< অন্য জীবন – তৃতীয় পর্ব
একদিন সন্ধ্যেবেলা ওরা দুজন ঘুরতে বেরিয়েছিল ওর দেওয়া শাড়ীটা পড়ে। খুব সুন্দর দেখাচ্ছিল ওকে। পথের ধারে ফুলের দোকান। দুর্নিবার একটা গোলাপ কিনে খোঁপায় গুঁঞ্জে দিয়েছিল। এতে ওর রূপ যেন আরও খুলে যায়। হাটতে হাটতেই দুর্নিবার বলে চাকরি পেলেই প্রথম বেতনের টাকা দিয়ে একটা বেনারসি কিনে দেব তোমাকে ……।। জাহ্নবী বলে,” আমার ভীষণ খারাপ লাগে জানো? আমি তো তোমাকে কিছুই দিতে পারিনা।”
দুর্নিবার বলে, “পুজোর সময় যে ওই টি শার্টটা কিনে দিলে?”
-“ওটা আর এমন কি দাম?” জাহ্নবী আক্ষেপ করে।
-“আর ওই রুমালটা যাতে তোমার নামের প্রথম অক্ষরটা লিখে দিলে? ওটা আমার কাছে খুবই মূল্যবান। যখন আমাদের ছেলে মেয়ে বড় হবে আমি ওদের ওটা দেখিয়ে বলব তোমাদের মা বিয়ের আগে এটা আমাকে নিজের হাতে সেলাই করে দিয়েছিল।” ওর কথা বলার ধরন দেখে জাহ্নবীর খুব হাসি পায়। হঠাৎ করে মেঘ ঘনিয়ে আসে আর শুরু হয় বৃষ্টি। ওরা একটা বন্ধ দোকানের চালার নীচে দাঁড়িয়ে পড়ল। মাঝে মাঝে বিদ্যুতের ঝলকানি। একে তো মেঘ, তাই সন্ধে হতেই দোকানদারেরা দোকান বন্ধ করে দিয়েছে।
হঠাৎ ঝুপ করে লোডশেডিং । ভয়ে ও দুর্নিবারের হাতটা চেপে ধরল।
দুর্নিবার বলে,” ভয় নেই জুনি। আমি তো আছি। কিছু হবে না।”
ওরা দুজনেই ভিজে গিয়েছিল। তার উপর চলছে হাওয়া। একটু শীত শীত করছিল জাহ্নবীর। এমনিতেই এদিকটা নির্জন থাকে। তার উপর বৃষ্টির জন্য রাস্তাঘাট সব নির্জন এখন। ওরা দুজনেই বেশ চিন্তিত ছিল।
দুর্নিবার বলে, “জুনি তোমার মামা তোমাকে বোধহয় বকাবকি করবেন।” বৃষ্টিটা একটু ধরে এলো। দুর্নিবার বলে, ” চলো জুনি এগিয়ে যাই রাতটাও বাড়ছে। এদিকে বাড়িতে দেরি দেখে তোমার মামা বোধয় চিন্তা করছেন।” চারিদিকে শুধু অন্ধকার, সাথে টিপ টিপ বৃষ্টি হচ্ছে। তার উপর এদিকের রাস্তাটাও খোয়া উঠে গিয়ে এবড়ো খেবড়ো হয়ে গেছে। দুর্নিবার বলে, ” দেখে চলো।” হঠাৎ জাহ্নবী হুমড়ি খেয়ে পরতে যাচ্ছিল। দুর্নিবার ওকে ধরে ফেলে। দুর্নিবারের খুব কাছে এখন জাহ্নবী। এত কাছে যে ওরা একে অপরের নিঃস্বাসের শব্দ শুনতে পাচ্ছিল। দুর্নিবার খুব আলতো করে জাহ্নবীর কপালে চুমু খেল। তার পর ঠোঁটে। জীবনের প্রথম পুরুষের স্পর্শে জাহ্নবী থরথর করে কেঁপে উঠল। এক অন্য ধরনের ভাললাগায় আবেগে ও চোখ বুজল। যদিও দুর্নিবার অন্ধকারে ওকে দেখতে পাচ্ছিল না। কতখন এভাবে ছিল ও জানেনা। হোশ যখন ফিরল তখন দুর্নিবার ওকে ধরে আছে। দুর্নিবার বলে,” আমার হাতটা ধরে চলো”। ভীষণ লজ্জা পেয়ে ও তখন জড়সড় হয়ে গেছে। দুর্নিবার জোর করে ওর হাত ধরে।
- “এই যাঃ ভুলেই তো গেছি। মোবাইলের টর্চটা তো আছে।”
পকেট থেকে একটা দামি মোবাইল বের করে ও। ওরা গাড়ির জন্য রাস্তার পাশে অপেক্ষা করছিল। কয়েকটা ট্যাক্সি চলে গেল হুশ্ হুশ্ করে। তখনও টিপ টিপ বৃষ্টি পড়ছিল।
দুর্নিবার বলে, “আজকের দিনটা আমার সারাজীবন মনে থাকবে।”
জাহ্নবী ভাবে, তার নিজেরো মনে থাকবে। আজ ওর জীবনের প্রথম চুম্বন, তার সবচেয়ে প্রিয় সবচেয়ে কাছের ভালবাসার মানুষটার কাছ থেকে। একটা রিক্সা চলে যাচ্ছিল। দুর্নিবার অনেক কষ্টে রিকশাওয়ালা কে রাজি করায়।
-” যাবে?”
