আমেরিকায় আছি বেশ কয়েক বছর হয়ে গেল। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটা হ্যালোইনও দেখেছি। আমেরিকা আসার আগে হ্যালোইন সম্পর্কে কোন ধারণাই ছিল না। কিন্তু এ দেশে আসার পর দেখি অক্টোবর মাস এলেই আমেরিকাবাসী হ্যালোইন উৎসব এর প্রস্তুতি শুরু করে দেয়। অক্টোবর ৩১ তারিখে হয় এই হ্যালোইন উৎসব। কিন্তু তার প্রস্তুতি মোটামুটি শুরু হয়ে যায় সেপ্টেম্বর মাস থেকেই। বিশেষত যদি ডিপার্টমেন্টাল স্টোর গুলোয় যাওয়া হয় যেমন ওয়াল-মার্ট, হোমডিপো এবং বিভিন্ন শমিংমল এসব জায়গায় হ্যালোইন সংক্রান্ত বিভিন্ন জিনিস চোখে পড়ে। আমিও সেরকম প্রথম যখন আমেরিকা এসে মার্কেটে যাই, দেখি বিভিন্ন নকশা করা কুমড়ো গুলো বিক্রি হচ্ছে। তখন থেকেই মনে প্রশ্ন জাগে এর ইতিহাস সম্পর্কে। মনে প্রশ্ন আসতেই জানতে পারি হ্যালোইন উৎসব এর প্রস্তুতি স্বরূপ নিদর্শন হল কুমড়ো বিক্রয়। তখন থেকেই হ্যালোইন উৎসব এর ইতিহাস সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য অনুসন্ধান করতে থাকি। এরমধ্যে বেশকিছু হ্যালোইন পাশ্চাত্যে দেখলাম। আমেরিকার হ্যালোইন উৎসব বলতেই যে কথাটা বারবার মনের মধ্যে ভিড় করে সেটা হল বাঙালির ভূত চতুর্দশী । আমরা জানি বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ।বাঙালি জাতির লোকসংস্কৃতি ও লোকবিশ্বাসে ভূত অনেকটা জায়গা দখল করে আছে। বাংলা গল্প সিনেমা রূপকথা লোককথায় ভূতের আধিক্য দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। ভূত পেত্নীর গা ছমছম করা গল্প কাহিনীর আকর্ষণে আবালবৃদ্ধবনিতা সকলেই আকর্ষিত হয়। অনেকে মনে করেন মানুষের মৃত্যুর পর তার আত্মা মুক্তি না পেলে সেই আত্মা অশরীরের চারিদিকে ঘুরে বেড়ায়। বিশেষত কোন ব্যক্তির যদি অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটে সেই ব্যক্তি ভূত হয়ে সর্বত্র বিচরণ করে এরকম কথিত আছে। বাঙালির গল্পকথায় এরকম নানা প্রকার ভুতের অবয়ব আছে। বাঙালির দুর্গাপূজা শেষ হওয়ার পর শুরু হয় কালী পূজার প্রস্তুতি। কালী পূজার আগের দিন ভূতচতুর্দশী পালিত হয়। আমার মনে হল আমেরিকার হ্যালোউইন অনেকটা বাঙালির এই ভূতচতুর্দশী উৎসবের মতো। হয়তো এই হ্যালোইন আর ভূত চতুর্দশীর মধ্যে কোন সম্পর্ক নেই। কারণ হ্যালোইন সম্পূর্ণভাবে পাশ্চাত্য দেশের একটি উৎসব,আর কালী পূজার আগের দিন যে ভূতচতুর্দশী সেটি সম্পূর্ণভাবে বাঙালির উৎসব। কিন্তু প্রবাসে থেকে প্রবাসীর কল্পনায় অনেক কিছুই ভিড় করে আজকাল। সেইরকমই আমারও মনে হল আমেরিকার এই হ্যালোইন আর বাঙালির ভূতচতুর্দশীর মধ্যে হয়তো কোথাও অন্তমিল থাকলেও থাকতে পারে যদিও সেটা কল্পনায়।
