অনবরত বৃষ্টি চলছে কদিন ধরে। ছেলেটা গত তিন ধরে জ্বরে ভুগছে। তখনই গা গরম তখনই আবার একদম ঠাণ্ডা। বেশি তোয়াক্কা করে নি খোকনের বাবা মা। ভেবেছিল ঠান্ডা লেগে হয়তো খোকনের জ্বর এসেছে।

এত বৃষ্টিতে তাদের বাড়ির টিনের চাল ফুটো হয়ে ঘরে জল ঢুকছিল। খোকনের বাবা গোপীনাথবাবু কোনোরকমে সেই ফুটো বন্ধ করেছিল। তিনি একটি ছোটো ব্যাবসা করেছিলেন সেটাও বেশিদিন টিকল না। এখন একটি মুদিখানা চালান। তাও খুব একটা উপার্জন হয় না।

খোকনের বয়স দশেক হল। এই কিছুদিন ধরে সে কিছু মুখে দিতে পারেনি। সব খাবারই তার তেতো লাগছিল। অবশেষে একদিন মেঘ শান্ত হল। সকালের আকাশ রোদে ঝলমল করছে। খোকনের শরীরটাও সেদিন বেশ ভাল ছিল। মায়ের কাছে সে জেদ ধরলো তেলেভাজা খাওয়ার।

কিন্তু হাই! বাড়িতে যে এক ফোঁটাও তেল নেই। না আছে তেল কেনার টাকা। ছোট ছেলে খোকন কোনো কথা মানতেই চাইল না। শেষে সে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পরে। সন্ধ্যে নামতেই মেঘ আগের থেকেও ভয়ংকর হয়ে উঠল। ঝমঝম করে বৃষ্টি নেমে এল। খোকনের জ্বরও আবার এল। রাত বাড়ার সাথেই খোকনের জ্বরও বাড়তে লাগল। আগুনের মত গরম হয়ে গেল তার গা। সারারাত ধরে জলপট্টি দিল খোকনের মা।

কিন্তু জ্বর নামল না। ভোরের আলো ফুটতেই খোকনের জ্বর নামল। অনেকবেলা হলেও খোকন ঘুম থেকে উঠল না। কান্নাকাটি শুনে লোকজন ছুটে এল। কিন্তু ছোট্ট খোকন পাড়ি দিয়েছে ঘুম পাড়ানির দেশে যেখানে না থাকবে ফুটো টিনের চাল, না থাকবে তেলের অভাব,না থাকবে কোনো দারিদ্র্য। সেই সুখের স্বর্গে খোকনের মতো অনেক ছেলেই খেতে পাবে তেলেভাজা।

 

~ তেলেভাজা ~

Print Friendly, PDF & Email
Previous articleবায়না
Next articleতবে তাই হোক
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments