১
সিগারেটের শেষ কোয়ার্টার টান দিয়ে মাটিতে ফেলে নিভিয়ে দিলেন । এই গরমে বেশ অস্বস্তি লাগছে , তাই জেগেই রয়েছেন অনাদিবাবু ।। হটাৎ কেমন যেন একটা আওয়াজ পেলেন । কিছু ভাঙার শব্দ , জানলা মনে হল । প্রথমে চিন্তিত না হলেও , দ্বিতীয় দিন আবার মাঝরাতে ওই একই আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায় তার ।। তাজ্জব ব্যাপার , পাড়ায় কোন চুরি বা ডাকাতি হয়েছে বলে শুনতে তো পাননি ।। তাহলে এ শব্দ কিসের ? আর আজ মনে হল একটা গাড়ি থামল , ভাঙা ভাঙ্গির পর স্টার্ট দিয়েই জোরে বেরিয়ে গেল । ছাদে দৌড়ে গেলেন অনাদিবাবু , তবে কিছুই দেখতে পেলেন না ।। এরপর নিয়ম করে দুদিন রাত জেগেছেন । না , কেউ আসে নি আর ।। তবে সন্দেহ যখন হয়েছে ছেড়ে দেওয়ার মত লোক নয় অনাদিবাবু ।।
তিন দিন কেটে গেল …
একদিন সামনের বাড়িতে কান্নার শব্দ । বাড়ি ভিড়ে ভিড়ে ।। বেরিয়ে জানতে পারলেন বাড়ির একমাত্র মেয়ে সুতপা কে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না ।। পুলিশে খবর দেওয়া হলেও , অনাদিবাবু তারই বাল্য সহচরী , মিস প্রিয়মবদাকে ফোন লাগলেন ।। আসলে প্রিয়মবদা হচ্ছেন একজন প্রাইভেট অনুসন্ধানী ।। অপরাধ অনুসন্ধান করে থাকেন ছোট খাট আর সেই সূত্রে পুলিশ মহলে বেশ পরিচয়ও আছে ।। পুরো নাম প্রিয়মবদা ধর ।। মহিলা হলেও ভয় ডর নেই ।। তিন বছর পাহাড়ে ছিলেন ।। তখন অশান্ত পরিস্থিতি ওখানে ।।
খবর পেয়েই স্পটে সোজা হাজির হলেন মিস ধর ।। মুখে সিগারেট টানতে টানতে সোজা হাজির ভিড়ের মধ্যে আর মুহূর্তেই ভিড় ঠেলে সোজা ভিতরে ।। ভিতরে তখন পুলিশ আর হাজরা পরিবার । ধরকে দেখে একগাল হাসি মুখে এগিয়ে এলেন ইন্সপেক্টর বিজয় চৌহান ।। পুরোন পরিচয় মনে হল ।। ইতিমধ্যে অনাদি বাবুও ঘরে হাজির ।। মিস ধর , আঙ্গুল দেখিয়ে বুঝিয়ে দিলেন অনাদি বাবুই তাকে ডেকেছেন ফোন করে এই কেসের ব্যাপারে ।। চৌহান স্যারের মুখ দেখে মনে হল না তার কোন আপত্তি আছে ।।
ইতিমধ্যে খেয়াল করিনি প্রিয় মানে মিস ধর আরও দুটো সিগারেট শেষ করে ফেলেছে আর শেষ কাউন্টার অনাদিবাবুর হাতে ধরিয়ে দিয়ে পরিবারের সামনে হাজির ।।
~ কি করে হল ব্যাপারটা ?
হাজরা পরিবারে তিনটি মানুষ , বাবা, মা ও মেয়ে ।। বেশ কিছুদিন ধরেই কলেজ থেকে ফেরার পথে আরিফ ও তার দল বল রাস্তায় ধরে যা তা বলত ।। আরিফ স্থানীয় পার্টির ছেলে , তাই কারুর কিছু বলার জো নেই । দুদিন আগে আরিফের বন্ধু আসিফ সুতোপাকে রাস্তায় ধরে প্রপোজ করে । নিকা করার হুমকি দেয় ।। কোনরকমে পালিয়ে আসে সেদিন সুতপা ।। ও বলেছিল , ফল ভাল হবে না ।। নিখোঁজের দিন কলেজে বেরোয় মেয়েটি দুপুর বারোটায় । রোজ বিকেল পাঁচটার মধ্যেই বাড়ি ফিরে আসত । সেদিন আসেনি দেখে সন্দেহ হয় । খোঁজ শুরু হয় কিন্তু কোথাও তাকে পাওয়া যায় নি । তখন পুলিশে খবর দেওয়া হয় ।।
~আপনি কি করেন ? মিস্টার হাজরাকে প্রশ্ন ধরের ।।
~আমি একটা দোকান চালাই । ওই মিষ্টির দোকান ।।
~বাড়িতে তিনজন ছাড়া আর কেউ ?
