মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী বা মহাত্মা গান্ধী হলেন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম বীর নেতা। এবছর ভারতের জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর ১৫১ তম জন্মদিবস। গান্ধীজি  ১৮৬৯ সালের ২রা অক্টোবর গুজরাটের পোরবন্দর শহরে জন্মগ্রহণ করেন।  একদিকে তিনি ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম যোদ্ধা অন্যদিকে  তিনি ছিলেন একজন আধ্যাত্মিক চেতনার পরাকাষ্ঠা। অহিংসা ছিল তাঁর একমাত্র ব্রত। ভারতে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে হয় সত্যাগ্রহ আন্দোলন, অসহযোগ আন্দোলন। এ আন্দোলনের মূল ভিত্তি হলো অহিংস মতবাদ। এটি ছিল ভারতকে  স্বাধীন করার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ।  যা ছিল সারা বিশ্বের মানুষের স্বাধীনতা এবং অধিকার আদায়ের আন্দোলনের অন্যতম অনুপ্রেরণা।  গান্ধীজি সারাজীবন যে কোনো পরিস্থিতিতেই অহিংস এবং সত্যের পথ অবলম্বন করেছেন। তাঁর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়েছে অসংখ্য মানুষ। বিশ্বব্যাপী বহু মানুষের মধ্যে অন্যতম একজন হলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের  মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র যিনি আজীবন গান্ধীর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়েছেন। মার্টিন লুথারের জন্ম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টা শহরে।  যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গদের নাগরিক অধিকার ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি গান্ধীজির অনুপ্রেণায় অনুপ্রাণিত হয়ে অহিংস আন্দোলন করেন। ফলস্বরূপ তাঁর নেতৃত্বে একদিন কৃষ্ণাঙ্গরা নিজেদের অধিকার অর্জন করে। তাঁর এই  কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি ১৯৬৪ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন। ২০১৯ সালে  মার্কিন সংসদে গান্ধীজি এবং মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের আদর্শকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আর্থিক বরাদ্দের দাবি জানিয়েছেন মার্কিন কংগ্রেসম্যান জন লুইস। ১৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দের দাবি জানিয়েছেন তিনি। প্রতিবছর এই কাজে ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করা হবে বলে দাবি করেছেন তিনি। 

 আদর্শ, নীতি আর জীবনবোধের দিক থেকে মহাত্মা গান্ধী এবং মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের  সম্পর্ক নিবিড় যদিও কখনোই তাঁদের মুখোমুখি দেখা  হয়নি। যখন মহাত্মা গান্ধী মৃত্যুবরণ করেন তখন  মার্টিন লুথার কিংয়ের বয়স মাত্র ১৯ বছর। পরবর্তীতে মার্টিন লুথারের ১৯৫৯ সালের ভারত সফর  এবং মহাত্মা গান্ধীর বিভিন্ন লেখা থেকে মার্টিন লুথার গান্ধীজি সম্পর্কে ধারণা লাভ করেন। তাঁর প্রতিটি কাজে গান্ধীজির প্রভাব সুস্পষ্ট। মার্টিন লুথার গান্ধীজির অহিংস মতবাদ দ্বারা প্রভাবিত হন, যার প্রমাণ পাওয়া যায় তাঁর বিভিন্ন বক্তব্য ও কাজে। নাগরিক অধিকার আন্দোলনের সময় মার্টিন লুথার বলেছেন , “মন্টগোমারি বয়কটের সময় অহিংস সামাজিক পরিবর্তনে গান্ধীর দেখানো পথেই আমরা এগিয়েছি।”

মহাত্মা গান্ধীর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে মার্টিন লুথার বলেছিলেন, “গান্ধীর থেকে আমি নিজে অনেক কিছু শিখেছি। থিওলজিকাল স্কুলে থাকার সময়ে আমার বিশ্বাস ছিল খ্রীষ্টধর্মে বর্ণিত ভালোবাসা শুধুমাত্র আপনজনদের জন্যেই সীমাবদ্ধ। সমস্যার সমাধান ভালোবাসা নয়, সশস্ত্র প্রতিবাদের মাধ্যমেই সম্ভব। তখনই গান্ধীর মতাদর্শের কথা পড়ি। বুঝতে পারি, ভালোবাসা দিয়ে কীভাবে সমাজ বদলানো যায়। গান্ধী আমাদের পথ দেখিয়েছেন। তাই ওঁর মৃত্যুর দশ বছর পরেও ওঁর কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।”

 মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র মহাত্মা গান্ধীর অনেকগুলো মতবাদ নিজের জীবনের আদর্শ রূপে  গ্রহণ করেন।  শুধু তাই নয় মার্টিন লুথারের মাধ্যমে অহিংস মতবাদ বিশ্বের অন্যান্য দেশ সহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া রাজ্যের আটলান্টা শহরে মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের নামে একটি মিউজিয়াম আছে যেখানে তাঁর মৃত্যুর পর সমস্ত কার্যকলাপ সংরক্ষণ করে রাখা আছে। এই মিউজিয়ামেই আছে মহাত্মা গান্ধীর একটি বিশাল মূর্তি। আরও আছে গান্ধীজির জন্য একটি বিশেষ কক্ষ যেখানে সংরক্ষিত আছে তাঁর জীবনের বিশেষ কার্যকলাপ যা মার্টিন লুথারকে আজীবন উৎসাহ প্রদান করেছে। এভাবেই মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতি রয়ে গিয়েছেন সুদূর  মার্কিন  যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে। ২০০৭ সালে রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ সভায় ২রা অক্টোবর দিনটিকে “বিশ্ব অহিংসা দিবস” হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এভাবে শুধু ভারতবর্ষে নয় পৃথিবী ব্যাপী মানুষ আজ মহাত্মা গান্ধীকে শ্রদ্ধার আসনে বসিয়েছে। 

Print Friendly, PDF & Email
Previous articleছুটির ছুটি
Next articleঅপেক্ষা
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments