বসে আছে আম্মাটি ঠায় পথ চেয়ে,
হরেক মাটির দিয়া–পসরা সাজায়ে।
কিন্তু নব্য যুগ আধুনিক অতি,
তাকায় সমুখ পানে–অতীতে যতি।
নতুন প্রযুক্তি কত,নতুন আলোক,
মিট্টীর দিয়া হেরি’ হাসির ঝলক।
আম্মার দিয়া তায় বিকে না মোটে,
অশ্রুবিন্দু ভাসে সিন্ধু হয়ে ঠোঁটে।
পথি মাঝে আধুনিকা জননী সুবেশা,
আম্মার আর্তি হায় লভে নাকো দিশা।
দেবশিশু ছিল এক জননীর করে,
মিট্টী দিয়ার তরে বায়না সে ধরে।
মায়ের বিদেশী ভাষা – ইউ আর ফুল,
ফ্রেণ্ডস উইল লাফ অ্যাট ইওোর স্কুল।
দিস ইজ এলইডি এজ–ইজ্ন্ট ও সন !
শিশুটির চোখে জল–কাঁদে বুঝি মন।
মায়ের সংগে চলে–তাকায় সে পিছে,
মন তার পড়ে থাকে আম্মার কাছে।
দিন শেষে বিকোয়না একটিও দিয়া,
ফেরেন আম্মা ঘরে–দুখী তাঁর হিয়া।
শিশুটির কাছে ছিল কয়েকটি টাকা,
গতবার দীপাবলী–দিয়েছিল কাকা।
করেনি খরচ সে–রেখেছিল সাথে,
আম্মার কাছে গেল পরদিন প্রাতে।
খুশীর হাসিতে ভরে দেবশিশুটি,
খরিদ করল যবে দিয়া সে দুটি।
আম্মাকে জানায় সে শুভ দীপাবলী,
কিন্তু কপোলে তাঁর অশ্রুর ডালি।
বলেন খোকনসোনা–না বিকোলে দিয়া,
কেমনে ভাসাবো মোর খুশীর খেয়া।
বালকটি দেয় তাঁরে পূত আশ্বাস,
সব দিয়া বিকোবেই–মোর বিশ্বাস।
আম্মার ছবি সে তুলে রাখে মনে,
বাড়ী ফিরে আঁকে সেই ছবি সযতনে।
সবাকার সনে তার ছোট আবেদন,
আম্মার দিয়া কিনে খুশী কর মন।
পথচারী,বন্ধু ও যত প্রতিবেশী,
বালকের মনোভাবে সাতিশয় খুশী।
মিট্টীর দিয়া ছিল আম্মার যত,
নিমেষে বিকোয় সবে–মা পুলকিত।
বৃদ্ধা হৃদয়ে বাজে শংখের ধ্বনি,
কেমনে সম্ভব হল–হতবাক তিনি।
সূর্য অস্তাচলে–পসরা বিকায়,
আম্মার তনুমন গেহ সনে ধায়।
এমত সময় সেই দেবশিশু আসে,
আম্মার সম্মুখে দাঁড়ায়ে সে হাসে।
আম্মা কহেন তারে – বিলম্ব হায়,
সব দিয়া হয়ে গেছে এবে বিক্রয়।
শিশুর তখনও হাসি – হল বিশ্বাস !
বিকোবে পসরা – ছিল মোর আশ্বাস !
আনন্দে কাটুক মাগো শুভ দীপাবলী,
এবার বিদায় দাও–গেহে ফিরে চলি।
সহসা আম্মার অতি উদ্বেল মন,
শিশু কি ছদ্মবেশী হরিনারায়ণ !
আম্মাটি ধাবমান বালকের পিছে,
আলোকমালায় বুঝি আসমান নাচে।
পথিমাঝে আম্মার ছবি চৌদিকে,
ভাষা নেই আর সেই বৃদ্ধার মুখে।
বোঝেন আম্মা সবই শিশুটির কাজ,
কেমনে মিট্টী দিয়া বিকি হল আজ।
এস মোরা একসাথে করি সবে পণ,
থুশীতে ভরাই আজি সবার জীবন।
শুভ হোক দীপাবলী আলোকের নীড়ে,
কেহ যেন থাকেনা নিবিড় তিমিরে।