দেরি হয়ে গেলো ট্রেন এ উঠতে. এভাবে লেট করলে আর ট্রেন পাবো না নেক্সট দিন, চলো কোনো ব্যাপার না, ট্রেন পেয়ে তো গেছি বাকিটা পরে দেখছি, আজ ট্রেন এ খুব ভিড়, একটা সাইড করে দাঁড়িয়ে পড়লাম………
সকালে সৌমেন ফোন করেছিল বললো আজ তাড়াতাড়ি না গেলে সঞ্জিত স্যার খুব বকা দেবেন, এমনি তাই প্রতিদিন ক্লাস করার নাম করে আমরা যা করি সেটা আর বলার না, তাই আজ বাড়ি থেকে তাড়াতাড়ি বেরিয়েছিলাম কিন্তু ওই রাস্তায় এতো জ্যাম যে ৯.৩০ এর ট্রেন টা ধরতে পারলাম না, সেই ৯.৫৫ আমি এর ট্রেন টা পেলাম, কি আর করবো স্যার কে একটু বলে দেব, এরপর রাগ করলে আমার কিছুই বলার নেই………………………
শিয়ালদাহ পৌঁছে গেলাম অলমোস্ট তখন ঘড়ি তে ১০.৪৫ ক্রস করে গেছে, তাড়াতাড়ি ওখান থেকে বেরিয়ে হেটে, বাস ধরলাম সাইন্স কলেজ এর, ওহঃ সাইন্স কলেজ মানে রাজাবাজার সাইন্স কলেজ, আমি ওখানে মাস্টার অফ টেকনোলজি র স্টুডেন্ট কম্পিউটার সাইন্স ডিপার্টমেন্ট এ………… রাস্তা খালি পেলাম বাস তাড়াতাড়ি নিয়ে এলো কলেজ, অলমোস্ট 11 টা এ আমি কলেজ , যাই হোক লেট তো হয়েই গেছে, যাই এবার ক্লাস রুম এ…………
আমাদের ডিপার্টমেন্ট কলেজ এর ভিতর এ গিয়ে একটা লেফট টার্ন আছে ওখান থেকে রাইট সাইড এ ঘুরলেই একটা পুরোনো বিল্ডিং, এখনো আমি ওই বিল্ডিং টা কে মিস করি……….. যাই হোক, কলেজ এ ঢুকে হাটছি যেখান থেকে ওই লেফট টার্ন শুরু হয় ওখান এ অ্যাপ্লায়েড ম্যাথমেটিক্স এর ডিপার্টমেন্ট, হঠাৎ ই ঘুরতে যাবো আচমকা খুব জোর একটা ধাক্কা খেলাম, আমার তো কিছু হলো না কিন্তু যে ধাক্কা টা খেলো সে পরে গেলো, আমি বললাম,
– কি দেখে চলতে পারো না?
– আরে দেখে চললে কি ধাক্কা টা লাগতো?
– তাও একটু রাস্তা র দিকে তাকিয়ে চললে ব্যাপার টা ভালো, নাহলে আজ আমার সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়েছো, কাল নিজেই কাউকে নিয়ে পরে যাবে.
– ঠিক আছে ঠিক আছে, সরি কিছু মনে করো না.
বলাই তো হলো না ধাক্কা যিনি খেয়েছেন তিনি একটি মেয়ে, ছোট করে হাইট, কিন্তু মুখ এ একটু রাগি রাগি ভাব, কিন্তু উল্টে পরে জামা কাপড় টা বাজে হয়ে গেছে,
খুব হাসি পেলো আমার …………… থাকে বেশি হাস্তে হবে না একটু পরেই স্যার যা ঝার দেবে, থাকে চুপ চাপ যাই……………….
ডিপার্টমেন্ট এ গিয়ে ক্লাস এর বাইরে গিয়ে দাঁড়ালাম, ক্লাস চলছে………………………..
(২)
ধুর প্রচুর বকা খেলাম, এ কি একটু লেট হতেই পারে, টা বলে স্যার এরকম ঝাড়লো, ধুসস ক্লাস এই এসব না আর, নম্বর কম দেবে দিক, সৌমেন বেরিয়ে এসেছিলো বললো,
– কি রে তোকে তো সকালে মেসেজ করে দিয়েছিলাম, তাও লেট?
– আরে আমি কি করবো, যদি ভ্যান এ লেট করে, এতে আমার কি দোষ বলতো?
– সেই তো ভ্যান লেট করিয়েছে, তুই সকালে বাড়ি থেকে বেরোতে পারিস নি ?
– সরি ভাই, এখুনি ঝার খেলাম তার মধ্যে তুই ও ঝাড়ছিস, আর বেঁচে থেকে লাভ নেই বুঝে গেছি.
– উফফফ নাটক বন্ধ কর, কখন পৌঁচেছিস কলেজ এ?
– আর বলিস না পৌঁছেছি তো তাড়াতাড়ি, কিন্তু ওই একটা ধাক্কা খেয়ে সব বাজে হয়ে গেলো.\
– ধাক্কা???????
– আরে হা রে একটা মেয়ে এসে এমন জোর এ ধাক্কা দিলো, যে পড়তে পড়তে বেঁচে গেছি, তার আবার কথার কত স্টাইল.
– ওহঃ বাবা আজকাল আবার মেয়েদের ধাক্কা ও খাচ্ছিস তাও কলেজ এ ক্লাস এ না এসে, ক্লাস এর বাইরে, স্বভাব তো ভালো মনে হচ্ছে না.
বলেই হি হি করে হাসতে লাগলো, এতো রাগ লাগলো, এমনি তাই স্যার ঝার দিয়েছে, তার উপর সৌমেন তও হাসছে, ধাক্কা তও খেয়েছি, যত রাগ গিয়ে পড়লো ওই মেয়েটার উপর, ভাবলাম ওটা কে খুঁজে বের করতেই হবে….. যেমন ভাবা তেমন কাজ, একদম ডিপার্টমেন্ট এ গিয়ে খুঁজতে লাগলাম, বুঝলাম মেয়েটা আমার ডিপার্টমেন্ট এর না, কি সমস্যা, এখন কি পুরো কলেজ খুঁজবো নাকি… ধুরররর…………………
ভাবলম্ ক্যান্টিন এ গিয়ে খেয়ে আসি কিছু, ভালো লাগছে না. ক্যান্টিন এ গেলাম, দেখি ক্যান্টিন এর টেবিল গুলোর এক সাইড একদল মেয়ে দেড় মধ্যে ওই মেয়ে টা বসে আছে, হেভি রাগ ছিল তখনা, বললাম এই যে তোমার সাথে একটু কথা আছে বাইরে আসবে?
মেয়ে টি বাইরে এলো, বললো,
– হা বোলো কি কথা.
– সকালে যে ধাক্কা টা দিলে যেন তার ইফেক্ট এখনো চলছে, স্যার আমাকে যা টা বলেছে, ফ্রেন্ডস রা ইয়ার্কি মার্চে, এন্ড মোর ওভার সবাই বলছে আমি নাকি ইচ্ছা করে ধাক্কা খেয়েছি.
– এমা তাই নাকি, তা সে হতেই পারে ,তাতে আমি কি করবো? আমার অনেক কাজ আছে……
– দেখো ইয়ার্কি মেরো না আমার সাথে চলো স্যার কে একটু বোলো তাহলে স্যার আমাকে অন্তত ক্লাস টা পরে বুঝিয়ে দেবে.
মেয়ে টা আমার দিকে কেমন একটা হা করে তাকিয়ে ছিল, যেন কে রে ভাই তুই, এখন আমি তোর জন্য কাজ ছেড়ে স্যার এর কাছে কেস খেতে যাবো, তুই গেলে যা, কিন্তু কিছু বলতে পারছে না…….বললো,
– তুমি যাও গিয়ে বোলো স্যার sure ক্লাস নেবে.
– যদি না নেয়, ঐসব হবে না , কি নাম তোমার কোন ডিপার্টমেন্ট?
– আমার নাম লাবনী সেন, ফিজিক্স ডিপার্টমেন্ট.
– আমার নাম তথাগত রায় চৌধুরী, কম্পিউটার সাইন্স ডিপার্টমেন্ট, নাইস টু মিট ইউ……….
আমার কাজ হয়ে গেছিলো, ওর সাথে কথা বলে আমি সঞ্জিত স্যার কে গিয়ে বললাম, স্যার ওই মেয়েটির সাথে ধাক্কা লেগেছিলো ওর নাম লাবনী, ও ফিজিক্স এর মেয়ে, স্যার তারপর আমাকে আর কিছু বলেনি………..
কিন্তু আমার মন এর মধ্যে কেউ একজন বলে উঠলো, আজকের দিন টা এখনো শেষ হয় নি…………………………..
(৩)
লাঞ্চ কমপ্লিট করে এবার ল্যাব এ যাবো প্রাকটিক্যাল করতে হবে সেই মনে করে, কিন্তু হঠাৎ সৌমেন বললো ভাই বাইরে আই তো কিছু একটা হয়েছে, বাইরে এলাম কি রে ভাই, এক অদ্ভুত সুন্দর দৃশ্য দেখলাম যা হয়তো আমি গুছিয়ে লিখতে পারবো না,
পশ্চিম এর কোন দিয়ে প্রচুর ঘন কালো মেঘ আকাশে ঘুরছে এবং ঠান্ডা হাওয়া আমাদের সারা শরীর এ আছড়ে পড়ছে, যেন কালবৈশাখীর এক উন্মাদনা, একই সাথে পূর্বে র আকাশে হালকা নীল মেঘ যেন সরতে ই চাইছে না, সে দেখতে চায় আজ দেখি তোর বেশি ক্ষমতা না আমার , বুঝলাম আজ বৃষ্টি হবেই………..
সবাই দেখি ওই হওয়ার মধ্যে বাইরে এসে চেচাচ্ছে, আর আনন্দে লাফালাফি করছে, যেন কি মজা পেয়েছে, আমার ও খুব ভালো লাগলো এগিয়ে গেলাম সেই ভিড় এর দিকেই, হাওয়া টা খুব জোর এ আসছে, কিন্তু ভালো লাগছে, ঠান্ডা হাওয়া, হঠাৎ পিছন থেকে পরিচিত গলার স্বর,
– তাহলে আমাকে আর যেতে হলো না?
ঘুরে দেখি লাবনী, বললাম,
– নাহঃ স্যার বিশ্বাস করেছে, নাম বলেছি, স্যার ফিজিক্স ডেপ্ট এ জিজ্ঞেস করে নিয়েছে, তারপর বলেছে আমি নাকি জেনুইন সত্যি কথা বলেছি.
– দেখো তুমি আবার জেনুইন তো নাহলে তো আবার স্যার নেক্সট দিন জিজ্ঞেস করবে আজকে কার সাথে ধাক্কা খেলে?
– এই না না নেক্সট দিন থেকে আর এইসব করলে স্যার ক্লাস এ ঢুকতেই দেবে না বলেছে.
– যাই হোক, হাওয়া টা ফীল করছো?
– হা আমার এই হাওয়া তে থাকতে খুব ভালো লাগে, সত্যিই কতদিন পর আকাশ টা এতো সুন্দর হয়েছে, খুব ভালো লাগছে.
– সে তো ঠিক আছে কিন্তু বৃষ্টি না হলে তো গরম টা কমবে না.
– তাতে কি হয়েছে, একটু ঠান্ডা তো হবে weather টা, এটাও কি কম?
লাবনী দেখি আমার দিকে তাকিয়ে আছে, কেমন একটা অদ্ভুত ভাবে, বললো,
– কবিতা টবিতা লেখো নাকি ? কেমন একটা সাহিত্যিক ভাব……
– না না টা লিখি না, কিন্তু আমার মেঘ দেখলেই কেমন ভালো ভালো লাগে.
– ওঃ আমার ও তাই, মেঘ আমার ও খুব প্রিয় কিন্তু বৃষ্টি হলে তারপর এছাড়া না …….
ওর দিকে তাকালাম, ও দেখি তাকিয়ে আছে পশ্চিম দিকে, যেন ও এখনই বৃষ্টি চায়, বললাম ,
– শোনো বৃষ্টি টা বড়ো কথা নোই, যদি তুমি মেঘ…………………………….
কথা শেষ হওয়ার আগেই পশ্চিম এর মেঘ বুঝিয়ে দিলো যে ও লাবনী কে খুশি করতে চায়, বড়ো বড়ো ফোটা ই নেমে এলো অঝোরে বৃষ্টি, প্রথম এ ধীরে তারপর জোর এ, ওর দিকে তাকিয়ে দেখি, ও খুব খুশি হয়েছে, ওর মধ্যে কোথায় সে রাগি ভাব, ও যেন এখন একটি ছোট মেয়ে যে বৃষ্টি র সাথে খেলতে চায়, খুব সুন্দর লাগছিলো ওকে, বৃষ্টি তে পুরো চুল টা ভিজে গেছে, মুখ এর হাসি র কোনো বিরাম নেই , কি যে ও করতে চাইছে বুঝতে পারছি না……………….
হঠাৎ মনে হলো অরে এতো বৃষ্টি তে ভিজলে তো শরীর খারাপ হয়ে যাবে, গেলাম ছুঁটে ওর কাছে বললাম,
– কি পাগলামি হচ্ছে চলো এবার, অনেক ভিজেছো?
– অরে প্রথম বৃষ্টি একটু না ভিজলে কবে ভিজবো?
আমি চলে যাচ্ছিলাম, আমার হাত টা ধরলো, বললো ,
– এস সাহিত্যিক বাবু তুমিও ভিজবে, গল্প লেখো কবিতা লেখো, বৃষ্টি নিয়ে লিখবে, মেঘ তো অনেক দেখেছো কিন্তু বৃষ্টি এভাবে ফীল করেছো, আজ করো.
আমি কিছু বলতে পারছিলাম না, বৃষ্টি তে ভিজে যাচ্ছিলো পুরো জামা প্যান্ট , কিন্তু আমার কোথায় একটা খুব ভালো লাগছিলো, বৃষ্টি জীবন এ অনেক দেখেছি, কিন্তু এমন ভাবে বৃষ্টি তে কখনো ভিজি নি, তাও কিনা একটি মেয়ের হাত ধরে…………….
(৪)
বৃষ্টি ক্রমাগত চলছে, সে আজ আর থামতে চাইছে না, ওকে টেনে নিয়ে এসেছি, ডিপার্টমেন্ট এ, খুব ভিজেছে মেয়েটা, বললাম,
– এই যে এতো ভিজলে শরীর খারাপ হলে আমাকে দোষ দেবে না.
– এমা তোমাকে দোষ দেব কেন, আমি তো নিজেই ভিজেছি, ওঃ বাবা তাহলে তো আবার কালকে স্যার কে এসে বলবে লাবনী র জন্য স্যার আজকে ক্লাস করতে পারিনি.
– ধুর না না, এসব কেন বলবো?
– বলা যাই না, আজ যা করলে, নাহয় একটা ধাক্কা খেয়েছিলাম ই, তার জন্য এসে কিভাবে ক্যান্টিন এ শোনালে ?
– সরি মিস আমি বুঝতে পারিনি, আমার রাগ হয়ে গেছিলো, যে আমি তো ট্রাই করেছি তাও স্যার রা আমাকে কত কিছু শোনালো.
– চার ঐসব কথা, তাহলে এটা বোলো আমার সাথে ধাক্কা খেয়ে আজ তোমার দিন টা খুব একটা খারাপ কাটে নি কি বলো?
– না টা ঠিক লাবনী, আজ আমি বহুদিন পর বৃষ্টি তে ভিজেছি তাও……………………….
কথাটা চেপে দিলাম, যদি কিছু খারাপ মনে করে, ও বললো ,
– একটা কথা বলছি জানো আজ আমি বহু বছর পর কারুর সাথে একসাথে ভিজেছি আমার খুব ভালো লেগেছে, আমার আজকের দিন টা খুব মনে থাকবে, আমি কিন্তু খুব মজা করেছি, তুমি নিশ্চয় রেগে গেছো জোর করে তোমাকে টেনে নিয়ে ভিজিয়েছি সরি .
– আরে না না যেন আমি ফার্স্ট টাইম কোনো মেয়ের সাথে এভাবে ভিজেছি আমার ও খুব ভালো লেগেছে লাবনী, একটা কথা বলবো.
লাবনী র চোখ এর দিকে তাকালাম, ও হয়তো কিছু বলতে চাইছে কিন্তু আগে আমার কাছে শুনতে চাইছে, যদি মিলে যাই তাহলে হয়তো ও কিছু বলবে, বললাম,
– লাবনী আমার না তোমাকে খুব ভালো লেগে গেছে, কি করি বলতো?
– ও বললো তাই নাকি, এতো ভালো কথা , তাহলে তো এরপর ধাক্কা খেলে স্যার কে বলতে পারবে না যে লাবনী র সাথে ধাক্কা খেয়েছো……
– হা সেটাই তো ভাবছি, তাহলে অন্য কারুর নাম বলতে হবে.
– হা সাহিত্যিক বাবু, আমিও তো সেটাই এরপর পরে গেলেও বলতে পারবো না যে দেখে চলতে পারেন না?
একটু চুপ হয়ে গেলাম ও কি তাহলে আমার কথা টা মেনে নিলো, ওর দিকে তাকালাম, ও মাটির দিকে তাকিয়ে আছে, গাল টা একদম লাল হয়ে গেছে, কিন্তু আমার দিকে ডাইরেক্ট তাকাচ্ছে না, বললাম,
– তাহলে আমার প্রস্তাব এ রাজি তো?
– রাজি তবে একটা শর্তে, মেঘ কে শুধু ভালোবাসলে হবে না, বৃষ্টি কেও ভালোবাসতে হবে …
– হা সে তো ভালোবাসতেই হবে আর তো কিছু করার নেই, বৃষ্টি যখন জীবন এ ঢুকেই গেছে তখন তো আর কিছু করার নেই…..
দুজনেই খুব হাসতে লাগলাম, ওর হাত টা আমার হাতেই ধরা ছিল, ভালো লাগছিলো, বৃষ্টি হওয়ার পরে প্রকৃতি যেন শান্ত হয়ে গেছে, আকাশে আর কালো মেঘ নেই, সারা আকাশ জুড়ে এখন নিল রং এর খেলা, সেই নীল এর ফাঁক এ উঁকি দিচ্ছে বিকেলের শান্ত সূর্য………….
প্রথম বৃষ্টি টা যে আজ শান্ত করে দিয়েছে পরিবেশ কে যেখানে মেঘ হয়তো আমিই ছিলাম কিন্তু বৃষ্টি ছিল লাবনী…………………………………