এক
“ওই শুনছো? ওঠো না… কাল যে আমার ওষুধটা আনতে বলেছিলাম, ভুলে গেছ তাইনা?” অলকেশ’কে জাগানোর চেষ্টা করে সৃজিতা । অলসভাবে উঠে আড়মোড়া ভাঙে অলকেশ । “ভুলে গেলাম? সত্যিই ঠিক মনে পড়ছে নাগো… কাল রাতে মনে হচ্ছে ঘুমটা জম্পেশ হয়েছে; শরীরটা ফুরফুরে লাগছে” । স্বভাবসিদ্ধ ভ্রূকুটি করে সৃজিতা । “সরি সৃজা, এনে দিচ্ছি একটু বাদে”, সরল চোখে উত্তর দেয় অলকেশ । বরের ওপর রাগ সে করতো, কিন্তু দুটি কারণে চেপে গেল: প্রথমত, অলকেশ প্রায় কখনোই কিছু করতে বললে ভোলে না, তাছাড়া আজ না জানি কেন সৃজিতার Rheumatoid arthritis-এর ব্যাথাটা একদমই নেই । তবু সে তাড়া দেয়, “আজ কিন্তু অবশ্যই আনবে । নিউজে বলছে, Hydroxychloroquine বলে আমার এই ওষুধ’টাই COVID’19-এর জন্যে ব্যাবহারযোগ্য একমাত্র ওষুধ, যতদিন না Vaccine তৈরী হচ্ছে । তাই হাই ডিমান্ড । এটা না পেলে আমার ব্যাথা যদি বাড়ে, তখন নিজেই কোরো রান্নাবান্না”, মুচকি হাসে সৃজিতা । কেমন যেন এক অদ্ভুত তৃপ্তি আজকের সকালে, হালকা বোধ হচ্ছে অনেকটা । ওকে জড়িয়ে ধরে আবার চোখ বোজে অলকেশ, “ফ্যান অফ কেন গো?” অলকেশের বুকে মাথা রাখে সৃজিতা, “কাল রাত থেকে কারেন্ট নেই বুঝি…” । ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে, পুরোনো স্মৃতি জেগে ওঠে অলকেশের মনে ।
দুই
আজ পনেরো বছর হল ওদের একে অপরের সাথে । অলকেশ তখন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণারত, বিষয় Low temperature physics, কৃতি ছাত্র সে বরাবর । সৃজিতা বছর চার ছোট, Journalism and mass communication-এ স্নাতকোত্তর প্রথম বর্ষের ছাত্রী । অলকেশ যেমনি চুপচাপ, লাজুক গোছের ছেলে – একটু গোবেচারা টাইপ; সৃজিতা তেমনি চটুলা, চপলা, বাক্চঞ্চলা । বিধাতার অমোঘ পরিকল্পনা ছাড়া, বরাবর নারীসঙ্গ থেকে দূরে থাকা অলকেশ যে সৃজিতার মতো ডাকসাইটে সুন্দরী, ডাকাবুকো মেয়ের প্রেমসুধা লাভে ব্যার্থ হত – অলকেশের কোন বন্ধুর এবিষয়ে দ্বিমত নেই ।
পাঠকের মনের রসনা নিবৃত্ত করতে ঘটনাটা বলা দরকার । অলকেশ রোজ সন্ধ্যায় টিফিন করতে ক্যান্টিন আসে, সৃজিতাও প্রায় একই সময়ে ক্লাস সেরে খেতে যায়, মেসে ফেরার আগে । অলকেশ যে তাকে দেখে’নি – তা নয়, অত সুন্দরী মেয়ে ছেলেদের দৃষ্টি আকর্ষণে কদাচিৎ বিফল হয় । তবে অশোভন কৌতূহল তার মনে নেই, চা খেতে খেতে কাজের কথাই ভাবে । সেদিন সৃজিতা একটা বড় মাসালা ধোসা হাতে বসার জায়গা খুঁজছিল, অলকেশের সামনে একটা চেয়ার বাদে সব ফুল, তবু সে গিয়ে