১. নারী ও আনাড়িঃ
তুমি কি বলবে অন্য কেও কি ঠিক করে দিতে পারে! কতটা উচ্ছাস প্রকাশ করবে , কতটা কাঁদবে, কতটা হাসবে সেটা অন্য কেও কি করে ঠিক করে দিতে পারে! এখানে প্রায় সব কবি লেখক গায়কের কাছে মেয়েদের শুধু মুচকি হাসার ই অধিকার , কাঁদতে হলে সেটা আঁচল চেপেই কাঁদতে হবে, আর বেশি উচ্ছ্বাস!- না না না, ওদের অত লাফাতে নেই। আবেগ ও নাছড়বান্দা, সে কি আর এসবের কথা শোনে। সরকার থাবা বসালে আমরা সোচ্ছার হই, হওয়া উচিৎ ও, মত প্রকাশের স্বাধীনতা তো সবার থাকা উচিৎ , এই লেখাটা সে সব নিয়ে নয়, ভারতের বেশির ভাগ বাড়ির মেয়েকেই ছোটবেলা থেকে এ-ধরনের অদ্ভুত শিক্ষা দেওয়া হয়, মুখে মুখে তর্ক করা বারণ , হাসতে পারবে কিন্তু মিলিমিটার সেন্টিমিটার মেপে, কিন্তু তার দাদা বাঃ ভাই এর কাছে সেটা কিলো বা হেক্টামিটারে হলে কোনো সমস্যা নেই, ডেসিবেলের ঝঞ্ঝাট নেই। এখানেও তো সেই রাশ টেনে ধরা, এর বিরুদ্ধেও কথা হয়, কত আলোচনা হয় কিন্তু একটা দিনই, আটই মার্চ, প্রগতিশীল রা ভাষণ দেন, প্রগতিশীলরাই শোনেন, ঝাঁসির রানি থেকে বেগম রোকেয়া সব এসে ভিড় করেন, প্রগতিশীল রা ফিরে যান, আর গিয়েই বাবান তোর জয়েন্টর কোচিং ছিল , গিয়েছিলি তো, আর মিস্টি, বড় হোচ্ছ, সে খেয়াল নেই, সারাদিন এখানে ওখানে ঘুরে বেড়াচ্ছ, এর ওর সাথে মেলামেশা করছ, পাড়ার লোক কথা শোনাচ্ছে…ভাই ঠিক করে খেয়েছিল?…ব্লাহ ব্লাহ ব্লাহ…
আমারা সম্পূর্ন কেও নই, তেমনি কি করে দাবী করতে পারি অপর জন ঠিক অর্ধেক, ‘ অর্ধেক মানবী তুমি, অর্ধেক কল্পনা’ বাঃ রবীন্দ্রনাথ এর নিজের কথায় – “ পুরুষ গড়েছে তোরে সৌন্দর্য সঞ্চারী” , এটাই সমাজের ছবি, রবীন্দ্রনাথের সময় ও যা ছিল এখনো তাই, আমার কিছু বন্ধু দের দেখতাম, তাদের কাছে মেয়েরা নিতান্তই একটা যন্ত্র , যা সন্তান উৎপাদনে সম্ভব। তারা ও শিক্ষিতই বটে, কেও চাকরি করছে কেও বাঃ গবেষণা , আমার ধারণা এটা আমার কিছু বন্ধুর মত নয়, সবারই কিছু কিছু বন্ধু করে, তারাই সংখ্যাগুরু , তাহলে কি আমরা যা শিখছি, সেই শেখানর মধ্যেই গলদ!! একটা কো-এড স্কুলে পড়াই, সেখানে কোনো কোনো শিক্ষিকা (হ্যাঁ শিক্ষিকাই, যা দেখেছি, শুনেছি তাই বলছি!) একটা ছেলের পাশে একটি মেয়েকে বসিয়ে দেওয়াকে শাস্তি দেওয়া মনে করেন, হ্যাঁ অনেকের কাছে হাস্যকর মনে হতে পারে, কিন্তু এটা সত্যি। ভাবটা এমন ছেলে আর মেয়ে দুজন নাম না জানা ভিন গ্রহ থেকে এসছে, কেও কারও ভাষা বোঝেনা তাই তারা আর কথা বলতে পারবেনা , ক্লাস শান্ত থাকবে! এই প্রণালীই কি বিভাজন টা শিখিয়ে দিচ্ছেনা!! এটা তো একটা উদাহরণ মাত্র, এরকম কত শিক্ষক শিক্ষিকা সাধারন মানুষ বাবা মা রা, জেনে শুনে অথবা অজান্তেই এই বীজ টা রোপণ করে চলেছেন প্রতিদিন, প্রতি মিনিটে!!
আরো একটা জিনিশ দেখেছি, মেয়েদের নিজেদের উপর নিজেদের আস্থা নেই, তারা নিজেরা মনে করে, পুরুষ ছাড়া তারা অচল, তাই একটাই উপায় বিয়ে করে নাও, সে তোমার নিরাপত্তার দায়িত্ত্ব নেবে বদলে তুমি তোমার ইচ্ছায় অনিচ্ছায় যৌনতা বেচবে, বাড়ির সব কাজ করবে, সন্তান পালন করবে, তোমার আর কোনো কাজ থাকতে পারেনা, তার ধ্যান শুধুই পরিবার কেন্দ্রিক, আর এটা সুচারু ভাবে তাদের মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে বাঃ হচ্ছে পরতিনিয়ত।। তারা এটা বুঝছেনা যে এটা শুধুই দেওয়া নেওয়ার খেলা ছাড়া আর কিছুই না, তুমি আমায় এই দেবে বদলে আমি ও কিছু!! আর নিরাপত্তার কথা বললাম সেটাও হাস্যকর, মানুষ বড়ই স্বার্থপর, আগে সে নিজেকে বাচানর চেষ্টা করে, কিছু পড়ে থাকলে- তাঁকে সাহায্য বলে!সমব্যথি নই।। এটা কেউই নয়, অন্যের সমস্যা আমি ঠিক করে দিতে পারিনা, সমস্যা ব্যক্তিগত।। তাই মেয়েরা যতদিন না এটা বুঝতে শিখবে যে তারা ও মূল্যবান, ততদিন এর কোনো সমাধান নেই।
দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী , লোকসভার স্পিকার মহিলা হলে আমরা গদগদ হয়ে যাই, এই তো দেশের উন্নতি হচ্ছে, নারী সমাজের উন্নতি হচ্ছে, কচু হচ্ছে, রোজ ফেমিনিজম টেমিনিজম করে কিছু লোকজন মাথা খারাপ করছে, রোজ ধর্ষন হচ্ছে , শারীরিক ও মানসিক ভাবে, প্রথমটার খবরে তো না হয় প্রগতিশীলরা দু চারটে মোম্বাতি মিছিল করেন, দ্বিতীয়টা যেটা প্রতি সেকেন্ডে ঘটে চলেছে, সেটার কি! আর যারা ওই মিছিলে যুক্ত তাদের বেশীরভাগ ই দ্বিতিয়টির সঙ্গে হয়ত যুক্ত! আমরা বাবা প্রগতিশীল তবে বাড়ির বৌ চাকরি করলে ঘোর অন্যায়, আমরা বাবা প্রগতিশীল তাই বৌ এর মাইনে বেশী হলে কমপ্লেক্সে ভুগি! আমরা বাবা প্রগতিশীল, গার্লফ্রেন্ড অন্য ছেলের সাথে কথা বললেই সন্দেহ- এত মাখামাখি তো মেনে নেওয়া যায়না… আমরা বাবা প্রগতিশীল তাই বিয়েতে ছেলের থেকে মেয়ের বয়স কম হতেই হবে, আমরা বাবা প্রগতিশীল তাই তো ওদের ‘মাল’ বলি।‘মাল’ মানে দ্রব্যবস্তু, মানে কেনা বেচা যায়- আমারা প্রগতিশীল।দর্শনে পড়েছিলাম ঈস্বরও বস্তু মানে ‘মাল’ , মানে তাঁকে কেনা বেচা যায় নিশ্চয় (যদি থেকে থাকে)।
হম, গালাগালি অনেক হল, কথা হচ্ছে মুক্তি কবে? এই ফেমিনিজম টেমিনিজম বলে টলে কিছুই হবেনা, মানুষ মানুষের পাশে দাঁড়ালে যদি তাঁকে নারীবাদী বা পুরুষ-বাদী হয়ে দাঁড়াতে হয় তাহলে না দাঁড়ানোই ভালো, কারন কোনো একটা বাদী হওয়া মানে তো পক্ষ নিয়ে বলা, বাঃ তার সাথে স্বার্থ কাজ করে। দ্বিতীয়ত সবার জন্যে সঠিক শিক্ষার অধিকার ই হয়ত পারে এ সমস্যা ঘোচাতে। আবেগের সাথে সওদা করা বন্ধ করতে পারলে হয়ত আমরাও মানুষ হব একদিন- আশা রাখি হয়ে উঠব , আজ না হয় কাল…
(একটা অনুরোধ, আমাকে নারীবাদী বাঃ পুরুষবাদী কোনো পক্ষেই ফেলবেন না, আমি কারো পক্ষেই নই)
২. বেশ একটা থ্রিলার থ্রিলারঃ
রোজ কতকিছু ঘটে যায়, কিছু খবর কান বাঃ চোখ অব্দি পোঁছায় , অবস্যি সে গুলো কে সংবাদ না বলে দুসংবাদ বলাই ভালো, সে দেশের হোক বাঃ বিদেশের, বেশির ভাগ মৃত্যু মিছিলের, কেও না খেয়ে মরছে, কাউকে বিশেষ কিছু খাওয়ার অপরাধে বাঃ শুধুই সন্ধেহর বশে , কেউ সত্যি কথা বলার জন্য মরছে, কোথাও কারো কারো যুদ্ধের কারণে , কত শত অকারনেই মরছে, দারুন অস্ত্বিত্তের জন্য সংগ্রাম করা চলছে, কিছু মতের অস্ত্বিত্ত রক্ষাত্রে, অন্য মত খুন হোচ্ছে। মজার বিষয় হল, মতামত, তত্ত্ব, মানুষ কে পেট ভরাতে পারেনা, কিন্তু হত্যা নিশ্চয় করতে পারে…
১৯৯৯ সাল, কেওঞ্ঝড়, ওড়িশা, ভারতবর্ষ- গ্রাহাম স্টয়ার্ট স্টেইন ও তার দুই সন্তানকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারে কিছু উন্মাদ (অ)মানুষ এর দল, তাদের অপরাধ তারা স্থানীয় উপজাতীয় মানুষ দের নিয়ে কাজ করত, তাদের শিক্ষা স্বাস্থের খেয়াল রাখত।।
২০১৪, পেশাওয়ার, পাকিস্থান – স্কলে হামলা একদল একই রকম (অ)মানুষের, ছাত্র ছাত্রী দের সামনে জ্বলল তাদের শিক্ষক, মারা গেল প্রায় ১৩০ জন খুদে, তারা জানেনা কি তাদের অপরাধ!!
আমরাও জানিনা ঠিক কোন ধর্মের ঈশ্বরের প্রচেস্টাতে মানুষের জন্ম, আর মানুষ মরলে বাঃ মারলে ঠিক কোন ঈশ্বর খুশি হন!! ১৯৯৯ থেকে ২০১৪ , মাঝে ১৫ টা বছরে হয়ত এরকম আরও ১৫ হাজার, বাঃ ১৫ লক্ষ বাঃ তারও বেশি ঘটনা বাঃ দুর্ঘটনা ঘটে গেছে! সব খবর তো আর পাইনা , হয়ত লেখার সময় মনেও আসেনা, যাই হোক এই কিছু মানুষের ইচ্ছাকৃত ঘটানো ঘটনা গুলো কে দূর্ঘটনা বলা চলে?
আসলে যুদ্ধ, হিংসা , মারামারি, খুনোখুনি দেখে দেখে যেন এমন হয়ে গেছে, যে মানুষ দূর থেকে এগুলো দেখতে বেশ মজা পায়- বেশ একটা সিনেমা সিনেমা, থ্রিলিং থ্রিলিং…
একটা ঘটনার কথা একটু মনে করা যাক, ২০০৬ সালে জুলাই মাস নাগাদ, কুরুক্ষেত্রে (ভারত) প্রিন্স নামে একটা ৫ বছরের বাচ্চা ৬০ ফুট দীর্ঘ আর ২.৫ ফুট চওড়া একটা গর্তে পড়ে গেছিলো , খবর টা সংবাদ মাধ্যমে বার বার প্রায় সারাদিন ধরে লাইভ সম্প্রচার করাছিল, গোটা উদ্ধার কার্য এবং আরও একটা জিনিস – প্রার্থনা – সেদিন সারা ভারত এক হয়ে গেছিলো, কেউ মন্দির, কেউ মসজিদ, কেউ গির্জায় কেউ বাঃ কেবল ই রাস্থায়- ওই বাচ্চাটার বাচানোর জন্যে প্রার্থনায় সামিল হয়েছিল, সারা ভারত উদবেগে আর উতকন্ঠায় কাটিয়েছিল, ছেলেটির মায়ের সাথে তারাও চোখ ভিজিয়েছিল, একবারও ভাবেনি ছেলেটি কোন ধর্মের, কোন জাতের, কি তার পদবী , ঘরে থাকে না বস্তিতে থাকে !! অবশেষে ৪৮ ঘন্টা দীর্ঘ লড়াই এর পর ভারতীয় সেনা ছেলেটিকে সুস্থ উদ্ধার করে, সবার উতকন্ঠার অবসান হয়, আমি তখন দশম শ্রেনী, তার পর এমন ঘটনা বেশ কিছু বার হয়েছে, কিন্তু ওই ঘটনা টা মনে বেশ নাড়া দিয়ে যায়। যে জন্য ঘটনাটা ভাগ করা তা হল- এই ঘটনা প্রমান করে, আমরা দেশের বেশীরভাগ মানুষ কিন্তু সাধারন ভাবে ধর্ম – বর্ন- জাতি-ভেদে অন্য মানুষকে দেখিনা, এই ঘটনা টা কি ঐকের ছবি দেয়না? তাহলে কি এমন বার বার হয় এই দেশে যে জাতিগত হিংসা, ধর্মিও হিংসায় জড়িয়ে পড়ি?? উত্তর একটাই আমরা বোকা বনতে খুব ভালোবাসি – ও মাই গড সিনেমা তে একটা খুব ভাল কথা ছিল – “ ধর্ম মানুষকে হয় বোকা বানায় নয়ত সন্ত্রাসবাদী” । কিছু মানুষ বাঃ বহুরূপী তাদের স্বার্থে বার বার মানুষকে প্রোভোক করেন, উত্তেজিত করেন, মানুষকে অশিক্ষিত করে রাখা হয় যাতে এসব আমাদের মাথাতে সহজেই ঢোকানো যায়, আমরা সব ভুলে , একবার ও যুক্তি দিয়ে বিচার করার চেস্টা টুকু না করে এমন সম্মোহিত হয়ে যাই যে তখন প্রিয়জন কে হত্যা করতেও পিছপা হইনা, অলীক স্বর্গের (বিস্বর্গের) লোভে!!
আবার, বাচার উপায় একটাই প্রকৃত শিক্ষার ও মুক্তচিন্তার পরিবেশ তৈরি করা, নেই আর কোনো পথ নেই।
“ক্ষিদের কিন্তু সীমানা নেই
নেই চিতা নেই কবর টাও
যুদ্ধটাকেই চিতায় তোলো,
যুদ্ধটাকেই কবর দাও”… –কবির সুমন।
৩) এবার একটু ঘেঁটে দেওয়া যাকঃ
মানব সমাজ পৃতৃতান্ত্রিক, ইশ্বর সমাজও বাঃ ইশ্বরের দূত গুলও । (যে দূত গুলোর বাস্তবিক অস্তিত্ব আছে এমনদের কথা বলছি), আর সে কারনেই ধর্ম গ্রন্থ গুলোতে আচার আচরণ বিধি নিষেধ বেশির ভাগ ই পুরুষদের ক্ষেত্রে অনেক লঘু, আর মহিলাদের ক্ষেত্রে নিষেধ ই বেশী !! না ইদের নামাজ ওদের জন্য নয় (কিছু কিছু জায়গা বাদ দিয়ে), ধর্ম সভায় মহিলারা পর্দার আড়ালে থাকবে! ওরা না খেয়ে থাকলে স্বামী ভালো থাকবে, স্বর্গে যাবে, মানতে পারলে তুমি সতী নইলে কয়েকটা গালাগালি!! একটা জিনিস ভাল, ইশ্বর ও তথাকথিত অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন, মানে তা নাহলে, যীশুর জন্ম হলো কীভাবে!! শুধু আমাদেরই বেলা যত বিধি !! যে কথাটা বলার, এই ধর্ম অধর্ম জিনিস গুলো সবই পুরুষের তৈরি, ঈশ্বর পুরুষ , সব ই স্বার্থে, কাউকে দমিয়ে রাখার একটা ঘৃণ্য ইচ্ছা বাসনা ও লালসার স্বার্থে, আর একই ধর্ম পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ভাবে পালন করা হয়, মানে কোনো, নির্দিস্ট নয়, নির্দেশিত, স্বার্থলোভি কিছু মানুষের দ্বারা, যেখানে যে পরিবেশে যেটা সম্ভব!!
তাই আমরা যত এই ধর্ম কে কম গুরুত্ত্ব দিতে পারব, সমাজ এগোবে, শুধু নারী না, নারী পুরুষ সবাই, মানুষ এগোবে, নইলে এসব চলতে থাকলে, সারা পৃথিবী জুড়ে শুধু আইলান কুর্দিদের কঙ্কাল ই পড়ে থাকবে, এখন আমাদের ভাবতে হবে আমরা কোনটা চাই!!
এখন আমাদের ভাবতে হবে আমরা কোনটা চাই!!