ভগবান কি আছে কাকু তোমার দোকানে !

কত দাম গো ভগবানের কেউ কি সেটা জানে !

আমার কাছে আছে কিন্তু একটি মাত্র টাকা,

দোকানীকে শুধায় এক বছর সাতের খোকা।

রেগে আগুন তেলে বেগুন ব্যস্ত দোকানদার,

চোখ রাঙিয়ে বলেখোকা,শোনরে খবরদার,

আমার সঙ্গে ফাজলামিবড্ড পাকা কথা,

আবার যদি শুনি এমন গুঁড়িয়ে দেব মাথা।

কি আর করে খোকন সোনা যায় অন্যখানে,

কিন্তু সেথা দোকানী তার কানটি ধরে টানে।

কেউ বা আবার হেসেই খুন,কেউ বা করে তাড়া,

কেউ বা বলে বিচ্ছু খোকন পাজীর পাঝাড়া।

নাছোড় খোকা হাল ছাড়ে নাসকাল থেকে সাঁঝে,

একের পর এক দোকানে সে ভগবানকে খোঁজে।

চল্লিশটি দোকান খুঁজেও মেলেনা তার ইষ্ট,

ভাবে খোকনতার উপরে ভগবান কি রুষ্ট !

অবশেষে এক দোকানে বৃদ্ধ আপণিক,

ফুটফুটে সেই শিশুর প্রশ্নে অবাক সমধিক।

শুধান তিনি শিশুটিকে  কি তোমার ব্যাথা !

ঈশ্বরকে কিনতে চাওকেমনতরো কথা !

সত্যি কথা বল তুমিকরছি সাবধান,

নয়ত তোমায় শাস্তি কিন্তু দেবেন ভগবান !

প্রশ্ন শুনে খুশীর হাওয়ায় দোলে খোকার প্রাণ,

ভাবলে সে এই দোকানেই মিলবে ভগবান

জবাব  দেয় দেবশিশুটি কাঁদো কাঁদো স্বরে

একমাত্র মা যে আমার আপন ধরার পরে।

বাবার সাথে আমার কভু হয়নি মোটে দেখা,

মায়ের সঙ্গ ছাড়া আমি একেবারেই একা।

সারাদিন কাজ কোরে মা অনেক খাবার আনে,

রাতের বেলা ভাগ করে খাই আমরা দুইজনে।

পরদিনের জন্য রাখি যেটুক থাকে বাকি,

দিনের বেলা আমি রোজ ঘরের মধ্যে থাকি

এখন মা হাসপাতালেআমার যে কেউ নেই,

ভগবানে তাইতো খুঁজিযদি এক টাকাতে পাই।

মায়ের খুব খারাপ অসুখবলেছে ডাক্তারে,

একমাত্র ভগবানই তাঁর জীবন দিতে পারে।

দাদুএই দোকানে আছে কি ভগবান !

শিশুর কথায় বয়োবৃদ্ধের উথালপাতাল প্রাণ।

বলেন তিনি  ভগবান মিলবে হেথা খোকা,

তবে তার জন্য চাই যে বাবা অনেক অনেক টাকা !

সরল শিশু বললেদাদু মুস্কিল ভারী,

আমার আছে একটা টাকাতোমায় দিতে পারি।

এক টাকায় ভগবানবড় আজব কথা,

কিন্তু কেমন করে দেবেন তিনি খোকার মনে ব্যাথা !

হেসে বলেন প্রবীণ তখনকিসের সমস্যা !

এক টাকাতেই কাটবে তোমার মনের অমাবস্যা।

পানপাত্রে দিলেম আমি বিশুদ্ধ এই জল,

মা খেলেই সুস্থ হবেনআপণিকের ছল।

পানপাত্র হাতে নিয়ে শিশুটি কি ব্যস্ত,

ভগবানকে পেয়েছে সেমা হবেই সুস্থ।

অবশেষে অস্ত্রোপচারবহু দুর্ভোগ অন্ত,

নীরোগ হল মায়ের শরীরখোকন প্রাণবন্ত।

হাসপাতালের সব খরচ এক বৃদ্ধ গুণে গুণে

মিটিয়ে দিয়ে গেছেন আগেইমা হতবাক শুনে।

পত্র একটি দিয়ে গেছেন যাবার সময় সুধী,

ভাবেন মাকে এই মানুষএমন দয়ানিধি !

এই শহরে আমার নেই কেহই পরিচিত,

খোকার জন্য মায়ের মন এবার বুঝি ভীত।

ধীরে ধীরে পত্রখানি পাঠ করেন রিক্তা,

অদ্ভুত সেই পত্রভাষে নয়নজলে সিক্তা।

ধন্যবাদ দেবার কোনো প্রয়োজন না দেখি,

আমি কেবল উপলক্ষ্যমায়ের সুখে সুখী।

তোমার অবোধ শিশুই ধন্যবাদের পাত্র,

সম্বল যার ছিল সাকুল্যে একটি টাকা মাত্র।

নামমাত্র সেই অর্থে সে খুঁজল পরম ইষ্টে,

যার সরলতায় ঈশ্বরেরও বাঁধন আস্টেপৃষ্ঠে।

বিশ্বাস তার অটল ছিলকেবল ভগবান

করতে পারেন রক্ষা তার দু:খী মায়ের প্রাণ।

এমনতরো বিশ্বাসেরই অপর নাম ভক্তি,

যা যোগায় মানুষকে অপার মনের শক্তি।

ইষ্ট সনে যদি থাকে আস্থা একনিষ্ঠ,

তাঁরে পেতে একটি টাকাই জানবে যথেষ্ট।

অবিশ্বাসীর কোটি টাকাও সেথায় অর্থহীন,

খোকন সোনার কাছে মোর রইল অসীম ঋণ।

আজ বিশ্বে করোনার এই ভয়াল মহামারী,

মানবজাতির জীবনের এক দানবসম অরি।

করাল রোগের থেকে যদি পেতেই হয় মুক্তি,

তবে একমাত্র পরমৌষধ সার্বভৌমে ভক্তি।

ভগবানকে খুঁজতে হবে শিশুর সরল মনে,

অহংবোধের বিসর্জনে আত্মসমর্পণে।

তাঁর চরণে লও হে শরণ অমল বিশ্বাসে,

প্রার্থনা অনুক্ষণ নিবিড় ভক্তিরসে।

রক্ষা পাবে সংসারনি:সংশয় কবি,

অচিরেই বদলে যাবে জীবনের জলছবি।

 

Print Friendly, PDF & Email
Previous articleগল্প হলেও সত্যি।
Next articleমহারাণী ভবশঙ্করী।
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments