বসে আছি দ্বিপ্রহরে আরাম কেদারায়,
ছোটবেলার স্মৃতিগুলি মনকে ছুঁয়ে যায়।
দেখতে দেখতে বয়স আজ পেরিয়ে গেছে ষাট।
অবসরে আমি এখন গুটিয়ে রাজ্যপাট।
কোথা থেকে শুরু আর কোথায় আজকে আমি,
যতই ভাবি অবাক লাগে–সময় সত্যি দামী।
তবে একটি কথা হলফ করেই বলতে সদাই পারি,
নতুন যুগের সংগে আমার নাইকো কোনোই আড়ি।
ফিরে চলি এবার আমি ছোট্টবেলার দিনে,
পাঁচ বছর বয়স তখন এখনও আছে মনে।
সরস্বতী মায়ের পূজা–আমার হাতেখড়ি,
স্লেটের পরে চক দিয়েই লিখন শুরু করি।
ভর্তি হলেম পাঠশালায় খাতা পেন্সিল সাথে,
ঝরনা কলম অনেক পরে–খাগের কলম হাতে।
বর্ণ সাথে পরিচয় আর কথামালার নীতি,
ইংরাজীতে ‘ফার্স্ট বুক’তবে ধারাপাতেই ভীতি।
শিশু শিক্ষার প্রথম পাঠ–পাঠশালায়–যেথা
একা একাই যেতেম আমি–মায়ের সময় কোথা!
‘প্লে স্কুল, কেজি স্কুল’- ওসব স্বপ্নাতীত,
বাবা মাও আমায় নিয়ে ছিলেন না চিন্তিত।
‘ব্যাগ’কোথায়–বাক্স ছোট–দুইএকখান বই,
আঁকা শেখা,গান শেখা–সেসব ছিল কই !
বন্ধুদের সাথে ছিল আশ মিটিয়ে খেলা,
বাড়ী ফিরতেম শাঁখের রবে তখন সন্ধ্যাবেলা।
তাদের সংগে সাঁতার কাটা,দুই পা সাইকেলে,
সেসব ছবি আজও যেন সামনে ডানা মেলে।
ধীরে ধীরে এগিয়ে চলি – উচ্চ বিদ্যালয়,
জীবন ছিল খোলামেলা–কপট কিছু নয়।
এক টাকায় আইসক্রীম তাও কজন মিলে,
দুবেলাই খেতেম ভাত–মিষ্টিও প্রাণ খুলে।
তবুও কিন্তু হইনি মোটা–শরীর ছিল সুস্থ,
মা–বাবাকে কখনই করিনি ব্যতিব্যাস্ত।
তৃষ্ণা পেলে কলেই মুখ–চলত জলপান,
খালি পায়েই মাঠে ছোটা–ফুটবল ত’ প্রাণ।
অসুখ বিসুখ থাকত দূরে–হয়ত খুবই কম,
‘মিক্সচার’ তিনটি দাগ–রোগের উপশম।
ডাক্তারবাবু ডাক পেলেই এসে যেতেন বাড়ি,
তাঁর কাছে অসুখ নিয়ে কেমনে যেতে পারি !
মা–বাবার কাছেই মানুষ-‘মেন্টর’ কি হেতু !
খবর দেওয়া নেওয়ায় ছিল পোস্টকার্ডই সেতু।
‘ফোন থেকে ইন্টারনেট,টি.ভি,কম্প্যুটার’,
ছিল না ত’ এসব কিছুই,তবুও কি মন ভার !
সত্যিকারের বন্ধু ছিল–তারাই আপনজন,
কয় ভাই বোন ছোট্ট ঘরে–পড়াশুনায় মন।
বিদ্যুতের বাতি নয় – লণ্ঠনেরই আলো,
মায়ের হাতে হাতপাখা– তবুও সুখ ছিল।
পূজার সময় ভাই বোনের একই ছিটের জামা,
কিন্তু মনে ছিল খুশীর জোয়ার – ছিল না কালিমা।
এমন করেই কোথা থেকে দিন গেল সব কেটে,
‘জেট’বিমানের থেকেও ঘড়ি আরও জোরেই ছোটে।
পাঠশালায় শুরু – শেষ বিশ্ববিদ্যালয়,
তারপর কর্মজীবন–সংসারে যা হয় !
মাঝে সময় বদলে গেছে–চিন্তাধারা নব্য,
সমাজ এখন শুনছি নাকি অনেক বেশী সভ্য।
বিজ্ঞানের অগ্রগতি ঘটছে একে একে,
উচ্চ স্বরেই বলতে পারি–পালাইনি তার থেকে।
শিখেছি সব প্রযুক্তি–তবে হলেম কি উন্নত !
প্রশ্ন করি নিজেকেই আজকে অবিরত।
শৈশবেই ভাবনা ছিল–কবে যে হব বড় !
বড়দের কি মজা–কেউ বলে না “পড়”।
আজকে ভাবি বড় কেন হলেম আমি হায় !
ছোট থাকার মধ্যে অনেক খুশী থাকা যায়।
বড় হয়ে কি হবে – কেউ করলে জিজ্ঞাসা,
তোমরা বোলো–ছোট হব–সেথায় সুখের বাসা।