বলে: “এক্সকিউজ মি, এখানে কী নেই কেউ? তাহলে আমি চেয়ারটা নিয়ে যেতাম”; অলকেশ ইয়াব্বড় প্লেটটা দেখে ভাবে, এই মেয়ে চেয়ার নিয়ে যেতে গিয়ে অর্ধেক সাম্বার ফেলবে । একটু সাহস করে বলেই ফেলে, “হ্যাঁ নিন, চাইলে এখানেও বসতে পারেন, ফাঁকাই টেবিল” । দুই সেকেন্ড ভাবে সৃজিতা, তারপর বসে পরে, খেতে থাকে । একটাও কথা হয় না । যেচে কথা বলতে আসা লোকজন পছন্দ নয় সৃজিতার । এক সপ্তাহ বাদে আবার একদিন একই অবস্থা । অল্প অল্প বৃষ্টি হচ্ছে, চিকেন চাউমিনের প্লেট হাতে আজ আর কোনো দ্বিধা না করে বসে পরে সৃজিতা । অলকেশ একবার তাকায়, তারপর আবার এগ্চপে কামড় বসায় । বৃষ্টিটা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় আটকে পরে বেশিরভাগ লোক । খাওয়া শেষ হলে দুজনেই বসে থাকতে থাকতে শেষে এক-দুটো কথা বলে । অজানা-অচেনা ছেলে-ছোকরা’কে পাত্তা দেবার মেয়ে সৃজিতা নয়, কিন্তু ভগবানের আশীর্বাদে পৃথিবীর প্রায় সকল মেয়ে পুরুষের চোখের গতিপথ দেখে তার মনের মানচিত্র ধরে ফেলতে পারে । বিশেষত সুন্দরী মেয়েদের অধিকতর চোখের সাথে লড়াই করে বাঁচতে হয় বলে এই ক্ষমতা সুবিশেষ প্রবল হয়ে ওঠে । সেই শুরু, প্রথম প্রথম সপ্তাহে এক-দু’দিন আলাপ, ক্রমে আরো ঘনঘন কথা হয় ওদের । অলকেশের বুদ্ধিদীপ্ত চোখে লাস্যের অনুসন্ধান খুঁজে পায় না সৃজিতা, তাতে অকপট সারল্য আর বিনয় প্রতীয়মান । ছয় মাস কাটে, প্রেম হয়; তার তিন বছর বাদে বিয়ে ।
একমাত্র পুত্র শৈলেশ’কে মামাবাড়ির পাশে কনভেন্টে পড়তে পাঠিয়ে কর্তা-কর্ত্রী এখনো ক্যারিয়ার নিয়েই ব্যাস্ত । অলকেশ IACS-এ সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট, চাকরি না পেলেও ভালো মাইনে আর পঁচিশটির ওপর উচ্চমানের গবেষণাপত্র প্রকাশ করে সে নিজ ফিল্ডে প্রতিষ্ঠিত । সৃজিতার স্বপ্ন ছিল Investigative journalism, কলকাতার একটি নামী মিডিয়া হাউসে চাকরিও পেয়েছিলো বিয়ের আগেই । খুব জটিল রহস্য না হলেও প্রথম ছয় বছরে সে পাঁচটি হাই-প্রোফাইল কেস ও দুটি স্টিং অপারেশন হ্যান্ডেল করেছিল, যার তিনটির পলিটিক্যাল কানেকশন ছিল । অলকেশ প্রথম প্রথম হুমকিচিঠি দেখে ভয় পেত, কিন্তু সৃজিতা মুচকি হেসে ওকে ব্ল্যাক বেল্ট’টা দেখিয়ে দিত । কয়েক বছর গার্হস্হ্য জীবনের পর অলকেশ বুঝল, সৃজা তার বউ নয়, ঠাকুমা । সুতরাং, বৃথা চেষ্টা করে লাভ নেই । কিন্তু এর পরপরই ওর Rheumatoid arthritis ধরা পড়লো । তিন বছর যেতে না যেতে ডাক্তার হুকুম দিলেন, ফিল্ডওয়ার্ক বন্ধ করতে হবে । সেই থেকে তাকে ট্রান্সফার করা হল এডিটোরিয়াল টিমে, গত এক বছর অল্প অল্প করে সে ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ সিস্টেমে নিজেকে উন্নীত করছে । বস আপত্তি করে’নি, শুধু একটাই শর্ত: বিশেষ কোনো জটিল রহস্য বা পলিটিক্যাল কেস এলে তাকে ফিরতে হবে টেম্পোরারি বেসিসে, কারণ এসব কাজ বিগিনার’দের দাওয়া যায় না ।
তিন
“ব্যাপার’টা কী? ল্যাপটপ’টাও অন হচ্ছে না!”, হঠাৎ কখন কম্পিউটার টেবিলে উঠে গেছে সৃজিতা, “কালকের ফুটেজ আর রেকর্ডিংগুলো আজি পাঠাতে হত বস’কে, সাথে একটা ড্রাফ্ট!” বিছানায় আবার উঠে বসে অলকেশ, কী সমস্যা ভাবতে ভাবতে কপালের ক্ষতটায় হাত বোলায় । এটা ওর মুদ্রাদোষ । ছেলেবেলায় খেলতে গিয়ে পরে মাথায় বিশ্রী চোট পেয়েছিলো অলকেশ, পুরো আঠেরো দিন জ্ঞান ছিল না! মাথায় ইন্টারনাল হ্যামারেজ হয়েছিল । ডাক্তার বলেছিলেন বাবা’কে, ভাগ্য করে এই যাত্রা বেঁচে গেল ছেলে, কিন্তু সামলে রাখবেন, ওই জায়গায় একটা ক্র্যাক হয়েছে স্কালে, ওখানে ফের বেকায়দায় চোট লাগলে কিন্তু লাইফ রিস্ক হবে! সেই ঘটনার স্মৃতি হয়ে রয়ে গেছে শুধু কপালের ওই দাগটা, যার জন্যে ছোটবেলায় বন্ধুরা ওকে হ্যারি পটার বলে খ্যাপাতো । “ওঠো, বাজার আর ওষুধ আনবে না?”; ক্ষত’টা হাতাতে হাতাতে অলকেশ ভাবে, ঠিক কী কী হয়েছিল গতকাল…
চার
রৌদ্রোজ্বল সকালে উঠে অলকেশ বসেছিল ওর ডেস্কটপ খুলে । ফাইনাল চেকিং করে সে পেপার সাবমিট করবে একটা । সুপারকন্ডাক্টিভিটির কাজটা পনেরো দিনের কোয়ারান্টিনে সে শেষ করে ফেলেছে পুরো । দেড় বছর ঝুলে ছিল, আজ সাবমিট করে দিলে আপাতত আর কোন কাজ নেই । দুটো দিন পুরো রেস্ট নিয়ে, তারপর নতুন কাজের প্ল্যান করতে বসবে সে । মোটের ওপর এখন আর কাজের চাপ নেই, কাল থেকে চিন্তা-উৎকণ্ঠা ভুলে একটু সময় দেবে স্ত্রীকে । সৃজিতা কী যেন বকবক করছে ফোনে বসের সাথে । ফোন রেখে বলল, “একটা বড় কেস এসেছে । লোকাল কাউন্সিলর, খুব সম্ভবত বিধায়কের সায় পেয়েই, COVID ত্রাণকল্পে আসা টাকা পকেটস্থ করছে, সাথে গরিব মানুষের জন্যে সরকার থেকে আসা রেশন-ও! বস চায়, আমি স্টোরি’টা করি ।” অলকেশ জানে বৌয়ের মন, বললো “করবে তুমি? লকডাউনের মাঝে এসব করার আবার কী দরকার?” সৃজিতা চোখ গোল গোল করে ডাক্তার, সাস্থকর্মী, রেল ও ব্যাংকের লোকদের কাজের সাথে তার কাজের নৈতিক গুরুত্ব নিয়ে বেশ পাঁচ মিনিটের একটা বক্তৃতা করে, যার পর আর অলকেশের দ্বিরুক্তি করার কোনই অবকাশ থাকে না । ঝটপট তৈরী হয়ে বেরিয়ে যায় সৃজিতা, বলে যায় ফিরতে দেরি হতে পারে । অলকেশ কটা জিনিস কিনতে বাইরে বেরোয় একটু বাদে ।
ওষুধের দোকানের বাইরে এসে দাঁড়ায় অলকেশ, সোশ্যাল ডিস্ট্যানসিং মানতে গিয়ে বাজার করতে ভালোই সময় লেগেছে, এখন ওষুধের দোকানেও ভীড় হবে । খানিক দূরে দাঁড়ানো এক বয়োজ্যেষ্ঠ পরিচিতের সাথে গল্প শুরু করে সে । কথায় কথায় উনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন, স্থানীয় বিরোধী দলের লোকরা নাকি এই অবস্থাতেও রাজনীতি ছাড়ছে না । Hydroxychloroquine-এর স্টক নিয়ে ওরা সব ওষুধের দোকানে গিয়ে নাকি কিসব সমীক্ষা করছে, যাতে কেন্দ্রীয় সরকারের ওই ওষুধ বিদেশে রপ্তানির সমালোচনা করতে পারে । এই তথ্য অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু ওদের ছেলেরা নিজেরাই অশিক্ষিতের যম, দল বেঁধে ঘুরে ঘুরে দোকানে দোকানে গিয়ে নাকি ক্যাচাল করছে!
অপরদিকে সৃজিতা কাউন্সিলর-এর বাগানবাড়ির পেছনে পাঁচিলের ফাঁকে লুকিয়ে শুট করছিলো, ওদের সাঙ্গপাঙ্গরা তখন রেশন স্টক করতে ব্যস্ত । ওর দুই জুনিয়র ম্যাডামের কার্যপদ্ধতি লক্ষ্য করছে চুপ করে পাশে দাঁড়িয়ে । সৃজিতা মনে মনে ভাবে, আগেকার দিনে লোকে তবু ক্রাইম রাতের অন্ধকারে লুকিয়ে করত, কিন্তু আজকালকার ক্রিমিনালরা আলাদাই রকম নির্লজ্জ! স্বচ্ছ দিবালোকে করতে একটুও ভয় নেই! সব কিছুকেই যেন টেক ফর গ্র্যান্টেড করে নিয়েছে । এদের তো সে এক্সপোজ করেই ছাড়বে ।
অলকেশের টার্ন আসার আগের মুহূর্তে হঠাৎ দশ-বারো জন লোক শোরগোল করতে করতে হাজির ওষুধের দোকানে । তাদের সব কেনাবেচার খতিয়ান দেখাতে হবে । দুই মিনিটের মাথায় একটা গন্ডগোল বেঁধে যায় অতর্কিতে । এক সাথে অত লোক জমায়েতের খবর পেয়ে পুলিশ ছুটে আসে, এলোপাথাড়ি লাঠি চালায় । দুটো ছেলে পুলিশের সাথেও নোংরা ভাষায় কথা বলে, গন্ডগোল জিয়িয়ে রাখার চেষ্টা করে । শেষে মার খেয়ে যে যেদিকে পারে ছুটে পালায় । একজন দৌড়ে এসে গায়ে পরে অলকেশের, পুলিশ লাঠি উঁচিয়ে ছুটে আসে । অলকেশ কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাকে পুলিশের দিকে ধাক্কা মেরে এগিয়ে দিয়ে নিজে পালানোর চেষ্টা করে ছেলেটা । হঠাৎ বেকায়দায় ডান্ডা গিয়ে পরে অলকেশের মাথায়, ঠিক ওই দাগ’টার কাছে ।
