ঘুরে এলাম তাজপুর। হঠাৎ ঠিক করলাম।আসলে আমি ও আমার কর্তা দুজনেই হল ভ্রমণপিপাসু মানুষ। তাই বেশীদিন নিজেদের ঘরবন্দী হিসেবে ভাবতে পারি না। এইজন্য এই শনিবার ঠিক করলাম একদিনের জন্য ঘুরে আসবো। সমুদ্রপাড়ে যাব কিন্তু কোথায়? প্রথমে ভাবলাম দীঘা কিন্তু পরে ভাবলাম দীঘা তো অনেকবার ঘোরা অন্য কোথাও গেলে কেমন হয়? তখন হঠাৎ মনে হল তাজপুরের কথা। আমি নাম শুনেছি কিন্তু যাই নি কখনো। ব্যস, এই শনিবার বেড়িয়ে পড়লাম আমরা গাড়ি নিয়ে।
ভোর ৬টায় যাত্রা শুরু করলাম। দ্বিতীয় হুগলী সেতু হয়ে বম্বে রোড ধরলাম। কিন্তু যা! ঝিরঝির করে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল যে!কি মুশকিল হল। একেই বম্বে রোড এত ঘিঞ্জি তার ওপর বৃষ্টি হওয়ায় গাড়ি চালানো কঠিন হয়ে দাঁড়ালো। যাই হোক, বেশ সাবধানতা অবলম্বন করে আমরা পৌঁছলাম আজাদ হিন্দ ধাবা। ওখানে জলখাবার সাড়লাম। তখন ঝমাঝম বৃষ্টি নেমে গেছে। কি আর করা যাবে এমনি দেরী হয়ে গেছে আর দেরি করা ঠিক মনে হল না তাই বৃষ্টি মাথায় করেই বেড়িয়ে পড়লাম
তারপর পরের স্টপ কোলাঘাটে চা খেয়ে সোজা দুপুর ১.৩০ নাগাদ পৌঁছলাম তাজপুর। বেশ দেরি হয়ে গিয়েছিল। তাই হোটেলে পৌঁছে চটপট জামাকাপড় বদলে দুপুরের খাওয়ার অর্ডার করে আমরা পৌঁছে গেলাম বিচে। আহা! কি নির্জন আর মনোরম বিচ এই তাজপুর। কতদিন বাদে সমুদ্রে এলাম এই ভেবে মনটা খুব ভাল লাগলো। এই বিচের কোনায় ঝাউবন, বিচের সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে তুলেছে। আমার মেয়ে আর ধৈর্য রাখতে না পেরে নেমে পড়লো স্নান করতে। আমার কর্তাও নামলো আমাকে জিনিসপত্র দেখার দায়িত্ব দিয়ে। বিচের কাছে বেশ অনেকগুলো ছোট ছোট চা এবং স্নেক্সের দোকান নজরে পড়লো।ওখানে চা আর ৩ প্লেট ডিম ভাজা নিয়ে সমুদ্রের গর্জন শুনতে যে কি ভাল লাগছিল কি বলবো।
কিন্তু আবার হঠাৎ কোথা থেকে যেন কালো মেঘ জমাট বেঁধে নামিয়ে দিল বৃষ্টি তার সাথে প্রবল ঝড়। সমুদ্র উত্তাল হয়ে উঠলো। সমুদ্রে বৃষ্টি দেখার অনুভূতি কিন্তু দারুন। কোলকাতায় তো প্রায়ই বৃষ্টি দেখি কিন্তু সমুদ্র বা পাহাড়ে সম্পুর্ণ অন্য রকম লাগে। আমরা অপেক্ষা করছিলাম কখন বৃষ্টি থামবে কারন আমাদের খিদেও পেয়ে গিয়েছিল তাই হোটেল ফিরতে হবে। বেশ অনেক্ষণ পর বৃষ্টি থামলো আর আমরা ফিরলাম।
হোটেলের খাওয়া অসম্ভব ভাল ও সুস্বাদু। ম্যানেজারের আতিথেয়তাও দেখার মতো। যাই হোক,হাতে সময় কম তাই যতটা পারলাম ঘোরার চেষ্টা করলাম। বিকেলে সমুদ্রতট ধরে সোজা হাঁটলাম।ওদিকের বিচটা পরিষ্কার। তাই বেশ ভাল লাগলো। আস্তে আস্তে সন্ধ্যা হল কিন্তু বৃষ্টি ক্ষেপে ক্ষেপে পড়েই যাচ্ছিল। একটু কমে আবার বাড়ে। এই চলছিল সারাদিন। বেশ কিছুক্ষণ বিচে কাটানোর পর বৃষ্টি র ইঙ্গিত অনুভব করায় অগত্যা হোটেলমুখো ফিরতেই হল।
পরের দিন সকালে জলখাবার খেয়ে আমরা যাত্রা করলাম বাড়ির দিকে সঞ্চিত স্মৃতি বুকে নিয়ে।
কি দেখবেন- তাজপুরের ওখানকার জেলেদের জীবনযাপন দেখতে পারেন ওদের গ্ৰামে গিয়ে অথবা তাজপুর থেকে দীঘা বা মন্দারমণি ঘু্রে আসা যায়।
কোথায় থাকবেন-
হোটেল তাজ ভিলা(৮০০১৮৭৪৯৪)
হোটেল শ্রেয়সী(৮৩৪৬৯৭৪৩৫,৯৯৩২৪৭৩৪৩৭)
জঙ্গল ক্যাম্প রিসর্ট(০৯৮৩১১৬৭৫৩৭)