এখন এই হ্যালোইন এবং ভূতচতুর্দশী সম্পর্কে আপনাদের কিছু বলার চেষ্টা করব।
বাঙালির ভূত চতুর্দশী কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের শেষে চতুর্দশীতে পালিত হয়। মনে করা হয়, এদিন গৃহস্থে প্রেতশক্তির প্রবেশ ঘটে। তা দূর করতেই জ্বালানো হয় প্রদ্বীপ। ভূতচতুর্দশীর কাহিনীটি হল এরকম, স্বয়ং বিষ্ণু এসেছেন রাজার কাছে এ বিষয়টা বুঝতে পেরেছিলেন কিন্তু কোনওভাবে এতটুকুও বিষ্ণুকে বুঝতে দেননি রাজা বলি। তবুও তিনি দান দিতে রাজি হলেন কথা রক্ষার্থে। তখন বামনরূপী ভগবান বিষ্ণু একটা পা রাখলেন স্বর্গে, আর একটা পা দিলেন মর্তে। এবার নাভি থেকে বের হল আর একটা পা। এই পা রাখলেন রাজা বলির মাথায়। এর পর ধীরে ধীরে বলি ঢুকে গেলেন পাতালে। বলি জেনে বুঝেও দান দিয়েছিলেন বলে ভগবান বিষ্ণু রাজা বলির নরকাসুর রূপের পুজোর প্রবর্তন করেন মর্ত্যলোকে। নরকাসুররূপী বলি রাজা কালীপুজোর আগের দিন ভূতচতুর্দশী তিথিতে মর্ত্যে আসেন পুজো নিতে। সঙ্গে থাকে রাজার অসংখ্য অনুচর হিসাবে পরলোক জগতের ভূত প্রেতরা। তাদের দূরে রাখার জন্য জ্বালানো হয় প্রদীপ। তিথিটা থাকে চতুর্দশী তাই জ্বালানো হয় চোদ্দোটা প্রদীপ। প্রদীপগুলি মূলত নিবেদিত হয় স্বর্গত পিতৃপুরুষ, প্রেতাত্মা, ধর্ম, রুদ্র, বিষ্ণু, কান্তারপতি বা অরণ্যে অধিষ্ঠিত দেবতাদের উদ্দেশ্যে।
পরলোকগত পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে পারলৌকিক যেকোনও কাজের ফল কখনও বৃথা যায় না। তাঁদের আত্মার আশীর্বাদ সূক্ষ্মভাবে কাজ করে থাকে যিনি তাঁর উদ্দেশ্যে প্রদীপ জ্বালানোর কাজটি করে থাকেন তার ওপর। পরলোক বিষয়টা সাদামাটা চোখে দেখা যায় না বটে তবে একে উড়িয়ে দেওয়ার কোনও প্রশ্নই আসে না। পারলৌকিক জগত সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণাটা খুবই কম। মোটের উপর পুরাণের পৌরাণিক কথায় ভূতচতুর্দশী প্রসঙ্গ এটুকুই।তাই ভূতচতুর্দশীর দিন গৃহস্থের মঙ্গলের জন্য এবং গৃহে অপদেবতা যাতে প্রবেশ করতে না পারে, সেই জন্য বাড়ির চোদ্দো কোনায় চোদ্দোটি প্রদীপের আলো জ্বালানো হয়।প্রদীপ জ্বালানো সম্পর্কে অন্য যে সমস্ত মতের প্রচলন আছে তার মধ্যে একটিতে বলা হয়— এই দিনে রামচন্দ্র চোদ্দো বছরের বনবাস কাটিয়ে অযোধ্যায় ফিরে এসেছিলেন। এত বছরের দুঃখের দিনের অবসানের আনন্দে এবং রামচন্দ্রকে স্বাগত জানানোর জন্য সমগ্র অযোধ্যবাসী প্রদীপ জ্বালিয়ে অযোধ্যা নগরীকে আলোকিত করে দিয়েছিল। সেই থেকে এই প্রথা চলে আসছে।
এ তো হল বাঙালির ভূত চতুর্দশীর গল্প । এখন বলব আমেরিকার হ্যালোইনের গল্প। আমেরিকাতে প্রত্যেক বছর অক্টোবর মাসের ৩১ তারিখ অনুষ্ঠিত হয় হ্যালোইন উৎসব । এ সময় এখানে সর্বত্র দেখা যায় ভূত পেত্নীর মূর্তি দিয়ে বাড়ি ঘর সাজানো হচ্ছে। আমেরিকানদের বরাবরই ভূত-পেত্নী নিয়ে বাড়াবাড়ি। দোকান গুলোতে ভূত পেত্নীর সরঞ্জাম নিয়ে এমনভাবে সাজানো হয় যেন খুবই ভয় লাগবে দেখলেই। হ্যালোইন উৎসব এর বেশ কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই এই আয়োজন শুরু হয়ে যায়। আমরা জানি আমেরিকার সব থেকে বড় উৎসব হলো ক্রিসমাস। ক্রিসমাস উৎসব হয় ডিসেম্বর মাসের ২৫ তারিখ থেকে শুরু করে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ পুরোটাই মোটামুটি চলে। ক্রিসমাসের আগে অনুষ্ঠিত হয় এই হ্যালোইন উৎসব। আমেরিকানদের বাঙ্গালীদের মত বারো মাসে তেরো পার্বণ নেই ঠিকই কিন্তু বছরে বেশ কয়েকটা উৎসব হয় এদের। হ্যালোইনের দিন বেশিরভাগ মানুষ দের দেখা যায় বিভিন্ন ভুতুড়ে বা ভয় জাগানিয়া পোশাক পড়ে রাস্তাঘাটে ঘুরছে , ভুতুড়ে মুখোশ পরে বাচ্চাদের ক্যান্ডি সংগ্রহ এবং বিভিন্ন বিচিত্র পোশাকে শিশুদের সাজিয়ে প্যারেডে যোগ দেওয়া এইসবই দিনটির প্রধান আকর্ষণ ।অনেক মানুষই এই হ্যালোইন উৎসবে মেতে ওঠে ঠিকই কিন্তু অনেকেরই এই হ্যালোইন উৎসব সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নেই। হ্যালোইন সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ থেকে জানা যায় হ্যালোইন শব্দটির বাংলা মানে হল পবিত্র বিকেল বা রাত। এটি স্কটিশ শব্দ যার মানে হল সবকিছু পবিত্র অল হ্যালোস থেকে এসেছে যা পবিত্র বিকেল বা রাতের পূর্ববর্তী দিবস কে বোঝায়। হ্যালোউইন শব্দের উৎপত্তি হয় ১৭৪৫ সালের দিকে। হ্যালোইন উৎসব পালনের শুরুটা ছিলো মধ্যযুগে। আয়ারল্যান্ড, ওয়েলস, স্কটল্যান্ডের উচ্চ ভূমি ও ফ্রান্সের উওর অংশ জুড়ে তখন কেল্টিক সভ্যতা বিস্তার। প্রাচীন কেল্টদের পালিত সামহাইন উৎসব থেকেই মূলত হ্যালোইনের সূত্রপাত। কেল্টদের বছর শুরু হতো নভেম্বরের ০১ তারিখ থেকে। গ্রীষ্ম ও ফসলী মাসের শেষ ও শীতের শুরু। কেল্টদের বিশ্বাস ছিলো, নতুন বছর শুরু হওয়ার আগের রাতে জীবিত ও মৃতের দুনিয়ার মধ্যকার ফারাক কেটে যায়। সেসময় মৃত আত্মা ও ভূত-প্রেত পৃথিবীতে আসে। তাই ৩১ রাতে অক্টোবর মৃত স্বজনদের অাত্মার সঙ্গে মিলনের কামনায় তারা সামহাইন উৎসব পালন করতো। পরবর্তীতে এ ভূত উৎসবে খ্রিস্টান ধর্মেরও প্রভাব পড়ে। বিশ্বব্যাপী ০১ নভেম্বরকে ‘অল সেইন্টস ডে’ ঘোষণা করা হয় ও এর আগের সন্ধ্যা মানে ৩১ অক্টোবরকে ‘অল-হ্যালোস-ইভ’ বা হ্যালোইন হিসেবে পালিত হয়। আধুনিক হ্যালোইন ইউরোপের পশ্চিমাঞ্চলীয় কেল্ট ভাষাভাষী দেশের অধিবাসীদের লোকাচার ও বিশ্বাস দ্বারা প্রভাবিত ধর্মাশ্রয়ী সামাজিক সংস্কৃতি।কেউ কেউ বিশ্বাস করেন এই সংস্কৃতির সঙ্গে বিশ্বের প্রধান প্রধান ধর্মের ইহুদি-খ্রিস্টান ইসলাম বিশ্বাস করেন না এমন পরিধির সূত্র থেকে উদ্ভূত হয়েছে।জনৈক লোকাচার বাদী লেখক এর মধ্যে পুরো আয়ারল্যান্ডের লোকাচার ও বিশ্বাসের সঙ্গে খ্রিস্টান ধর্ম পূর্বক আইরিশদের লোকাচার ও বিশ্বের মধ্যে একটা অস্বস্তিকর সমঝোতা ছিল। ঐতিহাসিক নিকোলাস রজার্স হ্যালোইনের উৎপত্তি খুঁজতে গিয়ে বলেন রোমানদের প্রাচুর্যময় ফলের দেবী পোমানার সম্মানে ভোজের সঙ্গে সম্পৃক্ত হ্যালোইন। এ প্রসঙ্গে আরও নানা ধরনের পৌরাণিক কাহিনি রয়েছে। তবে আধুনিক হ্যালোইন লোকাচারকে খ্রিষ্টীয় ধর্ম মতবাদের প্রভাব রয়েছে বলে মনে করা হয়। ৩১ অক্টোবর ও নভেম্বর মাসের ১ ও ২ তারিখে ইউরোপ-আমেরিকার অধিকাংশ খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী হ্যালোইন উৎসব পালন করে। স্কটল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ড থেকে আগত অভিবাসীরা হ্যালোইনকে আমেরিকায় নিয়ে আসেন। উনিশ শতকের দ্বিতীয়ভাগে আমেরিকায় জাতীয়ভাবে হ্যালোইন ডে পালিত হতে থাকে। ১৯২০ থেকে ১৯৫০ সালের ভেতর পুরো আমেরিকায় হ্যালোইন ডে’র আনুষ্ঠানিকতা বাড়তে থাকে। পরে দিনটিকে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে গণ্য করা হয়। এদিন সবাই ভূতের সাজে নিজেকে সাজায়। অনেকের মতে, এসময় সাধারণ মানুষের ভিড়ে মিশে যায় বিদেহী আত্মারাও।
এ দিনটিকে ঘিরে পুরো অক্টোবর মাসব্যাপী চলে আয়োজনের ঘনঘটা। কুমড়োর লণ্ঠন তৈরি, বাড়িঘর-রাজপথ সাজানো ও চকলেট-পেস্ট্রি তৈরিতে ব্যস্ত থাকে আয়োজকরা। বিশেষত সাজসজ্জার সরঞ্জাম, ক্যান্ডিসহ নানা ধরনের সামগ্রী প্রস্তুতকারীদের জন্য হ্যালোইন-বাণিজ্য বৃদ্ধির আমেরিকার ব্যবসায়ীদের জন্য আশীর্বাদের উৎসব। দিনটিতে একে অন্যকে ‘হ্যাপি হ্যালোইন’ বলে কুশল বিনিময় করতে দেখা যায়। আমেরিকায় হ্যালোইন ডে-র আনুষ্ঠানিকতা বাড়তে থাকে। পরে