আমি মনমর্জিয়াঁ (Manmarziyaan) সিনেমাটি দেখলাম। আমার ভয়ঙ্করভাবে ভালো লেগেছে। কণিকা ধীলোঁ র লেখা গল্প নিয়ে এতো সুন্দর ভাবে অনুরাগ কশ্যপ প্রচলিত সমাজকে থাপ্পড় কষিয়েছেন তা এককথায় দারুন। তাপসী পান্নু ও ভিকি কৌশল এর সাথে অভিষেক ও অভিনয়ে পাল্লা দিয়েছেন। আমার খালি মনে হচ্ছিল আমি আগে কেন দেখিনি। ‘মালেগাও কি সুপারম্যান’ এর পর ”মনমর্জিয়াঁ” মনে হচ্ছে হিন্দি সিনেমা আবার প্রচলিত ছকের বাইরে পা দিচ্ছে। সৃষ্টিশীলতা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছে বাজারকে আর এস এস এর তথাকথিত হিন্দু ভারতীয় মনুবাদী সংস্কৃতিকে। ‘মনমর্জিয়াঁ’ ভেঙ্গে দিয়েছে রামের ‘সীতা’ র পবিত্রতার পরীক্ষাকে। বিয়ের পরেও পরপুরুষের (প্রেমিক) সঙ্গে যৌনতা! স্বামী তাকে স্বীকার করে নিয়ে স্ত্রীকে বলছে ‘ তুমি ভাব , তুমি কার সাথে থাকবে’। উগ্র হিন্দুদের ‘রাম’ জীবনেও ‘সীতা’ কে একথা বলতে পারবে না (আমি বাল্মীকী র রামের কথা বলছি না)। সে সন্দেহবাতিকগ্রস্ত।খাপ পঞ্চায়েত বসিয়ে পুড়িয়ে মারবে পারলে। আর এখানে রুমি ( তাপসী) তার দুই শয্যাসঙ্গী স্বামী ( অভিষেক) ও প্রেমিক( ভিকি কৌশল) দুজনকে নিয়েই বিভ্রান্ত। স্ত্রী স্বামীর সাথে প্রথম যৌনমিলনের আগে জানিয়ে দিচ্ছে সে ‘ অক্ষত যোনী’ নয়। স্বামীও স্বীকার করছে তারও আগের অভিজ্ঞতা আছে। এখানে ভালোলাগা আছে ভালোবাসা আছে কিন্তু দেহের উপর দখলদারি নেই। মনে রাখবেন সীতা কিন্তু রাবণের সম্পর্কে কোন বাজে কথা বলেনি। রাবণও সীতাকে যথেষ্ট সম্মান দিয়েছেন, অসম্মান করবার বহু সুযোগ সত্ত্বেও। হয়ত ভালবাসতেন। আর আমার ব্যক্তিগত মত বাল্মীকী নিজেও বিভ্রান্ত ছিলেন। তাই লক্ষণ রেখা র গল্প ফেঁদেছেন।সন্তানহীনা সীতা কি রাবণের সাথে যেতে সত্যিই অনিচ্ছুক ছিলেন ? যদি অনিচ্ছুক থাকতেন তাহলে বাল্মীকী তাকে লক্ষণরেখা পেরোতে দিলেন কেন? এই বিভ্রান্তি এই সিনেমাতেও আছে । স্ত্রী ‘ রুমি’ বারবার ভারতীয় ‘স্ত্রী’র পবিত্র লক্ষণরেখা ভেঙেছেন। আর অনুরাগ কিন্তু স্বামী অর্থাৎ অভিষেক কে স্ত্রীর প্রেমিকের সাথে দৈহিক মারপিটে জড়িয়ে
ফেলেন নি।’ রাবণ বধ’ করতে হয় নি।এখানেই তার কৃতিত্ব।স্বামী ‘স্ত্রী’ র মন পেতে চেয়েছেন ভালোবাসা দিয়ে, ধৈর্য্য দিয়ে। দখলদারীর পুরুষালী বাহুবল দিয়ে নয়। তাইতো ডিভোর্স এর পর অভিষেক আর রুমি দুজন দুজনকে আবার ভালবাসতে শুরু করল। বিবাহপ্রথাকে ভেঙচি কেটে।
আর এই সময় ভারতে শুরু বিজেপি র রামমন্দির মহোৎসব। দেশের সামনে আবার হাজার বছরের পুরনো , বর্তমানের তুলনায় এক বিকৃত সভ্যতাকে মহিমান্বিত করে তোলা হচ্ছে। এক নারীবিরোধী , দলিত বিরোধী সামন্তী সমাজকে ন্যায্যতা দেওয়ার চেষ্টা চলছে । এই ভারত ‘মনমর্জিয়াঁ’ ও তৈরি করে ভরসাটা সেখানেই। নতুন অপবিত্র আধুনিক ভারত না পুরুষালি মনুবাদী হিংস্র পুরনো ভারত যেখানে ‘ রুমি’ দের যৌনপবিত্রতার অগ্নিপরীক্ষা দিতে হবে।কোন ভারত জয়ী হবে?
লড়াই জারি আছে……

Print Friendly, PDF & Email
Previous articleজীবন মৃত্যু
Next articleএক ডাক্তারের জন্ম
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments