কারো মৃত্যুর খবর পেলে ও হাসে।
         কেউ জানে না কেন; ও নিজেও জানে না।
সেবার ওপাড়ার ভাড়াটেরা বেড়াতে গিয়ে
   পাহাড়ের ধ্বসে একসাথে মারা পড়ল বেঘোরে-
তখন চায়ের দোকানে সে খবর শুনে
           ওর হাসি ছিল দেখবার মত।
ও ছোটবেলা থেকেই ওরকম।
জেঠাইমা মারা যাওয়ার  দিন ওর হাসি
                                  থামতেই চায় না।
বল্টুদার ঠাকুমা বলত ‘ ও হল শ্মশান ক্ষ্যাপা।’
হতেও পারে, কেউ কেউ ওকে নাকি
       শ্মশানে গিয়ে হাসিমুখে ঘুরে বেড়াতে দেখেছে।
অথচ ও কিন্তু পাগল না-
স্কুল থেকে ভাল রেজাল্ট করে কলেজে পড়েছিল,
তারপর একটা ছোটখাট চাকরিও করে।
হয়ত ওর মৃত্যুসংবাদ প্রাপ্তির বহিঃপ্রকাশটা ওরকম।
করোনা হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিল,
তখন হাসতে হাসতে বলত ‘এবার আমার পালা।’
ওর পালা আসেনি;
কিন্তু হাসপাতালে যতদিন ছিল
বেচারা হেসে কুল পায় নি।
হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে
ফিরে এসে হেসেই চলেছে
আর মাঝে মধ্যে ছাদে গিয়ে
ওপর দিকে আঙুল দেখিয়ে চেঁচিয়ে বলছে
‘ ঐ যে ঐ যে, ঐ ত শকুন উড়ছে।’
বাড়ির লোক বলছে যতই
‘ওরে শকুন আর নেই, শকুন সব মরে গেছে’
ততই সে ছাদে আরো জোরে হেসে গড়িয়ে পড়ছে।
যেন বাকিরা কত বোকা, কত দৃষ্টিহীন-
ও পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছে আর তারা
   দেখতে পাচ্ছে না উড়ন্ত শকুনগুলোকে।
ওর এই ক্ষ্যাপামিটা শান্ত হতে
       কিছুদিন সময় লেগেছিল।
এখন আর ও আগের মত হাসে না।
মৃত্যুর খবর পেলে একপেশে মুখ বেঁকিয়ে
মুখ ঘুরিয়ে নেয় অবজ্ঞার সাথে।
আসলে একঘেয়ে খবর আর কতই বা খোরাক হতে পারে।
তাই হয়ত আর ও আগের মত হাসে না।
Print Friendly, PDF & Email
Previous article‘হৃদি ভেসে গেল অলকানন্দা জলে………’
Next articleসংকট, সাহিত্য ও এক অপদার্থের ফেসবুক
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments