দিন মানে আসলে ২৪ ঘান্টা। এর মধ্যে কত যে কাজ করা হয় সেটা শুধু হিসাব করলেই ভালো বোঝা যায়। কখনো মনে হয় সারাদিন অনেক কাজ করি, বসার সময় নেই। অথচ দেখলে মনে হয় যেন সারাদিন এত বসে থাকি যে কাজ করার ইচ্ছেটুকুও নেই। তবুও বাঙ্গালীর স্বভাব, মনের সুখটুকুকেও দৈহিক ব্যস্ততায় রূপান্তরিত করে বেশ রসিয়ে পেশ করা। তা এসবের মাঝখানেও যেটা থাকে সেটা হল বন্ধুবান্ধবের সাথে চায়ের কাপেতে চুমুক বআ কোনো অসার বিষয় নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা। এই করেই দিন কেটে যায়। কোনোদিনও ভেবে দেখিনা যে আমার এই সুখের পুনরাবৃত্তি ছাড়াও কোনো এক অদৃশ্য ছায়া আমাকে অনবরত আগলে রেখেছে প্রতিটা মুহূর্ত। যার ওপর সব চিন্তাভাবনা সমর্পণ করেও আমি নিশ্চিন্তেই আমার দৈনিক জীবণটির শান্তিপূর্ণ পুনারাবৃত্তি ঘটাতে সক্ষম হচ্ছি।
বড়োতো অনেক হয়েছি, কিন্তু প্রকৃতির কাছেত শিশুই। তাই প্রকৃতির নিয়মেই চিন্তাভাবনা ভুলে আত্মশান্তির যজ্ঞে ক্রমাগত আহূতি প্রদান করছি। কোনোদিনও ভেবে দেখিনি যখন এই আহূতির রশদ ফুরিয়ে যাবে, তখন কে দাঁড়াবে পাশে এসে? কে জোগাবে মুহূর্তের এই আনন্দগুলোর খোরাকটুকু?
ভাবলে অবাক হবেন, বেঁচে থাকার সম্বলটুকু আজ যাদের চেস্টায় সুলভ হয়েছে, আমরা কিন্তু আমাদের কর্মব্যস্ত জীবণের মূল্যবান সময়ের মধ্যে থেকে এক বিন্দু দিয়েও তাদের কথা ভাবিনা। যদিও বা ফোনটাকেই আমরা দিনের শেষে পাথেয় করে তুলি। কিন্তু একবারও ভেবে দেখিনা যে সেই সুবিধাটুকুও হয়তো তাদের প্রচেষ্টারই এক আশ্চর্য ফল।
ফোন বলতে মনে পড়ল, আজব জিনিস এই ফোন। দৈনিক যোগাযোগের নামে মানুষের মধ্যে থেকে সংযোগ কেড়ে নেবার এক মোক্ষম অস্ত্র। Facebook, Whatsapp, Twitter ইত্যাদি কতো কিছুই না হয়েছে মানুষের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য। কিন্তু তা সত্ত্বেও আজও কেন মাঝে মাঝে একা মনে হয়? কেন আমরা Social Networking এর এতো ঘনিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও খুঁজে বেড়াই নিজের প্রাণের সাথীকে? আসলে “বিজ্ঞান আমাদের দিয়েছে বেগ, কেড়ে নিয়েছে আবেগ।“ আধুনিকতার নেশায় মেতে আমরা ভুলে গেছি মানুষের মধ্যে ভাব বিনিময়ের ভাষা। এখন ভালোবাসা মানে মনের মধ্যে থাকা উচ্ছ্বাসের বহিঃপ্রকাশ মাত্র। ভালোবাসা মানে এখন শুধুই Facebook, Whatsapp ভালোবাসা মানেই অন্যের ঘরের অবলা নারী। আর ভালোবাসা মানেই তাকে না পেয়ে জীবণ শেষ করা।
আরে নিজের বারিতেও তো কেউ আছে যে তোমাকে অন্ন জগায়। যে তোমার চিন্তায় কাটিয়ে দেয় কতো বিনিদ্র রাত। যে তোমার খাওয়া না হওয়া পর্যন্ত বসে থাকে। যে তোমার মুখ থেকে শুধু একবার একটা ডাক শোনার জন্য দশ মাস দশ দিন কতো কষ্ট সহ্য করে তোমাকে জগতের আলো দেখিয়েছে। আর আজ শুধু আধুনিকতার ঠেলায় আমরা ভুলে গেছি আমাদের আসল ভালোবাসা। বয়স শেষে তাদেরই আমরা পাঠিয়ে দিচ্ছি বৃদ্ধাশ্রমে। অথচ কতো বিপদে, কতো অসময়ে, কতো ভুলের মাঝে তারাই আমাদের অসময়ের সাথী। তাই ধন্য তো তারাই, যারা কারও মা রূপে, কারও বাবা রূপে, কারও স্ত্রী রূপে, কারও বা দাদাদিদি রূপে আজও অসময়ের সাথী।