সকাল থেকেই সকলে উঠে গেছে,সকলেই ব্য‍স্ত । এমনকি, ঘুম কাতুরে ওঙ্কার-ও কাঁচা ঘুমে চোখ কচলাতে কচলাতে বিছানা ছেড়ে উঠলো । সকলের মনে ভিন্ন ভিন্ন উৎফুল্লের ছাপ । কোনোরকমে মুখ-হাত ধুয়ে কাগ্-স্নানটা সেরে নিল ওঙ্কার । তার কাছে একেই ‘স্নান’ কাজটা ,সময় নস্ট,তার উপর আজকে তাদের সাত বছর পর বাড়ি ফেরার দিন ,লম্বা ছুটি। আবাসিক স্কুলের উচচমাধ্যমিকের বুদ্ধিমান ছেলে হিসাবে বেশ নাম আছে ওঙ্কারের।সাতবছর পর আজ তারা যে যার নিজের বাড়ি ফেরার অবকাশ পেয়েছে।তাই সকলেই খুব উল্লাসিত মনে কাগভোরে উঠে গেছে।সকাল সাতটার মধ্যে একে একে সকলেই বাড়ির উদদেশ্যে বের হল ‘বাহাদুর’ ছাএাবাস থেকে।ওঙ্কারের বাড়ি পুরুলিয়ার  ‘গৌরাঙ্গ’গ্রামে, উত্তর কলকাতার এই বাস, নেহাতই পড়াশুনার তাগিদে।

সকাল সাড়ে  সাতটার মধ্যে সে স্টেশনে পৌছে গিয়ে টিকিট কাউন্টারে একটি জেনারেল কামরার টিকিটের খোঁজ করতে লাগল,’দাদা জেনারেল’ সে পঁয়এিশ টাকা দিয়ে বলল, লাইনের সকলেই হঠাৎ হেসে ওঠে বলল, ‘কি বললে? জেনারেল টিকিট? মানে? অনেক বছর আগেই তো জেনারেল কামরা উঠে গেছে। এখন শুধু স্লিপা্র ,এসি। তাও-তো কোনো কোনো ট্রেনে তো স্লিপারও থাকে না।কত বছর ঘর থেকে বেরোও নি? ওঙ্কার অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকল তাদের দিকে,’একি? এতো কখনও শুনিনি? এটাতো জানতাম না।’ –মনে মনে ভাবতে থাকল সে। কোনোরকমে একটা এসির টিকিট কেটে কাউন্টার থেকে বেরিয়ে এল। ফেরৎ পাওয়া কয়েনগুলো হাতে রেখে সিঁড়িতে উঠতে লাগল,’সিড়িতে ভিখারি থাাকবে, তখন দিয়ে দেব’। কিন্তু না সিঁড়িতে একটিও ভিখারিকে দেখা গেল না। সে একটু অবাক হলো!”আমি যতবার স্টেশনে এসেছি মা প্রতিবার ভিখারিদের দু-এক টাকা কিংবা দশ-এগারো টাকা করে দিয়েছে, কিন্তু কখনোই এরূপ ভিখারি বন্ধ্ বা ‘ভিখারি strike‘ চোখে পড়েনি তো !”—আপন মনে ভাবতে ভাবতে সে স্টেশনে নামল। প্রায় ১০ মিনিট অপেক্ষা করার পর তার মনে হলো ,”মনে হয় ৭টার ট্রেন-টা আজ-কেও প্রচন্ড লেট করছে।” সে পাশের লোক-টিকে জিজ্ঞাসা করল,”উফ! আজ-কেও লেট ?” লোক-টি জবাব দিল,”কি ? সাতটার পুরুলিয়া-টা ? ওটা তো ছ’টা ঊনষাট-এই ছেড়ে দিয়েছে, আর তাছাড়া এখন তো কোনো ট্রেনে-ই লেট হয় না , বরং ফাস্ট পৌঁছে দাঁড়িয়ে থাকে। তাছাড়া এখন হাতের মুঠোয় মানুষ বুলেট ট্রেনের মত দ্রুততম ট্রেন পাচ্ছে , কয়েক পালসে্ই পৌঁছনো যায় গন্তব্যে , কতজন আর এই পুরনো রেলেই পড়ে থাকে বলো? যাই হোক আট-টার জন্য অপেক্ষা করো!” ওঙ্কার লোকটির কোনো কথার মানেই বুঝতে পারলো না , শুধু বলে উঠল,’ অ্যাঁ ‘ ।

