সত্তরের দশকের শেষদিক তখন,ভিক্টোরিয়ার বাগানে মনমরা দুপুরগুলো তখনও বহু পরিণত-অপরিণত সম্পর্কের টানাপোড়েনের সাক্ষী থাকত,এখনকার মতোই। বাগানের দক্ষিণ কোণে নিজের প্রিয় গাছটার তলায় সেদিনই নবারুণ শেষবার দেখেছিলেন মেঘকে। মেঘমালা সেন,বাংলা সাহিত্যের ছাত্রী,ভবানীপুরের অভিজাত ব্যবসায়ীর একমাত্র মেয়ে। কেমব্রিজ থেকে ডাক পেয়ে বিদেশযাত্রার পর কিছু বছর মনে ছিল মেঘের কথা ,তারপর সাফল্যের সিঁড়িগুলোর ঘনত্ব যখন বাড়তে শুরু করল,ব্যস্ততার অজুহাতে সেসব একদিন নাম লেখাল ভুলে যাওয়ার খাতায়,নবারুণের অজান্তেই। আজ এতোদিন পর হঠাৎ মনে পড়ায় একটু লজ্জাই পেলেন তিনি। মিটিং পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে আর দেরি করেননি নবারুণ,আর অবশেষে আজ আরেকবার ইউনিভার্সিটির অডিটোরিয়ামে বসে তিনি,নবারুণ সান্যাল।
নৃত্যনাট্য শুরু হয়ে গেছে বেশ খানিকক্ষণ আগেই,এলোমেলো চিন্তায় মগ্ন নবারুণ খেয়াল করেননি এতোক্ষণ। এখন মঞ্চে চলছে কবিগুরুর ‘চিত্রাঙ্গদা’,পরিবেশনায় ‘মেঘমল্লার’। চিত্রাঙ্গদার বেশে বছর কুড়ির এক তরুণী,নাচে-অভিনয়ে-অপূর্ব ভঙ্গিমায় দর্শকের নজর কেড়ে নিয়েছে প্রথম থেকেই। খানিকক্ষণ দেখার পর নবারুণের মনে পড়ল এই অডিটোরিয়ামে বসেই এই একই নৃত্যনাট্য তিনি আগেও দেখেছেন। সেই সময়ই পকেটের দামি ফোনটা বেজে উঠল,সেক্রেটারির কল,নিউইয়র্ক থেকে। ফোনটা ধরতে আসন ছেড়ে অডিটোরিরামের বাঁদিকের করিডোরে বেরিয়ে আসতেই হঠাৎ থেমে গেল পাদুটো। ফোন বেজে চলেছে একনাগাড়ে,ফোনের মালিকের দৃষ্টি আটকে করিডোরের শেষ প্রান্তে গ্রিনরুমের দরজায়।
(ক্রমশ)

Print Friendly, PDF & Email
Previous articleকেবলই বণিক নাকি আরও কিছু?
Next articleসৈনিক
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest

0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments