দীর্ঘ কৃশ বেত্র করে শিক্ষাগুরু ধীরে ধীরে
আসিলেন যবে শ্রেণীকক্ষে,
পরণে মলিন বেশ মস্তকে শুভ্র কেশ
ছাত্রদল কাঁপে দুরুবক্ষে।
পাঠে যদি ভ্রম হয় শিয়রে শমন ধায়
দুইচক্ষে রোষায়িত দৃষ্টি,
যষ্টিমধু বেত্রাঘাত মুষ্টিযোগ অকস্মাৎ
চপেটাঘাতের বুঝি বৃষ্টি।
বহিরঙ্গে কাঠিন্য অতি হেরিয়া শিক্ষক প্রতি
ছাত্রগণ ভয়ে দিশাহারা,
কিন্তু গুরুর হৃদয় অমৃতসম ন্যায়
বহিত স্নেহের ফল্গুধারা।
যে ছাত্রে মেধা কম করিয়া অধিক শ্রম
গড়িতেন সেই ছাত্রে তিনি,
বিদ্যালয়ে পাঠ অন্তে আপন আলয় প্রান্তে
দিতেন উজাড়ে জ্ঞানখনি।
দুস্থ নি:স্ব ছাত্র হেরি’ হৃদয় হইত ভারী
পুত্রবৎ করিতেন লালন,
সে ছিল স্নেহের পাত্র বর্ষভোর অহোরাত্র
স্বীয় গেহে তাহারে পালন।
কতই বা ছিল আয় লবণ খুঁজিতে হায়
পান্তাই ফুরায়ে বুঝি যায়,
শীর্ণদেহী গুরুমাতা জননী শুচিস্মিতা
অর্ধাহারে সৌষ্ঠব ক্ষয়।
কপোলে অশ্রুরাশি তথাপি আননে হাসি
সাবিত্রীসমা এক নারী,
অমলিন হৃদিবত্তা পতিপত্নী একসত্তা
বহিত সুনির্মল বারি।
বিছায়ে আসনখানি রাজেশ্বরী জননী
বাৎসল্যে করিতেন পুষ্ট,
“আহারে কন্দর্প কান্তি সারাদিন পাঠে শ্রান্তি
আননটি বুঝি অতি ক্লিষ্ট।”
দেবীসমা মূর্তিমতী নয়নে পবিত্র জ্যোতি
করুণাধারায় করি’ স্নান,
দুস্থিত ছাত্রদলে বাঁধিতেন স্নেহান্চলে
এমনই মহতী ছিল প্রাণ।
ছাত্রদলে বর্ষে বর্ষে পোষণ আপন হর্ষে
এমনই ছিলেন গুরুপিতা,
আর মাতৃসমা গুরুদার পুরাগত সংসার
ইতিহাস দোঁহে রচয়িতা।
এহেন শিক্ষক হায় অতীতের পৃষ্ঠায়
আছেন ত’ নিদ্রামগ্ন,
অস্ত গিয়াছে রবি এ যুগে ভিন্নছবি
হৃদয়কে করে সদা ভগ্ন।
হে গুরু মহাপ্রাণ করি তব সন্ধান
অনুক্ষণ তোমারেই স্মরি’,
আকাশে বাতাসে খুঁজি আচার্য্য তোমারে পূজি
তুমিই ত’ ছিলে দিশারী।
নব্য যুগের শিক্ষা নাহি সেথা কোন দীক্ষা
ব্যবসায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান,
অর্থের নিরিখে মেধা বিকিকিনি হয় সিধা
শিক্ষা আজি হারায়েছে মান।
শিক্ষকতা পেশামাত্র দুস্থ কি অবোধ ছাত্র
কে করিবে পোষণ তাহার,
ক্ষুদ্রস্বার্থ অর্থকরী তাহাতে মাপন করি’
গুরুশব্দে হেরি গুরুভার।
গুরুভার
Subscribe
Login
0 Comments
Oldest