মামদো নাকি ঘাড় মটকায়–গেছো চোষে রক্ত,
শাঁখচুন্নী কি যে করে বলা অতি শক্ত।
গেরস্তের রান্নাঘরেই নাকি তাদের বাসা,
মাছ মাংস চুরি করে ভোজটি দেয় খাসা।
সংগে আছে পেত্নীর দল–অন্য নাম চুড়েল,
পা ঝুলিয়ে গাছে ব’সে দেখায় হরেক খেল।
আরও একটি ভূতের শ্রেণী–স্কন্ধকাটা বলে,
ঘাড়ের উপর মুণ্ডটি নাই–কিন্তু চক্ষু জ্বলে।
সবার উপর ধার্মিক ভুত–তাঁদের ভারী মান,
মাঝ রাত্রে দীঘির জলে করেন তাঁরা স্নান।
নামটি তাঁদের ব্রহ্মদত্যি–গলায় উপবীত,
পায়ে খড়ম–আদুর গায়ে গ্রীষ্ম,বর্ষা,শীত।
এমন কতই ভূতের কথা মনেতে ভীড় করে,
তবে সবথেকে মজার ভূত হলেন একানড়ে।
রাত্রি বেলায় শিশু আগে করলে দাপাদাপি,
মা বলতেন একানড়ের আছে বিশাল ঝাঁপি।
তারমধ্যে যত রাজ্যের দুষ্টু ছেলেমেয়ে,
একানড়ে টপাটপ গিলেই নেন খেয়ে।
রাতের বেলায় কোনো শিশু করলে হৈচৈ,
একানড়ের হাত থেকে তার আর রক্ষা নাই।
মায়ের কোলে তখন শিশুর ঘুমের দেশে পাড়ি,
আধুনিকা মায়ের সাথে তাঁর কিন্তু আড়ি।
বলেন তাঁরা – একানড়ে – বোকা বোকা কথা,
তবে একানড়ে নিয়ে আছে অনেক গল্প গাথা।
তিনি নাকি বাচ্চা বুড়োর কাটেনকানেরগোড়া,
সলিলজেঠু সেসব নিয়েই বেঁধেছিলেন ছড়া।
“একানড়ের কানের দোকান খুঁজতে যদি চাও,
কলকাতা নয় কানপুরেই তোমরা চলে যাও।
ডানকান সাহেব ছিলেন বামকানেতে খাটো,
কেউ তাঁকে বলেছিলেন–কানপুরেতে ছোটো।
একানড়ের সেথা দোকান–হরেক কানের রাশি,
তবে দামটি সাহেব পড়তেপারেহয়তকিছুবেশী,
শুনেই সাহেব গেলেন ছুটে একানড়ের কাছে,
জবরদস্ত বামকানের কোনো কি খোঁজ আছে !
একানড়ে জিভটি কেটে বলেন–সাহেব ‘সরি’,
আপনি’স্যার’করে ফেললেন একটুবুঝি দেরী,
আগেএলে পাঠিয়েদিতেম সটান রাজধানী,
কান নিয়ে চলছে সেথায় কতই কানাকানি।
হরেক কান রাজধানীতে পাওয়া যেতই বটে,
এখন কিন্তু মেলেনা আর একখানিও মোটে।
সেথায় এখন সবার হায় দুটো কানই কাটা,
আমার ওপর তারা সবাই হাড়েহাড়েই চটা।
বলে বেড়ায় আমিইনাকি কাটি কানেরগোড়া,
কিন্তু এসব কথা সত্যি নয়–সবটাই মস্করা।
নিজের কান নিজেই কেটে দেয় বিসর্জন,
কানেরব্যবসা করবোনাআরএকানড়েরপণ।”
একানড়ের গল্প নিয়ে সলিলজেঠুর ছড়া,
এখনও মোর মনের মাঝে দেয় দারুণ নাড়া।
ভূতেরা সব আগে ছিল প্রতি শহর গ্রামে,
দৌরাত্ম্য শুরু তাদের যখন আঁধার নামে।
এখন ত গ্রামেগন্জেও বিজলী বাতির চল,
হারিয়ে গেছে–মিলিয়ে গেছে সেসবভূতের দল।
বিদেশেও সাহেব মেম–ভূত পেত্নীর মেলা,
ভয়ংকর রক্তচোষা কাউন্ট ড্রাকুলা।
দিনের বেলা বাক্সমধ্যে নিরীহ এক বন্দী,
রাত ঘনালেই শুরু হত যত ফিকির ফন্দী।
তবে তিনি এখন নিরুদ্দেশ–দুর্গটিও নাই,
রক্তচোষা বাদুড়–সেসব গল্পেই আজ পাই।
আসলে সব ভূতেরা আজ মানুষকে পায় ডর,
বলে–চতুর্দিকে মনুষ্যকুল নাকি ভয়ংকর !
মানুষের মুখোশেরও নেই কোনোই শেষ,
মামদো,গেছো–কারো আবার ব্রহ্মদত্যি বেশ।
তাদেরদেখেই আসলভূত হাওয়ারমাঝেলীন,
এমনকি সব পালিয়ে গেছে দত্যি,দানব,জীন।
রক্তচোষা মানুষ এখন মটকে দেয় ঘাড়,
এদের থেকে দূরে থাকাই জেনো সত্য সার।