আধুনিক জীবনের স্রোত-প্রথম পর্ব : click here
আগে যা ঘটেছে …
ওঙ্কারের প্রকৃত বাড়ি পুরুলিয়ার গৌরাঙ্গ গ্রামে,উঃ কলকাতায় বাস নেহাতই পড়াশোনার তাগিদে।আবাশিক স্কুলে টানা সাত বছর থাকার পর ঘরে ফেরার অবকাশ পেয়েছে তারা।ওঙ্কার স্টেশনে নানা ভাবে অবাক হলো,প্রথমে জেনারেল কামরা উঠে গেছে তা শুনে , পরে দ্রুতগামী ট্রেন সম্পর্ক….সে আরও অবাক হলো জেনে যে এখন সব ট্রেনেই free meal দেয় এবং স্যুইচ টিঁপা মোবাইল এখন বাচ্চাদের খেলতে দেওয়া হয়।সে কয়েক ঘন্টার মধ্যেই পৌঁছলো পুরুলিয়ায় ………
|2|
গ্রামে আসতে আসতে সে অনেক পার্থক্য লক্ষ করে,তার নিজের মনেই প্রশ্ন জন্মায় ,”এই কি মোদের গ্রাম ?” পরক্ষনে নিজেকেই আস্বস্থ করে বলে,”না,না এটাই তো ! মাঝখানের সাতটা বছরে অনেক কিছু পাল্টে গেছে ! এতো স্বাভাবিক।” ঢুকতে না ঢুকতেই মা প্রশ্ন করে “এতো দেরি হলো কেন ? বারবার বললাম বুলেট ট্রেনে চলে আয় , না হলে air-journey কর! না , সেই পুরোনো ধ্যাড়ধ্যাড়া ট্রেনে আসব ! এসিটাও তো ঠিক করে চলে না ট্রেনগুলোতে ! কতবছর ছেড়ে দিয়েছি ওসব চাপতে । আহা গো ছেলেটা ঘেমে জল হয়ে গেছে ?”
— “মা ! এটা শীতকাল ! তাছাড়া আমি তো জেনারেল কামরায় উঠতে চাইছিলাম , দিল না তো টিকিট ।”
— জেনারেল ? হ্যাঁ হ্যাঁ ছিল বটে , ওই বছর পাঁচেক আগে বোধ হয় ।
— যাই হোক ! কেমন আছ ?
— fine !
ওঙ্কার মুখ,হাত,পা ধুয়ে বিছানায় গিয়ে বসল। মা বলে উঠল,”আগে বোস! অনেকটা journey করেছিস। তারপর নয় মুখ, হাত, পা ধুবি?” সে ঘরে এসেও যেন এক অচেনা অজানা পৃথিবীর উপলব্ধি করতে পাচ্ছে ! সে যেন তার পুরনো ঘরকে হারিয়ে ফেলেছে । সে মাকে জিজ্ঞাসা করল,”মা পেপারটা কোথায় রেখেছো ?”——-‘পেপার,মানে news paper ? এখন তো আর নেওয়া হ্য় না ! নেট খুলে দেখ যে পেপার চাইবি তা-ই পেয়ে যাবি ! ‘ এমন উত্তর সে অন্তত তার মা-য়ের কাছ থেকে আশা করেনি। সে বলে উথল,”কোথায় ? কীভাবে ?” তার মনে পড়তে লাগল ,”সে ছোটবেলায় যখন তার মাকে নেট থেকে গান শোনাত, তখন তার মা নেট-এর ‘ন’ জানত না, আর এখন ?”
বাবা বাড়িতে ঢুকলে ওঙ্কার ছুট্টে গেল বাবার কাছে । বাবার কানে দু-দুটো ‘ android screen touch mobile ‘ একফোনে,”hello,hello,sir…..” অন্য ফোনে আবার,” একটু পরে ফোন করছি,ধরুন আপনি…”ওঙ্কার ভালো করে চোখ কচলিয়ে দেখলো,না সে ঠিকই-তো দেখছে ! সে স্পষ্ট মনে করতে পারলো আগে বাবার কাছে একটি-ই ‘স্যুইচ টিঁপা’ মোবাইল ছিল । আর এই সাত বছরেই এত পরিবর্তন ! সে বারবার চোখ কচলিয়ে দেখল,সে ঠিক দেখছে কিনা, সে এই আধুনিক যুগের শক্তির পরিচয় পেল। কিছুক্ষন পরে সে শুনতে পেল বাইরে থেকে আওয়াজ আসছে, ‘ মোবাইল চাই গো মোবাইল ‘ সে ভালো করে শুনল ‘মোবাইল,মোবা–ইল চাই গো–Android আছে, Screen touch আছে ‘ সে ছুট্টে এল দরজায়, দেখল ঠিকই তো, সে কিছু ভুল শোনে নি, ঝুড়িতে করে মোবাইল বিক্রি হচ্ছে বাড়িতে বাড়িতে,” নেবে গো দাদারা মোবাই—ল” সে হাঁ হয়ে গেল, ঠিক তার পরক্ষনে আরেকজন পাড়ায় পাড়ায় চেঁচাচ্ছে,’ঘর মোছা—ঘর মোছা—ঘ-র—মো–ছা’ সে তখনও ঝুড়ির মোবাইল বিক্রি,হজম করতে পারেনি, আর তার মধ্যেই এরূপ অবস্থা , সে আবার দ্রজার সামনে এসে দেখল একজন একটি পুঁটলিতে কিসব জিনিস বেঁধে চেঁচাচ্ছে ‘ঘর মোচ্ছা’। সে যেন বাকরূদ্ধ হয়ে গেল। তার মা বাইরে এসে জিজ্ঞাসা করল,”কত করে গো ? বলি কত করে স্কোয়্যার ফিট গো ? আমার শুধু দুটো ঘর আছে।”
—‘ছত্রিশ টাকা । আজকে দাম বেড়েছে দিদি’
—‘না, না, অত না কমাও একটু ‘।
অবাক হলো ঠিকই কিন্তু তার এও মনে হলো,” বাঙালির জীবনে যতই আধুনিক জীবনের ছাপ আসুক না কেন, দরদাম করতে কখনোই ছাড়ে না বাঙালি’ …