~না , আর কেউ নেই । তবে সকালে কাজের মাসি আসে ।।
ওরা বলে চলেছে আর অনাদি বাবু ডায়েরিতে নোট করে চলেছে ।।
~ কোন ফোন এসেছিল ? মানে টাকা পয়সা চেয়ে …
~ আজ্ঞে , না তো ।।
~ মেয়ের কোন ছেলের সাথে চক্কর ছিল না তো ? পালিয়েছে দেখুন ।।
~ মেয়ে আমার খুব ভদ্র । ওসব কিছু ছিল না ।।
এবার বেশ ব্যঙ্গ স্বরে ইন্সপেক্টর চৌহান বলে উঠলেন , ভদ্র !! তাহলে গেল কোথায় ?
মিস প্রিয় সিগারেটে টান দিতে দিতে ইন্সপেক্টর কে বেশ ধমকিয়ে বলে উঠল , সেজন্য আমরা আছি ।।
এটুকু বলে অনাদিবাবুকে সঙ্গে নিয়ে সে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল মিস ধর ।।
রাত কেটে সকাল হল…
একটা গরম চায়ের ভাঁড়ে চুমুক দিতে দিতে প্রিয় বলতে শুরু করল । অনির সাথে দেখা প্রায় বছর তিনেক পর । বেশ পাল্টে গেছিস তুই অনি , প্রিয় বলে চললো , সেই কলেজের বোকা ছেলেটা আজ আমার পাশে বসে কেস সলভ করছে ।। কত পুরনো কথা যে সেদিন চায়ের ঠেকে আদান প্রদান হল খেয়াল করে নি দুজনেই ।। চা খেয়ে , সিগারেটের ধোয়া হাওয়ায় উড়িয়ে দিয়ে উঠে পড়ল প্রিয় ।। চল , কলেজটা একবার ঘুরে আসা যাক ।। অনাদিবাবু , গাড়ি বার করবে বলায় বেশ রেগে গিয়ে প্রিয়র জবাব , চল না হেঁটেই যাব ।। ভালোবাসার দিনটা একবার ফিরিয়ে আনাই যাক ।। বেশি দূর তো নয় মদনপুর কলেজ অফ আর্টস ।। হেটে আধ ঘন্টা লাগবে , আর এখনও অনেক সময় বাকি ।। হাতে হাত ধরে ঠিক চলে যাবো ।। তখন তো ঠোটে ঠোট রাখতিস , আর এই কদিনে হাতে হাত টাও রাখতে পারছিস না ।।
২
থানার ভিতর …
ইন্সপেক্টর চৌহান বসে আছেন ।। বাইরে একটা গাড়ি এসে দাড়ালো ।। লাল রঙের স্কর্পিও ।। গাড়িটি থামতেই সবাই উঠে দাঁড়াল , কোন বড় হস্তি মনে হয় ।। গাড়ি থেকে নামলেন , একজোড়া বুট আর কালো কোট গায়ে একজন উকিল ।। প্রিয় ও অনাদিবাবু ভিতরেই ছিল তখন ।।
কেমন চেনা লাগছে না গাড়িটা ? প্রিয়মবদার মুখে একটা প্রশ্নের ভাঁজ ।। ওর আবার এসব মুখস্থ , মানে বড় বড় সেলিব্রিটিদের গাড়ির নাম , নম্বর ইত্যাদি ।। কিছুক্ষনের মধ্যেই হাতের সিগারেটটা ফেলে দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললো ; ম্যাডাম আসেননি ।।