-” না বাড়ি যাচ্ছি এখন সওয়ারী নেবনা।”
-“বেশি টাকা দেব, মেয়ে ছেলে সঙ্গে আছে তাই এত সাধছি।”
রিকশাওয়ালা জাহ্নবীর দিকে চেয়ে একটু ভাবল , তারপর রাজি হল।
দুর্নিবার জাহ্নবীকে বলে,
-“জানো জুনি চাকরী টা পাওয়া আমার খুবই দরকার, বাবা তার বন্ধুর মেয়ের সাথে বিয়ে দিতে চায়। আমি করছিনা। ছোট বেলাতেই নাকি কথা হয়েছিল।এখনকার মডার্ন যুগে এসব চলে নাকি? আর মেয়েটিকেও আমার ভালো লাগে না। এজন্যই তো চাকরী টা দরকার বাড়িতে তোমাকে না মেনে নিলে সেপারেট থাকব।” অন্য একটি মেয়ের কথা শুনে জাহ্নবীর বুকটা হঠাৎ কেঁপে উঠল। যদিও সে জানে দুর্নিবার তাকেই ভালোবাসে। দুর্নিবার আরও বলে, ” নিয়মিত ফোন না করলে চিন্তা করবে না। আমি বলি কি তুমি দোকানটা করা বরং ছেড়ে দাও। টাকা আমি দেব। কদিন পরেই তো আমার বউ হবে তাই বলছি।”
ও উত্তরে বলে,- ” আমি দোকান করি বলে তোমার লজ্জা করে তাই না?”
উত্তরে দুর্নিবার বলে, -” আরে তা নয়। কোন কাজকেই আমি ছোটো ভাবি না। সম্মানের সাথে যা কাজ করবে তাই ভালো।”
দুর্নিবার আবার বলে,-“আমার দাদু দু’বছর আগে মারা গেছেন। বেশ কিছু টাকা রেখে গেছেন আমার নামে, তাই বলছি।”
উত্তরে জাহ্নবী বলে,-” তবুও যতদিন না বিয়ে হচ্ছে ততদিন কাজটা করি আমার ভালো লাগবে।”
-“ঠিক আছে তুমি যা ভালো বোঝো।” পরের দিন নিতাইয়ের দোকানে যে বাচ্চা ছেলেটা কাজ করে ওর নাম “ছোটু” , ও এসে বলল,” জাহ্নবীদি তোমার ফোন এসেছে।” ও তখন রান্না করছিল। হাতের জলটা আঁচল দিয়ে মুছতে মুছতেই দোকানের দিকে দৌড়ে গিয়ে ফোন ধরে। দুর্নিবার ফোনটা করেছিল। জাহ্নবী ফোনটা ধরতেই বলে,” জুনি আমি কদিনের জন্য বাইরে যাচ্ছি । চিন্তা করো না। এসে কল করব, কারন ওখানে নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়না।”
ব্যস এই শেষ কথা।
তারপর থেকে অনেক দিন কোন খবরই নেই।
ক্রমশঃ……