আজ সকাল থেকেই আকাশ মেঘলা । কিচ্ছুক্ষন আগে ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি শুরু হল । সোমনাথ বৃষ্টি ভালোবাসে , সে এক কাপ চা নিয়ে বই পড়ছিল আর বর্ষাকালের প্রথম বৃষ্টির সাথে মাটির গন্ধ উপভোগ করছিল । এমন সময় সে শুনলো হনুমান এর আওয়াজ , সে খানিক টা অবাক হলো ।
সোমনাথ তিন চার দিন আগেই ইনদাসে এসেছে, আগে সে চেন্নাইয়ের এক কোম্পানি তে চাকরি করতো । এখন তার লেখক হিসেবে নাম ডাক হয়েছে তাই সে চাকরি ছেড়ে ইনদাস নামের এক গ্রামে , একটা দেড়শ বছর পুরোনো জমিদার বাড়ি বেশ সস্তায় কিনেছে থাকার জন্য । প্রকান্ড বোরো বাড়ি চার পাশে উঁচু উঁচু দেওয়াল দিয়ে ঘেরা , দেখলেই মনে হয় যেন একটা জেল খানা । সোমনাথ সেখানে একা থেকে লেখালিখি করবে বলেই এসেছে ।
সোমনাথ বই পড়তে পড়তে আবার হনুমানের আওয়াজ শুনলো তবে এবার তার মনে হলো অনেকে গুলো হনুমান একসাথে ডাকছে । সে ভাবলো অবাক হওয়ার কারণ নেই গ্রাম গঞ্জে হনুমান তো থাকবেই । দুপুর থেকে বিকেল হতে গেলো কিন্তু হনুমান এর আওয়াজ আর থামছে না । তার মনে হচ্ছে যত বেলা বাড়ছে তত বেশী জোরে হনুমান গুলো চিৎকার করছে । সে বাইরে গিয়ে দেখল কিন্তু কোথাও হনুমান দেখতে পেলো না। সে অবাক হয়ে গেল । যত রাত বাড়ছে তত বেশী আওয়াজ । সোমনাথ রাতে কিচ্ছু না খেয়েই বালিশের তলায় মাথা ঢুকিয়ে ঘুমোনোর চেষ্টা করলো । কিন্তু কোনো লাভ হলো না । রাত বারোটা বেজে সাত , তখনও সে ঘুমই নি ।
ঠিক সেই সময় এক অদ্ভুত আর্তনাদ শুনতে পেল , ঠিক যেন একশ দুশ টা হনুমান একসাথে প্রানের ভিক্কা চাইছে । সোমনাথ আর এই ভয়ঙ্কর আর্তনাদ সহ্য করতে পারলো না সে আলনা থেকে তার গামছা নিয়ে ফ্যানে ঝোলাল আর তার মধ্যে মুখ ঢুকিয়ে দিলো ।
ঠিক সেই সময় একটা বুড়ো মতো লোক সোমনাথ এর ঘরে ঢুকে বলল ” এ কি ! কি করছো তুমি ? নেমে এস তাড়াতাড়ি আমার কাছে ” সোমনাথ বললো “কিন্তু আপনি কে ? আর আপনি এখানে এলেন কি করে ? ”
” তুমি বেশি কথা না বাড়িয়ে আমার সাথে এস ।”
সোমনাথ কিচ্চু বুঝতে পারলো না কিন্তু বুড়ো টার কথার মধ্যে একটা বিশেষ বিশ্বাস করানোর ভাব আছে । তাই সে তার পেছন পেছন বসার ঘরে গেল ।
“তুমি হনুমানের আর্তনাদ শুনতে পারছো ?” ” হা সেই বীভৎস আর্তনাদের জন্যই মরতে চাইছিলাম ” বুড়ো টা বললো ” তুমি এ বাড়ির ইতিহাস জানো ?”
সোমনাথ বললো ” না তো ” বুড়োটা বলল ” তবে শোনো, অনেক বছর আগে এটা এক বড়ো জমিদার বাড়ি ছিল । এখানকার এক জমিদার ছিল উন্মাদ,আর প্রচন্ড রাগী। সে শব্দ একদম সহ্য করতে পারতো না । এখানে এক দিন প্রায় একশো টা হনুমান এসে চেচামেচি করা তে সেই জমিদার রেগে গিয়ে সব হনুমান গুলো কে বন্দি করে নিলো । আর প্রত্যেক অমাবস্যার রাত বারোটা বেজে সাত মিনিটে একটা করে হনুমান সে পুড়িয়ে মারতো। তার পর থেকেই প্রত্যেক অমাবস্যার রাতে এরকম হনুমানের মর্মান্তিক আর্তনাদ শোনা যায় । আর আজকে অমাবস্যা। বুঝলে?”
সোমনাথ বললো” হা বুঝলাম । খুব মর্মান্তিক ব্যাপার।” কিচ্ছুক্ষণ চুপ করে থেকে সোমনাথ বলল ” কিন্তু আপনি কে? আপনি এখানে কি করে আসলেন ?”
বুড়ো লোক টি হাসতে লাগলো আর বললো ” আমি তোমার আগে এই বাড়ি টা কিনেছিলাম । আমি এই বিভৎস আর্তনাদ শুনে গলায় দড়ি দিয়ে সুইসাইড করেছিলাম । আমি মারা গেছি । ”
সোমনাথ প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেল বললো “কি-কিন্তু আপনি আমার সাম-সামনে কি ক-করে? ” লোক টি কিছু বললো না শুধু নিষ্টুর ভাবে হাসতে লাগলো ।
সোমনাথ দৌড়ে তার সোয়ার ঘরে গিয়ে হতভম্ব হয়ে পড়ে গেল। সে দেখল তার আত্মা শুন্য বডি গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে আছে ।।
~ হনুমানের বাড়ি ~