~ ভিতরে …
ততক্ষনে অনাদিবাবুও বুঝে গেছেন , এ তো মন্ত্রীসাহেবার গাড়ি ।। ওদের ছেলেকে পুলিশ এরেস্ট করেছে বলেই কি এই আগমন !! মন দিয়ে কথপকথন শোনার চেষ্টা করতে লাগলেন তিনি ।।
~ আরিফ ও আসিফ কে কোন সাহসে এরেস্ট করলেন ? উকিলবাবুর প্রশ্ন ।।
~ পুলিশের মনে হয়েছে তাই ধরেছে ।। বেশ জোর গলায় বলে উঠল প্রিয় ।।
এবার একটু বাঁধা দিয়েই উকিল বাবুর প্রত্যুত্তর ; ” জানেন না , ওরা আমাদের ছেলে “।।
~ বউয়ের গর্ভের না কি ইললেজিটিমেট ? প্রিয় বলে উঠল ।।
এবার একপ্রকার রেগে গিয়ে সজোরে এক থাপ্পড় কষে দিলেন উকিল বাবু ।।
~” বেল টা করুন “… উকিল বাবু বলে উঠলেন ।।
মেয়েদের গায়ে হাত দিচ্ছিস শালা , প্রিয় চেঁচিয়ে উঠল , এরেস্ট করুন একে এক্ষুনি ।।
পরিস্থিতি বেশ গরম দেখে অনাদিবাবু , মিস প্রিয়মবদকে ওখান থেকে টেনে সরিয়ে বাইরে নিয়ে এল আর একটা ট্যাক্সি ডেকে জোর করে তুলে নিয়ে চলে গেল । যদিও কাজটা এত সহজ ছিল না , তবু তিনি সেটা বেশ সফল ভাবেই করলেন ।।
ঘন্টা খানেক পর ট্যাক্সি থামল একটা চায়ের দোকানে ।। মিস প্রিয় তখনও রাগে ফুসছেন ।। কিছু না বলে আগে দুটো চা ও একটা সিগারেট এর অর্ডার দিলেন অনাদিবাবু ।।
~ মাথা ঠান্ডা কর প্রিয় , অনাদিবাবু বললেন ।।
~ চুপ করে থাক , নপুংসক , প্রিয় বলে চললো , তোদের মত লোক থাকলে দেশে অপরাধ আরও বাড়বে ।। শালা , দুটো ক্রিমিনালকে ছাড়িয়ে নিয়ে গেল , কিনা ম্যাডামের কাছের লোক ওরা ।। থু… একটা সিগারেট মুখে ধরিয়ে , প্রিয় বলল , ভয় পাস ?
~ না , আস্তে করে অনাদিবাবু বলে উঠলেন , তবে তোর জন্য ভয় হয় ।। তোর যদি কিছু হয়ে যায় …
~ ধুর পাগলা , কিসসু হবে না ।। আমায় ছুঁয়ে দেখাক , শালাদের খালাস করে দেব না ।। আর শোন আমাকে ভালোবাসিস তো , জানি ওগুলো ভালোবাসায় হয় ।। কিন্তু বস , আমি এই প্রজাতির ।। তাই কেয়ার দেখালে আসতে পারেন আপনি ।।
~ না , না ।। তা নয় ।। কাছে টেনে নিয়ে , চল কোথায় যাবি চল ।।
প্রিয় এবার একটু শান্ত হয়ে বলে উঠল , তোদের পাড়ার পিছনেই ওদের পার্টি অফিস না ?
~ হ্যা .. কিন্তু আজ তো বন্ধ আছে ।।
~ তাতে কি বস , ওদিকে যেতে মানা নাকি ?
~ বেশ চল ।।
যদিও এই ঝামেলার পর , ওদিকে যেতে চাইছিল না অনাদিবাবু , তবু প্রিয়মবদাকে এই মুহূর্তে না করার ক্ষমতা তার ছিল না , আর না করলেও প্রিয় শোনার মেয়ে নয় ।। সুতরাং , হাঁটা লাগালো ওরা , তবে ঘুরপথে ।।
বাড়ি ফিরতে আজ বেশ রাত হবে মনে হচ্ছে অনাদিবাবুর ।। প্রিয় কিন্তু নানা পুরোন গল্প জুড়ে দিয়েছে , ওদের ভালোবাসার ।। এ রাস্তা , সে রাস্তা ঘুরে বেড়াচ্ছে ।। কিন্তু ঘুরে ফিরে একটা জায়গায় ফিরে ফিরে আসছে ।। যেন একটা চক্রের মধ্যেই ঘুরছে ওরা দুজনে ।। মনে হচ্ছে , কিছু মাপতে চাইছে প্রিয় কিন্তু পারছে না ।। আবার হয়ত প্রিয়মবদা কারুর অপেক্ষা করছে ।। সিগারেটের ধোয়া , ভালোবাসার গল্প সব মিলিয়ে অনাদিবাবুর মনে হচ্ছে এ রাত তোমার আমার ।। কিন্তু এই তুমি টা কে জানে না দুজনেই ।।
হটাৎ প্রিয়র নির্দেশ , ঝুকে যা অনি ।। কোন রকমে ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে পড়ল ওরা ।। সেই লাল স্কর্পিও … জোরে বেরিয়ে গেল ওখান দিয়ে ।। মিস প্রিয়মবদার মুখে একটা বড় হাঁসি ।। সমানে বলে চলছে , ইউরেকা ইউরেকা পাগলের মত ।। অনাদিবাবু বুঝতেই পারছেন না , কি খুঁজে পেল প্রিয় এবার ।। দুদিন কেটে গেলেও হাজরা পরিবারের মেয়ের যখন কোন খবর পুলিশ জোগাড় করতে পারে নি , তখন এই যুবতী কি এমন পেয়ে গেল , অনাদিবাবু ভেবে চললেন ।। আর বিশেষ কোথাও গেল না ।। অনাদিবাবুর বাড়িতে বসে দু কাপ কফি , কিছু সিগারেট , তারপর বাড়ি ।। যাওয়ার আগে বলে গেল শুধু , ওর ঘরটা খুব গরম , তাই ছাদে ঘুমানটাই শ্রেয় ।।
৩
ধুর ছাই …. অনাদিবাবু একবার এপাস একবার ওপাশ করে চলেছে বিছানার ওপর ।। প্রিয় যে হটাৎ কেন ছাদে ঘুমাতে বললো কে জানে !! কোন ব্যাপার আছে না কি জাস্ট এমনি কিছুই বুঝে উঠে পারছেন না তিনি ।। এরই মধ্যেই হটাৎ সেই শব্দ , কিছু ভাঙছে কেউ ।। দৌড়ালেন তিনি ছাদের দিকে ।।
যতক্ষনে পৌঁছালেন ছাদে , ততক্ষনে একটি গুলির শব্দ , আরো দুটি ।। ছাদে গিয়ে দেখেন রাস্তায় পুলিশের ছয়লাপ ।। ভিড়ে ভিড় ।। নীচে এলেন দৌড়ে ।। এ সব কি হচ্ছে পাড়ায় …. চিৎকার করে উঠলেন তিনি ।।
ততক্ষনে পথ আটকেছেন ইন্সপেক্টর চৌহান ।
~ ওদিকে যাবেন না ।। প্রাণ সংকট হতে পারে ।।
এদিকে প্রিয়র ফোন লাগছে না ।। সুইচ অফ বলছে ।। অনাদিবাবুর মনে কেমন একটা অস্থির ভাব ।।
~ জানেন কিছু দিন আগেও এই ভাঙা ভাঙ্গির শব্দ পেয়েছিলাম ।। পুলিশের দিকে তাকিয়ে বললেন অনাদিবাবু ।।
এক লেডি ইন্সপেক্টর দূর থেকে বলে উঠল , সব জানি আমরা ।। তুমি পিছনের পাড়ায় যাও একবার ।। এই শুনেই অনাদিবাবু দৌড়ালেন পিছনের গলির দিকে ।। ওদিকটায় বেশ খালি ।।পার্টি অফিসের গা ঘেষে চলে গেছে একটা সরু গলি , তার ফাঁক দিয়ে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে বাড়িটি ।। হটাৎ ছাদের ওপর থেকে কেউ একটা কিছু ছুড়ল তার দিকে ।।
কোন রকমে সরে গেলেন অনাদিবাবু ।। অন্ধকারের জন্য তাকে কেউ দেখতে পাই নি ।। আস্তে আস্তে আবার এগোচ্ছেন তিনি ।। প্রায় বাড়িটার পিছনে হাজির ।। সেখানে জানলার দুটি রড ব্যাকানো ।। তার ফাঁক দিয়ে তিনি হাজির হলেন ভিতরে ।। বেশ অন্ধকার ঘর ।। খুঁজে খুঁজে পকেটের দেশলাই জ্বালালেন অনাদিবাবু ।। গুলির শব্দ প্রায় থেমে এসেছে দেখে দরজা খুলে দিলেন ভিতর থেকে ।।
অবাক কান্ড ।। লড়াই তো চলছিল বেশ খানিকটা দূরে ।। আর এর সামনের বাড়িটি তো তার চেনা মনে হচ্ছে ।। হটাৎ কে পিছন থেকে এসে তার মাথায় থাপ্পড় মেরে বলে উঠল ,আরে পাগল , এটা চিনিস না তোর নিজের বাড়ি ।। আর এটা হাজরার বাড়ি ।।
অনাদিবাবু মাথা চুলকাচ্ছেন … প্রিয় তুই কোথা থেকে ….
