যে হেরিছ বীরাংগনা তুরগ পৃষ্ঠে বসি’-

পৃষ্ঠে যাঁহার অবোধ শিশুটি,হস্তে আদৃত অসি।

স্বাধীনতা রণে তিনিই ছিলেন প্রথম পথিকৃত,

রোপণ করেন অবলা হিয়ায় সাহসিকতার ভীত।

শৈশবে তিনি মণিকর্ণিকা,যৌবনে মহারাণী

লক্ষ্মীবাঈ নামেই তাঁহারে ইতিহাসে মোরা জানি।

বাল্যেই যবে হারান জননীজীবনযুদ্ধ শুরু,

জননীর স্নেহ দিলেন জনকতিনিই যে মহাগুরু।

অশ্বচালনা তীরন্দাজীশাস্ত্র পঠন সাথে,

ব্রাহ্মণ বালা তথাপি কৃপাণ আলোকিত দুই হাতে।

ঝান্সী নরেশ, মণিকর্ণিকাশুভ পরিণয় দোঁহে,

নব পরিচয়ে তিনি পরিচিতাইতিহাস তাই কহে।

বারাণসী ত্যজি উপনীত মনু ঝান্সীর অন্দরে,

লক্ষ্মীবাঈ নামটি ব্যাপ্ত শহরে কি কন্দরে।

জীবন যাঁহার অমাতৃকঅমানিশা সদা হায়

ঘিরিয়া রহিবে সতত তাঁহারেনাহি কভু সংশয়।

শিশুপুত্রের জীবনাবসানস্বামীর বিয়োগে রিক্ত,

তথাপি রাণীর নির্ভীক আঁখিহয় না অশ্রুসিক্ত।

সমুখে প্রবল বিদেশী শত্রুক্রোরেতে পালিত পুত্র,

লক্ষ্মীবাঈ চিনিতে নারেন হায় কে তাঁহার মিত্র।

ওরছা,দাতিয়া সিপাহী দুজন মিত্রের বেশে অরি,

হুংকার দেয় রাণীকে তাহারা দুর্গ লইবে কাড়ি

অপর প্রান্তে প্রাসাদ দুয়ারে বিদেশী বৃটিশ শক্তি,

ঝান্সী রাজ্য নাকি তাহাদেরঅদ্ভুত বটে যুক্তি।

ঝান্সী দুর্গে করিল তাহারা চরম আগ্রাসন,

লক্ষ্মীবায়ের সঙ্গে বাঁধিল আমরণ মহারণ।

সন্দেশ ধায় বিদ্রোহী নেতা তান্তিয়া টোপী সকাশে,

বিশ সহস্র সিপাহী লইয়া আসেন ঊর্ধ্বশ্বাসে।

তথাপি দুর্গ বৃটিশ গ্রাসেইপলাতকা মহারাণী,

পৃষ্ঠে তাঁহার দুধের শিশুটিআহা নয়নের মণি।

ঝান্সী শহরে আজিও হেরিবে বীরাঙ্গনার মূরতি,

যোদ্ধৃর বেশে দৃপ্ত নয়ন ঝলসায় যেন দ্যুতি।

যমুনার তীরে কাল্পী শহরে উপনীত মহারাণী,

কিন্তু সেথাও ছাড়িল না পিছু বিদেশী বৃটিশ সেনানী।

অবশেষে তিনি তাহাদের শ্যেন চক্ষু এড়ায়ে রাতে,

গোয়ালিয়রে আসিলেন নেতা রাও টোপীর সাথে।

সহস্রাধিক বিদ্রোহী সেনা কণ্ঠে রাণীর স্তব,

বিদেশী ফৌজ করিল স্বীকার সাময়িক পরাভব।

গোয়ালিয়র হইল দখলরাণীর পরাক্রম,

কিন্তু বৃটিশ এই পরাজয়ে হারায় যে সংযম।

আসিল তাহারা ত্বরায় ফিরিয়াঅধিক শক্তিশালী,

নৃশংস সবে রাজপথে খেলে বুঝি শোণিতের হোলি।

মরণপণ সংগ্রাম শুরু রাণীর জীবন বাজি,

বীরতার সাথে যুদ্ধ করিয়া মৃত্যু বরণে রাজি।

লক্ষ্মীবায়ের পরাক্রমে বৃটিশ বাহিনী ত্রস্ত,

পিছু হটে সবেবীরাঙ্গনার হস্তে তাহারা ধ্বস্ত।

কিন্তু ভাগ্য যখন বিরূপ তখন কিরূপে আসিবে জয় !

সহসাই আসে অসির আঘাতবিধাতা কি নির্দয় !

রণাঙ্গনই বীরাঙ্গনার শেষ সফরের শয্যা,

নারীরে করিল হত্যা বৃটিশঅনন্ত বুঝি লজ্জা।

লক্ষ্মীবায়ের বয়স তখন উনবিংশতি মাত্র,

ভারত মাতার শিয়রে অটুট রাখিতে স্বাধীন ছত্র,

দেশমাতৃকা চরণে করেন আপনারে বলিদান,

এস মোরা সবে বীরেশ্বরীর করি এবে জয়গান।

অভিজাতা তথা বিনম্র অতি সাহসিকা রাজবধূ,

প্রজাদের সনে ছিলেন জননীকণ্ঠে ক্ষরিত মধু

সেই রাজরাণী অন্যায় সাথে কিরূপে করেন আপোষ !

এক লহমায় অস্বীকৃত বৃটিশের খোরপোশ।

পরাধীনতার শৃঙ্খল ছিল ঝান্সীর অপমান,

অসম সমরে দিলেন লক্ষ্মী আপনারে বলিদান।

ভারতবাসীর হৃদয়ে তাঁহার ঊজ্জ্বল অধিবাস,

ঝান্সীর রাণী লক্ষ্মীবাঈস্বয়ংই ইতিহাস।

Print Friendly, PDF & Email
Previous articleজাপানি ঘড়ি
Next articleআহ্বান
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments