে গেলাম এটা ভেবে যে ও রাগ ভাঙাতে পিছন পিছন আসবে। হঠাৎ শুনতে পেলাম বিকট চিৎকার আমার নাম ধরে। পিছন ফিরে যখন দেখলাম, গলা ফাটিয়ে বললাম-তিস্তা-আ-আ…। আমার মস্তিষ্কের সমস্ত শিরা ছিঁড়ে জট পাকানো। তবুও ছুটছি, আমার হৃদপিণ্ড শ্বাস নিতে ভুলে গেছে, কোনো শব্দ শুনতে পাচ্ছি না… সব দৃশ্য আস্তে আস্তে হলুদ… ফ্যাকাসে…ঝাপসা। পড়লাম হুমরি খেয়ে ওর হাতের উপর। সব কালো… অন্ধকার।
যখন জ্ঞান ফিরলো তখন তোমরা সভ্য, সামাজিকতায় মোড়া মানুষের দল আমার নতুন নাম দিলে- ‘পাগল‘।