জটিল বাবুর বয়স আজ দেখতে দেখতে ষাট,
অবসরের ঘণ্টা বাজে – ‘গোটান রাজ্যপাট।’
ছত্রিশটি বছর তাঁর কাটল যে দপ্তরে,
আসনখানি ছাড়তে হবে – মনটা কেমন করে।
বাড়ী তাঁর অনেক দূর গ্রাম বারুইপাড়া,
হাওড়া থেকে ঘণ্টা দুই রেলগাড়িতে চড়া।
বাড়ী থেকে বের হতেন সকাল সাড়ে ছটা,
পৌঁছতেন বাড়ী তখন ঘড়ির কাঁটায় নটা।
শীত গ্রীষ্ম বর্ষা ছিল এক নিয়মেই বাঁধা,
হাজিরাতে বিলম্বকে ঘৃণা করতেন দাদা।
অকারণে গরহাজিরাও অলসতার সমান,
কর্মব্যস্ত জটিল বাবুর কাজই ছিল প্রাণ।
এমন করেই তিনটি যুগের আজকে বুঝি শেষ,
কোথাহতে কাটলো সময় বুঝতে নারেন লেশ।
বিদায় নেবার পালা এবে সকল কাজের ছুটি,
ভাবেন জটিল–কেমন করে সখ্যতা হায় টুটি !
অবসরের অনুষ্ঠান ধুমধামেরই সাথে,
উপহারের ডালি বুঝি উপচে পড়ে হাতে।
প্রশংসায় ভরিয়ে দিলেন ছোট বড় সবাই,
জটিল বাবুর হৃদির মাঝে খুশীর রোশনাই।
কাটল দিন একটি দুটি কাটলো পুরো মাস,
পারিতোষিক প্রাপ্তি তরে দাদার হাহুতাশ।
মাসাধিক অপেক্ষান্তে পেলেন তিনি সুফল,
অর্থপ্রাপ্তি, স্বীকৃতি তাঁর বাড়ায় মনোবল।
কিন্তু ভবিষ্যনিধি গচ্ছিতধন এখনো যে অধরা,
অপেক্ষা ব্যতিরেকে আর কিইবা যায় করা,
অবশেষে সেই অর্থও আসে দাদার হাতে,
বার্ধক্য ভাতা কেবল রইল বাকী পেতে।
একমাস যায় দুমাস যায় বছর ঘুরে আসে,
বারুইপাড়া হাওড়া দাদা ছোটেন প্রতি মাসে,
কিন্তু সুরাহা ত’ হয়না কিছু অধরাই ভাতা,
হায় ঈশ্বর কবে তুমি হবে পরিত্রাতা।
জটিল বাবুর আর্তি বুঝি শুনেন শক্তিমান,
অপেক্ষা আর ছোটাছুটির এবার অবসান,
হাওড়াতে সেদিন ছিলো রেলের গণ্ডগোল,
দুটি গাড়ী বাতিল হল ভীষণ কলরোল।
এসেছিলেন জটিলবাবু সেদিনও দপ্তরে,
ব্যর্থ দৌড় সারাটাদিন ছিলেন অনাহারে,
অসম্ভব গরম ছিল জ্যৈষ্ঠ দাবদাহ,
তার মধ্যে গাড়ীর ভীড় হায় কি নিগ্রহ।
বুকের মাঝে সহসাই ভীষণ যন্ত্রণা,
লুটিয়ে পড়েন জটিলবাবু হারান চেতনা।
ফিরলো না আর জ্ঞান দাদার গেলেন অস্তাচলে,
জড়িয়ে গেলেন বার্ধক্য ভাতার অমোঘ জালে।
রইল পড়ে বিষয় আশয় রইল পরিজন,
জটিল বাবু চলে গেলেন খারাপ করে মন,
কিসের দোষ ছিল তাঁর বিবাদ বিসংবাদ,
নিজের টাকা দাবী করা এতই অপরাধ !
জটিল বাবুর জীবনের জটিল অংকখানি
মিললো না তাঁর ইহজীবনে অপমানের গ্লানি।
জটিল বাবুর মত দশা হয় না যেন কারো,
বৃদ্ধের এই অনুরোধটি ভেবে দেখতে পারো।