একদা হইল দেখা স্বচ্ছ গঙ্গানীরে,
জীবন মৃত্যু সাথে মন্দাকিনী তীরে ।
কহিল মৃত্যু–ওহে জীবনের সখা,
বহুদিন বাদে দোঁহে হইল যে দেখা।
একটি প্রশ্ন মোর অন্তর মাঝে,
অহরহ দেয় উঁকি–ফেলে মোরে লাজে।
আজ যবে হেরিলেম তোমা মুখোমুখি,
উত্তরদানে মোরে কর মিত্র সুখী।
জীবন হাসিয়া কহে–কি কৌতুহল,
তোমার হৃদয়কে সখা করিছে উথল !
শুধাও হে অকপটে প্রিয় বন্ধুবর,
সম্ভব হইলে আজি দিব উত্তর।
জিজ্ঞাসিল মৃত্যু তবে জীবনের প্রতি,
কি হেতু প্রেমিক তব মনুষ্যজাতি
তোমারেই ভালবেসে সকলে বিভোল,
মোর তরে অন্তহীন ঘৃণাই কেবল।
জীবনের অট্টহাসি–কহে মিত্র মোর,
এই প্রশ্নে হায় তব দীর্ণ অন্তর !
তবে শোনো কেন মোরে সবে ভালবাসে !
আর তোমা প্রতি কি হেতু শুধু ঘৃণা আসে !
আমি যে সুন্দর তবে মিথ্যার শরণে,
নির্বোধ মানবজাতি বোঝে তা মরণে।
তাই ত’ সকলে মোরে লয় করি’ বরণ,
পূজন করেই কেবল আমার চরণ।
আর সত্য যদিও তুমি–যন্ত্রণাময়,
তোমার করাল রূপে সকলের ভয়।
তাইতো তোমারে হায় করে সবে ঘৃণা,
কিন্তু আমি মূল্যহীন বন্ধু তুমি বিনা।
মিত্রবর জানিবে এবে তুমিই অমোঘ,
জীবন অনিত্য–সাথী সদা দুর্ভোগ।
মরীচিকা সম আমি–তুমি মরুদ্যান,
তোমার মাঝেই মোর পূর্ণ হয় প্রাণ।
হইও না লজ্জিত সখা–থাকো সত্য পথে,
আমি করি প্রবন্চনা মানবের সাথে ।
মিথ্যাকে সত্য ভাবা তাহাদের ভ্রম,
সেই ভ্রমে বলে সবে জীবন পরম।
জীবনের বাক্য শুনি মৃত্যু নিশ্চুপ,
অবশেষে কহিল সে – মোরা দুই রূপ।
একটির সঙ্গ ভিন্ন অন্যটি অপূর্ণ,
দুইই পরম সত্য মিথ্যা যেথা দীর্ণ।
মৃত্যুর উক্তি সাথে সহমত কবি,
দিবস রজনী দুই প্রকৃতির ছবি।
তামসের মাঝে যথা আলোকের দিশা,
মৃত্যুও আবৃত করে জীবনের নিশা।
মরণ আলোকময় শ্যাম সমান,
তাহাতেই অঙ্কুরিত জীবনের প্রাণ।