“There are more things in heaven and earth, Horatio,
than are dreamt of in your philosophy”.
একবার কিছু ছাত্রকে প্রশ্ন করেছিলাম “ দুর্যোধনের বোনের নাম কেউ বলতে পারবে?” উত্তর এসেছিল “ কুন্তি স্যার”। একজন খুব সিরিয়াস ছাত্র বলেছিল “ স্যার ওটা দ্রৌপদি”।
অকস্মাৎ মানসিক ধাক্কাটা কাটিয়ে ওঠার পর যখন উত্তর টা বললাম ( উত্তর টা হবে “দুঃশলা” )। একজন ছেলে উঠে দাঁড়িয়ে বলল “স্যার কেমন যেন গালাগালির মত শোনাল”।
কপাল আমার, কি আর করবো। বললাম “ রামায়ণ, মহাভারত এসবের নাম কোনদিন শুনেছ?”
– হ্যাঁ স্যার।
– কি এগুলো?
– T.V সিরিয়াল স্যার। Star Plus না কিসে যেন দেখায়।
– অসাধারন।
– একজন ছাত্রী বলল “ স্যার রাম ছেলেটাকে না খুব cute দেখতে, সীতাটাকে ওর পাশে মানাচ্ছে না”।
– হুম্। আর কিছু জানো রামায়ণ, মহাভারত এসব নিয়ে?
– সেই সিরিয়াস ছেলেটি বলল “ স্যার ওগুলো তো মহাকাব্য না কি যেন”।
– পড়েছ কোনদিন?
– ছোটবেলায় পড়েছি স্যার, কমিকসে।
– একজন বলল “ গল্পগুলো ভালো, কিন্তু বড্ড বেশি গাঁজাখুরি স্যার”।
– কেন?
– না তো কি, রাবণ সীতাকে কিডন্যাপ করে হেলিকাপ্টার করে নিয়ে পালালো। রাম ব্রীজ বানিয়ে শ্রীলঙ্কা চলল, যত ঢপের চপ স্যার। একজন বলল “ আজ 21st century –তে দাঁড়িয়ে এইসব গল্প বিশ্বাস হয় স্যার। আর আজ সায়েন্স এত উন্নত যে এইসব গাঁজাখুরি গল্প এখন আর কেউ পড়ে না।
হায় বাঙালি, হায় ভারতবর্ষ। আমরা আজ একবিংশ শতাব্দিতে দাঁড়িয়ে, হাতে Smart Phone নিয়ে গর্ব করে বলি আমরা Gen-X, অথচ নিজেদের ঐতিয্য, সংস্কৃতি, বা ইতিহাসকে সামান্য সম্মানটুকু জানাতে পারিনা।
আজ NASA যদি বলে অমুক জায়গায় একটা ভিনগ্রহের প্রাণীর ফিঙ্গার প্রিন্ট পাওয়া গেছে, আমরা তা চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করে নেব। বা Facebook -এ যদি দেখি একটা মানুষের লেজ বেরিয়েছে অমনি 500 Like ও 150 Comment – “ uff কি লাগছে”, “Soooo Cute”, “কিভাবে গজালো ?”, ইত্যাদি, প্রভৃতি। অথচ হাজার, হাজার বছর আগে বিজ্ঞান সাধনার পীঠস্থান ভারতবর্ষের কতগুলো মহামূল্যবান ঐতিহ্য আমাদের কাছে স্রেফ “গাঁজাখুরি”।
অনেকেই শুনলে আশ্চর্য হবে যে এই প্রাচীন সাহিত্য গুলোতে যে বিজ্ঞান ভাবনা প্রতিফলিত হয়েছে তা পৃথিবীর আর কোন সাহিত্যে হয়নি। আপাত দৃষ্টিতে গল্পগুলো কাল্পনিক বা অবাস্তব মনে হলেও গভীরভাবে ভাবলে দেখা যায় এর মধ্যে আজকের modern Science –এর বীজ প্রোথিত আছে।
আসলে অনেক সময়ই আমরা ধর্ম বলে অনেক কিছুকে ভুল করি যা বিজ্ঞান ছাড়া আর কিছুই নয়। আসলে প্রাচীন কালে যারা ঋষি, মুনি ছিলেন তারা আসলে বৈজ্ঞানিক বা দার্শনিক ছিলেন। এরা নিজেদের যুক্তি, তর্ক, বা Thought experiment দ্বারা অনেক বৈজ্ঞানিক সত্য উদঘাটন করেছিলেন, কিন্তু সেই সব কথা সাধারন মানুষকে বোঝাবার জন্যই তারা একটি নতুন পথ বা ধারনার প্রবর্তন করলেন, এবং তাকে নাম দিলেন ‘ধর্ম’।‘ ধর্ম’ কথার অর্থ ‘ধারন’। অর্থাৎ ‘ধর্ম’ হল সেই আবরণ যা বৈজ্ঞানিক সত্যকে ধারন করে আছে।
যেমন ধর তোমায় বললাম “তুমি আগুনে হাত দিও না”, তুমি বলবে “ তুমি কে হে চাঁদু যে তোমার কথা আমায় মেনে চলতে হবে?”, এইবার কথাটা ঘুরিয়ে এই ভাবে বললাম “ তুমি যদি আগুনে হাত দাও তবে অগ্নিদেব রুষ্ট হবেন, তোমার সর্ব অঙ্গে ঘটবে বিষের জ্বালা, তোমার বউ বিধবা হবে, পুত্র অনাথ হবে, ইতাদি, প্রভৃতি”। তুমি ভাবলে ‘বাবা সামান্য ব্যাপারে এত ঝামেলা, থাক হাত নয় দেবনা’। – এই হল ধর্ম, ও বিজ্ঞানের তফাৎ।
যাই হোক, যে কথা দিয়ে শুরু করেছিলাম যে আমাদের প্রাচীন সাহিত্যগুলো কতটা বিজ্ঞান সম্মত তা কিছু উদাহরন দিয়ে দেখা যাক –
উড়োজাহাজ – সমগ্র রামায়ান, মহাভারত জুড়ে উড়োজাহাজের ছড়াছড়ি। রাবণ যে হেলিকাপ্টারে করে সীতাকে নিয়ে পালিয়েছিল তার আসল নাম ‘পুস্পক বিমান’, এটা যে নিছক কল্পনা নয় তা বোঝা যায় ‘বাল্মীকির’ রামায়ণ পড়লে। এতে পুস্পকের যে বর্ণনা দেওয়া আছে তার অনেকটাই বর্তমান কালের বিমানগুলোর সাথে মিলে যায়, এমনকি অনেকাংশে বর্তমান technology কে ও ছাপিয়ে যায়।
মহাভারতে অর্জুন ও এমনই এক বিমানে চেপে দেবতাদের ঘাঁটি স্বর্গরাজ্যে গেছিলো। এছাড়া ‘শল্য’ দ্বারকা রাজ্য আক্রমণ করেছিল তার Personal হেলিকাপ্টারে চেপে যার নাম ছিল ‘সৌভ’।
নানান ধরনের বিমানের বর্ণনা ও Mechanism নিয়ে ‘মহর্ষি ভরদ্বাজ’ রচনা করেছিলেন “ বৈমানিকা শাস্ত্র”, যা নিয়ে আজও বহু দেশে গবেষণা চলছে। তাহলে বুঝতেই পারছ যে “ রাইট ব্রাদার্স” নয়, আমাদের এই পূর্বপুরুষরাই ছিলেন আসল হাওয়াইজাদে।
পারমাণবিক অস্ত্র – পরমাণু বোমা আবিষ্কার বোধহয় এখন পর্যন্ত মানব সভ্যতার বা বলা উচিৎ বর্বরতার ইতিহাসে এক উল্লেখযোগ্য অধ্যায়। এই পারমানবিক অস্ত্রেরও উল্লেখ কিন্তু ভারতের প্রাচীন সাহিত্যে পাওয়া যায়।মহাভারতে উল্লেখকরা বিভিন্ন অস্ত্রগুলো জেম ‘ব্রহ্মাস্ত্র’, ‘শতাঘ্নি’, ‘ভয়াভয় অস্ত্র’, ‘শিব জবরা’, ‘নারায়ণ জবরা’ ইত্যাদি, এদের যে ভয়াবহতা বা ধ্বংসের বর্ণনা পাওয়া যায় তা পরমাণু বোমার সঙ্গে সমতুল্ল। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে মোট নিহতের সংখ্যা ছিল প্রায় 160 কোটি। মাত্র 18 দিনে এতো লোক মারা পারমাণবিক অস্ত্র ছাড়া সম্ভব নয়।
এছাড়া ভারতের বিভিন্ন স্থানগুলো যেখানে পৌরাণিক মতে মহাভারতের নানান যুদ্ধ হয়েছিল, সেখানে সম্প্রতি প্রাকৃতিক সবুজ কাঁচ পাওয়া গেছে। এমন কাঁচ তখনই তৈরি হওয়া সম্ভব যখন বালি উচ্চ উষ্ণতায় গলে যায়, যে উষ্ণতা একমাত্র পারমাণবিক বিস্ফোরণের ফলেই পাওয়া সম্ভব।
শুধু তাই নয় ‘ হরোপ্পা মহেঞ্জোদারো সভ্যতার যে ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে সেখানেও পারমাণবিক বিস্ফোরণের নিদর্শন মিলেছে। অর্থাৎ প্রাচীনকালে ভারতীয়রা যে পারমানবিক অস্ত্রের ব্যবহার জানতো তা মোটামুটি নিশ্চিত।
শ্রী রামচন্দ্রের সেতুবন্ধন – যারা রামায়ণ পড়েছ তারা জানবে যে রামচন্দ্র লঙ্কা যাওয়ার জন্য সমুদ্রের উপর দিয়ে সেতুবন্ধন করেছিলেন। কিন্তু তোমরা হয়তো জানো না যে এটা পৃথিবীর সবথেকে প্রথম ও দীর্ঘতম Bridge Construction এর উদাহরন।
কৃত্তিবাসের রামায়ণে এটা বলা হলেও যে ‘পাথরগুলোতে রামনাম লিখে জলে ফেলাতে তারা ডোবেনি’; আসল বাল্মীকির রামায়ণে কিন্তু Civil Engineering – এর Concept আছে। এবং এই Bridge বানিয়েছিল বাঁদর ইঞ্জিনিয়ার ‘নল’ ও ‘নীল’।
বাঁদরদের তৈরি এই Bridge দিয়ে লঙ্কা গেছিলো শ্রীরামচন্দ্রের পুরো টিম্। তার মানে Bridge- টার Technology কতটা উন্নত ছিল ভাবো। আর আমাদের বর্তমান Technology ও Architecture কতটা উন্নত তা আশা করি আর কাউকে বলে দেওয়ার দরকার নেই। কলকাতার বড়বাজারের ঘটনাই তার Live Example.
T. V ও রেডিও – সেই যুগে T.V বা রেডিওর মত বোকাবাক্স না থাকলেও অনেক ক্ষেত্রেই Live telecast বা আকাশবাণীর কথা শোনা যায়। যেমন শ্রীকৃষ্ণের মামু কংস আকাশবাণী শুনেছিলেন যে “তোমারে বধিবে যে, গোকুলে বাড়িছে সে”—- ইত্যাদি। আবার কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের সময় অন্ধ ‘ধৃতরাষ্ট্র’-কে যুদ্ধের Live Commentary ঘরে বসেই শুনিয়েছিলেন ‘সঞ্জয়’, যে কিনা কৃষ্ণের কাছ থেকে দিব্য দৃষ্টির বর পেয়েছিল।
বর্তমান Modern Science –এর প্রেক্ষাপটে বিচার করলে আমরা মনে করতেই পারি যে দিব্য দৃষ্টি আসলে হয়তো ছিল একটা টেলিভিশন সেট্ বা ঐ রকম কিছু, যা কোন Wireless link দ্বারা Satellite এর সাথে Connected ছিল, আর এই Satellite এর System Administrator ছিলেন শ্রীকৃষ্ণ, যিনি কিনা সঞ্জয়কে এর Access Permission দিয়েছিলেন। তবে দৈব বানীর পেছনে যে কোন R.J. থাকতো তার কথা পুরাণ গুলোতে লেখেনি।
সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব – ‘শ্রী হনুমান চাল্লিশা্’ তে একটা লাইন এ সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব প্রায় নিখুত ভাবে বর্ণনা করা আছে। স্তোত্রটি এই রকম –
“ যুগ সহস্র যোজন পর্ ভানু।
লিল্ল তাহিঃ মধুর ফল জানু।।”
এখানে ভানু অর্থাৎ সূর্য। এখন হিন্দু শাস্ত্রানুসারে 1 যুগ = 12000 ; সহস্র = 1000; 1 যোজন = 8 মাইল। অর্থাৎ সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব প্রায় 12000× 1000 × 8 = 96×106 মাইল। এখন 1 মাইল = 1.6 km, অর্থাৎ প্রায় 153,600,000 km.
বর্তমানে আমরা জানি সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব প্রায় 149,600,000 km।অর্থাৎ পৌরাণিক মানের প্রায় কাছাকাছি।
কি হল ! ‘ লাগা না ঝটকা’। আরে এ তো কিছুই নয়, পরেরটা দেখো।
আলোর গতিবেগ – আমরা আলোর গতিবেগ জানলাম কত আর,আজ থেকে মাত্র 200 বছর আগে প্রায়। Maxwell তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ তত্ত্ব আবিষ্কারের পর Calculation করে দেখা গেলো আলোর বেগ প্রায় 186,282.397 মাইল প্রতি সেকেন্ডে। শুনলে অবাক হবে যে আজ থেকে হাজার হাজার বছর আগে লেখা ‘ঋক্ বেদ’ –এ আলোর বেগ প্রায় নির্ভুল ভাবে গণনা করে বলা আছে। ‘মহর্ষি সায়ন’ – এর লেখা বেদের ঐ অংশটিকে অনুবাদ করলে অনেকটা এই রকম দাঁড়ায়-
“ … আমার অন্তরের অন্তঃকরণ থেকে, আমি নতশিরে শ্রদ্ধা জানাই সূর্যদেবকে,
যিনি অর্ধ নিমেষে 2,202 যোজন পথ অতিক্রম করেন …”
1 যোজন = 9 মাইল (প্রায়)। এবং 1 নিমেষ হল 16/75 সেকেন্ড। অর্থাৎ অর্ধ নিমেষ = 8/75 সেকেন্ড, সুতরাং 2,202× 9 ×75/8 = 185,794 মাইল প্রতি সেকেন্ডে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে ও ভারতবাসী-রা অনেক আগেই টেক্কা দিয়েছে সারা বিশ্বকে।
সূর্যগ্রহণের ব্যাখ্যা – ‘ঋক্ বেদ’- এর 40.5 তম স্তোত্রকে অনুবাদ করলে হয় –
“হে ভাস্কর, যখন তোমারই আলোকে আলোকিত সে, তোমার পথ রুদ্ধ করে দাঁড়ায়,
তখন অকস্মাৎ তমসাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে সারা পৃথিবী …”
একটু ভেবে দেখতো, এটাই কি সূর্যগ্রহণের পেছনের আসল কারন নয়?
কতো আর বলবো, এমন হাজার হাজার উদাহরন দেওয়া যায়। শুধু গণিত, বা পদার্থবিদ্যাতেই নয় Medical Science এর ও প্রচুর নিদর্শন পাওয়া যায় এই বইগুলতে, যেখানে আয়ুর্বেদ চর্চার পাশাপাশি Organ Transplant, IVF ( In Vitro Fertilization), ZIFT (Zygote IntraFallopian Transfer), Enbryo Transfer, Advance Cloning – ইত্যাদির ও উল্লেখ পাওয়া যায়।
আর এমন সমৃদ্ধ সাহিত্যকে আমরা গাঁজাখুরি বা অপবিজ্ঞান বলে অপমান করি। আসলে Science নিয়ে পড়ার মানে এই নয় যে যা আমাদের বিচার বুদ্ধির বাইরে তাকেই অপবিজ্ঞান বা কুসংস্কার বলে চালিয়ে দেব। এমনও তো হতে পারে সেই বিষয় আমাদের বিচার বুদ্ধির সীমার বাইরে। তার কোন না কোন Scientific ব্যাখ্যা হতেই পারে। সময় পেলে বইগুলো পড়ে দেখতে পারো Facebook, Whatsapp বা Twitter এর থেকে জিনিসগুলো কম ইন্টারেস্টিং নয়।