মানুষটি খর্বাকৃতি ছায়াটি দীর্ঘ অতি
তিনিই ত’ ঈশ্বরচন্দ্র,
বিদ্যাসাগর যিনি করুণার সিন্ধু তিনি
কণ্ঠস্বর বুঝি মেঘমন্দ্র।
বিধবা বিবাহ হবে ভাবেনি ত’ কেহ ভবে
রূপকার তিনি ঈশ্বর,
বজ্রকঠিন হিয়া জ্বালান সমাজে দীয়া
কীর্তি তাঁর অবিনশ্বর।
বাল্যবিবাহ প্রথা বহুবিবাহের ব্যাথা
পীড়া দিত বিদ্যাসাগরে,
গরজে ওঠেন তিনি বরমাল্য গলে জিনি’
স্ত্রী শিক্ষার ভিত্তিপ্রস্তরে।
তিনিই ত’ কাণ্ডারী ঈশ্বরীয় ভাণ্ডারী
বাংলা ভাষার পাকশালে,
বর্ণ সাথে পরিচয়ে ভাষার শৃঙ্গ জয়ে
কথামালা পরালেন গলে।
ইংরাজী ও সংস্কৃত সবেতেই সংহত,
ব্যক্তিত্ব ছিল অমলিন,
দাপুটে বিদেশী জাতি তারাও স্বীকারে নতি
চরিত্রটি বজ্রকঠিন।
ঝাঁপ দেন দামোদরে মাতৃবাক্য রক্ষা তরে
ভক্তির অনন্য পরাকাষ্ঠা,
বীরসিংহের বীর সংকল্পে তিনি ধীর
কর্মেতে অবিচল নিষ্ঠা।
দয়ার সাগরও বটে দানধ্যান অকপটে
হৃদয়টি যেন সিন্ধুসম,
সত্য তিনি ঈশ্বর আজও তাই ভাস্বর
বিদ্যাসাগর পুরুষোত্তম।
অমৃতের পুত্র যিনি অমর ঈশ্বর তিনি
ঋষিরূপ প্রজ্ঞা অনুসঙ্গ,
তিনি এক মহীরূহ একাই রচেন ব্যুহ
অরি সবে হয় ছত্রভঙ্গ।
হায় রে বাঙালী জাতি বাস্তবে খর্বাকৃতি
ছায়াটিও আরও যেন খর্ব,
দুছত্র বিদেশী ভাষা তাহাতে মগজ ঠাসা
তথাপি কতই না গর্ব।
ভুলেছ সংস্কৃতি আত্মবিস্মৃত জাতি
অবজ্ঞা মাতৃভাষা সনে,
ঈশ্বরচন্দ্রে তাই তোমাদের মতি নাই
মনুষ্যত্বের আজি উদ্বোধনে।
মোদের সকল কাজে সমাজ সেবার মাঝে,
ঈশ্বর সতত প্রোজ্জ্বল,
বিস্মৃত আজি যারা ক্ষমা নাহি পাবে তারা
অকৃতজ্ঞ অকৃতীর দল।
দ্বিশতবর্ষ পরে জল পড়ে পাতা নড়ে
আজো করে মোরে শিহরিত,
বিনম্র শিরে এবে তর্পণ করি দেবে
হে ঈশ্বর, আপনিই ঋত।