দিনটিকে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে গণ্য করা হয়। ছোট ছোট বাচ্চারা এদিন বাড়ি বাড়ি ঘুরে দরজায় কড়া নেড়ে বলে ‘ট্রিক অর ট্রিট’। তখন সেই বাড়ির থেকে বাচ্চাদের ঝুলিতে কিছু ক্যান্ডি বা খাবার-দাবার দিয়ে দেওয়া হয়। বাড়ি গুলো খুব সুন্দর ভাবে কুমড়ো দিয়ে সাজানো থাকে। সমস্ত ছুটির মধ্যে, হ্যালোইন হল আমেরিকাতে বসবাসকারী সমস্ত সংস্কৃতি থেকে আসা ধর্মীয় বা পৌত্তলিক বিশ্বাস, আচার, বা ঐতিহ্যের মানুষদের কাছে অন্যতম ছুটির দিন। হ্যালোইন আনুষ্ঠানিকভাবে উপস্থিত হয়েছে।
হ্যালোইন স্পষ্টতই আজ আমেরিকাতে একটি জনপ্রিয় ছুটি হিসাবে রয়েছে, তবে এটি এটি প্রায় আটলান্টিক জুড়েই তৈরি করতে পারেনি। পিউরিটানরা ছুটির পৌত্তলিক শিকড়গুলি অস্বীকার করছিল, তাই তারা উদযাপনে অংশ নেয় নি। যদিও হ্যালোইন মূলত খ্রিস্টানদের উৎসব তথাপি আমেরিকায় সব ধর্মের মানুষই এই উৎসব উপভোগ করে। কেননা ধর্ম যার যার, আর উৎসব সবার।সম্প্রতি আমি একটি দোকানে গিয়ে দেখলাম বেশ কিছু হ্যালোইনের সরঞ্জাম চলে এসেছে। দোকানে হ্যালোইনের জিনিস গুলো যেভাবে সাজানো থাকে দেখে মনে হয় এরা হ্যালোইন পালন করছে এভাবে। আবার গাড়ি নিয়ে রাস্তা দিয়ে গেলে দেখা যায় রাস্তার ধারের বাড়ি গুলো খুব সুন্দর আলোক সজ্জায় সজ্জিত।
অন্যদিকে দেখি বাঙালিদের মধ্যে ভূতচতুর্দশীর দিন সন্ধ্যার সময়ে চোদ্দো প্রদীপ দেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। শুধু তাই নয়, দুপুরের খাদ্য তালিকাতেও থাকে বিশেষ এক পদ, চোদ্দো শাক। চোদ্দো শাকে থাকে ওল, কেও, বেতো, কালকাসুন্দি, নিম, সরষে, শালিঞ্চা, জয়ন্তি, গুলঞ্চ, পলতা, ঘেটু, হিঞ্চে, শুষুনী। অনুমান করা হয়, আগেকার দিনে যখন চিকিৎসা ব্যবস্থা এত উন্নত ছিল না, তখন শীতের মরসুম আসার আগে হেমন্তে ঋতুতে এই সময় শীতের পরশ নিয়ে আসত। হেমন্তে কালে হালকা শীতের আগমনে মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যাতে গড়ে ওঠে, তাই এই সময়ে মরসুমি চোদ্দো রকম শাকের রান্না খাওয়া হত। বর্তমান কালে চোদ্দো রকমের উপরে উল্লিখিত শাকের দেখা না পাওয়া গেলেও কালীপুজোর আগের দিন পুরনো রীতিকে টিকিয়ে রাখার জন্য অন্য শাকের সংমিশ্রণে চোদ্দো শাক খাওয়া হয়। সুতরাং, কার্তিকী অমাবস্যায় চোদ্দো শাক, চোদ্দো পুরুষের প্রতি জল নিবেদন, ভূত, মাটির প্রদীপ, টুনি, এলইডি ল্যাম্পের আলো, আতসবাজি, ডাকাতে কালীমাতার পুজো, ঠাকুর দর্শন— এই সমস্ত কিছু নিয়েই জমজমাট হয়ে ওঠে।