Poem 1 :

আমি যে নিশিপদ্ম

সে এক নিশিপদ্ম।

তার লাবণ্য তার জৌলুস ঢাকা এক নিবিড় অন্ধকারে।

সূর্যের দাবানলে তার শরীর যে ঝলসে যায়।

তাই তার দিনের আলো দেখা নিষেধ।

কিন্তু তার ও মন আছে, আছে ভালোবাসার অনুভূতি।

কোনো এক অন্ধকার গহবরে সুপ্ত নির্মল হ্রদে তার রোজ রাতে ফুটে ওঠা,

এই তার নিয়তি।

রোজ আসে ভ্রমর, করে দংশণ।

কিন্তু আজ এ কে এলো?

এ যে এক শুভ্র সুন্দর প্রজাপতি।

হাসছে, বসছে, আবার উড়ে যাচ্ছে কিছু দূর।

ফিরে আসছে বারে বারে নতুন এক এক অনুভূতি নিয়ে।

কালো জলে উঠছে মৃদু কম্পন।

তা দোলা দিয়ে যাচ্ছে পদ্মের প্রতিটি পাপড়িতে।

পদ্মের ইচ্ছে হলো ওই প্রজাপতি কে নিজের মধ্যে গুটিয়ে নিতে।

কিন্তু হায়! ভালোবাসার আনন্দ কে ছাপিয়ে উঠছে অসফলতার হাহাকার।

চারিদিক কি নিস্তব্দ! কি নিবিড় অন্ধকার!

যেন অপেক্ষায় গুনছে সময় দারুন এক চিৎকারের।

Poem 2 :  

আমি অম্বা

 

সে এক ছেলে কিন্তু তার মধ্যে নেই পৌরুষ, আছে লাবণ্য।

তাতে তার কি যায় আসে !

সে তো নির্মল প্রজাপতির মতন উড়ে বেড়াতে চায়।

সমাজের দায়ে বদ্ধতা কেন নিতে হবে তাকে?

তার মনের কথা কি কেও কখনো শুনেছে সমাজে !

করে লোকে হাসাহাসি পিছনে তার,

দেয় টিটকারি সামনে আবার।

প্রকৃতির নিয়মে আমরা দায়বদ্ধ পরবর্তী প্রজন্মের জন্য।

কিন্তু এই প্রকৃতি তে কি নেই কিছু ভিন্ন স্বাদ?

হোক না চলা তার একটু অন্য পথে,

তাতে হবেনা কেন সে যুক্ত সমাজের সাথে?

সে দেখে নিজেকে ভিন্ন রূপে,

তার মধ্যে সে চেনে এক নারী সত্তা কে।

Poem 3:

মেঘের পাড়ে তার ঠিকানা 

 

সে ছিল এক মেয়ে।

বড়ো আদরের ছিল সবার।

We are very sorry for the problem that you are facing. We are working on this issue as high priority.
অভাবের সংসারে ছিল তার আরো ভাই বোন।

তাই পাইনি সময় কুড়িয়ে নেওয়ার তার ভাগের আদর।

সারা দিন যেত তার কাজ শুধু কাজ,

লেখা পড়া হলো না আর যেমন হয় সবার।

বাবা থাকে দূর দেশে, মা ব্যস্ত মাঠে,

এই ছোট্ট বয়সে তাই, ভাই বোনের দায়িত্ব তারই কাঁধে।

অভাবের সংসারে, আজ হয় রুটি তো কাল খালি পেট।

তার মন শুধু সাধে কেন সে পারেনা হতে মেঘ!

আছে আশা মনে, কবে আসে বাবা।

তার কাছে সব কথা হয়নি কখনো বলা।

ভাবে শুধু সে আকাশ পানে চেয়ে।

এক বার যদি পারে হতে সে মেঘ।

উড়ে যাবে দূর দেশে যেথা আছে বাবা,

আনবে ফিরিয়ে তাকে, দুঃখ মায়ের যত করবে সেদিন শেষ।

এক দিন এলো এক ভিনদেশি যাযাবর।

মায়ের সাথে তার হলো কি কথা অলক্ষে সবার।

বুঝলো সে এই টুকু, হবে তাকে যেতে।

বাবা যে ডেকেছে।

ফিরবে খুশির হাওয়া বার তাদের  ছোট্ট সংসারে।

আজ সে সত্যি হয়েছে মেঘ, ভেসে বেড়ায় হেথায় সেথায়।

কিন্তু হায়! এখন বুঝছে মেঘ কে যে কেউ না চায়।

আজ নেই তার স্বাধীনতা, নেই তার মন।

অপরের জন্য যেন তার এই যৌবন।

সে ছিল এক মেয়ে।

রাখেনা খবর কেউ তার আর।

এখন শুধু বৃষ্টি ঝরে দুই নয়ন দিয়ে তার।

কোথায় আছে তার বাবা?

কেমন আছে তার ছোট্ট ভাই বোন?

মায়ের দুঃখ কি মিটেছে এখন?

Poem 4:

সে এক রাজকন্যা, তাড়কা সুন্দরী

 

তোমার হাতে নারীর মৃত্যু

তা কি করে হয় অপরাধ?

তুমি যে অবতার! তুমি যে শাসন কর্তা!

তোমায় করেছে প্রেরণ

রক্ষক সমাজ।

তাই এসেছ আজ, হয়ে সেই সমাজের রক্ষাকর্তা।

কিন্তু কিছু প্রশ্ন আমার ও আছে, তোমার কাছে।

আমি তাড়কা, আমি আসুরি।

কিন্তু আমি নারী।

কি আমার অপরাধ?

ছিলাম রাজকন্যা, হৃদয় জুড়ে পিতার ভুবনে।

করেছিল লালন-পালন আমার অতি যতনে।

তার কাছে পেয়েছি শিক্ষা সংস্কার, এক মালায়ে গাঁথা।

ঈশ্বরের কাছে যে সবাই সমান, তাই উচুঁ রেখো মাথা।

কিন্তু হায়! দেখি

তোমাদের জগৎ চলে অন্য নিয়মে।

আমাদের নেই সমান অধিকার এই সমাজে।

তাই রইলাম আঁধারে,

তোমাদের অন্তরালে।

হয়েছি ধর্ষিত তোমাদের লালসায়, তোমাদের প্রয়োজনে।

নিয়েছি অভিশাপও যখন করেছি প্রতিবাদ নিজ মননে।

যে করে ধর্ষণ, হয়ে তার পাপ মোচন বিধাতার আশীর্বাদে।

কিন্তু আমি হারিয়েছি সব, যখন চেয়েছি প্রতিকার নিজের অধিকারে।

তোমাদের এই আর্য সমাজ দ্যাখে আমাদের কীটের মতো।

তাই তোমাদের নেই লজ্জা বা ভয়,

মারতে আমাদের প্রতিনিয়ত।

কিন্তু দ্যাখো, তোমাদের চলার ওই পথ,

সেখানে রয়েছে আমাদেরই রক্তের দাগ।

Print Friendly, PDF & Email
Previous articleখুকীর মা
Next articleমেঘমল্লার Part 1
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments