।১।
শুকিয়া স্ট্রীট আর সারকুলার রোডের মোরে স্কুল ফেরতা ঘুগনি খাচ্ছিলো পদা। ঘুগনি ওয়ালার সাথে একটা ছোটখাট বচসাও চলছিল ঝাল কম দিয়েছে বলে। এরি মধ্যে হঠাত কাঁধে টোকা। ঘুরে দ্যাখে বাবলু দা। বাবা বলেছে “বাবলুর সাথে তোকে যেন খবরদার না দেখি। ও ব্যাটা ছোটলোক”। কি করে যে বাবা লোক দেখেই ভদ্রলোক আর ছোটলোক বুঝে যায়, পদা সেটা অনেক চেষ্টা করেও ঠিক আয়ত্ত করতে পারে নি। কিন্তু বাবলু দা যেন চুম্বক। পদা চেষ্টা করেও এরাতে পারে না। চেহারা টা অনেকটা মিনি মিঠুন চক্রবর্তী। বাব্রী চুল। বিশাল ঘের ওয়ালা বেল বটম প্যান্ট। গায়ে স্কিন টাইট স্যান্ডো গেঞ্জির মত জামা। চোখে সানগ্লাস। গালের চামরা পুরো মাখন। খালি হাইট টা একটু কম মিঠুনের থেকে। পদা দেখে আর ভাবে “ইশ, বাইসেপ গুলো যদি বাবলুদার অর্ধেকও হোতো, স্কুলের ওই মিষ্টি দুই বেনিওয়ালা রতি বলে মেয়েটা, রতি অগ্নিহতৃর মত গলায় ঝুলতো”! “কিরে এই মাত্র ফিরলি? তোর জন্য সোয়া চারটে থেকে অপেক্ষা করছি”। দোষের মধ্যে বাবলুদার ওই একটাই। স এর দোষ। “হ্যাঁ বাস পেলাম না। হেঁটে ফিরলাম”। “যাকগে সোন, যে জন্য তোকে দরকার, তোদের পাসের বাড়ির ওই মেয়েটার নাম কি রে?” “কোন মেয়েটা?” “আরে ওই যে রে, যেই মেয়েটা রোজ বিকেল বেলা ছাদে কুকুর নিয়ে ঘুরে বেরায়!” “কে? সোনালি?” “সোনালি? ওর নাম সোনালি?” “হ্যাঁ, কিন্তু ও তো ক্লাস নাইন এ পরে। তোমার থেকে তো অনেক ছোটো!” “ভাগ সালা! ছোট তো কি আছে? ছোটোই তো ভাল। বেস নিজের হাতে গরে নেবো”। পদা কথা ঘোরাতে চায়। আসলে সোনালি কে তার নিজেরই একটু পছন্দ, যদিও সোনালি ওর থেকে এক বছরের বড়। কথা ঘুরিয়ে বলে “আচ্ছা বাবলুদা, কাল আমাকে জিম এ নিয়ে যাবে তো?” “ধুর! তুই ওসব করে কি করবি? তোর কি এখনো বয়েস হয়েছে নাকি মেয়ে পটানোর? তার থেকে বরং চল, কাল আমার সাথে একটা ইংরিজি সিনেমা দেখতে চল”। “ইংরিজি সিনেমা?” “কেন? বাবা বকবে? আরে, তোর বাবা তো আমার সাথে তোকে দেখলেই বকবে। ইংরিজি সিনেমা দেখিস কি না দেখিস, তাতে কি কিছু এসে যাবে?” কথাটা বাবলুদা ভুল বলে নি। এই জন্যই বাবলুদাকে এত ভাল লাগে। মাথাটা ওর পরিষ্কার। রাজী হয়ে গেল পদা।
পরদিন রবিবার। দুপুরবেলা বই খাতা ব্যাগে ভরে বেরতে বেরতে মাকে হাঁক দিলো “মা, আমি বুম্বাদের বাড়ি যাচ্ছি। অনেক হোমওয়ার্ক”। মা উত্তর দেওয়ার আগেই পদা দরজার বাইরে। শরীরে বেশ একটা রোমাঞ্ছ হচ্ছে। জীবনের প্রথম ইংরিজি সিনেমা! বাবলুদা বলে রেখেছে পদা যেন জেম সিনেমার সামনে ঠিক দুটোর সময় অপেক্ষা করে। পদা এক কথায় রাজি। সে জেম সিনেমা চেনে। স্কুল কেটে একবার জেম এ শোলে দেখেছে। 30B বাসে চেপে মৌলালির মোর ছাড়ানোর পর একটা স্টপ। ম্যানেজ হয়ে যাবে ঠিকই। দুটোর একটু আগেই পৌছে গেল পদা। সিনেমা হলের সামনেটা লোকে লোকারণ্য। বাবলুদাকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। “টিকিট কেটে রেখেছে তো! যা ভীড়!” মনে মনে ভাবে পদা। হঠাত নজরে পরে বাবলুদাকে। একটা জটলার মধ্যে ধস্তাধস্তি করছে। পরনে মেরুন রঙের গ্যাবারডিনের প্যান্ট আর একটা বেগুনি আর সাদা চক্কর বক্কর জামা। “বাবলুদা!” বাবলুদা ঘাড় ঘোরালো। ভীড়ের মধ্যে নিজের লাইনটা সামলে হাতের ইশারায় পদাকে কাছে ডাকল। “কিরে, এতো দেরী?” “তোমাকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না”। “খুঁজে পাচ্ছিলিস না মানে? এখানেই তো ছিলাম। যাকগে, চারটে টাকা দে”। “চার টাকা?” “যা সালা! বিনা পয়সায় সিনেমা দেখবি নাকি? পয়সা আনিস নি?” “হ্যাঁ কিন্ত…” “ঠিক আছে, যা আছে দে” পদা ব্যাজার মুখে তার সবেধন নিলমনি আড়াই টাকা বারিয়ে দেয়। হেঁটে বাড়ি ফিরতে হবে। অন্যমনষ্ক ভাবে পদা এইসব ভাবছে, হঠাত বাবলুদার আবির্ভাব। তার হাতে গোলাপি টিকিট। “চল। ও ওইদিকটায় দাঁড়িয়ে আছে”। “কে?” বাবলুদা হন্তদন্ত হয়ে এগিয়ে চলেছে। পদা তার পেছন পেছন। একটু পেছিয়ে পরেছে সে। অদূরে মেরুন শারী পরা এক মহিলা। বাবলুদা তাকে কিছু একটা বলল। মহিলা ঘুরল। বাবলুদার কনুই ধরে এগিয়ে আসছে। পদা ভীড়ের মধ্যে তাল সামলে যখন মুখ তুলল, তার সামনে তখন সোনালি!
… to be continued