পরবর্তী ট্রেন ঠিক সাতটা সাতান্নতে ঠুকে গেল প্ল্যাটফর্মে। ওঙ্কার অনেক খুঁজে এক স্লিপার এসি বগীতে উঠে বসেছে । ট্রেনে চেপেই মা-কে আস্বস্থ করতে ফোন করে জানিয়ে দিল যে সে আটটার ট্রেনে চেপেছে । সকলে তার ঐ নোকিয়া (Nokia) স্যুইজ টিঁপা ফোন দেখে হাসাহাসি করতে লাগলো । হাসির উগ্রশব্দে সে ফোন কাটতে বাধ্য হলো । ফোনের লাল বোতামটা টিঁপে সে একটু রেগে বলে উঠল,”বলি এত হাসার কি আছে ? আর হাসছেন-ই বা কেন ?” পাশের শয়নাগত এক বৃদ্ধ বললেন,”ওসব মোবাইল এখন আর কেও-ই ব্যবহার করে না ছোঁড়া , এখন ওই গুলোকে বাচ্চাদের খেলতে দেওয়া হয় বুঝলে ! India is now a developed country like America , -অতএব ওই মোবাইল কুয়োর জলে ফেলে একটা নতুন Android কেনো কেমন !” ওঙ্কার মনে মনে ভাবল ,”এই সেই যুগ ? যে যুগে মানুষ দরদাম্ করে আলু-পটল কেনে ? নাকি সাত বছরে সম্পূর্ন বদলে গেল সব , কি জানি ?” কিছুক্ষনের মধ্যে ট্রেনে খাবার দিতে এলো , ওঙ্কার-এর কাছে খাবার নামাতে গেলে , সে খাবার দিতে বারন করে,”আমি খেয়ে এসেছি , এখুনি পৌঁছে যাব , আমার খাবারের দরকার নেই !” উত্তরে তিনি বলেন , ‘এটা free sir’

——“free বললেই হলো ? সব ট্রেনে-ই খাবার free তে দিলে তো কপাল খুলে যেত”

——” No,No,Sir আপনি বোধ হয় জানেন না , অনেক বছর হয়ে গেল Indian Railway সর্বট্রেনেই Breakfast , Lunch , Dinner সবই দেয় ”

তবু ওঙ্কার কিছুতেই খাবার নিতে নারাজ । শেষ পর্যন্ত খাবার নামিয়ে লোকটি বলল,” It is my duty sir ! “ওঙ্কার অবাক হয়ে হাঁ করে তাকিয়ে থাকল । মনে মনে ভাবলো,”সব বঙ্গভূমির সন্তান হয়ে বাংলা বলতেই ভয় পায় , এটাও তাদের ওই duty-র মধ্যে পড়ে নাকি , যাই হোক , যাই খাবারটা দিয়ে আসি canteen-এ , নইলে আমাকে বোকা বানিয়ে এক-দু’শো টাকা মেরে নেবে । বলছে নাকি free , free না ছাই ! বলতেই পারে ঘোল খাওয়াচ্ছি  sir ” এই ভেবে সে canteen-এ খাবার-টা নামিয়ে দিয়ে চলে এলো । প্রায় দুপুর ১২ টার সময় ট্রেন পৌঁছলো পুরুলিয়ায় কোনো দেরি না করেই । “বাব্বাঃ” ওঙ্কার বলতে বলতে নামলো পুরুলিয়ায় । ……………

 

… to be continued

~ আধুনিক জীবনের স্রোত-প্রথম পর্ব ~

Print Friendly, PDF & Email
Previous articleবসন্তের দিন-রাত শুধু পলাশের সুর
Next articleA tribute to the Maestro of Indian Classical Music
Anish Banerjee
Onkarnath Banerjee is a student of class 8 of Bankura Christian Collegiate School.His hobby is writing & gardening.He likes to do math always.He also directs a short movie of tenida .He is from Jogeshpally,Bankura,WB .His real name is Anish Banerjee .
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments