প্রসঙ্গ :: ‘‘মোবাইল-টিভি ও শৈশবকাল’’
বর্তমান সময়ে সবচাইতে ভয়ংকর সর্বনাশা বন্ধু হল মোবাইল-টিভি। শৈশব কৈশোর সমাজ আজ অবক্ষয়ের পথে। সবকিছু দেখা-জানার একটা নির্দিস্ট বয়স আছে বলে আমার মনে হয়, অন্তত ৩ থেকে ১৫ বছর অবধি। কিন্তু হচ্ছেটা আর কই। বাড়ির বড়রাই তো আসল কালপ্রিট। তাঁরা নিজেদের ফুর্তি আমোদের জন্য শিশুদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার করছে। নিজেদের হাতেই নিজেদের সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ খাদের কিনারায় পাঠাচ্ছে। এ কিন্তু চরম সর্বনাশ! এ খুব খারাপ নেশা। ছাড়াবার কি কোন উপায় নাই?
আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন কি টিভি দেখতাম না, নাকি মোবাইল ঘাঁটতাম না। সবটাই করতাম। কিন্তু দেখার, ঘাঁটার একটা পথ ছিল। এখন আর সেই পথ টা নেই। এখনকার দিনে মা-বাবারাই নিজেদের ছেলে মেয়েদের হাতে টিভির রিমোট মোবাইল ফোন তুলে দিচ্ছে, আবদার মিটাচ্ছে। নাকি নিজেদের হাতে করে বিষ পান করাচ্ছে নিজেদের সন্তানদের। এই আবদার মেটানোর পথ না পাল্টালে কিন্তু পরবর্তি কালে নিজেরাই বিপদে পড়বে। মা-বাবারা আজ কিন্তু নিজেদের পায়ে নিজেরাই কুড়ুল মারছে। মা-বাবারা নিজেদের ফুর্তি আমোদের জন্য ছেলে মেয়েদের থেকে দূরত্ব বাড়িয়ে নিচ্ছে। বাড়িতে বাবা তার নিজের কাজ, নিজের বন্ধু দের নিয়ে মেতে আছে। মায়েরা তার বন্ধু বান্ধব, কাজ , আনন্দ-ফুর্তি নিয়ে মশগুল আছে। সন্তানদের কে তুলে দিচ্ছে আয়ার হাতে। নিজেদের সন্তানকে সময় দেওয়ার মতন তাদের হাতে আজ আর সময় নাই।
আর যখন ছেলেমেয়েরা কোন অন্যায় কিছু করছে একটু বড় হওয়ার পরে, তখন মা-বাবার হুঁশ ফিরছে। কিন্তু তখন শুধরানোর সময় পেরিয়ে গেছে। মা-বাবাদের নিজেদের জীবনে কোন লাগাম নেই, তাঁরা নিজেদের বাচ্ছাদের কি করে আয়ত্তে রাখবে। আর তখন শুরু হচ্ছে বিবাদ-ঝগড়া-অশান্তি। বাড়তে থাকছে দূরত্ব। ছেলেমেয়েরা নিজেদের মা-বাবাকে নিজেদের শত্রু ভেবে নিচ্ছে। এখনকার দিনে বেশিরভাগ মা-বাবাদের জন্যই ছেলেমেয়েরা খারাপ পথে যায়। ছেলেমেয়েরা যখন একটুখানি বড় হচ্ছে তখন তাদের চাহিদা বাড়ছে। কিন্তু মা-বাবারা তখন অনেকটাই সচেতন। চাহিদা মেটানোর পথ বন্ধ করে দিচ্ছে। ছেলেমেয়রা তখন লাগামহীন বাঁধনহীন থাকতে চায়, ঠিক যেমনটা তাদের শৈশব টা কেটেছে। সংসারে অশান্তির দামামা বাজা শুরু, সাথে সাথে দূরত্বটাও।
সবশেষে একটাই কথা বলব, ছোট ছোট শিশুদের হাতে টিভির রিমোট মোবাইল ফোন না তুলে দিয়ে নিজেরা একটুখানি তাদের সময় দিন। তারা নিস্পাপ ফুল, তারা পবিত্র আত্মা, তারা নরম কাদামাটি। যেমনটা চাইবেন তারা ঠিক তেমন করেই গড়ে উঠবে। তাদের নিজের করে রাখুন, নিজেরা মানুষ করুন। কোন আয়া দিয়ে নয়। কৃত্রিম জিনিস দিয়ে নয়, পবিত্র ভালোবাসা স্নেহ দিয়ে ভরিয়ে দিন। বাড়ির সবার সাথে সবার মাঝে বড় করুন। বাড়িতে বসে টিভি গেম, মোবাইল গেম না খেলতে দিয়ে খেলার মাঠে পাঠান। এতে শরীর মন চরিত্র সবটাই সুস্থ স্বাভাবিক ভাবে গড়ে ওঠে। পরীক্ষার খাতার নম্বরের সাথে দৌড় না করিয়ে সুস্থ সামাজিক ভাবে বাঁচতে শেখান। এতে আপনারও মঙ্গল আর সমাজেরও।
সবার শেষে এটা না লিখলেই নয়……
“ফিরিয়ে দাও”
কেউ কি আমায় ওই শিশুবেলা ফিরিয়ে দিতে পারো ?
শুধু পড়ব আর খেলব, আর মায়ের বকুনি খাব।
মনে পড়ে ওই শিশুবেলার কথা।
মনে পড়ে ওই লুকোচুরি আর সিতাচুরির কথা।
মনে পড়ে ওই দুষ্টুমি আর ভালোবাসার কথা।
দায়িত্ব নিতে চাইনা গো আমি, চাইনা বড় হতে।
অনেক হয়েছে, অনেক হল, এবার মুক্তি দাও আমাকে।
কান্না-হাসি হারিয়ে গেছে, হারিয়ে গেছে স্নেহ-মায়া।
সবাই যে এখন ছুটে চলেছে, সময় নাই ফিরে তাকাবার।
সত্যি কি পাওয়া দায় অকৃত্রিম মায়া?
কোথায় গেলে পাব আমি ফেলে আসা আমার শৈশব।
হাসব খেলব আর আদর পাব, খিলখিলাবে আমার কৈশোর।
টাকার বিনিময়ে ভালোবাসা, টাকার বিনিময়ে প্রেম।
দেওয়া নেওয়া যে রয়েই গেছে, মুখেই যত বড় বড় বাতেল।
স্নেহ-মায়া কিছুই হয়না সবই যে টাকার খেল।।