প্রিয় বলে উঠল , ওরে সব বলছি আগে সিগারেট দে ।। এদিকে ইন্সপেক্টর পাঁচটা আসামিকে বেঁধে এনেছে ।। আসিফ , আরিফ , মি. হাজরা , মিস.ঘোষাল বা মিসেস হাজরা ও একজন নতুন , নাম , পাণ্ডু ।।
~ দেখবেন , যেন ঠিক করে বেঁধে রাখা হয় ।। প্রিয় বলে উঠল ।।
অনাদিবাবু তখনও ভাবছেন আর এরই মধ্যে সুতপা হাজির ।। প্রিয় ওকে দেখেই জড়িয়ে ধরে বলল , বল তো বাবু স্টোরি টা কি ।।
বাচ্চা টি কাঁদো কাঁদো গলায় বলে উঠল , ওরা যুবতী মেয়েদের ধরে পাচার করে দিত ।। এরা আমার আসল বাবা মা নয় ।। আমি অনাথ ।। আমাকে সেদিন রাতে জোর করে তুলে ওই ঘরে বন্দি করে রেখেছিল , তবে দরজা দিয়ে নয় , পিছনের জানালা দিয়ে বের করে পার্টি অফিসের ও পাশের গলি দিয়ে তুলে নিয়ে যায় ।। তারপর একটা আলমনিয়ামের বাক্সে ভরে দেয় ।। শুধু স্বাস্ নেওয়ার দুটো ছিদ্র ছিল ।। সেদিন রাতে কাকু ছাদে চলে আসে তাই নিয়ে যেতে পারে নি ।। পরদিন আমার হারিয়ে যাওয়ার নাটক করা হয় , যাতে কেউ সন্দেহ না করে ।। তবে সেই রাতে আরিফ ও আসিফ ওই ঘরে ঢোকে ও বাক্স খুলে আমার শরীর টাকে টেস্ট করতে থাকে ।।
~ মানে এককথায় ধর্ষণ করা হয় , প্রিয় বলে উঠল ।। তারপর বাচ্চা টিকে চলে যেতে বলে পুলিশের সাথে ।।
~ আচ্ছা !! এই জন্য কাঁচ ভাঙার শব্দ হত ; ওটা আসলে এলুমিনিয়ামের বাক্সের শব্দ !! ও তো আমি আগেও শুনেছি ।।
~ সেদিন যে গলিতে আমরা লুকিয়েছিলাম সেটি ছিল , হাজরা পরিবারের বাড়ির পিছন দিক ।। আমার চোখে পড়ে ভাঙা রড ওয়ালা জানলা ।। ঠিক যেমনটা দেখে ছিলাম হাজরাদের বাড়িতে ।। আর ওপাশের গলি দিয়ে গাড়িটি বেরিয়েছিল ।। লক্ষ্য করি ওই গাড়িতে দুজন জেল ছাড়া পাওয়া মহারতি বসে আছে ।। ওপাশের বাড়িটি হল ওই বন্ধ বাড়িটির পিছন দিক সেটা হিসাব করে দেখি ।। কলেজে জানতে পারি সুতপা নামে কেউ পড়ে না ।। আমি হাজরা পরিবার কে এরেস্ট করাতে পারতাম মিথ্যে বলার জন্য কিন্তু পুরো দল ধরা পড়ত না আর এত মেয়েও উদ্ধার হত না ।। ভাবতে পারছিস ৩৫ টি যুবতী ।। সবাই অনাথ ।।
কাল ওই ঘটনা ঘটে গেছে বলেই ওরা আজ কিছু করতে পারে বলে আন্দাজ করেছিলাম ।। তাই পুলিশ নিয়ে হাজির ছিলাম ।। বাকিটা দেখলি তো ….
অনাদিবাবুর চোখ পড়ল কাঁধের দিকে , রক্তের দাগ ।।
~ ও কিছু নয় , একটা বুলেট ছুঁয়ে বেরিয়ে গেছে ।। সিগারেটের ধোয়াঁর মত উড়ে যাবে ।।
হাসপাতালে তো নিয়ে যাওয়া হল কিন্তু অনাদি ভাবছেন , সিগারেট আর বুলেট কি এক হল !!
সমাপ্ত