রেকর্ডিং সেরে জুনিয়রদের নিয়ে ফিরছিল সৃজিতা, ঠিক সেসময় বিধায়ক মহাশয় কাউন্সিলরের বাড়ি এলেন । গাড়ির জানালা দিয়ে সৃজিতা’কে দেখে চিনলেন, মনে পরে গেলো আট বছর আগের ভোটে করুণ পরাজয়, যার মূলে ছিল সৃজিতারি এক পুরনো স্টিং অপারেশন । বুঝতে কিছুই বাকি রইলো না । ভেতরে গিয়ে কাউন্সিলরকে লাগালেন আচ্ছা ধমক – কিকরে তাদের নাকের নিচ থেকে একজন মহিলা সাংবাদিক এসব করার সাহস পায় । সুতরাং এক্ষনি গিয়ে তাকে ‘মেশিন’ দেখিয়ে আচ্ছা করে কর্কে দিয়ে আসতে হবে । গায়ে হাত দেয়ার দরকার নেই, সাংবাদিক শ্রেণিটাকে ভালোই চেনেন উনি । খামোখা জল ঘোলা হবে । কিন্তু, সৃজিতা যদি কোন প্রমাণ সংগ্রহ করে নিয়ে গিয়ে থাকে, তবে তা যেকোনো উপায়ে ফেরত আনতে হবে! কাউন্সিলরের নির্দেশে তখনি ছয়জন বিশেষ দক্ষ, রাজনীতিতে নিবিষ্টপ্রাণ কর্মকর্তা বেরিয়ে গেলো গাড়ি করে ওদের ধরতে । পনেরো মিনিটের মাথায় তিন জনের পথ আগলে দাঁড়াল ওরা । প্রথমে মিষ্টি শ্লেষ, তারপর কিঞ্চিৎ অশ্লীল ভাষায় ও শেষে ‘মেশিন’ দেখিয়ে কার্যসিদ্ধির চেষ্টা করা হল । বরাবরই এসব লোক’কে সায়েস্তা করতে কুশলী সৃজিতা । নারীশক্তির প্রতি অতিমাত্রিক বিশ্বাস একসময় তাকে এরকম অনেক পুরুষ’কে বিপর্যস্ত করে ব্ল্যাক বেল্টের অধিকারিণী করেছিল । বন্দুক দেখে ওর রাগ’টা বেসামাল হয়ে উঠলো, ফুটেজ সে কোনোমতেই দেবে না । সহসা আক্রমণ করে উঠলো সে, আর ওর দেখাদেখি একজন জুনিয়র-ও! এর জন্যে মোটেই প্রস্তুত ছিল না গুন্ডার দল । মুহূর্তে জনাচারেক ধূলুন্ঠিত হল । সবচেয়ে তরুণ যে, সে বেপরোয়াও সবচেয়ে বেশি । যাই নির্দেশ থাকুক, একটা সামান্য মেয়ের কাছে মার সে খাবে না । ভাবলো পায়ে একটা গুলি তো করাই যায়, আনলক করলো রিভলভার । কিন্তু ওর প্রস্তুত হবার আগেই সৃজিতা এসে পা লক্ষ্য করে মারলো প্রচন্ড কাট্, মুখ থুবড়ে পড়লো ছেলে’টি । রাগে অন্ধ হয়ে কোন দিকে না তাকিয়েই গুলি’টা সে চালালো । হঠাৎ থামলো সৃজিতা, লাল হয়ে উঠলো টপ’টা ।
পাঁচ
নেশার ঘোরের মতো অলকেশের কালকের কিছু কথা মনে পড়ছে – আবছা, অস্পষ্ট । কর্মহীনতার আমেজ রয়েছে ভরপুর, কিন্তু তবু কী একটা সন্দেহ যেন সকাল থেকেই ওর মনে দানা বাঁধছে! সৃজিতা ঘরময় এটা চলে না কেন, ওটা খারাপ নাকি – করে বেড়াচ্ছে । হঠাৎ সিঁড়িঘরের লাইট জ্বলে উঠলো, তবে কী কারেন্ট এলো? তা ঘরের সব স্যুইচ অফ রেখে কী শুধু নিচেরটাই অন আছে! দরজার আওয়াজ হল খুট্ করে, পাশের ঘর থেকে সৃজিতার গলা ভেসে এলো: “শৈলেশ, তুই এই অসময়ে এসেছিস হঠাৎ? তোর না অনলাইন পরীক্ষা সামনে? একী তোর মুখ’টা এমন শুকনো শুকনো কেন লাগছে বাবু? কোথা থেকে আসছিস তুই? এরকম বিদ্ধস্ত দেখাচ্ছে! কাঁদছিলি নাকি? এদিকে তাকা, কথা বলছিস না কেন, বাবু?…”